পাথরে ফুটাবো ফুল bangla golpo


 স্যার মেয়েটার জ্ঞান এখনো ফিরে নি।তবে ভালো হয়ে যাবে বলেছে..আপনি একটু বসেন.. অনেক সময় থেকে এভাবে দাড়িয়ে থাকার ক....

.
আর বলতে না দিয়ে হাতটা বাড়িয়ে চুপ করতে বলা হল।পাশের আর একটা ছেলে এগিয়ে এসে চেয়ারটা আর একটু টেনে দিল।আশেপাশের পরিবেশ দেখে মনেই হচ্ছে না এটা হস্পিটাল। কম করে হলেও শত ক্ষানেক লোক দাড়িয়ে আছে।কিছু লোকের হাতে রাইফেল রয়েছে।হসপিটালের সবাই কাঁপাকাঁপি করছে। ডাক্তার নার্সরা জড়সড় হয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।সবার মধ্যেই উত্তেজনা। না যানি কি হয়।সবার ভয় একজনকে নিয়ে সে হল নিভ্রনীল সাখাওত চৌধুরী...নিভ্র এবার ভ্রুতে আঙ্গুল দিয়ে হালকা উঁচু করে বলে উঠে...
.
মেয়েটার জ্ঞান ফিরলেই আমাকে কল করবে..
.
তার সাথে সাথে সবাই হ্যাঁ বলে উঠে..নিভ্র সোজা হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে হাটা ধরে।তার পিছনে পিছনে তার দশ বারো বডি গার্ডস.. কিছু দুর যাওয়ার পরে আবার ফিরে এসে কাঁচ ভেদ করে শুয়ে থাকা অচেতন মেয়েটাকে দেখতে তাকায় কিন্তু এবারো মেয়েটাকে দেখা হল না। এলোমেলো চুলে মেয়েটা মাথাটা অপর দিকে ঘুড়িয়ে শুয়ে আছে।হাতে তার সেলাইন আর রক্তের নল..গায়ে তার সাদা চাদর জড়ানো..নিভ্র বিরক্তি মার্কা মুখ করে হাটা ধরে আবার।দুই ঘন্টা আগের কথা মাথায় আসতেই তার মেজাজ প্রচণ্ড ভাবে ক্ষিপ্ত হয়........
.
২ঘন্টা আগের ঘটনা.......🍁
.
নিভ্রনীল সাখাওত চৌধুরী.. সাখাওত চৌধুরীর একমাএ ছেলে..বাবা নাম করা বিজন্যাস ম্যান.. দাদা নাম করা মন্ত্রী.. তার বাবারা দুই ভাই একজন বিজন্যাস ম্যান আর একজন মন্ত্রী এক কথায় মন্ত্রীর গুষ্টি.. তার বড় চাচার দুই ছেলে মেয়ে একছেলে অভ্রনীল আর মেয়ে রাফানীলি....এই যুগেও তারা সবাই জয়েন্ট ফ্যামিলি থাকে।নিভ্র বাড়ির ছোট কর্তা.. পেশায় হার্টসার্জেন। ডাক্তার হওয়ার সাথে নাম করা মডেল..দুটো মিলেই বিশাল নাম ডাক তার।এত কম বয়সে এত নাম চোখে লাগার মত।ছবির দুনিয়ায় পা দিতে চায় না বলে সে মুভি টুভি করে না।কিন্তু তুখড় রাজনীতি করে.. এটা তার ভালো লাগে..সবই ঠিক ঠাক কিন্তু জেদ, রাগ, আর রগ চটা টাইপের সভাব,প্রচণ্ড কম কথার মানুষ।একদম কথা বলে না বললেই হয়।সবাই তাকে ভদ্র বলেই জানে।বইয়ের মাঝে মুখ গুঁজে থাকা ছেলে সে।কিন্তু মারামারিতে ওস্তাদ। তবে এটা সে তেমন একটা করে না।যাদের উপড় রাগ বেশি তাদের সাথে এমনটা করে।এই যেমন আজ তার বিরোদী দলের এক লোককে ক্যাম্পাসের মাঠে পিটিয়েছে। যদিও ও মারে নি তার লোকেরাই মেরেছে।কিন্তু শেষ বাড়িটা নিজে দিবে বলে হকস্টিক নিয়ে চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পড়ে সে.. যেই না সে বাড়িটা দেয় সাথে সাথে কোথা থেকে এক মেয়ে এসে হাজির আর বাড়িটা মেয়েটার মাথায় লাগে..সাথে সাথে মেয়েটি সেন্সলেস হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে..যদিও এসব ব্যাপারে নিভ্র বেশি নাক গালয় না কিন্তু তবুও সে মেয়েটিকে দেখতে যায় কিন্তু এলোমেলো চুলের কারনে আর এক সাইডে রক্তের কারনে সে ভালো ভাবে মেয়েটিকে দেখার আগেই কোলে তুলে হাটা দেয়.. আগেই বুঝতে পারে ব্যথাটা ভালোই পেয়েছে মেয়েটা.... তাই নিজের ভুলের জন্যে এর ভালো টিকমেন্টের ব্যবস্থা করেছে..কিন্তু কেন যেন তার একনজর।মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছে হয় তাই সে আবার আসবে বলে ঠিক করে...........
.
.
টিপটিপ চোখে চারপাশে তাকিয়েই এক ভিন্নতা পরিবেশের সাথে আলাফ হয় সাফার.. ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারে সে হসপিটালে আছে.. হাতে তার রক্তের নল,আর এক হাতে সেলাইনের নল..ব্যাপারটা তার মোটেও পছন্দ হল না..হঠাৎ কি মনে করে সে মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে.. সামনে তাকাতেই এক চিৎকার.....
.
আপনি...ওই মাস্ক আলা..আপনিইত আমার মাথা ফাটিয়েছেন তাই না??আপনার সাহস তো কম না??আপনাকে আমি জেলে দিব..আর আমাকে হসপিটালে কেন আনা হয়েছে হুম...এই এই আপনাদের আবার আমার কিডনির দিকে লোভ নাইত..হতে পারে আমার কিডনি বিক্রি করে আইফোন কিনার ধান্ধা আছে না??আল্লাহ বাচাও..এই এগুলো খোল আমি যাব।আর এই মাস্ক আলা ভূত আমি আপনার নামে কেইস দিমু.. আমার বাবা একজন উকিল।তাও নাম করা।.. সে এ পর্যন্ত একটা কেইসও হারেনি.. আমি আপনাকে জেলের ভাত খাওয়াবো।জানেন কত মোটা চালের ভাত হয় সেখানে??যানতে হবে না গেলেই বুঝবেন এই এসব সুই টুই খলেন.. ওই গরুর ডাক্তার এগুলো খোলেন বাবাকে কল করেন আমি বাসায় যাবো।
.
নিভ্র এত সময়ের বকবকানি শুনে এই মাএ ম্যাগাজিন থেকে মুখ তুলে সামনে তাকায়।সে একপ্রকার বিরক্তি মুখেই তাকায় কিন্তু মাস্কের কারনে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।নিভ্র সামনে তাকিয়ে একটু থমকে যায়।সে ভাবতে পারছে না এই শান্ত কিউট চেহারার পিছনে এত বাচাল এবং ঝগড়ুটে টাইপের মেয়ে এটা সে মানতে পারছেনা।যেখানে তার নিজের মাই তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনা সেখানে এই মেয়ে অনায়াসে চিৎকার করে কথা বলছে..সাউন্ড পলিউশান তার একদম পছন্দ না..তবুও সে এই মেয়েটাকে কিছু বলতে কেন পারছেনা কে যানে।তার মোটেও একে কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা।গোলগাল মুখের সাদা বিড়াল ছানার মত মুখ..নীলাভ চোখের আড়ালে রাগ রয়েছে,চোখা নাকের ডগা লাল হয়ে আছে,ফুলাফুলা গালের দুইপাশে লাল আভা রয়েছে ।মাথার ব্যান্ডেজের উপড় দিয়ে অবাদ্ধ চুলগুলো ক্রমশ উড়াউড়ি করছে আর মেয়েটা বিরক্তি নিয়ে কোমল হাতে তা সরিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটাকে এভাবে স্কেনিং করে দেখার পড় নিভ্র নিজের ভ্রু গুলো কিঞ্চিৎ উঁচু করে নিজের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে।সে মোটেও এভাবে মেয়েদের দেখার ছেলে না।সাফা আবার চেঁচিয়ে মাথা ঝাঁকা দিয়ে উঠে...
.
এই মাস্ক ওয়ালা আমাকে নিজের মোবাইলটা দেন তো বাবাকে কল করব...আপনারা যে আমার কিডনির পিছনে লাগছেন এটা বাবাকে বলতে হবে না.. চোর কতগুলি..
.
এই মেয়ে পাগল না কি তুমি এত কথা কেন বলছ?আর জানো কার সামনে বসে আছ???..স্যার রেগে গেলে সমস্যা আছে বুঝলে??জীবন নিয়ে টানাটানি হবে..(পিএ আরিফ)
.
আমাকে প্রকাশে হুমি ধমকি দিচ্ছে আল্লাহ ভাবা যায়? কত ডেয়ারিং পার্সোন আপনাকে ত সবার আগে পুলিশের কেলানি খাওয়াবো মিস্টার ক্যাবলাকন্ত...
.
নিভ্র এবার প্রচণ্ড বিরক্ত..এই মেয়ে কখন থেকে কিসব পাগলের মত বলছে..সে তার পিএ...আরিফকে ইশারায় ডাকে আর বলে উঠে....
.
মেয়েটার বাবার নাম্বারে কল কর..আর ওর চিকিৎসার খরচ দিয়ে দেও..গাড়ি বেড় করো আমি যাবো....
.
বলেই নিভ্র উঠে দাড়াঁতেই সাফা চিৎকার করে বলে উঠে...
.
এই চোর পালাছেন কেন?? দাঁড়ান বলছি..দাঁড়ান...
.
নিভ্র এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ঝড়ের গতিতে সাফার কাছে গিয়ে তার দুইপাশের গাল চেপে ধরে গম্ভীর গলায় বলে উঠে....
.
এই মেয়ে অনেক্ষন থেকে তোমার বকবকানি শুনছি..আমার সাথে কেউ উঁচু গলায় কথা বলে না আর তুমি দেখছি আমাকে চোর বানিয়ে দিচ্ছ।সাবধান.. আমার সামনে দ্বিতীয় বার আর যেন তোমাকে না দেখি..মাটিতে পুতে দিলেও কেউ খোঁজ পাবে না।তাই দূরে থাকবে....
.
একপ্রকার ছুড়ে দিয়েই নিভ্র বেড়িয়ে পড়ল আর তার সাথে তার দলবল.. সাফা এখনো শক্ট হয়ে বসে আছে।তাকেও ত কেউ জীবনে এভাবে ব্যথা দেয় নি.. কথাটা ভাবতেই তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠেছে..একপ্রকার কেঁদেই দিয়েছে সে..আবার কি ভেবে খিলখিল করে হেসেঁ উঠে..তার সেকেন্ডে এভাবে পরিবর্তন দেখে ডাক্তারা সবাই একবেলা ভয় পেয়ে উঠে..না যানি পাগল হয়ে গেছে না কি এটা ভেবে....সাফা আবার গম্ভীর মুখ করে পাশের এক ডাক্তারকে বলে উঠে...
.
---মোবাইল আছে??
---হুম
---তো দাড়িয়ে আছেন কেন বাবাকে কল করেন।আবুল নাকি পেসেন্ট কে এডমিট করতে গার্ডিয়ান লাগে যানেন না??নাকি ফালতু হসপিটাল এটা??নাম কি এই হসপিটালের??
---এপেলো হসপিটাল।
---বাবা গো এই পোলাতো দেখি আমার লাখ পতি বাপরে ফোকির করার ধান্ধা আছে।কত টাকা বিল হয়েছে??
---স্যার পেমেন্ট করে দিয়েছে।
---কি?? এত বড় সাহস আমাকে দয়া দেখানো এই সাফাকে দয়া শালা মাস্ক আলা তোরে তো দেখে নিবো।কুচিকুচি করে আমি নিজেই চ্যান্ডুইজ বানাই খামু...হু..হ।তাকিয়ে আছেন কেন এলিয়েন নাকি আমি??কল করেন বাবাকে....
.
ডাক্তারা মনে মনে সিউর এই মেয়ের মাথায় গোল মাল আছে।কিন্তু নিজের চাকরি বাঁচাতে হবে। এই মেয়েকে কিছু বললে যদি ডা.নিভ্রনীল তাদের চাকরি খায়??যদিও মেয়েটা নিভ্রনীলের কি হয় তারা যানে না।তবে গুরুত্বপূর্ন কেউ হবে হয় তো তা না হলে নিভ্রনীলের মত মানুষ এই মেয়েকে কোলে নিয়ে এই হসপিটালে আন তো না।ভাই সাফা তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি??আমার তো মনে হয় মাথায় আঘাত লাগায় তোর স্মৃতি শক্তি চলে গেছে..তা না হলে চিনছ না জানছ না একটা লোককে কিভাবে খুঁজে বের করবি বল??
.
-----অবশ্যই পারব।এটা কোন বড় ব্যাপার না।বাবা বলেছে যে অন্যায় করে এবং অন্যায় সহে দুজনেই সমান অপরাধি..বুঝলি ঝুমা??আমিও সেই মাস্ক আলাকে ছাড়বোনা।বিনা করনে আমার মাথা ফাটিয়ে ১৫ দিন আমার সবচাইতে অপছন্দের জায়গায় থাকতে হয়েছে ওকে কি আমি ছেড়ে দিব ভেবেছিসস?? নো নেভার.. ইম্পসিবল... এবার এক কাজ কর অভি ভাইয়াকে কল দে...
.
----আবার অভি ভাইয়া কেন??
.
----আরে উনিইত ভালো স্কেচ করতে পারে।তাকে দিয়ে ওই মাস্ক আলার ছবি আঁকাবো.. আরে সিআইডিতে দেখস নাই ওরা কিভাবে স্কেচ দিয়ে মানুষ মানে খুনি দের খুঁজে বের করে.. আমিও ওই লোকটাকে খুজে বের করবো..হাহা হাহা..
.
.
হসপিটাল থেকে আসার পর থেকেই ঝুমার মাথা নষ্ট.. বেচারি ভেবে পাচ্ছে না এই পাগলকে কিভাবে শান্ত করবে।আর সাফা তো সেই হসপিটালে থাকা কালিন থেকেই মাস্ক আলার থেকে নিজের প্রতিশোধ নেওয়ার প্ল্যানিং করছে।ঝুমা চট করে একটা কথা ভেবে আবার বলে উঠে....
.
-----সাফা দেখ যদি উনি নিভ্রনীল হয় তবে??
.
----আরে নিভ্রনীল খুব ভালো আর শান্ত প্রকৃতির মানুষ সে কেন এমন গুন্ডাপান্ডার মত মারা মারি করবে বল?? আমি জানি বুঝলি ওই লোক পাক্কা গ্যাঙ্গস্টার টাইপের কিছু তা না হলে এত লোক নিয়ে কেনো ঘুড়বে বল....??
.
----হতেও পারে...
.
ঝুমা নিরাশ গলায় বলে উঠে।নিভ্রনীল দেশের নাম করা মডেল হওয়াই প্রতি পেপারে, ম্যাগাজিনে তার ছবি দিয়ে ভরানো থাকে।সাফা তাকে প্রথম দেখে ছোটো মোটো ক্রাশ খেয়েচ্ছে তাই ঝুমা ভেবেছে এর কথা বলে যদি কাজ হয়। যদিও সে জানে তার এই বান্ধবীর এই ক্রাশ খাওয়া কতটা ফাউ।ঝুমা তো নিভ্রনীল বলতেই অজ্ঞান আর এখানে এই মেয়ে বলে চলবে.. এর কোনো ঠিকঠিকানা নাই......
.
বাসায় আসতে আসতে বেশ রাত হয়েগেছে আজ নিভ্রর।আজ কিছু বিদেশি ব্যান্ডের ব্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে তার কাজ ছিল আবার হসপিটালেও যেতে হয়েছে।কলিং বেল বাজাতেই মিসস্ ইফতেখার দরজা খুলে দেয়।মাকে এত রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে দেখে একটু অবাক হয় নিভ্র কিন্তু কিছু না বলেই হনহনিয়ে ভিতরে ডুকে পড়ে।সোজা ছাদে তার নিজের আলাদা বাসায় চলে যায়।ব্যাপাটায় ইফতেখার একটু মনখারাপ করলেও সে অভ্যস্ত। তার একমাএ ছেলে আজ বহু বছর তার সাথে কথা বলে না যদিও এর জন্যে সে নিজেই দায়ি..কথাটা ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন ইফতেখার। অভ্রনীল পানি নিতে এসে কাকিমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বলে উঠে.....
.
---জানেমান কাকিমা কি করো এত রাতে??নাকি চোর খুজে বেড়াচ্ছ??
.
অভ্রর এমন মজার কথায় ইফতেখার একটু হাসল।অভ্র ওতো ছেলে কত হাসি খুশি থাকে ও আর সবার সাথেই কত মজায় মেতে থাকে কিন্তু তার ছেলেটা যে কেন এত গম্ভীর হয়ে থাকে কে যানে।তার তো জানা মতে ছোট ছেলেরা বেশি মজায় থাকে দুষ্টু প্রকৃতির হয় কিন্তু তার ছেলে... বাকিটা মনে পড়তেই ইফতেখারের চোখে পানি চলে আসে।এই সব কিছুর জন্যেই উনি দায়ি এটা সে ভালো ভাবে বুঝতে পারছে...কাকির চোখে একরাশ হতাশা আর পানি দেখে অভ্র একটু সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়ে ব্যাপারটা সে ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে তাই প্রিয় কাকিমার মুখে হাসি ফুটাতে সে একমজার বাক্য খুঁজতে শুরু করে......
.
----কাকিমা তোমার রামগরুরের ছানা হাসতে তার মানা সেই সুপার্স্টার এসে পড়েছে বুঝি??
.
ইফতেখার আবার অশ্রুসিক্ত চোখে হেসেঁ উঠে বলে....
---হুম চলে এসেছে...যা খাবার নিয়ে আমি বেরে দিচ্ছি তুইও খাসনি না.. এত কেন ভালোবাসিস ওই আকড়ুটারে..
.
---ও ভালোবাসার মানুষ তাই এত ভালোবাসি বুঝলে...
.
.
----হেই ডাক্তার নিভ্রনীল সাথে আবার সুপার্স্টার এত বই পড়ে কি করবি ভাই একদিনতো মরেই যাবি বল??
.
অভ্রর কথায় বুকশেলফ থেকে মাথা কাত করে একবার অভ্রকে দেখে নেয় কালো টাউজার, লাল টি-শার্ট পরে হাতে দুটি খাবার প্লেট নিয়ে দাতঁ বের করে দাড়িয়ে আছে অভ্র..এই বাসার সবার মাজে এই একটা লোকই তার সবচাইতে প্রিয়। আর ভরসার মানুষ যদিও দাদা , বাবা,বড় বাবা বড় মা,রাফা সবাইকেই সে মোটামুটি পছন্দ করে তবে এই একটা ছেলে ছাড়া তাকে ঠান্ডা করা মুশকিল... অভ্রর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে....
.
----ওই শালা আর কতক্ষণ তোর প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে থাকবো। চাকর পেয়েছিস নাকি..বই রাখ আর আমার কাছে এসে এই গাডা গাডা খাবারের প্লেট নে তাড়াতাড়ি.. হাড়িআপ...
.
নিভ্র এবার মুচকি হেসেঁ বই রেখে সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠে....
.
---তুই তো আমার ফ্রি চাকর বুঝলি.. আমার জামা কাপড়ও ধুয়ে দিস।দেখ কত ময়লা হয়েছে..ইশশ্ ঘৃনা লাগছে..তোর মত এমন স্মার্ট আর প্রফেসর চাকর থাকতেও আমার এমন অবস্থা কি আর করবো বল??
.
----তাই নাকি।তা দিস কালকে ধুয়ে দিবো।(বলে হেসেঁ উঠে)
----এই কালকে তো তোর ফার্স্ট ডে এট কলেজ..
--এই এগুলো কেমন কথা??ফার্স্ট ডে এট কলেজ বহু আগেই পার করে এসেছি কালকে তো..প্রফেসার হিসেবে যাবো।
---যাই হোক তুই এত পেশা থাকতে ওই পেশায় কেন গেলি আমি বুঝতে পারছিনা???একটু বুঝিয়ে বলবি??
---আরে বুঝস না কা প্রফেসারদের বউ সুন্দর হয় বুঝলি।তার উপড় ফাস্ট এয়ারের মেয়েরা তো মাসআল্লাহ্ সেই হয়।ওদের পটাতে যাবো..বুঝলি..
---তুই যাবি মেয়ে পটাতে এটাও !বিশ্বাস জঘ্য। তোর পিছনে তো অল মোস্ট সুন্দরীদের লাইন লেগে আছে।তুই যে মেয়েদের মাঝে সৌন্দর্য খুঁজছ না তা আমার জানা আছে তবে যেটা খুঁজছ সেটা বল??
----মায়া খুঁজি বুঝলি।আমার জন্যে লাইন লেগে থাকলে তোর জন্যে তো সুইসাইডও করেছে তবুও ত তুই ফিড়েই তাকাস না।তোর আর আমার সব যখন মিলে তবে মেয়ের ব্যাপারেও সেম অবস্থা হবে বুঝলি..
----না আমার জীবনে আর যাই হোক মেয়েদের এন্ট্রি নিষেধ।
---এসব বলে লাভ নেই বিধাতা যা কপালে রেখেছে তাই হবে বুঝলি।আচ্ছা এটা সেটা বাদ তোকে একটা ইম্পরট্যান্ট কথা বলার ছিল...
----বল..
---কাকিমার সাথে এভাবে বাজে বিহেভ করা ছেড়ে দে প্লিজজ..
.
কথাট শুনে খাবার মুখে দিতে গেয়েও দিল না নিভ্র। খাবারটা প্লেটে রেখে কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে বলে উঠে....
---উনার কথা আমি শুনতে চাইনা প্লিজজ.. অন্য কথা বল তা না হলে রুম থেকে যেতে পারসস...
.
অভ্র আর কথা বাড়ালো না। সে জানে এই ছেলেকে আর যাই হোক এই কথাগুলো বলে লাভ হবে না।শুধু শুধু খাওয়াটা মাটি হয়ে যাবে।দুই ভাই চুপ মেরে খাওয়ায় মনযোগ দিল...
.
.....🍁
.
সাফা তার বাহিনি নিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।কপালে তার চিন্তার ভাজঁ। এই ভাঁজেরও কারণ রয়েছে।কারনটা হল ভার্সিটির গুণ্ডাপাণ্ডা স্টুডেন্ট। এই গুন্ডা পান্ডার লিডার শাহিন নামের এক ছেলে ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই ছাফার পিছনে পড়ে আছে।আজ এর একটা শায়েস্তার ব্যবস্থা করেছে সে। সাফা নিজের হাতের মার্বেল গুলো ঝুমাকে দেখিয়ে বলে উঠে..
---এই গুলো ফ্লোরে ছুড়ে দিব। ওই বদমাইশ যখন ধাপাং করে পড়বে সাব্বির তুই পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় এই লাঠি দিয়ে পিছনে বাড়ি দিবি বুঝলি...
.
সাব্বির নিজের মাথা ঝাঁকিয়ে বলে উঠে
----ঠিক আছে
.
সাফা ঘড়ি দেখছে আর মার্বেল গুলো হাতের মুঠোয় জড়ো করে করে রেখেছে।কেউ আসার সাউন্ড শুনতে পাওয়া মাএ দেওয়ালের কোনা থেকে সাফা বেড়িয়ে এসে ফ্লোরে মার্বেল গুলো ছড়িয়ে দিল।সামনে থাকা ব্যক্তি সাথে সাথেই দাম করে পোড়ে
--আউচচচ
করে শব্দ করে উঠে..
.
সাফা এবার উপরে তাকাতেই হা হয়ে গেল। এটা কি হল। আর এই লোকটাই বা কে??সে যাকে ফেলতে চেয়েছে এতো সে না।তবে এই আবাল আবার কে??নতুন ইংলিশ স্যার নয়ত??কথাটা ভাবতেই সাফা জিহ্বায় কামড় দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই হাত দিয়েএকটা বড় ঝাকা দেয়।সাব্বির এবার লাঠি নিয়ে পিছন থেকে মারতে যাবে তার আগেই সাফা মাথা ঝাঁকিয়ে মারতে না নিষেধ করে কিন্তু সাব্বির বুঝতে পারছেনা কি ইশারা করছে। তাই আবার লাঠি তুলে মারতে যাবে তার আগেই সাফা চেঁচিয়ে বলে উঠে....
---মারিস না। উনি সেই অসভ্যটা না...
.
বলে এগিয়ে এসে অভ্রর পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে।আজ প্রথম দিন ছিল ভার্সিটির ক্লাস নেওয়ার। প্রথম ক্লাস ছিল ফাইনআর্টের ফ্যাশন ডিজাইনিং ডিপার্টমেন্টের ইংলিশ ক্লাস।আর প্রথম দিনেই এমন ভায়াবহ একটা ঘটনা হবে অভ্র ভাবতেও পারেনি।কিভাবে ভাববে এটা তো নার্সারির বা ওয়ান ট্যুর ক্লাস না এটা ভার্সিটির ক্লাস।আর ভার্সিটিতে তো বাচ্চারা পরে না যে এগুলো করবে।অভ্র নিজের কোমড়ে হাত দিয়ে এখনো চোখ বুজে আছে।কুল মেজাজের ছেলে হলেও একবার রাগ উঠলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা সে।এখন তার রাগ উঠছে তাও প্রচণ্ড ভাবে।আজ যে এই কাজ করেছে তার কপালে খুব বড় ঝড় আছে।আজ যে কি হবে এটা ভেবেই অভ্রর মাথা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা অনুশোচনা ভড়া মিষ্টি কন্ঠ কানে আসতেই অভ্র চোখ খুলে তাকিয়েই স্তব্ধ। তার ২৭বছরের ক্যারিয়ারে এই প্রথম সে এত সুন্দর কাউকে দেখেছে।এত কিউট মেয়ে হয় নাকি??ফুলাফুলা গাল গুলো আরো ফুলিয়ে হাতটা বাড়িয়ে সাফা বলে উঠে......
----আম সরি।আসলে এমনটা হবে ভাবতে পারিনি।এটা আপনার জন্য ছিল না।কিন্তু আপনি হুট করে লাফিয়ে কোথা থেকে যে এলেন। সরি আবার.....(মাথা নিচু করে হাত বাড়িয়ে বলে উঠে)
.
অভ্র তাকিয়ে আছে।আশ্চর্য মায়ায় গড়া এ মেয়ে। সে নিজের চশমাটা পাশ থেকে তুলে দেখে তা এক সাইডে ভেঙে গেছে তবুও সেটা হাতে নিয়ে আর একহাত বাড়িয়ে উঠে দাড়ায়।সাফার হাত ধরেই উঠে দাঁড়িয়েছে সে।অভ্র এবার কোমড় হালকা ঝাকি দিয়েতেই সাফা নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে উঠে.....
---আল্লাহ এত ভারী কেন আপনি??কি খান বলেন তো??হাত পুরাই ব্যাথা হয়েগেছে।
.
অভ্র এবার পুরাই হা।বলে কি এই মেয়ে!!আমাকে ফেলে যে বারোটা বাজিয়েছে সে দিকে তার খবরই নেই। এতক্ষণ এই মেয়েকে শান্ত মনে হয়েছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না ভয়ঙ্কর হবে এই মেয়ে। তাই সেও একটু টিচারের মত ভাব নিয়ে বলে উঠে...
---ইউ নো হু এম আই???
---ইয়েস..এত যখন ইংলিশ ঠেলছেন নিশ্চুই আমাদের নিউ ইংলিশ টিচার।স্যার আপনাকে সাগতম। আর হ্যাঁ এইটার কথা কাউকে বলবেন না।আপনি একটা পেইন কিলার খেয়ে নিবেন।আর কালকে এসে দাম বলে যাবেন কত আর হবে দুইশ বা তিনশ টাকাই হবে আমি বরং দিয়ে দিব কেমন।আর ভুলেও ক্লাসে পানিশমেন্ট দিয়ে এই ঘটনার শোধ নিবেন না প্লিজজ।এটা ভুল করে হয়ে গেছে।আমার আপনাকে এভাবে ফেলার ইচ্ছে ছিলনা।আপনার নিয়তিতেই পরাটা ছিল এখন আর কি করার আছে।তবুও আমি কিন্তু সরি বলেছি মাফ করে দিয়েন।
.
অভ্রর চোখ বড় বড় হয়ে আছে।মুখের হা আরো প্রশারিত হয়েগেছে।কি ডেয়ারিং মেয়েরে বাবা।ভাবা যায়।অভ্রকে নাকানি চুবানি খাইয়ে চলে গেল।সাফা এক দৌড়ে ক্লাসে ডুকে গেছে।বুকে দুই তিনবার থু থুও দিয়েছে।ক্লাস চলা কালিন সাফার ভাবটা এমন যে সে অভ্রকে আগে কখনো দেখেইনি।অভ্রর কোমড়কে যে আধমরা করে দিয়েছে এটাতো তার কল্পনাতেও নেই।সাফার ভাব দেখে অভ্র আরো অবাক।
.হসপিটাল থেকে বাসায় এসেই নিভ্র শুনতে পায় অভ্র কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছে।তাই উপরে না উঠেই তার কাছে চলে যায়।কোমড়ে আইস ব্যাগ দিয়ে উপুত হয়ে শুয়ে আছে অভ্র।শোয়া অবস্থায় থেকেই বলে উঠে.....
---তা তুই চলে এসেছিস??দেখনারে কোমড় কি গেছে নাকি আছে??
.
নিভ্র সাদা শার্টের হাতার ভাঁজটা আরো তুলতে তুলতে নিজের স্টেথোস্কোপটা টেবিলে রেখে এফ্র্যানটা খাটের একপাশে রেখে অভ্রর পাশে এসে বসে পড়ে।ডান হাতটা অভ্রর কোমড়ে রেখে একটু জড়েই চাপ দেয়।অভ্র প্রায় লাফিয়ে উঠে বসে পড়ে।নিভ্র নিজের শুষ্ক ঠোঁট জোড়া জিহ্বা দিয়ে ভিঁজিয়ে বলে উঠে....
---তোর কোমড় জীবিত আছে।এবার বল ব্যাথা কিভাবে পেলি???
.
অভ্র কপাট রাগ নিয়ে বলে উঠে....
---শালা এত জোড়ে চাপ দেওয়ার কি ছিল??ওহহ্ ওই মেয়ে যতটুকু না ভেঙেছে তুই তার থেকেও বেশি ভেঙে দিলি।আজ থেকে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবি।কড়ায়গণ্ডায় ছয় মাসের বড় তোর। বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে বেয়াদোপির শাস্তি তো তোকে দিবই।
.
নিভ্র সব কথাকে উপেক্ষা করে চোখ বাঁকিয়ে একটু ঝুঁকে বলে উঠে.....
---মেয়ে ভেঙ্গেছে মানে???
---আরে আর বলিসনা আজ ভার্সিটির প্রথম দিনেই এক ভয়ঙ্কর মেয়ের সাথে দেখা।মার্বেল ছুড়ে ফেলে দিয়েছে আমাকে।একদম ধাড়াম করে।কি যে ব্যাথা।তার উপড় বলে কিনা সরি বলেছিত!!অদ্ভুত...
.
নিভ্রর কেন যেন হঠাৎ করেই হসপিটালে রেখে আসা সেই বকবক করা মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেছে।সে না চাইতেই এমনটা কেন হল এটা নিভ্র যানে না।নিজেকে একবার ঝাঁকিয়ে সে বলে উঠে....
---তুই কি মেয়েটাকে এমনি এমনি যেতে দিলি??
---তা নাহলে আর কি করব।সরি বলার সাথে সাথে বলে দিয়েছে তাকে যাতে আর কোন শাস্তি টাস্তি না দি।আর কি করার।যানোস ক্লাসে তার ভাব দেখে আমি নিজেই অবাক তার ভাব খানা এমন আমাকে চিনেই না।অথচ আমাকে ক্লাস শুরুর আগেই ফেলে চিৎপটাং করে দিয়েছিল...
.
নিভ্র এবার বিরক্তি নিয়ে উঠতে উঠতে বলে উঠে...
---ঔষুধ পাঠিয়ে দিব রহমত চাচার হাতে খেয়ে ঘুমিয়ে যাস।আর এত বকবক কিভাবে পারস।আহহহ্
.
অভ্র তো রেগে বলে উঠে...
--তুই রোবটের মত থাকবি দেখে কি আমরাও থাকব নাকি??আর যা তুই টায়ার্ড মনে হয় আজ। কটা অপারেশন করেছিস??
---দুইটা।
---যা ফ্রেশ হ আমি খাবার নিয়ে আসি..
---এই না তুই ঘুমা।আমি নিজেই খেয়ে নিব।আর মেয়ে টেয়েকে মাথা থেকে ঝাড়....
.
বলেই নিভ্র রুম থেকে নিজের রাখা জিনিস গুলো তুলে রুম ত্যাগ করল।অভ্র বসে বসে ভাবছে এই ছেলের যে কি হবে??অস্ত একটা নিরামিষ.....
🍁
--স্যার ওই মশফিকে পাওয়া গেছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছে।আপনি কি সেখানে আবার জাবেন??
.
নিভ্র চেয়ার ঠেলে উঠে দাড়ায়। বেশ কিছু দিন আগেই এক হ্যাকার তার বাবার কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য হ্যাক করেছে।এতে তার বাবার বেশ ক্ষতিই হয়েছে।যার কারনে সে তাকে হন্নের মত খুজে বেড়াচ্ছে। আগের বার তার সাথে বেইমানি করে বিপক্ষ দলকে খবর দিতো যে তাকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্তরে পাওয়া গেছে।নিভ্রর মনে হচ্ছে সেখানে ভালো ছাএ গুলো দিন দিন খারপ হয়ে যাচ্ছে এই সব অপদার্থ গুলোর জন্যে।মুখুশ পড়ে সেখানে লুকিয়ে থাকাই এদের কাজ।ছাএ কেউ কিছু বলবেনা এটা জানে তাই এই পদ্ধতির এপ্লাই করছে এরা।এদের একটা শিক্ষা তো দিতেই হয়।নিভ্র একটা বাঁকা হাঁসি দিয়ে বলে উঠে....
---অবশ্যই যাব।তবে অভ্র যাতে না যানে আমি সেখানে গিয়েছি।যেহেতু ও সেখানের প্রফেসার। আই থিং ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড??
---ইয়েস স্যার...
.
বলে আরিফ বেড়িয়ে গেল।নিভ্র নিজেকে রেডি করছে।মুখে মাস্ক চোখে সানগ্লাস। হাতে গ্লাবস,কালো জেকেট,পায়ে বুট পড়ে সেও বেড়িয়ে পড়েছে।গন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়। তার সাথে সাথে তার বিস্তর বডিগার্ডস টিমও বেরিয়ে পরল।
.
🍁
.
সাফা রেডি হয়ে ভার্সিটিতে আসতেই সেই ছেলেটার সাথে দেখা যে তাকে বিরক্ত করে।সাফা প্রচণ্ড রাগ নিয়েই ভার্সিটিতে প্রবেশ করেছে।ছেলেটা পিছন পিছন কিছু দূর যাওয়ার পড়ে অভ্রকে দেখে সরে দাড়ায়।শত হোক স্যার মানুষ।সাফা হাটঁছে একটু অনমনেই হুট করে কেউ সামনে আসায় সে ডানপাশে সরে গেছে তার সাথে সাথে ছেলেটাও ডানপাশে সরে গেছে।সাফা আবার বাম পাশ হতেই তারও সেম অবস্থা। সাফা এমনেই রেগে ছিল তার উপড় এই লোকের কাজ দেখে সে আরো বিরক্ত তাই রেগে তাকাতেই অভ্রকে দেখতে পায়। অভ্র একটু ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে।সাফা বিরক্তি নিয়ে একটু জোড়পূর্বক হাঁসি দিয়ে বলে উঠে...
---কি চাই স্যার??
.
অভ্র অবাক। মেয়েটা স্যারকে জিগ্যেস করছে কি চাই??হোয়াট এ ইস্টুপিট টাইপের প্রশ্ন যার সম্মুখীন এই পর্যন্ত সে হয় নি।আসলে কোন মেয়েই তাকে এমন প্রশ্ন করেনি।সব সময় দেখলেই গায়ে পড়ে মেয়েরা।কিন্তু এতো তাকে প্রশ্ন করছে।অভ্র নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে......
---কিছু না।
----তাহলে এমন ডান বাম করছেন কেন??
---তুমি ওতো করছ??
---আরে স্যার আপনি আগে করছিলেন আমি না।তাও আবার সরি।আমার তো মনে হয় আমার জীবনটাই সরি বলতে বলতে শেষ হয়ে যাবে।আপনিই বলেন আপনার সাথে দেখা হয়েছে দুই দিনে আমি কত বার সরি বলে ফেললাম।উপপ্ ভাললাগেনা।(বলেই পাশ কাটিয়ে হাঁটা দিল)
.
অভ্র হা করে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা অদ্ভুত। সবার থেকে আলাদা ব্যক্তিত্ব নিয়ে তৈরি।তার দেখা দুটি অদ্ভুত মানুষ হল এক নিভ্র আর এক এই মেয়ে।তবে দুজনের ব্যক্তিত্বই ভিন্ন।একজনে চুপচাপ স্বভাবের আর একজনের মনে হয় মুখ দিয়ে খই ফুটে।সামান্য আশপাশ নিয়েও সে একগাদা কথা বলে গেল।ব্যাপারটা ভাবতেই অভ্র হেঁসে দিল।আজ আর ক্লাস নিবে না।বাসা থেকে কল করা হয়েছে।তাকে নাকি আজ বাসায় থাকতে হবে।
.
.
মাঠের বিশাল ময়দানে নিভ্র চেয়ারে বসে আছে আর তার সামনে হাটুগেড়ে বসে আছে মুশফিক। মুখ দিয়ে গড়গড় করে রক্ত পড়ছে তার।নিভ্র পায়ের উপড় পা দিয়ে বসে বসে দেখছে সব।তার লোকেরা ইচ্ছা মত পিটিয়েছে মুশফিকে।রক্তে সারা শরীর একাকার অবস্থা।এ যেন এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। তবে তা নিভ্রর কাছে মনে হচ্ছে না।সে নিজের মত তাকিয়ে আছে।
.
সাফা স্কেচ বানিয়ে ফেলেছে।এবং সেটা সাথে নিয়ে নিয়ে ঘুড়ছে।ক্লাস শেষে বাহিরে আসতেই বিশাল ভিড় দেখল তবে মাঠে না তার আশেপাশে। সাফা বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠে...
---ঝুমা দেখ ভার্সিটির ক্যাম্পাসে মাহফিল হচ্ছে।
.
ঝুমা চোখবুলিয়ে দেখে বলে উঠে....
---আরে আবাল ওটা মাহফিল না মারামারি হচ্ছে।
.
সাফার চোখমুখ মুহূর্তে চকচক করে উঠে।মারামারি ঝগড়া এগুলো তার দারূন লাগে দেখতে।যদিও বাবা বলে এগুলো খারাপ।খারাপ ত খারাপ তার কি সে তো শুধু একটু দেখবে।কিন্তু বাবা এটা মানতে নারাজ তাই সে বাবার প্রতি প্রচণ্ড বিরক্ত। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না তাই সে এগিয়ে গেল।তার পিছনে পিছনে ঝুমাও এই এই চেঁচিয়ে যেতে লাগলো।কিছু দূর যাওয়ার পড়েই ক্যাম্পাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হল।সাবাই এক এক করে জান নিয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু সাফা নিজের কৌতুহল নিয়ে আরো এগিয়ে যেতেই নিভ্রকে দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে যায়।ব্যাগ থেকে স্কেচ বের করে একটু খুটিয়ে দেখে, তা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে ঝুমাকে বলে উঠে....
---পেয়ে গেছিরে ঝুমা।পেয়েগেছি।সাব্বির কোই শালারে ডাক।
.
ঝুমা অবাক হলেও বলে উঠে....
---ওই ত সাব্বির কেন??
---ওরে বল একটা স্টিক নিয়ে আসতে।
---কেন??
---ওহ এত প্রশ্ন করিসনা তো যা করতে বলেছি তাই কর।
.
ঝুমা সাব্বিরকে বলে একটা স্টিক নিয়ে এল।আর সাফা ভিড় ঠেলে রাইফেল হাতের মানুষদের পিছনে ফেলে নিভ্রনীলের সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে।তাকে এভাবে ভিতরে ডুকতে দেখে প্রায় উপস্থিত সবার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসছে প্রায়।নিভ্রনীল আজও মাস্ক পড়েছে।সাফার হাতে হকিস্টিক.. স্টিকটা সে এবার ক্রমাগত ঘুড়াতে শুরু করে।রাগে তার মুখশ্রী লাল আভায় ফুটে উঠেছে।প্রচন্ড রাগনিয়ে সে তার হাতের স্টিকটা দিয়ে নিভ্রনীলের মাথায় আঘাত করে।নিভ্র নিজের জায়গা থেকে দুই পা পিছিয়ে পড়ে তার মাথাটা হালকা কাত হয়ে পড়ায় সানগ্লাসটি একটু ঝুঁকে পড়ে।বাড়ি দেওয়ার সাথে সাথে সাফার মাথায় দশ বারোটা রাইফেল অনায়াসে উঠে গেছে।সাফা একবার উপড়ের দিকে তাকিয়ে আবার নিভ্রের বরাবর মুখ করে তাকিয়ে থাকে।মা বলেছিল ভয়কে জয় করতে সাহস লাগে।রাতে ভূতের মুভি দেখে সে ভয়ে বাবা মায়ের মাঝে গুটিশুটি মেড়ে ঘুমানোর সময় মা বলত।ভয় পেলে পিছনে তাকাতে নেই।তাহলে বিপক্ষ দল দূর্বল ভাবে।তাই সেও তাকাবেনা।তাই নিভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।নিভ্রের মাথার একসাইডে রক্তের গড়াগড়ি হচ্ছে। তবুও সে স্ট্রং.. ডান হাত তুলে ইশারায় রাইফেল গুলো নিচে নামাতে বলে তারা রাইফেল নামাতেই সাফা এক বিস্তর হাসি দিয়ে বলে উঠে.....
.
এবার হল ইকল ইকল..ট্রিট ফর ট্রেট..(নিভ্রের হাত টেনে তাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে উঠে)দশহাজার আছে।এর বেশি আর লাগবে না।আপনি নিজের ট্রিকমেন্ট করিয়ে নিয়েন।মি.ভিলেলললন..বাবা বলেছে অন্যায় যে করে এবং যে সহে সকলেই সমান অপরাধি তাই আমি আপনার পাওনা দিয়ে নিজেকে অপরাধ মুক্ত করলাম।আমাকে মেড়েছেন এবার আমিও মেড়েছি..সোধ বোধ...আর হ্যাহ্যা এতই যখন নিজেকে শক্তি শালী মনে হয় তবে এই সব চেলা পেলা রাখার কি আছে বলেন তো।আমার তো মনে হয় আপনি নিজে কিছুই করতে পারেন না।শুধু এদের কে দিয়ে করান।আসল বীর সেই যে বডিগার্ড নিয়ে ঘুড়ে না।বুঝলেন ?? ফ্রিতে জ্ঞান দিলাম... কাজে লাগাতে পারেন.. টা টা
.
কথাটা বলে স্টিকটা ফেলে দিয়ে নিজের গায়ের উড়নাটা উড়িয়ে দিতেই নিভ্রের চোখে মুখে রেশম পালকের মত তা আছড়ে পড়ে।ঝাপসা চোখে নিভ্র সাফার দাতঁ কেলানো হাসিই দেখতে পেল।তারপরই সাফা ভিড় ডেলে আবার চলে গেল।এত এত লোকের ভিড় থেকে বেড়িয়ে সে এক সস্তির নিঃশ্বাস নিল। তারপর এক হাসি হাসল।মনটা কেমন নেচে নেচে উঠছে।ফুরফুরে মেজাজের লাগছে তাকে।মনে মনে ঠিক করেছে ঝুম,মুক্তা,শিরিন,সাব্বির, আর অভি ভাইয়াকে ট্রিট ট দিবে...
.
নিভ্র এখনো দাড়িয়ে আছে। তার মত প্রভাবশালী ছেলেকে একটা পুচকি মেয়ে এভাবে মেড়ে যাবে ব্যাপারটা তার লোকেরা স্বপ্নেও ভাবে নি।তাদের এটা ভেবেই ভয় লাগছে।না যানি এ রগ চটা ছেলে তাদের কি হাল করে।কিন্তু নিভ্র তেমন কিছুই করলো না। সে একদৃষ্টি নিক্ষেপ করেই চলেছে সাফার দিকে।সাফা তো বহু আগেই গায়েব কিন্তু নিভ্র এখনো তাকিয়ে আছে।নিভ্রর হঠাৎ মাথা ঘুড়ে উঠেছে।সে দাড়াঁতে পারছে না।কিছু সময়ের মাঝেই সে মাঠে পড়ে যায়। তার লোকেরা তাকে তাড়াতাড়ি ধরে হসপিটালে নিয়ে আসে।টিপটিপ করে চোখ খুলতেই নিভ্র নিজের পরিবারকে সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে।এত মানুষের মাঝে একজনেই তার দৃষ্টি কেড়েছে।সে হল মিসেসস ইফতেখার। স্বামী সাখাওতের একবাহু চেপে সে কেঁদেই চলেছে।তার বিপরিত পাশেই তার বড় মা, আর বড় বাবা দাড়িয়ে।সামনের সোফায় দাদা বসে আছে।নিভ্র এবার চোখ বুলালো তার দুই পাশে। তার দুই পাশে অভ্র আর রাফা দাড়িয়ে আছে।রাফার চোখ মুখ কেঁদে ফুলে গেছে।এই মেয়েটার নিভ্রের প্রতি ভালোবাসাটা প্রখর। ভাইকে যে সে সত্যিই খুব ভালোবাসে এটা নিভ্র এবং অভ্র দুজনেই জানে। অভ্র গম্ভীর মুখে চশমার মাঝ থেকে নিভ্রকে পর্যবেক্ষণ করেই চলেছে।নিভ্র এবার হালকা নড়ে বলে উঠে.....
---জীবিত আছি। এত টেনশনে কিছু নেই।
.
অভ্র তার সব রাগ নিয়ে নিভ্রর জামার কলার ধরে তাকে বসিয়ে দিতে দিতে বলে......
---শালা হারামি তুই কি আমার ভার্সিটিতে মারা মারি করতে গেছিলি নাকি??এমন অবস্থা হল কি করে??যানস একদিন তুই অজ্ঞান ছিলি।
.
নিভ্র ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠে....
---তো ছিলম আর কি।এত হাইপার হওয়ার কি আছে??আর সবাই এত কান্নাজুড়ে দিয়েছে কেনো??আমি কি মারা গেছি নাকি..???ফাইজলামি হচ্ছে এখানে??
.
অভ্র রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠে....
---ফাইজলামি তো তুই করস।ভাই বলবি তোর আর আমার মাঝে এত মিল কেন??
---মানে??
---মানে খুব স্বাভাবিক।ছোট থেকে দেখছি তুই সব সময় এক ধাপ এগিয়ে।আমি ক্লাসে সেকেন্ড হলে তুই ফার্স্ট। আমি ঢাবিতে চান্স পেয়েছি আর তুই মেডিকেল। আমি অক্সফোর্ডে কোর্স করার সুযোগ পেলে তুই হার্বাডে সুযোগ পাস সার্জারি নিয়ে গবেষণা করার।সারা জীবনে তুই এত এগিয়ে কেন থাকস বলবি??
.
নিভ্র বিরক্ত হলো।কিঞ্চিৎ চোখ কুঁচকে অভ্রর দিকে তাকাল।বেশি কথা বলা বা শুনা তার মোটেও পছন্দ না।কিন্তু এই অভ্রটা সব সময় অতিরিক্ত কথা বলে। তাই মাঝে মাঝে তার এর প্রতিও বিরক্তি আসে।অভ্র নিভ্রকে এভাবে তাকাতে দেখে আবার বলে উঠে..........
----আরে ভাই এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো??আমি সত্যি কথাই বলছি।বিশ্বাস হচ্ছে না??দেখ কাল আমি কোমড়কে আধমরা করে বিছানায় শুয়েছি আর আজ তুই মাথা মরা সরি মাথা ফাটিয়ে হসপিটালের বেডে লেপ্টে গেলি??আজব না??আচ্ছা আমাকে তো মেয়ে ফেলেছে তোকে কে এভাবে মেড়েছে বলবি।মানে দ্যা মোস্ট ফ্যামাস মডেলকে কে এভাবে মারার সাহস পেয়েছে বলবি??তার চাইতে বড় কথা তোর মত ডেঞ্জারাস রাজনীতি বিদ যার কাছে মন্ত্রীরা এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে কথা বলতে হয় যার আগে পিছে ১৬-১৭টা গার্ডস থাকে তাকে কিভাবে কে মেরে গেল বল তো??তবে ভাই সে যেই হক বিশাল কলিজার অধিকারি।
.
অভ্রর কথা শুনেই নিভ্রর সাফার কথা মনে পরে গেছে।সাথে সাথে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এল।চোখ লাল হয়ে এল।হাত মুষ্টি বদ্ধ করতেই স্যালাইনের নলে রক্ত উঠে গেল।যা মুহূর্তেই অভ্রর চোখে পড়ে গেল।সাথে সাথে ডাক্তার বলে চেঁচিয়ে উঠল।নিভ্র রেগে আছে এটা বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে অভ্র।নিভ্রর দাদা মাহবুবুল এগিয়ে এল।আর বলে উঠে.....
---নিভ্র দাদুভাই এমন করছ কেনো??কে তোমাকে মেরেছে আমাকে বল আমি তাকে প্রচণ্ড শাস্তি দিব দরকার হলে মেরে পুতে দিব।তবুও শান্ত হও।
---কাউ কে কিছু করতে হবে না।এখন সবাই বাইরে যাও আমি একা থাকতে চাই। জাস্ট লিভ মি এলন...
.
নিভ্রর চিৎকারে হসপিটালের সবাই এক বেলা কেঁপে উঠে।মুহূর্তেই রুম ফাকা হয়ে গেছে।নিভ্র চোখ বন্ধ করতেই সাফার উড়না দুলানো হাসির ছবি ভেসে উঠেছে।সাথে সাথে সে ঠাসস করে চোখ খুলে তাকায়।একটা জোড়ে শ্বাস নেয় সে।
.
সাফা সোফার উপরে পা গোল করে বসে আছে।তার এক হাত গালে। ঠোঁট উল্টে সে চিন্তায় মগ্ন। তার মাথায় একটা কথাই ঘুড়ছে সে যাকে মেরে এসেছে সে কেমন আছে??এভাবে মারা কি ঠিক হয়েছে??আচ্ছা লোকটা যদি মারা যায় তবে কি হবে??কথাটা ভাবতেই সাফার মাথা ঘুড়তে শুরু করে।সবাইকে যতটা সাহস দেখায় ততটা সাহসী সাফা না।দরজায় বেল পরে। সাফা মৃদূ হেঁটে দরজা খুলে। দেখে তার বাবা দাড়িয়ে।সারিক ভিতরে ডুকতে ডুকতে বলে উঠে....
---আম্মাজানের কি মন খারাপ???
.
সাফা চকিতেই তাকাল। তার ধারনা ছিলনা বাবা এগুলো বুঝে যাবে।যদিও তার মন খারাপ হলে তিনি চট করে ধরে ফেলে তবুও এটাও ধরে ফেলবে ভাবতে পারেনি।সাফা সহজ হওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠে.....
---না তো বাবা।চলো তোমার এই কালো এ্যাফ্রোনটা খুলে দি??
.
সারিক মেয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকাল। তারপর মেয়ের কাছে দাড়াতেই সাফা বাবার কালো জামাটা খুলে দিল।সাফার পরিবার খুবি ছোট।মা ছিল এখন নেই।এক দূর্ঘটনায় সাফা নিজের প্রান প্রিয় মাকে হারিয়েছে।এখন বাসায় বাবা আর সে থাকে।বুয়া এসে কাজ করে দিয়ে যায়।সাফা রান্নায় একদম ঢেঁড়শ।বাবা মেয়ের ছোট পরিবার তাদের।
.
ডাইনিং টেবিলে সাফা পাগুলো চেয়ারে গুটে বসে আছে।ফ্লেটে খাবার নাড়াচাড়া করছে। তা দেখে সারিক বলে উঠে......
---আম্মার কি হলো বলতো??খাবার নাড়ছ কেনো??মন খারাপ নাকি??
---আচ্ছা বাবা কেউ অন্যায়ভাবে আমাকে মারলে আমার কি করা উচিত???
.
মেয়ের এমন কথায় সারিক অবাক হল।অবাক হয়েই বলে উঠে....
---তোমাকে কেউ মেড়েছে আম্মা??ওই দিনের ব্যাথাটা তুমি পড়ে গিয়ে পাওনি??
.
সাফা মনে মনে নিজেকে একটা বকা দিল।তার বুঝা উচিত ছিল বাবা উকিল আর এই উকিল মানুষগুলো কেডি পাঠাকের মত হয়।সামান্য ক্লু থেকে সম্পূর্ণ্য কেইস সল্ব করে ফেলাই এদের ধর্ম।তবুও সাফা কথা ঘুড়িয়ে বলে উঠে....
---আরে বাবা আমি এমনেই বলছি।তুমি বলবে কিনা বলো??
---বলব। অন্যায় যে করে এবং সহে দু'জনেই সমান অপরাধী। তবে হ্যাঁ অন্যায় কারি যদি অন্যায়টা ইচ্ছে করে করে তবে।এবার খাও।
.
সাফা মনে মনে খুশি হলো।তার ধারনা নিভ্র ইচ্ছে করেই তাকে মেরেছে।
.
🍁
সাফা রিকশা থেকে নেমে একটু ঢুলে ঢুলে হাটঁছে।ভার্সিটির গেটের সামনে আসতেই সে ভার্সিটির সামনের বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে ফুল গুনছে।অভ্র গাড়ি পার্ক করে এসেই দেখে সাফা উপড়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তাই সে একটু এগিয়ে এলো।গলা হালকা কেশে সাফাকে এলার্ট করার চেষ্ট করছে। কিন্তু সাফা তো সাফাই ও এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।উল্টো বিরক্তি নিয়ে সে বলে উঠে......
----এই যেই হন কাশি দেওয়ার হলে দুরে গিয়ে দেন।কানের কাছে খেক খেক করছেন কেন??
.
অভ্র এবার বলে উঠে...
---তা কয়টা ফুল ধরেছে??
.
সাফা আনমনেই বলে উঠে.....
---আরে আর বলিয়েন না এত এত ফুল কি আর গনা যায়??না তো।আমি তো শুধু দেখছি।কি সুন্দর ফুল না??
---হুম
.
সাফা এবার পাশ ফিড়েই একটু অবাক হয়ে তাকায়। অভ্রকে খুটিয়ে দেখে বলে উঠে.....
----আপনি এখানে??
---কেনো আসা যায় না বুঝি??
---আরে সেটা বড় কথা না। আপনি আমার পাশে দাড়িয়ে আছেন এটা বড় কথা।যাই হোক পেইন কিলারের দাম কত??
.
অভ্র অবাক চোখে তাকালো।এই মেয়ের মনে আছে ওই দিনের কথা??সে নিজেইতো ভুলে গেছে।অভ্র নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে....
---তোমার মনে আছে??
---মনে থাকবে না মানে কি??হুম??আপনি কি আমাকে ওই সব ঠক বাজদের মত মনে করেন নাকি??আল্লাহ মাইরা হালান??শেষে কিনা সাফার কপালে ঠকবাজের থাপ্পা লাগলো।ছি ছি ছি....আল্লাহ বাঁচাও।স্যার আপনি কি করে আমাকে এত খারাপ ভাবতে পারলেন বলেন??কি করে??
.
সাফার এমন কথা শুনে অভ্র পুরাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।অবাক হয়ে বলে উঠে....
---আমি এমন কিছু বলিনি।তুমি শুধুই এত বেশি বলছ।আমি তো ভুলেই গেছিলাম।তাই ভেবেছি তুমিও ভুলে গেছ।তাই এমনটা বলেছি।তুমি কি এতে কষ্ট পেয়েছ??
---অবশ্যই পেয়েছি।এটা তো কষ্ট পাওয়ারই কথা।সব বাদ আপনি দাম বলেন আমি দিচ্ছি।(ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে বলে উঠে)
--না না টাকা দিতে হবে না।আমার ভাই ডাক্তার ও ফ্রিতে দিয়েছে ঔষুধ তাই আমার নিজেরও টাকা লাগেনি।
.
সাফা এবার একটা প্রশারিত হাসি দিয়ে বলে উঠে...
---তবে তো ভালোই হয়েছে।তাহলে আমি আসি স্যার।আপনি বরং ফুল গনেন।
.
অভ্র হাবার মত তাকিয়ে আছে।জলপাই রং এর গোল জামাটায় সাফাকে মারাত্মক লাগছে।গলায় বিশাল করে উড়না ঝুলানো। আর চুলগুলো প্রতিবারের মতই কাঠি দিয়ে আটকানো।স্বভাব গুলো বাচ্চাদের মত।এই এখন যেমন বাচ্চাদের মত দুলে দুলে হাটঁছে।অভ্র হাসলো।
.
নিভ্র কাঁচের জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে।চোখ তার শূন্যে ভাসছে।সামনে বিস্তর জায়গা জুড়ে মাঠ।তাতে কিছু বাচ্চারা বল নিয়ে খেলছে।নিভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।বাচ্চাদের প্রতি তার একটা আলাদা অনুভুতি আছে।যা আর কিছুর প্রতি নেই।ভালো লাগে এদের তার।একটা বাচ্চা ছেলে আর একটা বাচ্চা মেয়ের চুল টানছে আর ঝগড়া করছে।নিভ্র হেঁসে উঠে।তাকে হাসতে দেখে নার্স প্রচণ্ড ভাবে অবাক হয়।তার তিন বছরের নার্সিং পেশায় আজ প্রথম সে নিভ্রনীলকে হাসতে দেখেছে।অল্প বয়স হওয়াই সেও এই নিভ্রর প্রেমে পরা একজন।কিন্তু ভয়ে কখনো সামনে আশা হয় না।আসলেই হাত পা কাঁপে এটা শুধু তার না সকলেরই হয়।তবে কাছ থেকে দেখার সুযোগ তার আজই হয়েছে।তাও নিভ্র অসুস্থ হওয়ায়।নার্সকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিভ্র ভ্রুকুঁচকে তাকালো।সাথে সাথে নার্স রুম ত্যাগ করলো।ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে গেছে।নিভ্র সোফায় বসে ফোনে কিছু রোগীদের ইনফরমেশন নিচ্ছে। সাত দিন তাকে থাকতে বলা হয়েছে।নিভ্রনীলকে একটা মেয়ে সাতদিন হসপিটালে থাকার ব্যবস্থা করেছে ভাবতেই নিভ্র হতভম্ভ হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল।মেয়েটা সাধারন না এটা তার বুঝা হয়েগেছে। হয়তো ভীতুও না।প্রচণ্ড সাহস তার তা না হলে নিভ্রনীলের সামনে দাড়াতে পারতো না।
.
লাইব্রেরির টেবিলে বই বিছিয়ে ঘুমাচ্ছে সাফা।আজ সে প্রচণ্ড ক্লান্ত। ইংলিশ পড়তে আসলেই তার ক্লান্তি দুই তিন ডিগ্রী হাই হয়ে যায়।তার ধারনা ইংলিশের মত ভয়ঙ্কর সাবজেক্ট পৃথিবীতে দ্বিতীয়টা আর নেই।এই ইংলিশ যে আবিষ্কার করেছে তাকে পেলে খুন করে জেলের ভাত খেতেও সে রাজি।কিন্তু শালা মনে হয় আরো আগেই মরে ভূত হয়ে গেছে।রেখে গেছে তার ভূতরে অস্তিত্ব ইংলিশ। অভ্র কিছু বই নিতে লাইব্রেরিতে এসেছে।এখন ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে।লাইব্রেরিতে কেউ নেই ভেবেই সে এসেছে।তা না হলে মেয়েরা তাকে দেখলেই গায়ে পড়ে স্যার স্যার করে।প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে তখন সে চশমাটা উঠানামা করায়।আর কিছু বলতেও পারেনা সে।লাইব্রেরিতে ডুকে বুই খুঁজতে শুরু করে।খুঁজতে খুঁজতে অভ্র থমকে দাড়ায়।তার চোখ আটকা পড়ে এক ঘুমন্ত পরীর মায়া জালে।অভ্র একদৃষ্টেতে তাকিয়ে আছে।সাফা টেবিলে হাত গুঁজে তার উপড় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।সামনের কিছু অগোছালো চুল এসে তার মুখের উপড় আছড়ে পড়ছে।মাঝে মাঝে সে বিরক্তি নিয়ে চোখ কচলাচ্ছে।অভ্র ধীর পায়ে সাফার সামনে দাড়ায়।এক দৃষ্টিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করে।এক চিলতি রোদ এসে সাফাকে নাড়িয়ে দেয়।ঘুমঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে উঠেই সে অভ্রকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে।সাথে সাথে ভূত দেখার মত চমকে যায় সে।বলে উঠে......
----আপনি এখানে???
---কেনো লাইব্রেরি কি তোমার একার নাকি??
---তা কেন হবে।কিন্তু আপনি এখানে এখন তাই জিগ্যেস করছিলাম।
.
অভ্র কথা ঘুড়িয়ে সামনের এক গাঁদা বই থেকে একটা বই নিতে নিতে বলে উঠে....
---ইংলিশ নিয়ে রিচার্স করছ নাকি??
---মোটেও না।আমার কি মাথা খারাপ নাকি যে এই ফাউল সাবজেক্ট নিয়ে রিচার্স করতে যাবো।একটা আজাইরা সাবজেক্ট। আপনিই বলেন আমাদেরকে এই সাবজেক্ট দেওয়ার কোন মানে আছে।আমাদের কাজ জামা কাপড়ের ডিজাইন করা।এই ঘাসপুস শিখে কি হবে??
---ইংলিশ ঘাসপুস সাবজেক্ট?? (অবাক হয়ে বলে উঠে)
---তা নয়ত কি।দু'দিন পরে যদি ক্লাস টেস্ট না হতো আমি মরে গেলেও এই সাবজেক্ট ধরতাম না।কিন্তু এখন কি করব??মাথা ঘুড়ায় এই গ্রামার্স গুলো দেখে।এএএএ..(কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে উঠে)
.
অভ্র হাসল।এরপর বলে উঠে....
---সমস্যা নেই।পৃথিবীর সবাই সবদিক দিয়ে বেস্ট হয় না।তোমাকে আমি এই বইগুলো থেকে কিছু কিছু দাগিয়ে দি পড়ে নিবে।দেখবে ভালো নাম্বার পাবে টেস্টে।
.
সাফা লাফিয়ে উঠে বলে উঠে......
----থ্যাংকু স্যার....
.
অভ্র ভ্রুকুঁচকে বলে উঠে....
---থ্যাংকু মানে??
---আরে থ্যাংকস এর স্পেশাল ভার্শন।
.
অভ্র আবার হাসল ,হাসতে হাসতেই সাফাকে দাগিয়ে দিতে লাগল

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال