অবেলায় তুমি বাংলা উপন্যাস | bangla uponnas

 

অবেলায় তুমি বাংলা উপন্যাস | bangla uponnas

অবেলায় তুমি বাংলা উপন্যাস | bangla uponnas


পাঁচ বছর আগে যেই মেয়েকে অপমান করে তার প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলাম, সেই মেয়েই আজ আমার সামনে একটা কন্ট্রাক্ট পেপার রেখে বলছে চাকরি করতে হলে তাকে আমার চুক্তিতে বিয়ে করতে হবে। মেয়েটার কথা শুনে আমি নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চাকরির সন্ধানে এক অফিসে জবের ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। কিন্তু ইন্টারভিউ দিতে এসে পাঁচ বছর আগের সেই মেয়েটার সাথে আবারো দেখা হয়ে যাবে তা কোনোদিন ও কল্পনা করিনি। তার উপরে আবার মেয়েটা আমাকে বলছে চাকরি করতে হলে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে তাকে চুক্তিতে বিয়ে করতে হবে। মেয়েটার কথা শুনে সারা শরীর নাড়া দিয়ে উঠেছে আমার। চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে হাবলার মতন তাকিয়ে আছি। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অপরপাশ থেকে মেয়েটা আমাকে হাবলার মতন তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
--'এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? অবাক হয়েছিস মনে হয় আমাকে এখানে দেখতে পেয়ে? অবশ্য অবাক হওয়ায় এই কথা। কারণ গত পাঁচ বছর আগে আমি কি ছিলাম আর এখন কি হয়েছি সেটা দেখে অবাক না হয়ে তো আর কোনো উপায় নেই। তবে যাই হোক তুই কি আমায় চিনতে পেরেছিস মিস্টার আকাশ মাহমুদ? আমিই কিন্তু সেই তনু যাকে তুই গত পাঁচ বছর আগে অপমান তার প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলি। মনে পড়ে কিনা দেখ তো আমার কথা।'

--'জ্বি মনে আছে।'
--'হুম মনে থাকলে তো ভালোই। জানিস বহু দিন ধরে প্রত্যাশা করে বসে আছি তোর সাথে আমার কবে দেখা হবে। আর আমি তোর উপরে প্রতিশোধ নিব সতেরো সালের এপ্রিল মাসের সাত তারিখে করা অপমানের। আমি সেই দিনের কথা আজও ভুলিনি। ডায়েরি’তে ডেট টা একদম টুকে রেখেছি ভালো ভাবে। আজ সেই দিন টা এসেছে। অবশ্য আমি ভেবেছিলাম তোর সাথে পরবর্তীতে আমার দেখা হলেও তোকে অপমান করার সেভাবে সুযোগ পাবো না। কিন্তু আজ দেখছি তুই পুরো ভিখারির ন্যায় আমার সামনে এসে চাকচির জন্য হাজির হয়েছিস। মিস্টার আকাশ মাহমুদ দেখলি তো সময়ের পরিবর্তন? গত পাঁচ বছর আগে আমার কিছুই ছিল না। বিজনেসের সমস্ত টাকা মা~ইর খাওয়ার ফলে বাবা স্ট্রোক করে মা~রা গিয়েছিল। তখন আমার আর আমার পরিবারের মাথার উপরে কোনো ছাদ ছিলো না। বাবার বিজনেসের এতোটাই লোকসান হয়েছিল, যে বাবার সমস্ত টাকা ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি এক গাদা ঋণে ডুবে পড়েছিলাম আমরা। যেই কারণে আমাদের বাড়িটাও সেই সময় আমাদের থেকে কেঁড়ে নেওয়া হয়েছিল। তখন আমাদের আশ্রয়ের খুব প্রয়োজন ছিল। তার উপরে তোকে আমি বহু আগ থেকেই ভালোবাসতাম। আমার বাবার সাথে তোর বাবার বেশ ভালো একটা সম্পর্ক ছিল। কারণ দু'জনে এক সাথে বিজনেস করতো। কিন্তু আমার বাবা মা~রা যাওয়ার পর তোরা আমাদের দিকে সাহায্যের হাত তো বাড়াস এই নি, তার উপরে আমি তোর বুকে মাথা রেখে ঠাঁই খুঁজার প্রত্যাশা করায় তুই আমাকে একগাদা অপমান করে আমার প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলি। জানিস আমার ভিতরে সেদিন এই আগুন জ্বলে উঠেছিল। আমি সেদিন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছি নিজের বাবার যেই টুকু ধনসম্পদ আর নাম ছিল, আমি তার থেকেও দ্বিগুণ টাকা আর নিজের নাম কামাবো। আর সেই সঙ্গে তোর থেকে অপমানের প্রতিশোধ নিব। এরপর আমরা তোদের সেই শহরটা ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাই। অন্য শহরে যাওয়ার পর আমার মায়ের কিছু জমিজমা ছিল সেসব মা বিক্রি করে আমায় অল্প সংখ্যক টাকা দেয় ছোটখাটো বিজনেস করার জন্য। মা'য়ের দেওয়া সেই অল্পসংখ্যক টাকা থেকে আমি নিজের এতো বড় একটা অবস্থান তৈরী করেছি।
আজ দ্যাখ পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। আজ দ্যাখ আমার সেই দুঃসময় তোর দেখা দিয়েছে। তাই তো তুই চাকরির জন্য আমার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিস। শুন তোর চাকরিটা যদি তুই কনফার্ম করতে চাস, তাহলে অবশ্যই তোকে কন্ট্রাক্টে সাইন করতে হবে।'
--'তনু প্লিজ এমনটা করিও না। আমার চাকরিটা খুব প্রয়োজন।'
আকাশের কথা শুনে তনু খুব কর্কশ গলায় বলে উঠে,
--'থা~পড়ে তোর গালের সমস্ত দাঁত ফেলে দিব। তুই আমার নাম ধরে ডাকছিস কোন সাহসে? ম্যাডাম বলে ডাক।'
--'ম্যাডাম প্লিজ আমায় চাকরিটা দিন। আমার চাকরিটার খুব প্রয়োজন।'
--'হ্যাঁ এবার ঠিক আছে। আর মিস্টার আকাশ তোকে কি আমি বলেছি যে চাকরিটা দিব না? তোকে তো আমি চাকরি দিতেই চাইছি। কিন্তু তার জন্য তো তোকে শর্ত মানতে হবে। তুই আমার কন্ট্রাক্ট পেপার টাতে সাইন করে দে। যেখানে লিখা আছে তুই আমার সাথে তিন বছরের চুক্তিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছিস। চুক্তির তিন বছরে তুই এই বিয়ে নিজ থেকে কখনোই ভাংতে পারবি না। সেই সঙ্গে অফিস থেকেও রিজাইন করে চলে যেতে পারবি না। তবে আমি চাইলে যে কোনো কিছুই করতে পারবো। তিন বছরের আগে বিয়ে ভাংতে পারবো। আমি চাইলে তোকে অফিস থেকেও তাড়িয়ে দিতে পারবো। এক কথায় আগামী তিন বছর আমার যেমন ইচ্ছে হয় তেমনটাই আমি করতে পারবো। তুই আমার এই এগ্রিমেন্টে রাজি হয়ে যা। তাহলেই তো চাকরিটা তুই পেয়ে যাচ্ছিস।'
আকাশ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আবারো হাবলার মতন তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অপরদিকে তনু আকাশকে তার দিকে আবারে হাবলার মতন তাকিয়ে থাকতে দেখে এবার চরম রেগে যায়। যার ফলে সে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে,
--'দ্যাখ তোর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা বকবক করবো সেই সময়টা আমার নেই। হয় তুই কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন কর৷ না হয় শুরুতে অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে আমি তোকে চরম অপমান করবো, তাপরপ সিকিউরিটির মাধ্যমে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিব। এবার তুই কোনটা করনি জলদি বল।'
আকাশ এই অফিসে ইন্টারভিউ দিতে এসে এক ভয়ানক পরিস্থিতিতে আঁটকে গেছে। এখন সে চাইলে চাকরিটা বরখাস্ত ও করতে পারবে না। কারণ তনু সবার সামনে তাকে অপমান করার হু~মকি দিয়েছে। অন্যদিকে সে চাকরিটা করলেও তার জন্য বিপদ। কারণ আজ প্রথম দিনেই তনু তার সাথে যেভাবে কথা বলেছে, এতে করে আকাশ বুঝে গেছে রোজ তাকে তনুর হাতে অপমান আর অপদস্ত হতে হবে। এছাড়া তনু তাকে কন্ট্রাক্ট পেপারের সাহায্যে তিন বছরের জন্য বিয়ে করে তার জীবনটা নড়ক বানিয়ে দিতে চাইছে।
তবে আকাশের হাতে বর্তমানে থার্ড কোনো অপশন নেই। দু'টোর মধ্যে থেকে যে কোনো একটা তার বেছে নিতেই হবে। একদিকে তার চাকরিটা খুব প্রয়োজন। সংসারের অভাব অনটন মেটাতে হলে চাকরিটা তার করতেই হবে। অন্যদিকে চাকরিটা রিজেক্ট করলে ঘরের মানুষের পেটে ভাত জুটবে না। আর সেই সঙ্গে অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে অপমান হতে হবে। তাই আকাশ পরিবারের কথা চিন্তা করে আর কোনো কিছু না ভেবে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে দেয়৷ তনু আকাশের কাছ থেকে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করিয়ে সেই কন্ট্রাক্ট পেপারটা ডেস্কের ভিতর রেখে ডেস্ক তালা মে~রে চেয়ার থেকে উঠে আকাশের কাছে এসে দাঁড়ায়। এরপর আকাশকে বলে,
--'আজ থেকে তুই আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট। তোর কোয়ালিফিকেশন যতোই থাকুক না কেন, বর্তমানে এর থেকে ভালো কিছু তুই ডিজার্ভ করিস না। আগামী তিন বছর তোকে আমার এসিস্ট্যান্ট হয়েই কাটাতে হবে। এবার দেখি আমার কোমরে দু'হাত রেখে আমায় বেরিয়ে ধর।
আকাশ তনুর কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়। আকাশ ভূত দেখার মতন করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অপরদিকে তনু আকাশকে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
--'এভাবে তাকিয়ে থাকলে চোখ দু'টো উঠিয়ে নিব তোর। মনে রাখবি তুই আমার এসিস্ট্যান্ট। আর আমি তোর ম্যাডাম। আমি যখন জানতে পেরেছি তুই আমার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে আসবি, তখনি উকিলের মাধ্যমে কন্ট্রাক্ট পেপারটা বানিয়ে রেখেছি। যাতে করে তোকে একদম আঁটকে ফেলতে পারি। তবে তোকে আপাতত বেরিয়ে ধরতে বলার একটা কারণ রয়েছে। সেটা হচ্ছে আমার ইচ্ছে ছিল আমার যেদিন বিয়ে হবে সেদিন আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে অনেক খুনসুটি করবো। কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকায় প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোকে বিয়েটা করতে হয়েছে। তবে যাই হবে হোক স্বপ্নটা পূরণ করি আগে। এবার দেখি তুই আমার কোমরে হাত রেখে আমি বেরিয়ে ধর। তবে সাবধান জড়িয়ে ধরবি না কিন্তু।'
আকাশ তনুর কথা মতন অপারগ হয়ে দু'হাত তনুর কোমরে রেখে তনুকে বেরিয়ে ধরে। আকাশ তনুকে বেরিয়ে ধরার কয়েক সেকেন্ড পর তনু আকাশকে নিজেই জড়িয়ে ধরে আকাশের বুকে মাথা রাখে। তনু আকাশের বুকে মাথা রাখতেই আকাশের সারা শরীর কেমন যেনো শীতল হয়ে যায়। আকাশের মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই সে নিজের প্রিয়তমাকে নিজের বাহুতে নিয়ে রেখেছে। চোখ বুঁজে আকাশ কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাস্তব জগত থেকে কল্পনার জগতে বিচরণ করেছে। তবে কিছু সময় যেতেই তনু আকাশের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে আকাশের গালে কোষে একটা থা~প্পড় লাগিয়ে দিয়ে বলে,
--'আমার ইচ্ছাটা আমি যাস্ট পূরণ করেছি। কিন্তু তুই তো দেখছি চোখ বুঁজে মজা নেওয়ায় ব্যস্ত। কি ভুলে গেছিস নাকি আমি তোর ম্যাডাম। আর তুই আমার এসিস্ট্যান্ট?'
--'না ম্যাডাম ভুলিনি।'
--'তাহলে চোখ বন্ধ করে কি করছিলি? আমার তো মনে হচ্ছিল তুই আমাকে নিজের বউ ভেবে জড়িয়ে ধরে আছিস।'
--'সরি ম্যাডাম।'
--'প্রথম বারের মতন ক্ষমা করে দিলাম। আগামী থেকে নিজের পরিচয়টা মনে রাখবি।'
--'জ্বি আচ্ছা।'
--'এবার গিয়ে আমার জন্য চা করে নিয়ে আয়।'
আকাশ তনুর কথা মতন চা করে আনতে চলে যায়। তবে সে জানে না টি- কর্ণারটা কোথায়। তনুর কেবিন থেকে বেরিয়ে এদিক-সেদিক টি- কর্ণারটা খুঁজতে থাকে। এমন সময় অফিসের ম্যানেজার আকাশের কাছে এসে বলে,
--'তোমার চাকরিটা কি কনফার্ম হয়েছে?'
--'জ্বি হয়েছে।'
--'কোন পোস্টে চাকরি দিয়েছে ম্যাডাম তোমায়?'
--'ম্যাডামের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে।'
--'ওহ আচ্ছা। তবে তুমি এখন কি খোঁজা-খুঁজি করছো? বেশ কিছু সময় ধরে দেখছি তুমি এদিক-সেদিক কি যেনো খুঁজে বেড়াচ্ছো।'
--'আসলে ম্যাডাম আমায় উনার জন্য চা করে নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু আমি জানিনা টি- কর্ণারটা কোথায়! তাই সেটা খুঁজছিলাম।'
--'ঠিক আছে তুমি আমার সাথে চলো আমি তোমায় দেখিয়ে দিচ্ছি।'
--'জ্বি আচ্ছা।'
অফিসের ম্যানেজার আকাশকে নিয়ে গিয়ে টি- কর্ণারটা দেখিয়ে দিয়ে সে চলে আসে। অন্যদিকে আকাশ টি- কর্ণারে গিয়ে তনুর জন্য চুলোয় চা বসায়। কিছুক্ষণ পর চায়ের পানি তৈরী হলে আকাশ চায়ের মধ্যে চায়ের সরঞ্জাম দিয়ে একটা কাপে করে তনুর জন্য নিয়ে যায়। আকাশ প্রচন্ড নার্ভাস চা কেমন হয়েছে সেটা নিয়ে। অবশ্য আকাশ সব কিছুই পরিমাণ অনুযায়ী দিয়েছে। তবে তনুর কাছে চা টা কেমন লাগে সেটাই বড় বিষয়। আকাশ তনুকে চা করে দেওয়া পর তনু চা টা মুখে দিতেই তনুর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়৷ যার ফলে গরম চা ভর্তি কাপটা কোনো কিছু না ভেবেই তনু আকাশের শরীরের উপরে ছুঁড়ে মে~রে বলে,
--'এই অকর্মায় ঢেঁকি এটা কি চা বানিয়ে এনেছিস? চায়ের মধ্যে এতো চিনি কেন? আমি যে চিনি একেবারে কম খাই সেটা কি তুই জানিস না?'
--'সরি ম্যাডাম আমি আসলে জানতাম না।'
--'যা চায়ের ভাঙ্গা কাপটা উঠিয়ে নিয়ে আবার গিয়ে আমার জন্য আরেক কাপ চা করে নিয়ে আয়।'
আকাশ তনুর কথা মতন চুপচাপ মাথা নুইয়ে চায়ের
ভাঙ্গা কাপটা ফ্লোর থেকে উঠিয়ে আরেক কাপ চা করার উদ্দেশ্যে কেবিন থেকে বেরিয়ে টি- কর্ণারে চলে যায়। টি কর্ণারে এসে আকাশ আবারো চুলোয় চা বসায়। চুলোয় চা হচ্ছে আর অপরিদকে আকাশের চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। কারণ একটু
আগে ছুঁড়ে মা~রা তনুর গরম চা গুলোর কারণে আকাশের শরীরে প্রচন্ড জালাতন শুরু করেছে। তবে আকাশ সেটাকে বেশি একটা গুরুত্ব দেয় না। কারণ সে এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে চা বানানোতে কোনো গড়মিল করলে আবারো তাকে সাজা পেতে হবে। তাই সে নিজের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে চা বানিয়ে তনুর জন্য নিয়ে যায়। আকাশ এবার একদম আংশিক পরিমাণ চিনি দিয়েছে চায়ে। তনু এবার চা খেয়ে আর কোনো রিয়েক্ট করে না। কারণ চায়ের মধ্যে সব ঠিকঠাক আছে এবার। তবে তনু চা নিয়ে আকাশকে কিছু না বললেও আগের বার চায়ে চিনি বেশি দেওয়া কারণে আকাশকে বলে,
--'এই যে শুন তুই আমার এসিস্ট্যান্ট হলেও আমি জানি তুই যোগ্যতা সম্পন্ন একটা ছেলে। তাই তোকে এখন কিছু কাজ দিব সেসব তোর সম্পন্ন করতে হবে। অবশ্য ফাইল গুলো যদিও আমার সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু প্রথম বার চায়ে বেশি চিনি দেওয়ার শাস্তি এটা তোর। এই যে আমার ডেস্কের উপরে তিনটা ফাইল রয়েছে। ফাইল গুলো ফাস্ট টু লাস্ট শেষ করে বুঝিয়ে দিয়ে তারপর বাসায় যাবি। যা এবার গিয়ে ঐ কোনায় ফ্লোরের উপরে বসে কাজ শুরু কর। আমি আগামীকাল ম্যানেজারকে বলে দরজার বাহিরে তোর জন্য চেয়ার আর একটা ডেস্কের ব্যাবস্থা করে দিব।
আকাশ চুপচাপ তনুর কথা মতন তনুর ডেস্কের উপর থেকে তিনটা ফাইল নিয়ে তনুর কেবিনের এক কোনায় বসে ফাইল গুলো রেডি করতে শুরু করে। তনু আকাশকে ফ্লোরের উপরে বসে কাজ করতে বলায় আকাশের বেশ অপমান লাগে, কিন্তু আকাশ তনুকে সেটা নিয়ে কিছুই বলে না। কারণ সে অপারগ। চাকরিটা তার জন্য খুব জরুরী। পারিবারিক অবস্থা আকাশের একদম ভালো নেই। সে এখন যদি তনুর কথা না শুনে তাহলে সেটা তার জন্য সমস্যাজনক হবে। চাই সে মুখ বুঁজে ফ্লোরের উপরে বসেই কাজ করতে আরম্ভ করে। কাজ করতে করতে দুপুর তিনটা পেরিয়ে গেছে। দুপুর দুইটার দিকে অফিসের লাঞ্চ টাইম। অনেকেই অফিসের বাহিরের কেন্টিন টাতে খেতে গিয়েছে। আবার অনেকেই বাসা থেকে দুপুরের নিয়ে আসা খাবার গুলো অফিসেই বসে খেয়েছে। এমনকি তনুও কেবিনে বসে তার দুপুরের লাঞ্চ করেছে। তবে আকাশ কিছুই খায়নি। সে না খেয়েই সব গুলো ফাইল রেডি করে সারে তিনটার দিকে তনুর কাছে দেয়। ফাইল গুলো রেডি করে আকাশ তনুকে দেওয়ার পর তনু এবার দশ মিনিটের জন্য আকাশকে ছুটি দেয় বাহির থেকে খেয়ে আসার জন্য। আকাশ কেবিন থেকে বেরিয়ে কেন্টিনের দিকে চলে যায় খাওয়ার জন্য। কেন্টিনে গিয়ে হালকা কিছু খাবার খেয়ে দশ মিনিটের আগেই সে ফিরে আসে৷ ফিরে আসার পর তনুর কেবিনে ঢুকতেই দেখে তনু ফোনের মধ্যে কার সাথে যেনো প্রেমের কীর্তন গাইছে। আকাশ পুরো হতভম্ব হয়ে গেছে তনু ফোনালাপ শুনে। কারণ আজ সকালেই কন্ট্রাক্ট পেপারের মাধ্যমে তনু তাকে বিয়ে করেছে। আবার অন্যদিকে এখন তনু কেবিনে বসে ফোনের সাহায্যে অন্য কোনো ছেলের সাথে প্রেমালাপ করছে....
আজ সকালেই কন্ট্রাক্ট পেপারের মাধ্যমে তনু আকাশকে বিয়ে করেছে। আবার অন্যদিকে এখন তনু কেবিনে বসে ফোনের সাহায্যে অন্য কোনো ছেলের সাথে প্রেমালাপ করছে। আকাশের সমস্ত কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে৷ কারণ আকাশ নিজ ইচ্ছায় তনুর জীবনে কদম ফেলেনি। তনু নিজেই এক প্রকার ব্লাকমেইল করে কন্ট্রাক্ট পেপারের সাহায্যে আকাশকে বিয়ে করেছে। এখন আবার সেই মেয়ে নিজেই ফোনের সাহায্যে অন্য কোনো ছেলের সাথে রংতামাশা করছে। আকাশ তনুর মতিগতি কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কি দরকার ছিল তনুর এমনটা করার। সে তো চাইলে ফোনে যার সাথে প্রেমালাপ করছে তাকেই বিয়ে করতে পারতো। কিন্তু তনু সেটা না করে অযথা ব্লাকমেইল করে আকাশকে কেন বিয়ে করলো। তনু আসলে কি করতে চাইছে আকাশ তনুর দিকে তাকিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় মগ্ন হয়ে পড়ে। অপরদিকে তনু প্রচন্ড রেগে যা আকাশ বিনা অনুমতিতে কেবিনে প্রবেশ করায়। ফোনটা মুখের কাছ থেকে সরিয়ে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে আকাশকে বলে,
--'এই অকর্মার ঢেঁকি বিনা অনুমতিতে কোন সাহসে তুই আমার কেবিনে প্রবেশ করেছিস? তোর মধ্যে কি কমনসেন্স বলতে কিছু নেই নাকি? তুই কি জানিস না কারোর কেবিনে বা কারোর কক্ষে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়? নাকি তোদের যখন অফিস-আদালত ছিল তখন কর্মচারীরা বিনা অনুমতিতেই কেবিনে প্রবেশ করতো, যার জন্য তুই এমনটা করেছিস?'
তনুর রাগান্বিত কন্ঠে কথাবার্তা শুনে আকাশ থতমত খেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে তনুর বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা বাদ দিয়ে কোনো ভাবে নিজেকে আগে সংযত করে। এরপর তনুকে বলে,
--'ম্যাডাম আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে ম্যাডাম আমি অন্যমনস্ক হয়ে থাকায় বেখেয়ালি ভাবে কেবিনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করে ফেলেছি। ম্যাডাম আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত। আগামীতে এই রকমটা আর কখনো হবে না।'
--'মিস্টার আকাশ মাহমুদ আমার সাথে অভিনয়টা একদম কমিয়ে করিস। শুন তুই যেই মঞ্চে অভিনয় করতে নাম লেখিয়েছিস, আমি সেই মঞ্চটার মালিক। তুই কি ভেবেছিস তুই আমাকে উল্টো-পাল্টা বুঝ দিলে আমি সেসব বুঝবো? শুন আমি ভালো করেই জানি তুই ইচ্ছাকৃত ভাবে কেবিনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করেছিস।'
--'না ম্যাডাম এমনটা নয়। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।'
--'দ্যাখ আমি আগেই বলেছি আমাকে উল্টো-পাল্টা বুঝ দিতে আসিস না। আমি ভালো করেই জানি তুই ইচ্ছাকৃত ভাবে কেবিনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করেছিস। আর কেন অনুমতি নিস নি সেটাও আমি জানি। আর অনুমতি ছাড়া কোন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রবেশ করেছিস সেটাও আমার জানা। তুই হয়তো ভেবেছিস তুই আমার স্বামী আর আমি তোর স্ত্রী। আমার কাছে অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই তোর। আর তুই আমার কেবিনে না বলে প্রবেশ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে অপ্রস্তুত ভাবে দেখা। শুন আমি ভালো করেই জানি তোর মনে শয়তানি চেপেছে। কারণ যেভাবেই হোক তোর আর আমার বিয়ে হয়েছে। তাই তুই সেটার ফায়দা উঠাতে চাচ্ছিস। শুন মিস্টার আকাশ মাহমুদ তোকে একটা কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেই। তোকে আমি বিয়ে করার উদ্দেশ্য কিন্তু মোটেও এটা না, যে আমি তোর সাথে ঘনিষ্ট হবো। বা তোর সাথে সাধারণ বাকি পাঁচ-দশটা দম্পতির মতন আগামী তিন বছর কাটাবো। তোকে আমার বিয়ে করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো তোকে হাতের মুঠোয় জিম্মি করে তোর জীবন থেকে সমস্ত সুখ-শান্তি কেঁড়ে নিয়ে তোর পুরো লাইফ টা জাহান্নাম বানিয়ে দেওয়া। গত পাঁচ বছর আগে তুই আমাকে যেই কষ্টটা দিয়েছিস, আমি আগামী তিন বছরে তোর দেওয়া কষ্টের চাইতেও কয়েক হাজার গুণ বেশি কষ্ট তোকে আমি দিব। সেজন্যই তোকে আমি কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে জিম্মি করেছি।'
তনুর কথা শুনে আকাশের এবার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়। কারণ একে তো তনু তার উপরে জোরজবরদস্তি দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত তনু তার উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই খালি তাকে বিয়ে করেছে। আকাশ সব কিছু শুনার পর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তনুর মুখের উপরে বলে উঠে,
--'এই মেয়ে নিজেকে কি ভাবিস তুই হ্যাঁ? দুনিয়ায় খালি একমাত্র তোর কথা গুলোই সঠিক? আর বাকি সবার কথা মিথ্যা? আর তুই একটু আগে কি বললি? আমার জীবন থেকে সুখ-শান্তি কেঁড়ে নিয়ে আমার জীবন জাহান্নাম বানাবি? শুন তোর চাকরি আমি করবো না। আমি অন্য কোথায় চাকরির জন্য আবেদন করবো। তারপর দেখি তুই আমার সুখ-শান্তি কি ভাবে কেঁড়ে নিস।'
আকাশের মুখে তুইতোকারি শুনে তনু ফোন কেটে দিয়ে টেবিলের উপরে রাখে। এরপর বসা থেকে উঠে ডেস্কের উপরে থাকা তনু তার কথা বলার ছোট ফোনটা হাতে নিয়ে সজোড়ে আকাশের উপরে ছুঁড়ে মা~রে। যার ফলে ফোনটা আকাশের কপালে লেগে আকাশের কপাল ফেটে রক্ত পড়তে আরম্ভ করে। তনুর এমন আচরণে আকাশের আরো রাগ উঠে যায়। নিজেকে সামলানো বাদ দিয়ে কোনো কিছু না ভেবে আকাশ সোজা তনুর দিকে তেড়ে গিয়ে তনুর গলা চে~পে ধরে পিছনের দেয়ালের সাথে তনুকে ঠেসে ধরে৷ এরপর গর্জন করে বলে উঠে,
--'এই মেয়ে কিসের এতো দেমাগ তোর? আমাকে কি তোর মানুষ বলে মনে হয় না? আজ সকাল থেকে আমার সাথে যা খুশি করে যাচ্ছিস, যা খুশি বলে যাচ্ছিস। তার উপরে এখন আবার এসে মিথ্যা দোষ চাপিয়ে আমার উপরে ফোন ছুঁড়ে মে~রেছিস। এই মেয়ে আমাকে কি তোর খেলনার পুতুল মনে হচ্ছে নাকি? আর আমার জীবন নষ্ট করার তুই কে? পাঁচ বছর আগে তোকে না হয় অপমান করেছি। তাই বলে কি তুই আমার পুরো জীবনটাই তসনস করে দিবি নাকি?'
তনু আকাশের কথার কোনো জওয়াব দেয় না৷ আর জওয়াব দিবেই বা কি করে, আকাশ তনুর গলায় যে জোরে চে~পে ধরেছে, তাতে করে তনু বহু চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারে না। প্রচন্ড ব্যথা লাগছে তনুর। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে তনুর চোখ দিয়ে পানি পড়তে আরম্ভ করে। তনু অসহায়ের মতন চোখে পানি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অপরদিকে তনুর কান্নারত দৃষ্টি দেখে আকাশের রাগ মাঠি হয়ে যায়। মনের ভিতরে কেমন যেনো এক ধরনের খারাপ লাগা অনুভব করছে আকাশ। যদিও বা তনু আকাশের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। কিন্তু মেয়েটার চোখের পানি দেখা মাত্রই আকাশ কেমন যেনো একদম শান্ত হয়ে যায়। তনুর গলা থেকে হাতটা চুপচাপ নামিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আকাশ। অন্যদিকে তনু আকাশ থেকে ছাড়া পাওয়া মাত্রই কাশতে কাশতে বলে উঠে,
--'তোকে আমি ছা/ড়বো না। পাঁচ বছর আগের করা আচরণের কারণে আগামী তিন বছরের জন্য তোকে জিম্মি করেছি। কিন্তু বর্তমানে তুই যেটা করেছিস সেটার জন্য তোর অনেক ভয়াবহ শাস্তি পেতে হবে। আর তুই একটু আগে কি বলেছিস আমার চাকরি করবি না। অন্য কোথাও চাকরি দেখবি? শুন এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে। না হয়তো কন্ট্রাক্ট পেপার নিয়ে গিয়ে থানায় মামলা করে তোকে লকআপে বন্দী করবো। আর তোর পরিবারকে একদম রাস্তায় নামিয়ে দিব। এমনিতেই তোর পরিবারের অবস্থা ভালো না। তার উপরে তোকে লকআপে দিলে তোর পরিবার রোডে নেমে আসবে। কি ভেবেছিস তুই আমাকে? আমি কাঁচা খেলোয়াড়? শুন একদম আমার সাথে সেয়ানামী করতে আসিস না। তাহলে কিন্তু তুই আর আর তোর পরিবার একদম ধ্বংস হয়ে যাবি।'
আকাশ তনুর কথার প্রত্যুত্তরে আর কিছু বলে না। কারণ আকাশ ভালো করেই বুঝে গেছে সে ইতিমধ্যে ভুল করে ফেলেছে। তার উপরে সে এখন আরো কিছু বললে বিষয়টা আরো জটিল হবে। যার দরুন তাকে আর তার পরিবারকে শাস্তি পেতে হবে। এমনিতেই তনু যে ডেঞ্জারাস। তার উপরে এখন যদি আকাশ উল্টো-পাল্টা কিছু বলে, তাতে করে সত্যিই তনু আকাশের বারোটা বাজিয়ে দিবে। তাই আকাশ পরিস্থিতি টাকে সামাল দেওয়ার জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আর তনু রাগে ফসফস করতে করতে চেয়ারের উপরে গিয়ে বসে পড়ে। কিছুটা সময় এভাবেই কেটে যায়। কেউ কারোর সাথে কোনো কথা বলে না। কিছুক্ষণ পর তনুর রাগ কমে যায়। রাগ কমার পর তনু কি মনে করে যেনো ডেস্কের ডয়ার খুলে ডয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর আকাশকে বলে,
--'চুপ করে আমার চেয়ারটায় বস।'
আকাশ তনুর আচরণ দেখে পুরো তাজ্জব হয়ে যায়। আকাশের মাথায় কাজ করছে না এটা কি সত্যিই সেই তনু, যে একটু আগেই আকাশের জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলেছিল। আকাশ এক নজরে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে হা করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অপরদিকে তনু আকাশকে তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠে,
--'এই অকর্মার ঢেঁকি তোকে আমার চেয়ারটায় বসতে বলেছি। আমার কথাটা কি তোর কানে যায়নি?'
তনুর কথায় আকাশের হুঁশ ফিরে আসে। আকাশ তাড়াতাড়ি তনুর কথা অনুযায়ী চুপ করে তনুর চেয়ারটায় গিয়ে বসে। আকাশ তনুর চেয়ারে বসার পর তনু ফাস্টএইড বক্সটা খুলে নিজেই তুলো নিয়ে শুরুতে আকাশের কপালের রক্ত পড়া বন্ধ করে। এরপর তনু আকাশের কপাল ওয়াশ করে আকাশের কপালে পট্টি বেঁধে দেয়। তনুর আচরণ দেখে আকাশের মনে হচ্ছে তনু যেনো তার বিয়ে করা বউ। আর এমনটা মনে হওয়ার আরো একটা কারণ রয়েছে। তনু আকাশের কপালে পট্টি বেঁধে দেওয়ার জন্য যখন আকাশের কাছাকাছি যায়, তখন আকাশ তার থুঁতনিটা নিজের অজান্তেই অনেকটা সময় তনুর পেটের সাথে ঠেকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু তনু তাকে কিছুই কিছুই বলেনি। তার উপরে তনু তাকে নিজেই পট্টি বেঁধে দিয়েছে। আকাশ তনুর এমন শোভনীয় আচরণ দেখে প্রথম দিনেই তনুর মায়ায় আঁটকে যায়। যদিও বা তনুর সাথে আকাশের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি, কিন্তু তার পরেও আকাশের কেন জানি ইচ্ছে করছে বিয়ের পরের সমস্ত ভুমিকা তনুর সাথে পালন করতে। আকাশ এক ধরনের মোহের মধ্যে আঁটকে গেছে। অপরদিকে তনু আকাশের কপালে পট্টি বেঁধে দেওয়া শেষ করতেই আকাশকে বলে
--'তোর কপালে পট্টি বেঁধে দিয়েছি। এবার তুই উঠে দাঁড়া আমি চেয়ারে বসবো। তারপর তুই আমার পা টিপে দিবি। হিসাব বরাবর। আমার কেন জানি মনে হয়েছে প্রথমদিন হিসেবে তোর উপরে অন্যায়টা একটু বেশি করে ফেলেছি। তাই মানবতা দেখিয়ে পট্টি বেঁধে দিয়েছি। এবার তুই নিজের মানবতা দেখেয়ে আমার পা টিপে দে। এটা তোর দিক থেকে মানবতা হলেও আমার দিক থেকে এটা তোর জন্য শাস্তি। কারণ তুই আমার গলা চে~পে ধরেছিস। যেটা তোর করা কখনোই উচিত হয়নি। তুই সাময়িকের জন্য ভুলে গিয়েছিস আমি তোর অফিসের ম্যাডাম। তাই জিনিসটা তোকে মনে করিয়ে দিতে তোকে দিয়ে আমার পা টেপাবো। দেখি এবার কাজে লেগে পড়।'
এতো সময় সব কিছুই ঠিক ঠাক ছিল। কিন্তু বর্তমানে তনুর কথাবার্তা গুলো শুনে আকাশের ভিতরে জন্মাবো সমস্ত মোহ লেজ গুটিয়ে পালায়। শেষমেশ তনুর পা টিপতে হবে আকাশের কথাটা শুনতেই আকাশের শরীর কেমন যেনো গুলিয়ে উঠে। তার বাবার ও অফিস ছিল। যেই অফিস আকাশ নিজেও বহুদিন সামলেছে। তবে আকাশ কোনোদিন কারোর সাথে এমন নির্মম আচরণ করেনি যেটা আজ তনু তার সাথে করছে। আকাশ বুঝে উঠতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত। বেচারার ভিতরে চরম পরিমাণে লজ্জা লাগছে তনুর কথা শুনে। সেই সঙ্গে বেশ অপমান ও লাগছে। কারণ শেষমেশ তাকে দিয়ে অফিসের ম্যাডাম পা টেপাতে চাইছে। যদি অফিসের বস একটা ছেলে হতো তাহলেও বিষয়টা মানা যেতো। কিন্তু অফিসের বস একজন মেয়ে। যার কারণে আকাশের লজ্জা লাগার পাশাপাশি ভিষণ আনকম্পোর্ট লাগছে। যার কারণে
কিছুক্ষণ আগের ন্যায় তনুর মতন করে আকাশ এবার তনুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যদি তার এই কাজ থেকে মুক্তি মিলে। কিন্তু আকাশের তো কখনো মিলবার নয়। তনু একটা কথা মুখ দিয়ে বের করেছে মানে সেটা সে করিয়েই ছাড়বে। তনু আকাশকে চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠে,
--'দ্যাখ আমি যেটা বলেছি সেটা তোকে করতেই হবে। জলদি পা টিপতে শুরু কর। না হয় বড় ফোনটা তোর দিকে ছুঁড়ে মে~রে কপালের আরেক পাশ ফাটিয়ে দিব।'
তনুর কথা শুনে অপারগ হয়ে আকাশ তনুর পায়ে হাত দেয়। লজ্জায় মাথা কা/টা যাচ্ছে মতন অবস্থা আকাশের। তবে তার কিছুই করার নেই। কারণ এই মেয়ের কথা না শুনলে অনেক বড় মুসিবত আসবে তার কপালে। তাই সে বাধ্য হয়ে তনুর পা টিপতে আরম্ভ করে। কিছু সময় পা টেপার পর অফিস ছুটির সময় হয়ে আসে। তাই তনু আকাশকে বলে,
--'হয়েছে এবার পা ছেড়ে উঠে দাঁড়া। আর মিনিট দুয়েকের মধ্যেই অফিস ছুটি হবে। যা আজকের মতন তোর ছুটি। আগামীকাল দশটার আগে অফিসে এসে হাজির হবি।'
--'আচ্ছা।'
আকাশ চোখ-মুখ মলিন করে তনুর কথার জওয়াব দিয়ে কেবিন থেকে বের হতে যাবে, তখনি তনু আবার পিছন থেকে আকাশকে ডেকে বলে,
--'এই যে একটু দাঁড়া। তোর বেতনটাই তো এখনো ঠিক করা হয়নি। তোকে কতো করে পারিশ্রমিক দিলে তোর পোষাবে বল? সাধারণ আমার আগের এসিস্ট্যান্টকে আঠারো হাজার করে দিতাম। তবে তোকে কতো দিলে তুই খুশি হবি বল? ত্রিশ হাজার?'
আকাশ ত্রিশ হাজারের কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়। কারণ তার এই সামান্য চাকরির জন্য ত্রিশ হাজার বেশ মোটা অঙ্কের একটা সেলারি। আকাশ তনুর মুখে ত্রিশ হাজার টাকা মাসিক বেতনের কথা শুনে অবাক হয়ে তনুকে বলে,
--'ম্যাডাম সত্যিই কি আমি হ্যাঁ বললে আপনি আমায় ত্রিশ হাজার পারিশ্রমিক দিবেন?'
--'হুম তোকে সত্যিই ত্রিশ হাজার পারিশ্রমিক দিব। কারণ তোর মতন অকর্মাকে দিয়ে আমি এক মাসে ত্রিশ লাখ টাকার বেশি কাজ উশুল করে নিব। তাই তোকে ত্রিশ হাজার টাকা মাসিক পারিশ্রমিক দিতে আমার মোটেও গায়ে বাঁধবে না। এবার বাড়ি যা। তোর বেতন ত্রিশ হাজার টাকা নির্ধারন করে দিলাম।'
আকাশ চুপচাপ আর কথা না বলে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। এদিকে আকাশ চলে যাওয়ার পর তনুও অফিস থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে যায়। বাসায় যাওয়ার পর হাসি মুখে তনু নিজের মা'কে বলে,
--'মা তোমার মনে আছে পাঁচ বছর আগের সেলিম সাহেবের কথা?'
--'হ্যাঁ অবশ্যই মনে আছে। উনার কথা মনে না থাকলে কি করে হবে। উনি যে তোর বাবার বিজনেস পার্টনার ছিল।'
--'মা সেই সেলিম সাহেবের ছেলে আকাশ আজ আমার অফিসে চাকরি নিয়েছে।'
--'মা-শা আল্লাহ এটা তো বেশ ভালো সংবাদ।'
--'হ্যাঁ মা বেশশ ভালো সংবাদ। কারণ সেলিম সাহেবের পরিবারের সাথে আমাদের এতো ভালো সম্পর্ক থাকা সত্বেও গত পাঁচ বছর আগে তারা আমাদের অসময়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। তার উপরে সেলিম সাহেবের ছেলে গত পাঁচ বছর আগে আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করে আমাকে অপমান করেছে। আমি সমস্ত কিছুর প্রতিশোধ নিব এবার সেলিম সাহেবের ছেলে আকাশের কাছে। একদম আকাশের জীবন টাকে নড়ক বানিয়ে দিব। পরিশেষে আকাশ তো পথে নামবেই সেই সঙ্গে আকাশের পরিবারকেও পথে নামাবো। যেমনটা গত পাঁচ বছর আগে আমাদের সাথে হয়েছিল।'
আকাশ তনুর অফিসে জয়েন করেছে সেই কথাটা শুনা মাত্রই তনুর মা ভিষণ খুশি হয়। তবে পরবর্তীতে তনুর কথা শুনে তনুর মা'য়ের হাসিমাখা মুখ খানা মুহূর্তের মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে যায়। তনুর মা তনুর কথা শুনে ভূত দেখার মতন করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে....
--'আকাশের জীবন টাকে একদম নড়ক বানিয়ে দিব। পরিশেষে আকাশ তো পথে নামবেই সেই সঙ্গে আকাশের পরিবারকেও পথে নামাবো। যেমনটা গত পাঁচ বছর আগে আমাদের সাথে হয়েছিল।'
আকাশ তনুর অফিসে জয়েন করেছে সেই কথাটা শুনা মাত্রই তনুর মা ভীষণ খুশি হয়। তবে পরবর্তীতে তনুর কথা শুনে তনুর মা'য়ের হাসিমাখা মুখ খানা মুহূর্তের মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে যায়। তনুর মা তনুর কথা শুনে ভূত দেখার মতন করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনুর মা জানতো তনুর ভিতরে সেলিম সাহেবের পরিবারকে নিয়ে অনেকটা রাগ অভিমান রয়েছে। বিশেষ করে সেমিল সাহেবের ছেলে আকাশের উপরে। কিন্তু রাগের পরিমাণটা যে এতোটা বেশি সেটা তনুর মা তনুর মুখে শুনার পর রীতিমতো অবাক। ভূত দেখার মতন করে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তনুর মা তনুর দিকে। অপরদিকে তনু তার মা'কে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তার তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করে,
--'মা তুমি আমার দিকে এমন অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকিয়ে আছো কেন? তোমার তো আরো আমার থেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা। কারণ আমার বাবা মানে তোমার স্বামীর অসময়ে সেলিম সাহেবের পরিবার কোনো প্রকার সাহায্য করেনি। যদি তিনারা সাহায্য করতো তাহলে হয়তো আজ তোমার স্বামী বা আমার বাবা বেঁচে থাকতো। আমার বাবার মৃত্যুর জন্য সেলিম সাহেবের পরিবার পুরোপুরি দায়ী। এক সাথে এতো বছর সেলিম সাহেব আমার বাবার সাথে বিজনেস করেছে, কিন্তু যখন আমার বাবার দুঃসময় এসেছে, তখন সেলিম সাহেব কেটে পড়েছে। এছাড়া মা গত পাঁচ বছর আগে বাবা মা'রা যাওয়ার সাপ্তাহ দুই সাপ্তাহ পর যখন আমরা শহর ছেড়ে চলে যাবো তার দুইদিন আগে আমি নির্লজ্জের মতন সেলিম সাহেবের ছেলে আকাশকে নিজের মনের কথা বলেছিলাম। তখন সে আমাকে থা'প্পড় মা'রার পাশাপাশি আমাকে আমার বান্ধবীদের সামনে অপমান করে বলেছিল, আমি তার যোগ্য নই। আমার মতন অসংখ্য মেয়ে নাকি দৈনিক তার পিছনে ঘুরে। আমার কোনো স্টাটাস নেই। আমার বাবার টাকা পয়সা ডুবে যাওয়ায় আমি নাকি তাদের অর্থসম্পদের লোভে তার সাথে সম্পর্কে জড়াতে চাচ্ছি। মা জানো সেদিন আকাশ আমাকে আমার বান্ধবীদের সামনে থা'প্পর মা'রায় যতোটা কষ্ট পাইনি, তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট পেয়েছি তার কথাবার্তা শুনে। আমি সেদিন অপমানে মাথা মাটির দিকে নুইয়ে রেখেছিলাম। আর সেই সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমার বাবার চাইতেও দ্বিগুণ নাম ডাক আর অর্থসম্পদ আমি জুড়াবো। সেদিন সে আমার ভিতরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তার সাথে সাথে পরিশেষে সে আমায় আরো একটা কথা বলেছিল, আমি যদি কখনো তার লেভেলে
যেতে পারি তাহলে সেদিন গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার কথা বলতে। তখন সে আমাকে মেনে নিবে। মা সেদিন আমার ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়েছিল আকাশের কথা শুনে। যার কারণে আমি দিন-রাত পরিশ্রম করে নিজেকে এই পজিশনে নিয়ে এসেছি। তবে মা সে এখন আমার লেভেলে নাই। আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে এখন বুক ফুলিয়ে হাজারটা কথা বলতে পারবো, কিন্তু সে আমার সামনে বুক ফুলিয়ে একটা কথা বলবে সেই যোগ্যতাটাও বর্তমানে তার নেই। সে বর্তমানে আমার অফিসের নিম্নস্তরের একজন কর্মচারী। আজ আমার সময় চলছে। তার সময়টা বহু আগেই ফুরিয়ে গেছে। এখন তাকে আমি নিজের যোগ্যতা দেখাবো পদে পদে। তারপর সে শিক্ষা পাবে।'
তনুর মা তনুর কথা শুনে তনুকে শান্ত গলায় বলে,
--'তনু গত পাঁচ বছর আগের ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে আজ তুই এতোদিন পর এসে আকাশের উপরে প্রতিশোধ নিতে চাইছিস যেটা তোর একদম উচিত হচ্ছে না। হ্যাঁ আমাদের অসময়ে সেলিম সাহেব আমাদের উপকার করেনি। এছাড়া আকাশ তোকে অপমান করেছিল। তবে তাই বলে যে তুই সেম কাজটাই আকাশের সাথে করবি সেটা কিন্তু একদম ঠিক না।'
--'মা তোমার কাছে সেটা ঠিক না লাগলেও আমার কাছে একদম ঠিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ সে আমার প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিল আমার যোগ্যতা নেই বলে। কিন্তু বর্তমানে সে আমার অফিসের কর্মচারী। আর আমি অফিসের ম্যাডাম। মা আমি তার উপরে বিনা কারণে প্রতিশোধ নিচ্ছি না। সে আমার সাথে অন্যায় করেছে বিধায় আমি তার উপরে সেসবের প্রতিশোধ নিব। আর আমার কাজে তোমার আরো খুশি হওয়া উচিত। কারণ তোমার স্বামীর মরণের জন্য সেলিম সাহেবের পরিবার দায়ী।'
--'তনু তোর কাছে প্রতিশোধ নেওয়াটা আনন্দজনক হলেও সেটা আমার কাছে আনন্দজনক না।'
--'তাহলে মা তোমাকে আর আমার কিছু বলার নেই। তবে আকাশের উপরে আমি প্রতিশোধ নিব সেটা আমি মনে মনে একদম ঠিক করে ফেলেছি। ওর কোনো ছাড় নেই। যে যেমন কর্ম করবে তেমনটাই তাকে ফল পেতে হবে।'
--'তনু তুই যেহেতু ঠিক করেই নিয়েছিস আকাশের উপরে প্রতিশোধ নিবি, তাহলে সেখানে আর আমার কিছু বলার নেই। তবে একটা কথা জানিস তনু, কিছু সময় কিছু জিনিস সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিতে হয়। কারণ আগ বাড়িয়ে সব কিছু নিজে করতে গেলে সেটাতে অনেক সময় ভুল হয়।'
--'মা ভুল হলে হোক। তবে আমি প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।'
--'ঠিক আছে নে। আমি তোকে কোনো প্রকার বাঁধা দিব না। আর না কখনো তোর এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবো। তবে তোকে এই বিষয়ের উপরে শেষ আরেকটা কথা বলবো। তনু এই শহরটা অনেক অনেক বিষাক্ত। বিশেষ করে আমাদের জন্য। কারণ এই শহরে থাকা অবস্থাতেই আমরা তোর বাবাকে চিরতরের জন্য হারিয়েছি। দেখিস তোর বেলাতেও যেনো এমনটা না হয়, যে তুই প্রতিশোধ নেওয়ার চক্করে আকাশকে চিরতরের জন্য হারিয়ে বসেছিস। তাহলে কিন্তু সারাটা জীবন তোর চোখের পানি নিয়ে কাটাতে হবে।'
--'মা বাবার বিষয়টা ভিন্ন। আর আকাশকে হারালে আমার কিছুই আসবে যাবে না। কারণ আকাশকে এখন তো আর আমি ভালোবাসি না। আর না তার সাথে আমি সারাজীবন সংসার করবো। তবে আজ সকালে একটা এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে আকাশকে আমি তিন বছরের জন্য বিয়ে করেছি। কিন্তু সেটা শুধু তার উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। আকাশ চাইলে চাকরি থেকে যে কোনো সময় চলে যেতে পারে। আমি তাকে যতোই শর্ত দিয়ে চাকরি দেই না কেন, সে পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দিলে তাকে খুঁজে পাওয়া আমার জন্য কষ্টের হবে। তবে তাকে বিয়ে করার কারণে সে আমার কাছে ধরা। এগ্রিমেন্ট বা কন্ট্রাক্ট পেপার নিয়ে আমি থানায় গেলে আকাশ আন্ডারগ্রাউন্ডে লুকিয়ে থাকলেও থানার লোকেরা তাকে খুঁজে বের করে ফেলবে। তাই তাকে আমি কৌশল করে বিয়ে করেছি। যাতে করে সে চাকরি ছাড়লেও আমার থেকে মুক্তি না পায়। আমি আগামী তিন বছর তার উপরে নানান ভাবে প্রতিশোধ নিব। তারপর তার চোখের সামনেই আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করে সংসার করবো।'
--'তনু আকাশ না হয় তোকে অপমান করে অন্যায় করেছে। তবে তুই যেটা করতে চাইছিস সেটা কিন্তু মহা অন্যায়। আর মানুষ কখনো সময়ের আগে অসময়ে আফসোস করে না। সব কিছুর একটা সঠিক সময় থাকে। তনু আমার কথা মিলিয়ে নে, তুই যেটা করতে যাচ্ছিস সেটার জন্য তোর অনেক বড় মাশুল দিতে হবে।'
--'মা প্লিজ অলক্ষুণে কথাবার্তা বলো না। আমি কোথায় ভাবলাম তুমি আরো খুশি হবে। কিন্তু এখন দেখছি তুমি খুশি হওয়ার বদলে আমাকেই আবোল-তাবোল বলছো।'
--'আচ্ছা বাদ দে এখন এসব কথাবার্তা। অফিস করে এসেছিস যা ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি চুলোয় চা বসাচ্ছি।'
--'ঠিক আছে।'
তনু তার মা'য়ের কথা মতন ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আর তনুর মা তনুর জন্য কিচেনে গিয়ে চা বসায়। অপরিদকে আকাশ ও বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। আকাশের আগমনে আকাশের মা রহিমা বেগম বাসার দরজা খুলে। কিন্তু রহিমা বেগম দরজা খুলতেই আকাশের কপালে ব্যান্ডেজ দেখে চমকে উঠে। চোখ-মুখ মলিন করে ছেলেকে প্রশ্ন করে,
--'আকাশ কপালে কি হয়েছে তোর?'
--'মা ছোটোখাটো একটা চোট পেয়েছি।'
--'এই ছেলে কি করে ছোট পেলি তুই? আর কতোখানি লেগেছে তোর?'
রহিমা বেগমের প্রশ্নের উত্তরে আকাশ মিথ্যা উত্তর দেয়।
--'আরে মা তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠার সময় বাড়ি খেয়েছি। তবে মা বেশি একটা লাগেনি। অল্প একটু লেগেছে। মা তুমি একদম টেনশন করো না।'
--'এই ছেলে এতো বড় হয়ে গেছিস কিন্তু এখনো সাবধানে চলাফেরা করতে পারিস না। আর তুই বললেই কি আমার টেনশন হবে না নাকি?'
--'মা ছাড়ো তো ওসব। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন তোমাকে একটা গুড নিউজ শুনাই। মা আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।'
--'আলহামদুলিল্লাহ।'
--'তবে মা জানো আজ আমার সাথে বেশ আশ্চর্যজনক একটা ঘটনা ঘটেছে।'
--'কি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে আবার তোর সাথে?'
--'মা আমি যেই অফিসে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছি, সেই অফিসের বস হচ্ছে বাবার বিজনেসের পার্টনার জসিম সাহেবের মেয়ে তনু।'
--'কিহহহ! তার মানে সে তোকে দেখা মাত্রই চাকরিটা কনফার্ম করে দিয়েছে তাই না?'
রহিমা বেগমের কথা শুনে আকাশ মুখ বাঁকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে,
--'না মা চাকরিটা সে আমাকে দেখে দেয়নি। চাকরিটা নেওয়ার জন্য আমাকে অনেক বড় একটা রিস্ক নিতে হয়েছে।
--'ওমা এটা কেমন কথা! তনুকে কি তুই নিজের পরিচয় দেস নি? বা সে কি তোকে চিনতে পারেনি? আর কিসের রিস্ক নিয়েছিস তুই?'
--'মা তনুকে আমার পরিচয় দেওয়ার দরকার পড়েনি। আমার চেহারাটা তার একদম মনের মধ্যে গাঁথা। আর রিস্ক বলতে তনু আমাকে দিয়ে একটা কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করিয়েছে।'
--'কিসের কন্ট্রাক্ট পেপার? আর কি কারণে তনু এমনটা করলো?'
--'মা কন্ট্রাক্ট পেপারটা ছিল তিন বছরের চুক্তির বিয়ের। তনু আমাকে আগামী তিন বছরের জন্য চুক্তিতে বিয়ে করেছে। আর সেই সঙ্গে চুক্তির মধ্যেমে আগামী তিন বছরের জন্য আমাকে আঁটকেছে তার অফিসে। আমি আগামী তিন বছর চাইলে তার অফিস ছেড়ে যেতে পারবো না। তনু চায় আমার উপরে প্রতিশোধ নিতে। তাই সে এই নোংরা কাজটা করেছে।'
--'আকাশ কি বলছিস এবস! আমার তো মাথায় কিছু কাজ করছে না! আকাশ তোর একদম উচিত হয়নি এতোকিছু করে চাকরিটা নেওয়া। দরকার হয় আরো কিছুদিন কষ্ট করতাম তোর অন্য কোথাও চাকরি হওয়া পর্যন্ত। এছাড়া তুই তো বুঝতেই পেরেছিস তনু তোর উপরে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। তাহলে কেন তুই ওর ফাঁদে পা দিলি?'
--'মা তনুর কোম্পানিটা শহরের নাম করা একটা কোম্পানি। এছাড়া সংসারের অভাব-অনটন দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাই চাকরিটা হাত ছাড়া করিনি। আর তাছাড়া আরেক টা কারণ আছে চাকরি নেওয়ার সেটা তো তুমি জানোই।'
--'হ্যাঁ জানি। কিন্তু বাবা তোর যদি বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করে দেয় তনু?'
--'আহ মা তুমি টেনশন করো না। দেখবে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।'
--'তাই যেনো হয়।'
--'আচ্ছা মা এখন খাবার রেডি করো। আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আসছি। কাজের চাপে আজ দুপুরে সেভাবে খাওয়া হয়নি। বেশ খিদে লেগেছে।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি টেবিলে খাবার লাগাচ্ছি।'
আকাশ ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওয়াশরুম ঢুকে গা থেকে শার্ট খোলার পর আকাশ দেখে তার পেটের অনেক খানি জায়গায় ফোস্কা পড়েছে। ঐ যে তনু আকাশের দিকে গরম চা ছুঁড়ে মে'রেছিল অফিসে, যার ফলেই আকাশের পেটে ফোস্কা পড়েছে। আকাশ নিজের পেটের অবস্থা দেখে ভাবে, চা ছুঁড়ে মা'রা আর কপালে চোট পাওয়ার বিষয়টা যদি সে তার মা'কে খুলে বলতো, তাহলে তার মা তাকে আর তনুর অফিসে চাকরি করতে দিবে না। আকাশ এই কারণেই কপালে চোট পাওয়ার বিষয়টা নিয়ে মা'য়ের কাছে মিথ্যা বলেছে। আকাশ বিষয় গুলা নিয়ে ভাবতে ভাবতে গোসল শেষ করে। তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমে এসে পোড়া ঘায়ের মলমটা পেটে লাগিয়ে গায়ে শার্ট পড়ে খেতে চলে যায়। আকাশের মা ইতিমধ্যে টেবিলে খাবার লাগিয়ে দিয়েছে। আকাশ খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে আসে। এরপর রুমে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট করার মনোভাব নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকে। কিন্তু আকাশ কখন যে ঘুমিয়ে যায় সেটা সে নিজেও বলতে পারে না। তবে তার ঘুম ভাঙ্গে ফোনের আওয়াজে। চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানার এক পাশে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে কেউ বলে উঠে,
--'মিস্টার আকাশ আমি তনু বলছি। শুন আমি তোকে ম্যাসেজ করে একটা বাড়ির ঠিকানা পাঠিয়েছি। তুই জলদি সেই বাড়ির নিচে এসে আমার জন্য অপেক্ষা কর। আমি মিনিট দশেক পর নিচে নামছি। তারপর আমরা কয়েকজন বান্ধবী মিলে শপিং করবো। আর তুই ও আমাদের সঙ্গে যাবি আমাদের জিনিসপ্রত্র গুলা ক্যারি করতে।'
তনুর কথা শুনে আকাশের মাথা গরম হয়ে যায়। কারণ এমনিতেই বেচারাকে ঘুম থেকে ফোন দিয়ে উঠিয়েছে। তার উপরে তনু তাকে ঘরের পোষা চাকরের মতন ব্যাগ ক্যারি করার কথা বলছে। আকাশের ইচ্ছা করছে ফোনের মধ্যে দিয়ে ঢুকে গিয়ে তনুকে কোষে এক থা'প্পড় লাগাতে। তবে আকাশ নিজের রাগেকে তনুর সামনে প্রকাশ করে না। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে শান্ত গলায় বলে,
--'ম্যাডাম আমি আসতে পারবো না। কারণ এখন কোনো অফিস টাইম না যে আমি আপনার কাজ করবো। আর আপনি আমাকে যেই কাজের কথা বলছেন সেটা একদম আপনার ব্যক্তিগত। ম্যাডাম আমি আপনার অফিসের এসিস্ট্যান্ট। অফিসের কাজ ছাড়া আপনার ব্যক্তিগত কোনো কাজ আমি করবো না।'
--'দ্যাখ আমার কথার অমান্য করে নিজের বিপদ ডেকে আনিস না। তুই ভালো করেই জানিস আমার কথার অমান্য করলে তোর জন্যই ক্ষতি হবে। তাই ভালোয় ভালোয় বলছি দশ মিনিটের মধ্যে আমার লোকেশনে এসে হাজির হ। ফোন রাখলাম।'
তনু আকাশকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয়। এদিকে আকাশের মেজাজ আগের চেয়ে আরো বেশি গরম হয়ে যায়। তবে আকাশের কিছুই করার নেই। সে যদি এখন তনুর কথা না শুনে তাহলে সেটার শোধ তনু অফিসের মধ্যে তুলবে। তাই আকাশ তনুর কথা মতন গায়ে অন্য আরেকটা শার্ট লাগিয়ে তনুর পাঠানো ঠিকানায় চলে যায়। তারপর সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তনুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তনু বাড়ি থেকে নিচে নেমে আকাশের কাছে আসে। তনু যেই বাড়ি থেকে নিছে নেমেছে সেটা তনুর নিজের বাড়ি। আর আকাশ এটা তনুর সাথে ফোনে কথা বলা অবস্থাতেই বুঝে গিয়েছে। তনু আকাশের কাছে আসার পর গ্যারেজ থেকে নিজের গাড়ি বের করে আকাশকে নিয়ে শপিংমলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। তনু নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে। আর আকাশ তার পাশের সিটে চুপচাপ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ গাড়ি করে যাত্রা করার পর আকাশ আর তনু শপিংমলে গিয়ে পৌঁছায়। শপিংমলের সামনে তনুর ফ্রেন্ডরা দাঁড়িয়ে তনুর জন্য বহু আগ থেকেই অপেক্ষা করছে। তনু শপিংমলে পৌঁছে নিজের বান্ধবীদের সাথে দেখা করে তাদের নিয়ে শপিংমলে ঢুকে যায়। আর আকাশকে তার পিছনে পিছনে যেতে বলে৷ তনু আর তার বান্ধবীরা শপিংমলে ঘুরে ঘুরে অনেক শপিং করে। তনু নিজের ক্রয়কৃত জিনিস গুলা সব আকাশের হাতে ধরিয়ে দেয়। তবে তনুর বান্ধবীরা যখন তাদের ক্রয়কৃত জিনিস আকাশের হাতে দিতে যাবে ক্যারি করার জন্য, তখন জিনিসটা তনুর কেমন যেনো গায়ে গায়ে। তাই সে সবাইকে বলে নিজের জিনিস নিজেকেই ক্যারি করতে। আর তার জিনিস গুলোই খালি সে আকাশের হাতে দেয়। এরপর শপিং শেষ করে যে যার মতন বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে যায়। আর তনু আকাশকে নিয়ে গাড়ি করে নিজের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। বাড়ির সামনে পৌঁছানোর পর গাড়ি সাইড করে তনু আকাশকে বলে তার শপিংব্যাগ গুলো বাসা অব্দি পৌঁছে দিতে। আকাশ কোনো কথাবার্তা ছাড়া চুপচাপ তনুর কথা মেনে জিনিস গুলো সঙ্গে নিয়ে তনুর পিছনে পিছনে যেতে থাকে। তনু বাড়ির দরজার সামনে পৌঁছে দরজার কলিংবেল বাজাতেই তনুর মা এসে দরজা খুলে দেয়। তারপর তনু আকাশের হাত থেকে শপিংব্যাগ গুলো নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে আকাশকে বলে,
--'হয়েছে এবার তুই বাড়ি চলে যা।'
আকাশ তনুর কথা শুনে চলে আসতেই ধরবে, তখনি তনুর মা ঘরের ভিতর থেকে তনুকে ধাক্কা দিয়ে দরজার বাহিরে বের করে দেয়। এরপর আকাশের হাত ধরে টেনে তাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তনু পুরোপুরি অবাক হয়ে যায় তার মা'য়ের এমন আচরণে....
আকাশ তনুর কথা শুনে চলে আসতেই ধরবে, তখনি তনুর মা ঘরের ভিতর থেকে তনুকে ধাক্কা দিয়ে দরজার বাহিরে বের করে দেয়। এরপর আকাশের হাত ধরে টেনে তাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তনু পুরোপুরি অবাক হয়ে যায় তার মা'য়ের এমন আচরণে। তনু বুঝে উঠতে পারছে না কি ঘটছে তনুর সাথে। সব কিছু কেমন যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তনুর। বেকুবের মতন কিছুটা সময় দরজার বাহিরে আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তনু। কিন্তু সে তারপরেও কোনো আগামাথা বুঝে উঠতে পারে না। তাই সে দরজায় বাড়ি নিয়ে নিজের মা'কে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
--'মা এটা কি হলো? তুমি আমায় দরজার বাহিরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করলে কেন?'
তনুর মা তনুর চেঁচানি শুনে আকাশকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তিনি দরজার সামনে আসে। এরপর মেয়ের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে ঘরের ভিতর থেকে বলে উঠে,
--'কি হলো সেটা তো তুই নিজেই দেখতেই পেলি। তোকে দরজার বাহিরে বের করে দিয়েছি। আর আমার এমমটা করতে ইচ্ছে হয়েছে তাই আমি এমনটা করেছি।'
--'মা দেখো আমার প্রচন্ড রাগ উঠছে দরজা খুলো।'
--'দরজা খোলা যাবে না। তুই বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাক।'
তনুর মা'য়ের কথা শুনে রাগে তনুর সারা শরীর কটকট করতে থাকে। মেজাজ পুরো চূড়ায় গিয়ে পৌঁছেছে তনুর। আগের বারের চাইতে গলার সাউন্ড আরো বড় করে দরজায় লাগাতার বাড়ি দিয়ে বলে,
--'মা দরজা খুলো। আমার কিন্তু প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এবার কিন্তু ভয়ানক কিছু ঘটবে বলে দিলাম।'
তনুর মা এবার দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই তনু হাতে থাকা শপিংব্যাগ গুলো হাত থেকে নিচে ছুঁড়ে বলে,
--'মা সমস্যাটা কোন জায়গায় তোমার? তুমি আমাকে ঘরের বাহিরে বের করে দিয়ে ঐ অকর্মা টাকে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়েছো এর কারণ কি?'
--'কারণ হলো তুই আকাশকে বাসা অব্দি এনে তাকে বাসায় না ঢুকতে বলে চলে যেতে বলেছিস।'
--'তো কি করবো? তার কাজ শেষ তাই আমি তাকে চলে যেতে বলেছি। কিন্তু তুমি তো দেখছি তাকে জামাই আদর করে ঘরে ঢুকিয়েছো। মনে হচ্ছে যেনো সে তোমার বাড়ির জামাই।'
--'তোর যেটা করনীয় সেটা তুই করিস নি। তাই তোকে বের করে দিয়ে আকাশকে টেনে ঘরে ঢুকিয়েছি। আর তুই ঠিক কথাই বলেছিস। সে আমার বাড়ির জামাই। তাই তাকে জামাইয় আদর করে টেনে ঘরে ঢুকিয়েছি। আজ সকালে তুই তাকে এগ্রিমেন্ট বা কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করিয়ে বিয়ে করে করেছিস, কিন্তু তুই সেটা যেই কারণেই করিস না কেন সে আগামী তিন বছরের জন্য আমার বাড়ির জামাই। আর আমি তার শ্বাশুড়ি। তাই আমারো কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে মেয়ের জামাই ঘরে আসলে তার সমাদর করা। সেজন্য আমি সেটাই করেছি।'
--'মা আকাশের বিষয়টা নিয়ে কিন্তু এবার একটু বেশি অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে।'
--'অতিরিক্ত আমি নয় তুই করেছিস। একটা মানুষ বাসা অব্দি আসলে তাকে বাসার ভিতরে ঢুকতে বলাটা ভদ্রতা। কিন্তু তুই ভদ্রতা তো দেখাস নি। বরং তাকে চলে যেতে বলে উল্টো আরো অপমান করেছিস।'
--'মা আমি তাকে বাসায় আসতে বলিনি সেটা তোমার কাছে অপমান করা বলে মনে হয়েছে। কিন্তু সে যে গত পাঁচ বছর আগে আমাকে আমার বান্ধবীদের সামনে থা'প্পড় মে'রে সত্যিকারত্বে অপমান করেছিল সেটা কি তোমার কাছে কিছুই না?'
--'তনু যেটা গত পাঁচ বছর আগে চলে গেছে সেটা চলে গেছে। অযথা পাঁচ বছর আগের বিষয় নিয়ে পাঁচ বছর পর রেষারেষি করার কোনো মানেই দেখি না। আর তাছাড়া তুই যেমনটা করেছিস তার সাথে সেটা তার পরিবার কোনোদিন ও তোর সাথে বা আমার সাথে করেনি। আমরা যতোবার তাদের বাসায় গিয়েছি তারা বরাবরের মতোই আমাদেরকে খাতিরযত্ন করেছে। তবে হ্যাঁ তোর বাবার খারাপ সময়ে হয়তো তারা এগিয়ে আসেনি। আর সেটার জন্য হতে পারে তাদের অন্য কোনো কারণ ছিল। কিন্তু তারা কখনোই আমাদেরকে এভাবে অপমান করেনি। তবে তুই আকাশকে ডিরেক্ট অপমান করেছিস। যেটা তোর মোটেও উচিত হয়নি।'
--'মা কোনটা উচিত আর কোনটা অনুচিত সেটা আমি ভালো করেই বুঝি। তোমার আমাকে নতুন করে এখন সেসব শিখাতে হবে না। আর তোমার যেহেতু তাকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা করার ইচ্ছে তাহলে তুমি করো। আমি আর এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবো না। তবে তাকে আমি সময় মতন সব কিছু বুঝাবো।'
--'তোর যা করার তুই করিস। এবার বকবক না করে ব্যাগ গুলো উঠিয়ে নিয়ে রুমে যা।'
তনু আর কোনো কথা না বলে রাগে ফসফস করতে করতে শপিংব্যাগ গুলো ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তনু চলে যাওয়ার পর তনুর মা আকাশকে বলে,
--'বাবা কেমন আছো তুমি?'
--'আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আপনি কেমন আছেন?'
--'এই তো বাবা আমিও আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা বাবা তুমি মাথায় চোট পেয়েছো কি ভাবে?'
--'আসলে আন্টি আজ বিকালে অফিস শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে গাড়িতে উঠার সময় গাড়ির সাথে একটু বাড়ি খেয়েছি।'
--'ইশশ রেহ! বেশি লেগেছে কি বাবা?'
--'না আন্টি বেশি লাগেনি। সামান্য একটু লেগেছে।'
--'কি যে করো তোমরা। একটু সাবধানে চলতে পারো না।'
--'আসলে আন্টি...
--'আচ্ছা হয়েছে আর বলতে হবে না। তবে আগামী থেকে একটু সাবধানে চলাফেরা করো।'
--'জ্বি আন্টি।'
--'আচ্ছা বাবা তুমি এবার একটু বসো। রাত তো অনেক হয়েছে৷ আমি টেবিলে খাবার লাগাচ্ছি। তারপর আমাদের সাথে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি যেও।'
--'না আন্টি আমার খাওয়া করা সম্ভব না। তনু এমনিতেই আমার উপরে বেশ রেগে আছে। সে যদি খাবার খেতে এসে আমাকে দেখতে পায় তখন সে আবারো রাগারাগি করবে।'
--'আরেহ আকাশ ছাড়ো তো তনুর কথা। ওর কথা চিন্তা করে লাভ নেই। দিন দিন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়। আর তনুর টা দিন কমছে খালি। তুমি ওর চিন্তা করো না। আমি খাবার রেডি করছি। তারপর আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করে পরে বাসায় যেও।'
--'না আন্টি প্লিজ এমনটা করবেন না। আসলে তনুকে নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে আমার বাসায় মা একা। ছোট বোন আফিয়াও বাড়িতে নেই। আফিয়া ছোট খালার বাড়ি কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছে। আমার যেতে হবে আন্টি। না হয় মা আমার অপেক্ষায় না খেয়ে বসে থাকবে।'
--'আকাশ কোনো মতে কি আজ আমার সাথে খাওয়া যায় না?'
--'আন্টি আজ সম্ভব না। পরে কখনো খাবো।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে আর জোর করলাম না। তবে পরেরবার আসলে কিন্তু না খেয়ে যেতে পারবে না বলে দিলাম।'
--'আচ্ছা আন্টি পরেরবার অবশ্যই খাওয়া দাওয়া করে যাবো। এবার তাহলে আমি যাই।'
--'ঠিক আছে।'
আকাশ তনুর মা থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। এরপর একটা রিক্সায় করে নিজের বাসায় চলে আসে। আকাশ এতো রাত করে বাড়ি ফেরায় আকাশের মা আকাশকে প্রশ্ন করে,
--'কিরে বাবা আজ এতো দেরি করলি যে? কখনো তো তুই নয়টার পর বাড়ির বাহিরে থাকিস না।'
--'আসলে মা একটা কাজের জন্য তনুদের বাসায় যেতে হয়েছে। কিন্তু তনুর মা আমাকে আঁটকে রেখেছিল রাতের খাওয়া দাওয়া করার জন্য। তাই এতো দেরি হয়েছে।'
--'ওহ আচ্ছা। আর তুই তাহলে তনুদের বাসা থেকে খেয়ে এসেছিস?'
--'না মা খাইনি। তনুর মা অনেক বার খাওয়ার জন্য জোর করেছিল, কিন্তু আমি কোনো মতে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে চলে এসেছি। কারণ একে তো তুমি বাসায় একা। তার উপরে তনুর কথা তো তুমি জানোই। আমি কাজ শেষ করে তনুর বাসার দরজা থেকেই চলে আসতে ধরেছিলাম। তবে তনুর মা আমায় জোর করে বাসার ভিতরে নিয়ে গিয়েছে। যেটা নিয়ে তনুর একটু রাগ হয়েছে। তাই আমি ওদের বাড়িতে আর খাওয়া দাওয়া করিনি।'
--'বেশ ভালো করেছিস। সেই মেয়ে সাপের পাঁচ পা দেখেছে। সময় হলে তার হুঁশ ঠিকানায় ফিরে আসবে।'
--'আচ্ছা মা এখন এসব বাদ দাও। আর খাবার রেডি করো।'
--'খাবার সেই বহু আগেই আমি রেডি করে রেখেছি। তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর দু'জনে খেয়ে নিব।'
--'ঠিক আছে।'
আকাশ ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে এসে মা'য়ের সাথে এক সঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়ে। রাত কেটে যায়। পরেরদিন সকাল আট টার দিকে আকাশ ঘুম থেকে উঠে যায়। ঘুম থেকে থেকে হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা পানি শেষ করে নয়টার কিছু সময় পরে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। বিশ মিনিট পর নয়টা চল্লিশের দিকে আকাশ অফিসে গিয়ে পৌঁছায়। অফিসে পৌঁছে দেখে অফিসের কর্মচারীরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছে। আকাশ অফিসে ঢুকে পড়ে। অফিসের ভিতরে ঢুকার পর ম্যানেজারের সাথে আকাশের দেখা হয়৷ ম্যানেজার আজ একটু আগেই এসে পড়েছে। ম্যানেজারের সাথে আকাশের দেখা হওয়ার পর ম্যানেজার আকাশকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে আকাশকে তার বসার স্থান দেখায়। এরপর আকাশকে বলে,
--'এটাই হচ্ছে তোমার বসার জায়গা। তুমি এখানে বসেই নিজের কাজকর্ম করবে। আর সেই সঙ্গে খেয়াল রাখবে ম্যাডাম বেল বাজাচ্ছে কিনা। তুমি গতকাল হয়তো দেখেছো ম্যাডামের টেবিলের উপরে ঘন্টার মতন কিছু একটা আছে। যেটা বাজালেই মনে করবে ম্যাডাম তোমাকে ডাকছে।'
--'আচ্ছা।'
--'এবার তাহলে থাকো। আমি ঐ দিক টাতে গেলাম।'
ম্যানেজার আকাশকে তার বসার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়। ম্যানেজার চলে যাওয়ার পর আকাশ চেয়ারের উপরে গিয়ে বসে পড়ে। আকাশের জন্য তনুর কেবিনের এক পাশে একটা ছোট ডেস্ক আর একটা চেয়ার রাখা হয়েছে। আকাশ তার বসার স্থানে বসে তনু আসার অপেক্ষা করতে থাকে। অপেক্ষা করতে করতে দশটা বাজার দুই মিনিট আগে তনু অফিসে প্রবেশ করে। তনু অফিসে প্রবেশ করার পর কেবিনে ঢুকার সময় আকাশকে ইশারা করে তার কেবিনে আসতে বলে। আকাশ তনুর আদেশ মতন তনুর পিছনে পিছনে তনুর কেবিনে প্রবেশ করে। আকাশ তনুর কেবিনে ঢুকতেই তনু আকাশকে বলে,
--'আচ্ছা আকাশ তোর সমস্যাটা কি?'
--'কেন ম্যাডাম কি হয়েছে? আমি কি কোনো ভুল করেছি নাকি?'
--'তুই গতকাল না খেয়ে বাসা থেকে এসেছিস কেন? মা তোকে এতো করে বলেছে গতকাল রাতে খেয়ে আসার কথা, কিন্তু তুই না খেয়েই চলে এসেছিস। তুই জানিস মা তোর জন্য গতকাল থেকে আমার উপরে অভিমান করে আছে। তার উপরে তিনি গতকাল রাতে কিছুই খায়নি। আমি রাতে কতোবার বলেছি খাওয়ার কথা, কিন্তু গতকাল তুই না খেয়ে আসার কারণে মা'ও রাতে খায়নি। কেন করেছিস এমনটা? আমি তোর উপরে রেগে ছিলাম বলে?'
--'না ম্যাডাম এমনটা নয়। আসলে আমার বাসায় মা একা। তাই তাড়াহুড়ো করে না খেয়ে চলে এসেছিলাম। কারণ না হয়তো মা আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকবে।'
--'আকাশ যেটাই হোক তোর খেয়ে আসা উচিত ছিল। একদিন আমার বাসায় খেলে তেমন কিছুই হতো না। আন্টিকে না হয় পরে গিয়ে বুঝিয়ে বলতি। কিন্তু তুই না খেয়ে আসায় মা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তার উপরে আমি নিজেও জানি তুই আমার কারণেই খাবার খাসনি। এছাও মা নিজেও আমায় বলেছে আমি খাবার খেতে এসে তোকে দেখলে রাগারাগি করবো তাই তুই খাসনি।'
আকাশ তনুর কথা শুনে কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে। সত্যিকারত্বে গতকাল রাতে তনুর বাসায় না খাওয়ার অনেক বড় কারণ কিন্তু তনু নিজেই ছিল। সেজন্য তনুর মা জোর করার পরেও আকাশ তাদের বাসায় খাবার খায়নি। না হয়তো এক রাত বাহিরে খেয়ে এসে আকাশ নিজের মা'কে বললে আকাশের মা আকাশকে এই বিষয় নিয়ে একটা কথাও বলতো না। আকাশ বেশ চিন্তায় পড়ে যায় তনুর কথার কি উত্তর দিবে। তাই সে চুপ করে আছে। অপরদিকে তনু আকাশকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে,
--'আচ্ছা শুন যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন গিয়ে কাজে মন দে। আর দুই ঘন্টা পর মানে ঘড়ির কাঁটায় বারোটা বাজলেই তুই আমার কেবিনে এসে দেখা করবি। তারপর তোকে নিয়ে একটা কাজে বের হবো।'
--'ঠিক আছে ম্যাডাম।'
তনুর কেবিন থেকে বেরিয়ে আকাশ নিজের ডেস্কে এসে বসে। দেখতে দেখতে বারোটা বেজে যায়। আকাশ বারোটা বাজতেই অনুমতি নিয়ে তনুর কেবিন প্রবেশ করে তনু তাকে নিয়ে বারোটার সময় কোথায় যেনো যাবে সেই কথাটা তনুকে স্বরণ করে দেয়। তনু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাইল নিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু আকাশ এসে তাকে নিয়ে বের হওয়ার কথাটা স্বরণ করে দিতেই তনু ফাইল বন্ধ করে দিয়ে আকাশকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে। এরপর তনু গাড়ি ড্রাইভ করে আকাশকে নিয়ে একটা ডক্টরের কাছে যার। পরে আকাশকে দেখিয়ে ডক্টরকে বলে,
--'ডক্টর ও মাথায় আর পেটে আঘাত লেগেছে। আপনি একটু দেখুন তো ওকে।'
--'ঠিক আছে দেখছি। তবে কি ভাবে আঘাত গুলো পেয়েছে উনি?'
--'ডক্টর আমরা দু'জন স্বামী-স্ত্রী। দু'জনের মধ্যে একটু ঝগড়া হয়েছিল। যার ফলে আমি ওর উপরে রেগে গিয়ে গরম চা আর ফোন ছুঁড়ে মে'রেছিলাম।'
ডক্টর আর আকাশ দু'জনেই তনুর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। বিশেষ করে আকাশ বেশি অবাক হয়। কারণ তনু ডক্টরের সামনে তাকে নিজের স্বামী বলে পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে ডক্টর তনুর কথা শুনে তার দিকে এক নজর আশ্চর্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকাশের জখম গুলো দেখতে শুরু করে। ডক্টরের ইচ্ছে করছে তনুকে ইচ্ছে মতন কথা শুনাতে। তবে তিনি সেটা করতে পারবেন না। কারণ তিনার কোনো রাইট নেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কথা বলার। তাই তিনি নিজের কাজে মন দেয়। ডক্টর আকাশের জখম গুলো দেখে প্রেসক্রিপশনের মধ্যে কিছু ঔষধ লেখে দেয়। আর ঔষধ গুলা কন্টিনিউ করতে বলে এবং সেই সঙ্গে আরো পেটের ফোস্কার জন্য একটা মলম ব্যবহার করতে বলে আকাশকে। ডক্টরের কাজকর্ম শেষ হলে তনু ডক্টরের ফিস দিয়ে আকাশকে নিয়ে ডক্টর চেম্বার থেকে বের হয়। এরপর আকাশের হাত পেঁচিয়ে ধরে আকাশকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগোতে থাকে। তনুর এমন আচরণে আকাশ আরো অবাক হয়ে যায়। রাস্তাঘাটে স্ত্রী যেই ভাবে স্বামীর হাত ধরে হাঁটে, তনুও সেভাবে আকাশের হাত ধরে রেখেছে। তার উপরে তনু তাকে এনে ডক্টর দেখিয়েছি। তনুর এমন আচরণে আকাশের মনে হচ্ছে তনু সত্যিকারত্বের তার বিয়ে করা বউ। আকাশের ভিতরে নতুন এক অনুভূতি জন্মাচ্ছে তনুকে নিয়ে। ভিতরটা খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে আকাশের। তবে আকাশ তনুকে কিছুই বলে না। চুপচাপ তার সাথে সাথে হাঁটতে থাকে। এভাবে তনু আকাশকে নিয়ে গাড়ির সামনা-সামনি যাওয়ার কিছুটা আগ মূহুর্তে হুট করে আকাশের হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলের কাছে যায়। এরপর ছেলেটার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করে। তনু আকাশের হাত ছেড়ে যেই জায়গা থেকে দৌড়ে ছেলেটার কাছে গিয়েছে, আকাশ সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে দু'জনের কথা বলার দৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। অপরদিকে তনু ছেলেটার সাথে দেখা করে কিছুটা সময় কথা বলার পর আকাশকে ডেকে বলে,
--'আকাশ এদিকে আয়। তোকে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পরিচিত করিয়ে দেই।'
ছেলেটা তনুর বয়ফ্রেন্ড হয় কথাটা তনুর মুখে শুনার পর আকাশের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। সেই সঙ্গে আকাশের হাসি-খুশী চেহারাটা মূহুর্তের মধ্যেই মলিন হয়ে যায়....
ছেলেটা তনুর বয়ফ্রেন্ড হয় কথাটা তনুর মুখে শুনার পর আকাশের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। সেই সঙ্গে আকাশের হাসি-খুশী চেহারাটা মূহুর্তের মধ্যেই মলিন হয়ে যায়। আকাশের মনের ভিতরে বিশাল এক ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। আকাশ কোনো ভাবেই তনুর মুখ থেকে তার বয়ফ্রেন্ডে কথা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু তনু আকাশকে তার বয়ফ্রেন্ডের কথা বলে অবাক করে দিয়েছে। আকাশ তনুর কথায় সাড়া না দিয়ে চোখ-মুখ মলিন করে তাদের দু'জনের দিকে তাকিয়ে আছে। অপরিদকে তনু আকাশের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আবারো আকাশকে বলে উঠে,
--'এই আকাশ তোর কি হয়েছে? তোকে আমি এদিকে আসতে বললাম, কিন্তু তুই দেখি রোবটের মতন সেই এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছিস। আমার কথা কি তুই শুনতে পাস নি নাকি?'
আকাশ তনুর কথা শুনে এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে। তারপর তনুর কথা মতন চুপচাপ হেঁটে তাদের দু'জনের সামনে যায়। আকাশ তনু আর তার বয়ফ্রেন্ডের সামনে যেতেই তনু তার বয়ফ্রেন্ডকে বলে,
--'সোহান এটাই হলো সেই অকর্মার ঢেঁকি আকাশ। যার কথা তোমায় আমি বলেছিলাম। আর আকাশ এটা হচ্ছে আমার বয়ফ্রেন্ড সোহান। নে তোদেরকে ইন্ট্রোডিউস করিয়ে দিলাম। এবার তোরা নিজেরা দু'জন কথা বল।'
তনুর কথা শুনে আকাশের রাগে পিত্তি ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনিতেই বেচারার ভিতরে তনুর বয়ফ্রেন্ডকে দেখে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। তার উপরে তনু তার বয়ফ্রেন্ড সোহানের সামনে আকাশকে অকর্মার ঢেঁকি বলে বাজে ভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আকাশের ইচ্ছে করছে তনুকে রসমালাইয়ের মতন টুকুস করে এক গালে গিলে খেয়ে ফেলতে। এছাড়া তনুর বয়ফ্রেন্ড সোহানের উপরেও বেশ রাগ উঠছে আকাশের। কারণ তার বিবাহিত স্ত্রীর উপরে সোহান লাইন মা'রছে। তবে হ্যাঁ তাদের বিয়েটা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার পরেও আকাশের কেন জানি তনুর প্রতি একটা টান জন্মেছে৷ যতো সময় যাচ্ছে আকাশ ক্রমাগত ভাবে ততোই তনুর প্রতি দূর্বল হচ্ছে। তনু আকাশকে এতো অপমান- অপদস্ত করে, কিন্তু তার পরেও আকাশ চায় তনু শুধু তার হয়ে থাকুক।
কিন্তু তার পরেও আকাশ চায় সে ছাড়া তনুর জীবনে আর কেউ কখনো কদম ফেলুক। কিন্তু সব কিছুই কেমন যেনো আকাশের ইচ্ছের বিপরীত হচ্ছে। আকাশ নিজের ভারসাম্যকে ঠিক রাখতে পারছে না তনুর বয়ফ্রেন্ডকে দেখে। তবে তার ভারসাম্য হারালে চলবে না। কারণ না হয়তো তনুর কাছে তাকে আবার অপমান হতে হবে। তনু এমনিতেই ছোট খাটো বিষয় নিয়ে আকাশকে অপমান করায় কমতি করে না। তার উপরে আকাশ যদি এখন নিজেকে সামলে না রাখে, তাহলে বড়সড় একটা তুফান আসবে তার উপরে। তাই আকাশ নিজেকে সামলে নিয়ে তনুর বয়ফ্রেন্ড সোহানের দিকে হ্যান্ড শেক করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সোহান আকাশের সাথে হ্যান্ড শেক না করে অপমানজনক ভাবে নিজের হাতকে আরো গুটিয়ে নিয়ে আকাশকে বলে,
--'থাক হাত মেলানোর প্রয়োজন নেই। এমনিতেই আমরা মুখে কথা বলতে পারি।'
সোহানের অপমানজনক আচরণ আর তার কথাবার্তা শুনে আকাশের মাথায় এবার রক্ত চোটে বসে৷ যার ফলে আকাশ আর নিজের উপরে কন্ট্রোল রাখতে পারে না। চোখে-মুখে রাগের ছাপ এনে সোহানকে বলে,
--'সুট-বুট পড়েছিস দেখে নিজেকে এলিট ক্লাস মনে হচ্ছে তোর? কিন্তু বাস্তবে তোকে আমার রাস্তার টোকাই বলে মনে হচ্ছে। এখনো মানুষের সাথে কোন ভঙ্গিমায় কথা বলতে হয় শিখতে পারিস নি। কিন্তু শরীর ভর্তি কারেন্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াস। শুন তোর মতন এলিট ক্লাস মানুষজন একটা সময় আমার পিছনে-পিছনে লাইন দিয়ে ঘুরতো। আর তুই এসে আমার সাথে ভাব নিচ্ছিস? একদম উল্টো করে ঝুলিয়ে তোর ভিতর থেকে সমস্ত ভাব বের করে ফেলবো টোকাই কোথাকার। আর ম্যাডাম আপনাকে বলি, নেক্সট টাইম এমন টোকাই-ফোকাইয়ের সাথে আমাকে পরিচয় করাবেন না কখনো। কারণ এই সব টোকাই-ফোকাই আমার সম্পর্কে না জানলেও আপনি কিন্তু ভালো করে জানেন আমি একটা সময় কেমন ছিলাম। তাই অনুরোধ করবো এসব নিচু মনমানসিকতার মানুষের সাথে আমাকে আর কখনো পরিচয় করাবেন না। আমি এবার গাড়ি উঠে বসলাম। আপনি টোকাইয়ের সাথে নিজের কথাবার্তা শেষ করে গাড়িতে আসুন।'
আকাশ রেগেমেগে অনর্গল ভাবে সোহানকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অন্যদিকে তনু আর সোহান আকাশের কথাবার্তা শুনে পুরো অবাক। সেই সঙ্গে সোহানের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে মতন অবস্থা। আসলে কথায় আছে না মানুষ বুঝে কথা বলতে হয়। কিন্তু সোহান সেটা করেনি। যার কারণে আকাশ সোহানের ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিয়ে চলে গেছে। সোহান লজ্জায় কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। অপরিদকে আকাশের বেশ শান্তি লাগছে সোহানকে অপমানের জওয়াব দিতে পেরে। মনে প্রশান্তি নিয়ে আকাশ গাড়িতে বসে আছে। কিন্তু সোহানকে কথা শুনিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসার পর বাহিরে দু'জনের মাঝে কি কথাবার্তা হচ্ছে বা কি ঘটছে সেসব নিয়ে আকাশের কোনো আইডিয়ার নেই। সে তার মতন চুপচাপ করে গাড়িতে বসে আছে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর তনু চোখ-মুখ লাল করে গাড়িতে উঠে বসে। এরপর গাড়ি স্টার্ট করে আকাশকে বলে,
--'এই আকাশ তুই কোন সাহসে সোহানকে অপমান করেছিস? তোর তো দেখছি অনেক সাহস বেড়ে গেছে।'
সোহানের হয়ে তনুকে কথা বলতে দেখে এবার আকাশের তনুর উপরেও চরম রাগ উঠে যায়। তাই সে
তনুকে বলে উঠে,
--'সাহসের তো এখনো কিছুই দেখিস নি। রাস্তার টোকাই টাকে নিয়ে ওকালতি করতে আসলে তোকে এখন কোষে এমন এক থা'প্পড় মা'রবো, সোজা গাড়ির দরজা ভেঙ্গে রাস্তার উপরে গিয়ে ছিটকে পড়বি। কি ভেবেছিস আমাকে? সব সময় চুপ করে থাকি বলে আমি দূর্বল? তুই আমাকে এটা সেটা বলিস সেটা না হয় কোনো ভাবে মানা যায়, কিন্তু কোন সাহসে তোর সেই রাস্তার টোকাই বয়ফ্রেন্ড আমাকে অপমান করে? এতো সাহস কই পেয়েছে সে?'
তনুর এমনিতেই মেজাজ খারাপ। আকাশ সোহানকে অপমান করে চলে আসার পর তনুর সাথে সোহানের ছোট খাটো একটা ঝামেলা লেগেছে। তার উপরে আকাশ এখন আবার তনুর সাথে তুইতোকারি করার পাশাপাশি তাকে থা'প্পড় মা'রবে বলেছে। আকাশের উপরেও তনুর এবার চরম রাগ উঠে যায়। রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে তনু আকাশকে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
--'এই অকর্মা গাড়ি থেকে নাম। না হয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোকে রাস্তায় ফেলে দিব। বেয়াদব তোর কতো বড় সাহস তুই আমার সাথে বড় গলায় কথা বলার পাশাপাশি আবার আমাকেই বলিস থা'প্পড় মা'রবি? এখুনি নাম তুই গাড়ি থেকে। না হয় তোর অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিব আমি।'
আকাশ আর কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে আরম্ভ করে। হাঁটতে হাঁটতে আকাশ অনেকটা সামনে চলে যায়। আর তনু রাস্তার একপাশে গাড়ি সাইড করে এখনো গাড়িতে বসে আছে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর তনু কি যেনো একটা ভেবে গাড়ি স্টার্ট করে আকাশের কাছে পৌঁছায়। এরপর আকাশের সামনে গাড়ি থামিয়ে আকাশকে ডেকে বলে,
--'এই আকাশ গাড়িতে এসে উঠে বস।'
--'না ম্যাডাম আমি আপনার সাথে যাবো না। আপনি গাড়ি নিয়ে চলে যান।'
--'আকাশ প্লিজ রাগ করিস না। গাড়িতে এসে বস প্লিজ।'
--'না ম্যাডাম আমি যাবো না। কারণ আমার মতন মানুষের কোনো যোগ্যতা নেই আপনার গাড়িতে বসার। আপনার বয়ফ্রেন্ড আমাকে আপনার সামনে অপমান করেছে। কিন্তু তখন আপনি তাকে কিছুই বলেন নি। কিন্তু আমি আপনার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে কয়েকটা কথা বলায় আপনার গায়ে লেগে গেছে। তো আমি আর আপনার গাড়িতে বসে কি করবো? এছাড়া আপনার সাথে বাজে বিহেভ করেছি। যার কারণে আপনি আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছেন। আমার সাথে এমনটাই হওয়া উচিত ম্যাডাম।'
--'এই আকাশ সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর আমি সোহানের তরফ থেকেও তোর কাছে ক্ষমা চাইছি। তুই এবার প্লিজ গাড়িতে উঠে বস।'
তনু আকাশের কাছে কয়েকবার ক্ষমা চাওয়ায় আকাশের মন গলে যায়। তাই সে তনুর কথা মতন গাড়িতে এসে উঠে বসে। আকাশ গাড়িতে উঠে বসতেই কেন জানি তনুর মুখে হাসি ফুটে উঠে। তনু গাড়ি স্টার্ট করে আকাশকে নিয়ে অনেক নামি-দামি একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে পৌঁছোয়। এরপর তনু আকাশকে বলে,
--'গাড়ি থেকে নাম। আজ দুপুরের খাবারটা আমরা দু'জন রেস্টুরেন্টে বসে একসাথে খাবো '
আকাশ তনুর কথা শুনে বেশ অবাক। কিন্তু সে কিছুই বলে না। তনুর কথা মতন চুপচাপ গাড়ি থেকে নিচে নামে৷ আকাশ গাড়ি থেকে নিচে নামতেই তনু সেই আগের ন্যায় আকাশের হাত পেঁচিয়ে ধরে। যেমনটা ডক্টরের কাছ থেকে বেরিয়ে করেছিল। তনুর চোখে-মুখে আনন্দের হাসি। তবে এই হাসি বেশিক্ষণ দীর্ঘায়ু হয় না। তনু আকাশের হাত পেঁচিয়ে করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আকাশ তনুর থেকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। যেটাতে তনু বেশ অবাক হয়। আর সেই সঙ্গে তনুর মুখের এক্সপ্রেশন ও পাল্টে যায়। তখনি আকাশ তনুকে বলে উঠে,
--'ম্যাডাম আমি আপনার আপন বা ঘনিষ্ট
কেউ নই। তাই আমার হাত এভাবে পেঁচিয়ে ধরার কোনো মানেই হয় না। এভাবে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হাত চেপে ধরে। কিন্তু আমরা তো সেই রকম কেউ না। হ্যাঁ যদিও বা আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়েটা আপনার জন্য শুধু মাত্র একটা মাধ্যম আমাকে জিম্মি করে কষ্ট দেওয়ার। তাই আমার মনে হয় না আমাদের এভাবে হাত ধরে হাঁটা উচিত। সেজন্য আমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়েছি৷'
আকাশের কথায় তনুর কেন জানি মনের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে আরম্ভ করে। আকাশের হাত শুরুতেই সে মনের আনন্দে পেঁচিয়ে ধরেছিল। তবে পরবর্তীতে আকাশ তার হাত ছাড়িয়ে নেওয়ায় তার মনের ভিতরে কেমন যেনো এক ধরনের খারাপ লাগা কাজ করছে। তনুর খানিকের জন্য মনে হচ্ছে আকাশ তার সত্যিকারত্বে হাসবেন্ড। তনু ভাবনায় পড়ে যায়। আকাশের হাত চেপে ধরার ইচ্ছা কেন তার মনে জেগেছে। আবার আকাশ তার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ায় কেন তার ভিতরে খারাপ লাগা কাজ করছে। তনু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না৷ তনু কিছুটা সময় ভাবে। তবে সে কোনো উত্তর পায়না। কিন্তু তনু শুধু এটুকুই জানে আকাশ তার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ায় তার ভিতরে একটা খারাপ লাগা কাজ করছে। কিন্তু কেন করছে সেটার উত্তর তনুর কাছে জানা নেই। তনু এক বিপাকে পড়ে যায়। তবে সে আকাশের সামনে লজ্জায় পড়বে দেখে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে আকাশকে বলে,
--'চল রেস্টুরেন্টের ভিতরে চল।'
তনু আকাশকে রেস্টুরেন্টের ভিতরে যেতে বলে সে হাঁটা শুরু করে। আর আকাশ তনুর কথা মতন তার পিছনে পিছনে হাঁটছে। দু'জনেই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে একটা টেবিলে গিয়ে বসে। বসার কিছুক্ষণ পর রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী এসে তাদেরকে খাবারের ম্যানু কার্ড দেয়। তনু ম্যানু কার্ডটা উঠিয়ে নিয়ে নিজের মন মতোই ম্যানু কার্ড থেকে অনেক ভালো ভালো খাবার নিজেদের জন্য অর্ডার করে। রেস্টুরেন্টের কর্মচারী খাবারের অর্ডার নিয়ে চলে যায়। অন্যদিকে আকাশ তনুর আচার-আচরণ দেখে খুব অবাক। কারণ আজ সকাল থেকেই তনুর মধ্যে কেমন যেনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছে সে। প্রথমে সে তাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো। তারপর ডক্টরের কাছে নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিলো। এরপর আকাশ তার সাথে গাড়িতে বাজে ভাবে কথা বললো, যার দরুন তনুর রেগে থাকার আকাশের উপরে। কিন্তু সে পরবর্তী নিজেই আকাশের কাছে সরি বলেছে। এছাড়া এখন আবার তাকে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্যে নিয়ে এসে ভালো ভালো খাবার অর্ডার করেছে। আকাশ ভাবনায় পড়ে যায় তনুর এমন পরিবর্তন দেখে। চুপচাপ বসে ভাবতে থাকে তনুকে নিয়ে। এভাবে বিশ মিনিট কেটে যায়। এরমধ্যে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী তনুর অর্ডার করা খাবার গুলো নিয়ে আসে। তবে আকাশ এখনো তনুর সম্পর্কে কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারে না। রেস্টুরেন্টের কর্মচারী খাবার দিয়ে যাওয়ার পর তনু আকাশকে বলে খাওয়া শুরু করতে। আকাশ তনুর কথা অনুযায়ী চুপ করে খেতে আরম্ভ করে। তনুও নিজের খাবার খেতে আরম্ভ করেছে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তনু রেস্টুরেন্টে বিল পরিশোধ করে আকাশকে নিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসে। এরপর গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে। কিছুটা পথ গাড়ি ড্রাইভ করে অতিবাহিত করার পর তনু আকাশকে বলে,
--'জানিস তোকে নিয়ে কেন রেস্টুরেন্টে এসেছি?
--'না জানি না!'
--'শুন তাহলে কারণ টা বলছি। ঐ যে তুই গতকাল না খেয়ে চলে এসেছিস সেজন্যই তোকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসেছি। জানিস তোর বিষয়টা নিয়ে গতকাল মা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তার উপরে আমি যখন জানতে পেরেছি তুই আমার জন্য খাবার খাসনি, তখন বিশ্বাস কর আমারো কেন অনেকটা খারাপ লেগেছে। তাই আজ তোকে সঙ্গে করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছি খাবার খাওয়ার জন্য।'
তনুর কথা শুনে আকাশের ভিতরে বেশ আনন্দ লাগে। কারণ সে খায়নি বলে কারোর অনেক পরিমাণে খারাপ লেগেছে। তাও সেটা আবার তনুর। তার মানে তনুর মনেও কিছুটা জায়গা হয়েছে আকাশের জন্য। ভিতরে ভিতরে লাড্ডু ফুটতে শুরু করে আকাশের। কিন্তু পরক্ষণেই আকাশের পিছনের ঐ সময়কার কথা মনে পড়ে, যখন তনু তার হাত ছেড়ে দিয়ে তার প্রেমিকা সোহানের কাছে দৌড়ে চলে গিয়েছিল। আকাশের চেহারায় আবারো হতাশা এসে ভর করে। বেশ খারাপ লাগছে আকাশের। আকাশ নিজের খারাপ লাগাকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে সেটা তনুকে বলে বসে,
--'ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।'
--'কি কথা বল।'
--'ম্যাডাম আপনি আর ঐ সোহান নামক ছেলেটার সাথে চলাফেরা করবেন না।'
--'এটা কেমন কথা আবার? সে আমার বয়ফ্রেন্ড। আমি তার সাথে চলাফেরা না করলে কার সাথে করবো? আর আমি তার সাথে চলাফেরা করলে তোর সমস্যাটা কোথায়?'
--'ম্যাডাম আপনাকে আমার অন্য কারোর সাথে সহ্য হয় না।'
--'মানে কি আকাশ?'
--'মানে হলো আপনাকে আমার সারাজীবনের জন্য চাই। তাই আপনি আমি ছাড়া আর অন্য কোনো পুরুষের সাথেই চলাফেরা করবেন না।'
আকাশের কথা শুনে তনু রেগে গিয়ে গাড়ি ব্রেক করে কোষে একটা থা'প্পড় বসিয়ে দেয় আকাশের গালে। আকাশ পুরো থতমত খেয়ে যায় তনুর হাতে থা'প্পড় খেয়ে। আজ সকাল থেকে তনু তার সাথে বিবাহিতা স্ত্রীর মতোই আচরণ করেছে। কিন্তু আকাশ তাকে এখন মনের কথা বলায় তনু তাকে কোষে থা'প্পড় লাগিয়ে দিবে সেটা আকাশ কোনোদিন ও কল্পনা করেনি। অসহায়ের ন্যায় তনুর দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ।
অপরদিকে তনু আকাশকে থা,প্পড় মা'রার পর রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে,
--'এই অকর্মা তোর সাহস কি করে হয় এসব কথাবার্তা বলার? একটু প্রশ্রয় দিয়েছি বলে মাথায় উঠে বসেছিস দেখি। কি যোগ্যতা আছে তোর আমার সাথে সারাজীবন থাকার? নিজের দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখেছিস? তোকে আমি কেন রাস্তার পাগল ও তোর সাথে থাকবে না। সেখানে তুই আমার সাথে সারাজীবন থাকার স্বপ্ন দেখছিস?'
তনুর হাতে কিছুক্ষণ আগে থা'প্পড় খেয়ে আকাশের মন খারাপ হলেও তনুর এখনকার কথা গুলো শুনে আকাশের রক্ত মাথায় উঠে যায়। যার ফলে আকাশ কোনো কিছু না ভেবেই দু'হাত দিয়ে হিংস্র পশুর ন্যায় খপ করে তনুর গলা চেপে ধরে....

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال