নতুন ভয়ংকর ভুতের গল্প। vuter golpo 2022

ভুতের গল্প


নতুন ভয়ংকর ভুতের গল্প। vuter golpo 2022


 বন্ধুর মৃতদেহ/লাশ নিয়ে এম্বুলেন্সে তার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। সময় কাটানোর জন্য মোবাইলটা বের করলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো। আমার সামনেই প্রিয় বন্ধু কফিনের মধ্যে লাশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে।


মেসেজ করেছে অবন্তী। চেক করে দেখি নাম্বারে প্রায় ১০/১২ টা মেসেজ করেছে। সম্ভবত মেসেজ এর শব্দ সংখ্যার লিমিটের কারণে বারবার মেসেজ করেছে। আমি সবগুলো একসঙ্গে পড়লাম,

ফাহাদ...
আমাকে মাফ করে দিও৷ যে বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে কোনদিন কথা বলতে পারিনি। সেই বাবা যখন সেদিন অসহায়ের মতো আমার সামনে দুটো হাতজোড় করে কান্না করলো। তখন বাবার সেই ভালোবাসার কাছে তোমার আমার ভালোবাসা হার মেনে গেছে। আর তাই আজ ১১ দিন ধরে আমি অন্য মানুষের স্ত্রী। কথা দিয়েছিলাম জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকবো। আমার সবসময় ভয় হতো তুমি হয়তো আমাকে কষ্ট দেবে। হয়তো আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে। অথচ দেখো, আমি নিজেই তোমাকে কষ্ট দিলাম। আমি নিজেই তোমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলাম। জীবন অদ্ভুত তাই না?

তোমার কি মনে আছে, যখনই আমি কাঁদতে কাঁদতে তোমাকে বলতাম
" আমাকে ছেড়ে যাবে না তো কোনদিন? "
তুমি হাসতে হাসতে বলতে, " আমি কোনদিন যাবো না অবন্তী, কিন্তু তুমি হয়তো চলে যাবে। "

তখন আমি রাগ করতাম। কারণ আমি তো তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসতাম। তুমি নেই এরকম একটা পৃথিবী আমি কল্পনা করতে পারতাম না। অথচ আজ অন্য কেউ আমার স্বামী। রোজ তার সাথে আমাকে ঘুমাতে হয়। সকাল বেলা চোখ মেলে তাকিয়ে তার মুখটাই দেখতে হয়।

মানুষের জীবন এমন কেন?
যে যাকে চায়,
যদি তাকে পায়,
প্রকৃতির তাতে কি আসে যায়?
কেন প্রকৃতি তাদের কদায়?

হুট করেই সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছিল। আমি তাই ইচ্ছে করেই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছি। নাম্বারটা বন্ধ করলাম। বিয়ের দিন ভাইয়ার মোবাইল ফেসবুকের আইডি ডিলিট করলাম। তুমি কষ্ট পেয়েছ জানি, যার সঙ্গে সারাজীবন সুখে দুঃখে কাটাবো ভেবেছিলাম। তাকেই কষ্ট দিলাম।

আমার পরিবারে সবাই খুব খুশি। আমার স্বামী মানুষটাও খুব ভালো। এখন পর্যন্ত ভালোই মনে হচ্ছে আমার কাছে। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না।

তোমার কি আমাদের সেই প্রথম দেখা করার কথা মনে আছে? সেটাই প্রথম ছিল, আর ওটাই যে শেষ দেখা হবে কোনদিন তো ভাবিনি। আসলে মানুষের চিন্তার বাহিরেও তো কতকিছু ঘটে তাই না। সেদিন তোমার সাথে তিন ঘন্টা ছিলাম তাই না? অথচ তিন ঘন্টার মধ্যে আমরা কেউ কাউকে স্পর্শ করলাম না। কিন্তু যখন আমাকে রিকশায় তুলে দিয়ে তুমি তোমার হাতটা বাড়িয়ে দিলে। তখন প্রথম তোমার হাতটা স্পর্শ করলাম। বিশ্বাস করো সেদিন আমার কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না।
রিকশা ছেড়ে দিল, আমিও ছেড়ে দিলাম তোমার হাতটা। আমার ভালোবাসা, আমার স্বপ্ন।

তোমার ঘরে আমার জন্য কিনে রাখা শাড়িগুলো নিশ্চয়ই এখনো আছে। আচ্ছা আমি তো এখন তোমার নয়। ওই শাড়িগুলো কি আমি পাবো? তুমি তো যখনই পছন্দ হতো কিনে রেখে দিতে, আমি বলতাম বিয়ের পরে সবগুলো একসঙ্গে নেবো। আজ আমি বিবাহিতা, কিন্তু স্বামী তুমি নয়। এমন স্বপ্ন তো দেখিনি কোনোদিন।

নিজের পছন্দের একটা মেয়ে বিয়ে করে নিও৷ তারপর সবগুলো শাড়ি তাকে দিয়ে দিও। মেয়েরা শাড়ি কতটা পছন্দ করে তুমি কি জানো? তোমার স্ত্রীকে যখন দিবে তখন উপলব্ধি করে নিও৷

তোমার সাথে অনলাইনে পরিচয়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ জীবনে আর কোনদিন অনলাইনে যাবো না। নাম্বারটাও চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেবো। আজকের পর থেকে আমাদের আর কোনদিন কথা হবে না।
তোমার কাছে একটা অনুরোধ করি। যদি আমাদের কোনদিন চলার পথে দেখা হয়ে যায় তাহলে প্লিজ অচেনা হয়ে চলে যেও।

নিজের যত্ন নিও।
জীবন গুছিয়ে নিও।
জীবন তো একটাই।
তুমি ভালো থেকো, আমি ভালো নেই।

~ ~ ~ অবন্তী

সবগুলো মেসেজ একত্রে পড়লাম। আমার সামনে কফিনের মধ্যে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে ফাহাদ। অবন্তীর যখন পরপর পাঁচদিন অনলাইনে আসেনি কিংবা কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। তখন এক রাতে অফিস থেকে ফিরে রাগ করে মোবাইল আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে৷

ভাঙ্গা মোবাইল আর ঠিক হলো না। ফাহাদ তার সিমটা আমার মোবাইলে চালু করলো। জরুরি কল এলে আমি ফাহাদকে দিতাম। ফাহাদ রাগ করে বললো যে অবন্তী যেদিন যোগাযোগ করবে সেদিন নতুন মোবাইল কিনবে। তার আগে নয়।

মোবাইল ভাঙ্গার দুদিন পরে ফাহাদের প্রচন্ড জ্বর এলো। একদিনের মধ্যেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলাম। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললো ফাহাদের ডেঙ্গুজ্বর হয়েছে। তবে চিন্তার কিছু নাই।

ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার তো সবকিছুর খবর জানেন না। যিনি জানের তিনি হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা। তিনি ফাহাদের এই জ্বরকেই মৃত্যুর উছিলা করলেন। যেই ডাক্তার বলেছিলেন চিন্তার কিছু নাই।
সেই ডাক্তার নিজেই আজ সকালে ফাহাদকে মৃত ঘোষণা করলেন। ফাহাদের আর জানা হলো না অবন্তীর বিয়ের কথা।

আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম যে অবন্তীকেও ফাহাদের মৃত্যুর খবর জানাবো না। অবন্তী যদি সত্যি সত্যি আর অনলাইনে না আসে আর পুরনো সিমটা ব্যবহার না করে। তাহলে ফাহাদের মৃত্যুর খবর সে জানবে না। কি লাভ সদ্য সংসার জীবন শুরু করা ওই মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে।

তারচে বরং সে ভাবুক ফাহাদও হয়তো ভালো আছে। কোনো একদিন শাড়ি পরতে গিয়ে অবন্তী হয়তো মনে মনে ফাহাদের কথা চিন্তা করবে। সে ভাববে ফাহাদের কেনা সবগুলো শাড়ি বোধহয় তার স্ত্রী পরে রোজ ফাহাদের সামনে আসে। কিন্তু ফাহাদ সাদা কাফন পরে কবরে যাবার খবরটা নাহয় তার অজানা থাকুক।

আমি ফাহাদের সিম থেকে অবন্তীর নাম্বারে একটা মেসেজ দিলাম,

" আমার জন্য ভেবো না। স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করো। বিবাহের বন্ধন সবচেয়ে বড় একটা বন্ধন। ভালো থেকো ভালোবাসা। "

অবন্তী রিপ্লাই দিলো,

" এতো সহজে ক্ষমা করার জন্য ধন্যবাদ। আর মেসেজ দিও না। বিদায়, চিরবিদায়। "

মোবাইল পকেটে রাখলাম। এম্বুলেন্স ততক্ষণে ফাহাদদের বাড়ির সামনে এসে গেছে। কফিনে রাখা ফাহাদকে নেবার জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি ফাহাদের কফিনটা স্পর্শ করে বিড়বিড় করে বললাম,

" তোর সঙ্গে আর কোনদিন একই গাড়িতে চড়ে ভ্রমণ করা হবে না। আজই তোর আর আমার একসঙ্গে ভ্রমণের শেষ দিন। বিদায় বন্ধু, বিদায়। "

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال