গ্রামের নাম পেটকাটা...
বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্নকাঠি আর চরআইচা গ্রামের মাঝ খানে ছোটো একটা গ্রাম পেটকাটা।
পেটকাটা গ্রামের সোলায়মান মিয়া.....
মিয়া বাড়ির একমাত্র বংশধর সে।
এক সময় সোলায়মান মিয়ার যেমন টাকা পয়সা তেমন প্রতাপ প্রতিপত্তি ছিলো।
কালের বিবর্তনে এখন আর সেই প্রভাব প্রতিপত্তি বা নাম যশ তেমন কিছু নেই।
তার বউ সরবানু বিবির....
সরবানু বিবির পানি কষ্ট দুর করার জন্য বাড়ির পাশে কিছু পরত্যক্ত জমিতে একটা পুকুর খনন করেন।
তার বউয়ের পানি কষ্ট এই জন্য বললাম কারন বউকে সে অনেক ভালোবাসেন।
সোলায়মান মিয়ার গন্জে মানে স্থানীয় হাটে একটা চাল ভাঙ্গানো মিল।
আর কয়েকটা আড়ত ছিলো।
তার বউ আর তাদের বাড়ির মেয়েদের গ্রামের অন্য পুকুরের গিয়ে পানি আনতে হতো।
তাদের কষ্ট দুর করার জন্য ১৯৬৮/৬৯ এর দিকে মিয়া সাহেব ওই পুকুরটি খনন করেন।
পুকুর খননের পর সোলেমান মিয়ার বউয়ের খুশি দেখে কে?
বউকে খুশি দেখে সেও খুশি।
তো বেশ যাচ্ছিলো তাদের দিন।
আগেই বলছি পুকুরটা ছিলো পরিত্যক্ত জায়াগায়।
পুকুর খননের পর থেকেই একটা জিনিস সোলেমান মিয়া লক্ষ করছেন।
আপনি আপনি পুকুরের পানি কমে যাচ্ছে।
মানে দিন দিন পানি কমছে।
আবার সকালে দেখা গেলো পানির রং কালছে।
তো বিকেলে একবারে পরিস্কার।
প্রথম তেমন পাত্তা দেন নি ব্যাপারটাকে।
পুকুর খননের বেশ কিছুদিন পর একদিন ভরদুপুরে সোলেমান মিয়ার বউ ঘাটে একা কাজ করছিলেন।তখন হঠাৎ তাকে নাকি পিছন থেকে কেউ সজোড়ে ধাক্কা দেয়।
এক ধাক্কায় সরবানু বিবি পুকুরে ছিটকে পড়েন।
সরবানু গ্রামের মেয়ে তাই সাতার জানতেন।
সাতরে পুকুরের পানি থেকে উপরে চলে আসেন।
উপরে ইঠে ভালো করে খুজেন চারপাশটা।কেউ তাকে সত্যি ধাক্কা দিয়েছে কিনা?
কিন্তু কাউকে দেখতে পান না আশপাশে।
সে একটু ভড়কে যায়।
তিন ভাবলেন এটা মনের ভুল হতে পারে না।
স্পষ্ট তাকে কেউ ধাক্কা দিয়েছেন।
সে তারাতারি সেই ভিজা কাপড় নিয়ে বাড়ির ভিতর চলে যায়।
কাপড় চেঞ্জ করে দুপুরের ঘরে বসে আকাশ পাতাল ভাবে।
রাতে মিয়া সাহেব বাসায় আসলে তাকে পুরোটা খুলে বলেন।
ব্যাপারটা শুনে মিয়া সাহাবের একটু খটকা লাগে?
কিন্তু বউকে বুজতে দেন না।
কারন বউকে প্রচন্ড ভালোবাসেন তিনি।
তাই তাকে অভয় দিয়ে বলেন এটা তোমার মনের ভুল হবে হয়তো।বা পা পিছলে পরে গেছো হয়তো?
বলে রাখা ভালো তখনো কিন্তু পুকুরে ঘাটলা বলতে দুইটা সুপারি গাছ দিয়ে ঘটলার মতো করা ছিলো।
বউয়ের জন্য সে পাকা করে ঘটলা বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
আজ বউ পরে গেছে।
কাল যদি তার বউয়ের বড়ো কোনো দুর্ঘটনা হয়
বউয়ের জন্য ই সে শান দিয়ে বাদানো বা পাকা ঘাটলা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আর বাড়িতে বাচ্চারাও আছে।
পরদিন শহর থেকে লোক এনে কয়েক দিনের মধ্যে ঘড়ের দিকের পুকুর পাড় পুরো বাধিয়ে ঘাটলা করা হয়।
বসার জন্য সিড়িও দেয়া হয়।
আর ঘটলা তিন পাশে পাচ/ ছয় ফুট উচু করে দেয়াল দেয়া হয় পুরো সিড়ি ঘাটলাটা ঘিরে।
মানে তিন পাচে দে য়াল আর পুকুরের দিকে নেমে গেছে সিড়ি।
এরপর বেশ কিছিদিন আর তেমন কিছু হয় নি।
কিছুদিন যাবার পর একদিন রাতে মিয়া বাড়িতে চোর আসলো চুরি করতে।
চোর চুরি করতে বাড়ির পিছন দিক থেকে ঢুকবে প্লান করলো।
আর মিয়া বাড়ির সেই পকুরটা ছিলো বাড়ির বাম পাশ ঘেসে পিছন দিকে অনেকটা।
মানে মুল বাসা থেকে একটু দুরেই.......
তো চোরের যেই ভাবা সেই কাজ।
সে চুরি করবেই আজ......
চোর পা টিপে টিপে পুকুর পাড় হয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তার হাতে টর্চ....টর্চের আলো ফেলে পা টিপে টিপে এগিয়ে যাচ্ছে।
চোর মনে মনে ভাবছে আজ মিয়া বাড়িতে চুরি করতে পারলে ভালো দাও মারা যাবে।
গ্রামের চোরতো তাই ছিচকে টাইপের চোর ছিলো ব্যাটা।
হাতের টর্চের আলো ফেলে পুকুর পাড় ঘেসে ভালোই এগিয়েছে।
হঠাৎ টর্চের আলো পুকুরের দিকে ফেলতেই চোখ ছানা বড়া?
মানে চোখ কাপালে ওঠার জোগাড় চোরের।
চোর দেখে পুকুরের পানির মধ্যে উল্টো হয়ে পরে আছে কেউ বা ভেসে আছে।
চোর একবার টর্চ অফ করে আবার অন করলো?
ভালো করে চোখ কচলালো.......ভালো করে তাকিয়ে দেখলো।
না?
চোখের ভুলে নয়।
আবার আলো ফেললো।
না ওই তো ভেসে আছে।
এইবার চোর ভয় পেয়ে যায়।
একটু পর ভালো করে লক্ষ করতেই দেখলো যে....... পানিতে যে ভেসে আছে সে একজন মহিলা।
আর তার মাথার চুলে পুরো পুকুরের পানি ঢেকে আছে।
চোর মনে মনে ভাবলো......একটা মানুষের মাথার চুল কোনো দিন এতো বড়ো হয় কিভাবে?
কোনো মানুষের চুল এতো বড়ো হয় না....যে পুরো এতো পুকুরটা ঢেকে যাবে।
ওই বিশাল বড়ো চুল দেখে চোর ভয়ে থর থর করে কাপতে শুরু করলো......
ভয়ে চিৎকার দিবে ভাবলো।
পরক্ষণেই আবার ভাবলো সেতো চুরি করতে এসেছে।লোকজন এসে ধরে ফেললে উল্টো মাইর খেতে হবে।
চোর দৌড়ে পালাতে মনস্থির করলো।
কিন্তু তখন আর চোরের পা চলছে না।
সে তার পা মাটি থেকে তুলতে পারছে না।
এক জায়গায় এক ভাবে স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছ।
তার মনে হচ্ছে সে দৌড়চ্ছে কিন্তু পা চলছে না।
ঘুমের মধ্যে মানুষকে বোবায় পেলে যেমন হয় এখন ঠিক তেমন হচ্ছে তার সাথে।
তার পুরো শরিরসহো হাত পা থরথরিয়ে কাপছে।
আলোটা স্থির করে পুকুরের উপরে ধরে আছেন।
একটু পর ঘটলো আরো ভয়ংকর কিছু।
পুকুরের ভেসে থাকা মহিলাটা এতোক্ষণ উপুর হয়ে ছিলো.....ওটা এখন নিজে নিজে চিত হচ্ছে।
মানে ওই মহিলার শরির একা একা ঘুড়ে যাচ্ছে।
এইবার ওই মহিলার চোখে চোখে পড়লো চোরের।
চোর টর্চের আলোতে দেখলো মহিলা এখন তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পুকুরে শোয়া মহিলাটা হঠাৎই হো হো হা হা করে হেসে উঠলো।
চোর জোরে ও মাগো বাবাগো বলে আর্তচিৎকার দিয়ে ওখানেই পরে অজ্ঞান হয়ে যায়....................
Tags
ভুতের গল্প