ধারাবাহিক উপন্যাস ।। কফিন |

 ধারাবাহিক উপন্যাস ।। কফিন |
ধারাবাহিক উপন্যাস ।। কফিন
এই কফিনে আমি ৩০০ বছর যাবত থাকি। তুই আমার পবিত্র শরীরে তোর অপবিত্র শরীরের ছোয়া দিয়েছিস এর মুল্য তোকে দিতে হবে।
আয়নার মধ্যে রক্ত দিয়ে এই দুই লাইন কথা লিখা ভেসে উঠতে দেখেই অজ্ঞান হয়ে যায় মুনা। সকালে যখন মুনার জ্ঞান ফিরে তখন মুনা দেখতে পায় সে তার টিচার নভেরা আহমেদ এর সামনে বসে আছে। নভেরা আহমেদ বলে " মুনা তুমি অজ্ঞান হয়ে রুমে পড়েছিলে কেন? কি হয়েছিল? "
মুনা কাদতে কাদতে বলে উঠে " ম্যাডাম আমার সাথে কাল রাতে ভয়াবহ কিছু ঘটেছে। আমি ভেবেছিলাম আমি বুঝি কাল রাতেই শেষ "
অত:পর মুনা গতকাল রাতের বর্ননা দেয়া শুরু করে।
মুনা একটা রুম ভাড়া নিয়ে একাই ঢাকাতে থাকে। ইউনিভার্সিটি পড়ার পাশাপাশি টিউশনিও করায় মুনা। গতকাল সন্ধ্যায় টিউশনি শেষ করে মুনা দরজার তালা খুলে রুমের দরজা খুলতেই মুনার নাকে পচা মাছের গন্ধ আসে। মুনা লাইটটা অন করতেই দেখে " কাফনের কাপড় পরিহিত ১০-১২ টা লাশ উল্টো হয়ে পুরো রুম জুড়ে ঝুলে আছে "। মুনা ব্যাপারটা দেখেই আতংকিত হয়ে যায় এবং সাথে সাথে লাইট অফ করে এবং ৩ সেকেন্ড পর আবার লাইট অন করে দেখে কিছুই নেই। মুনা নিজে নিজেই মুচকি হেসে ভাবতে থাকে " আলিফ খানের রক্ত গল্প পড়তে পড়তে নিজেকে আনিকা ভাবা শুরু করেছি "
মুনা গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে ফ্রেশ হওয়ার জন্য টয়লেটে গিয়ে লাইট অন করে দরজা বন্ধ করতেই হঠাৎ মুনা দেখতে পায় টয়লেটের কমেডের ছিদ্র দিয়ে একটি হাত বের হয়ে আছে এবং সেই হাতের মধ্যে একটা ছোট বাচ্চার মাথা। বাচ্চাটি চোখ দিয়ে মুনার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মুনা ব্যাপারটা দেখে ভয়ে কাতর হয়ে টয়লেটের দরজা খুলতে যাবে এমন সময় হঠাৎ মুনার কানে ভেসে আসে " রুমের মধ্যে কেউ কথা বলছে " অথচ মুনা এ বাড়িতে একাই থাকে।
মুনা টয়লেটের দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে রুমের দিকে তাকাতেই দেখে খাটের ওপর একজন মহিলা বসে আছেন। যিনি কালো বোরকা পড়েছে। মহিলাটি একটা অজানা ভাষায় বিড়বিড় করে কি যেন বলতেছেই। মুনা এক পা দু পা আগাতে আগাতে বলে " এক্সকিউজ মি! কে আপনি? রুমে কিভাবে ঢুকলেন? "
মহিলাটি মুনার কথায় পাত্তাই দিচ্ছে না। মুনা বার বার জিজ্ঞাসা করতে করতে যখন মহিলাটির একবারে সামনে চলে যায়। তখন মহিলাটি মুখের ঘোমটা উঠায় এবং মুনা দেখতে পায়। মহিলাটির চোখ গুলো লাল টকটকে এবং মুখ থেকে জিব্বাটা বের হয়ে গলায় পেচিয়ে রয়েছে। নাক দিয়ে টপটপ করে রক্ত পড়ছে এবং মহিলাটির কপালে একটা চাঁদ আকা ছিল। মহিলার এমন চেহারা দেখে মুনা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। মহিলাটি তার এক হাত দিয়ে মুনাকে কাছে টেনে মুনার কানে কানে বিড়বিড় করে এক অজানা ভাষায় কিছু কথা বলে তারপর উধাও।
মুনা হাপাতে হাপাতে চারিপাশে তাকিয়ে দেখে মহিলাটি কোথাও নেই। এদিকে দরজাও বন্ধ। মুনা বুঝে উঠতে পারছিল না। এসব কি ঘটছে? তখনি হঠাৎ মুনার মনে পড়ে যায় তার এক্স বফ আফিফের একটা কথা যেটা আফিফ ব্রেকাপের সময় বলেছিল। কথাটি ছিল " তোমার মতো সিজোফ্রেনিয়া রোগির সাথে পুরো লাইফ কাটানো অসম্ভব "
( সিজোফ্রেনিয়া একটি মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি এমন সব ঘটনার সম্মুখীন হয় যেটার বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই)
মুনা ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমের জন্য বিছানায় শুয়ে পড়ে। লাইট অফ করে দেয়। হঠাৎ মুনা ফিল করে বিছানার দুইপাশ থেকে তাকে কেউ জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে। মুনা লাইট অন করে বিছানার এইপাশ ওইপাশ দেখে আবার শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর মুনা হঠাৎ ফিল করতে শুরু করে পুরো রুম অন্ধকার। সে তার হাত পা নাড়াতে পারছে না। তার পেটের ওপর একটা অদ্ভুত দেখতে প্রাণী বসে তার গলা চেপে ধরেছে। অদ্ভুত প্রাণীটার হাত ছিল একদম কালো কুচকুচে। চেহারার মধ্যে চোখ ছিল ৬টা আর চোখ দিয়ে রক্ত টপটপ করে মুনার মুখে পড়ছিল। জিব্বাটা ছিল অনেক বড়। জিব্বাটা গলায় পেচানো ছিল। সেই খারাপ আত্মাটা মুনাকে একটা অজানা ভাষায় কিছু একটা বলছিল কিন্তু মুনা কিছুই বুঝতে পারছিল না। মুনা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিল।
হঠাৎ দরজার বাহির থেকে একটা অদ্ভুত হুংকার এর শব্দ কানে আসে মুনার। সেই হুংকারের শব্দ পেয়েই সেই অদ্ভুত আত্মাটা মুনার গলা ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে হামাগুড়ি দিতে দিতে উধাও হয়ে যায়।
মুনা হাপাতে হাপাতে উঠে বসে। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে। তখনি মুনা দেখতে পায় তার সামনে এসে দাঁড়ায় একটি কাফন পরিহিত লাশ। কাফন পরিহিত লাশটি মুনাকে বলে " আমার পবিত্রতা আমায় ফিরিয়ে দে "।
কথাটা বলেই লাশটি উধাও হয়ে যায় এবং সামনের আয়নায় মুনা দেখতে পায় কিছু লিখা ভেসে উঠেছে। আয়নার রক্ত দিয়ে লিখা ছিল " এই কফিনে আমি ৩০০ বছর যাবত থাকি। তুই আমার পবিত্র শরীরে তোর অপবিত্র শরীরের ছোয়া দিয়েছিস এর মুল্য তোকে দিতে হবে "
মুনা অজ্ঞান হয়ে যায়।
নভেরা ম্যাডাম তখন মুনাকে জিজ্ঞাসা করে " কফিন সম্পর্কিত কিছু কি তুমি করেছ? "
মুনা তখন বলে " ম্যাডাম একটি টিমের সাথে আমার পরিচয় আছে ওরা শর্ট ফিল্ম বানায়। গতকাল ইউনিভার্সিটি শেষে ওদের একটা শর্ট ফিল্মের কাজের জন্য আমি যাই। সেখানে একটা দৃশ্য ছিল। একটি জ্যান্ত মেয়েকে কফিনে ভরে কবর দিয়ে দেয়া হয়। সে দৃশ্যে আমি অভিনয় করি এবং সেটার জন্যই আমাকে একটা কফিনের ভিতরে শুয়ে থাকতে হয়েছিল। কফিনের ভিতরে ক্যামেরা সেট করা হয়েছিল। আমার আর্তনাদ এবং মারা যাওয়া রেকর্ড করার জন্য "
ম্যাডাম তখন বলে " তুমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছ মুনা। ওই কফিন কোন যায়গা থেকে আনা হয়েছে জানি না। তবে ওই কফিনেই ভয়ানক কিছু ছিল। তুমি যেটাকে অপবিত্র করে দিয়েছ। এই ব্যাপার গুলো খুবই মারাত্মক রুপ ধারন করে। তোমাকে একটা ছোট ঘটনা বলি, একটা ছোট গ্রামে একবার এক লোক রাতের বেলা খালের ধারে প্রসাব করেন। কিন্তু সেই লোক জানতেন না সেখানেই জ্বীনেদের আখড়া ছিল। সেই জ্বীন গুলো সেই লোকের পুরো বংশ শেষ করে দেয় "
মুনা কাদতে কাদতে বলে " আমি যা করেছি না বুঝে করেছি। প্লিজ আমাকে উপায় বলুন "
নভেরা ম্যাডাম বলেন " তোমার বর্ননা শুনে মনে হচ্ছে একটা খারাপ আত্মা তোমার পিছনে আসে না। আরও ভয়ানক কিছু করেছ যেটা হয়তো তুমি নিজেও জানো না "
অন্ধকার রাত হঠাৎ মুনা ফিল করলো তার ঠিক ঘাড়ের মধ্যে কিছু একটা আলতো করে ছোয়া দিচ্ছে। মুনা ভালো করে ফিল করে বুঝতে পারলো এটা একটা ধারালো নরম জিব্বা কিন্তু মুনা এ বাড়িতে একাই থাকে তাহলে কে মুনার পিছনে শুয়ে ঘাড়ে জিব্বা দিয়ে ছোয়া দিচ্ছে? মুনা ভয়ে সুরা পড়া শুরু করে। আস্তে আস্তে মুনা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখতে পায় একটা কংকাল তার বিছানায় তার পাশেই শুয়ে আছে। কংকালটির মুখ থেকে কালো একটা লম্বা জিব্বা বের করে মুনার ঘাড়ের কাটা স্থানটি থেকে রক্ত চুষে খাচ্ছে।
মুনা ভয়ে চিতকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে। মুনা এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিল। মুনার চিতকারে ওয়াশরুম থেকে নভেরা আহমেদ অর্থাৎ মুনার ম্যাডাম বলে উঠে " মুনা কি হয়েছে? "
মুনা উত্তর দেয় " কিছু না ম্যাডাম। একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি "
তখনি হঠাৎ কলিংবেলটা বেজে উঠে। আস্তে ধীরে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলতেই মুনার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো। কারন দরজার ওইপাশে দাঁড়িয়ে আছে মুনার ইউনিভার্সিটি নভেরা ম্যাডাম। নভেরা ম্যাডাম বলে উঠে " মুনা তুমি আজ ইউনিভার্সিটি যাও নি কেন? ভাবলাম কোন সমস্যা হলো কি না তাই দেখতে আসলাম "
মুনা ভাবছিল নভেরা ম্যাডাম মাত্র আসলে ওয়াশরুমে তাহলে কে? মুনা বলে উঠে " এটা কিভাবে সম্ভব? আপনি মাত্র আসলে আমার সাথে এতক্ষণ কথা বললো কে? "
নভেরা ম্যাডাম বলে উঠে " মানে? "
মুনা নভেরা ম্যাডামকে বাড়িতে না নিয়ে এসে নিজে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় এবং রুমে তালা দিয়ে নভেরা ম্যাডামকে নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসে। নভেরা ম্যাডাম অবাক হয়ে প্রশ্ন করে " কি হয়েছে মুনা? কোথায় যাচ্ছো তুমি? "
মুনা তখন বলে উঠে " ম্যাডাম আমার সাথে সুপারন্যাচারাল কিছু ঘটছে। প্লিজ আপনার না পরিচিত একটা ব্যাক্তি আছে যিনি এসব ভালো বুঝেন। প্লিজ আমাকে তার কাছে নিয়ে চলুন "
নভেরা ম্যাডাম মুনাকে নিয়ে সেই গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে এবং পথেই গত রাতের সব ঘটনা ম্যাডামকে বলে এবং নভেরা রুপে খারাপ কিছু যে এসেছিল সেটাও জানায়।
মুনা এবং নভেরা একটি পোড়া বাড়ির সামনে চলে আসে। বাড়িটি একটু জঙ্গলের ভিতরে। মুনা এবং নভেরা বাড়িটির সামনে আসতেই হঠাৎ পুরো মাটি এবং বাড়িটি কেপে উঠে। আকাশটা হালকা মেঘলা হয়ে যায়। মুনা পিছনে ফিরে নভেরা ম্যাডামকে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে নভেরা ম্যাডাম নেই। তখনি হঠাৎ মুনার মনে পড়ে যায়। নভেরা ম্যাডাম তো মুনার বাড়িই চিনে না। তাহলে সে কিভাবে মুনার বাড়িতে আসবে। তাহলে মুনার বাড়িতে নভেরা ম্যাডাম আসে নি। তার রুপে অন্যকিছু এসেছিল।
এটা ভাবতে ভাবতেই মুনা সামনের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখে পোড়া বাড়িটি নেই সেখানে একটা ছোট ঘর আর সেই ঘরের সামনে একজন ব্যাক্তি বসে আছে। সেই মানুষটি মাথা নিচু করে হাতে লাঠি নিয়ে বসে আছে। দূরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে বয়স্ক লোক।
মুনা ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে " এইযে শুনছেন " তখনি লোকটি মাথা তুলে তাকায় এবং মুনা দেখতে পায়। লোকটির চেহারায় রক্ত লেগে আছে। একটি মাত্র চোখ এবং সেটা লাল টকটকে। মুনা এটা দেখে পিছন দিকে ফিরে দৌড় দেয় এবং সেই অদ্ভুত আত্মাটাও মুনার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে এটাও মুনা বুঝতে পারছে। মুনা জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে দৌড়াচ্ছে হঠাৎ মুনার চোখ যায় একটি গাছের ওপর। মুনা দেখতে পায় একদম চিকন কাঠির মতো একজন মহিলা গাছের ওপর বসে আছে। মহিলাটি সাদা শাড়ি পড়ে আছে এবং মহিলাটির চুল ও সাদা। মহিলাটি মুনার দিকে চেয়ে একটা হাসি দেয়। মুনা ওপর থেকে নিজের নজরটা নিচে নামিয়ে দৌড়াতে শুরু করে।
হঠাৎ মুনা দেখতে পায় তার সামনে দুটি মাথা ছাড়া মানুষ এসে দাঁড়ায়। যাদের কোন মাথা ছিল না। পেটের মধ্যে বিশাল একটা চোখ। সেই চোখ বার বার খুলছে এবং বন্ধ করছে। ভয়ানক দৃষ্টিতে সেই চোখ দিয়ে মাথা ছাড়া মানুষ গুলো মুনার দিকে চেয়ে আছে। মুনা পিছনে যেতে পারবে না। সামনেও এই মাথা ছাড়া মানুষ গুলো দাঁড়িয়ে আছে। মুনা কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। মুনা চোখ বন্ধ করে সুরা ফাতিহা পড়তে পড়তে সামনের দিকে দৌড় দেয়।
কিছুক্ষণ পর মুনা দেখতে পায় তার সামনে পিছনে কেউ নেই। সে মেইনরোডে চলে এসেছে। মুনা হাপাতে হাপাতে মেইন রোড দিয়ে হাটছিল। মুনা রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছিল হঠাৎ মুনার সামনে একটা অটো এসে দাঁড়ায় এবং অটোর ভিতর থেকে কেউ বলে উঠে " এই মুনা তুমি এখানে কেন? কোথাও যাও? "
মুনা দেখতে পায় অটোর ভিতরে নভেরা ম্যাডাম বসে আছে। মুনা প্রথমে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় কিন্তু অটোর মধ্যে আরও একজন ব্যাক্তি আছে এবং ড্রাইভার আছে তাই এটা আসলেই নভেরা ম্যাডাম এটা ভেবে নেয় মুনা। মুনা অটোতে উঠে বসে এবং কেদে কেদে নভেরা ম্যাডামকে সব ঘটনা খুলে বলে।
কিছুক্ষণ পর মুনার পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠে। মুনা মোবাইলটা বের করে দেখে তার ইউনিভার্সিটির বান্ধবী নিরা কল দিয়েছে। মুনা ফোনটা কানে নিতেই নিরা কাদতে কাদতে বলে " মুনা নভেরা ম্যাডাম এর মা*র্ডার হয়ে গেছে। উনার বাড়ির ফ্লোরে শুধু উনার বডিটা পাওয়া গেছে। মাথাটা এখনো মিসিং "
নিরার কথাটা শুনে মুনা তার বাম পাশে চেয়ে দেখে " একজন মহিলা তার বিশাল বড় একটা নাক এবং বিশাল বড় জিব্বা গলায় পেচিয়ে আছে। লাল টকটকে চোখ থেকে রক্ত টপটপ করে পড়ছে আর জিব্বা দিয়ে সেই রক্ত চেটে খাচ্ছে এবং মুনার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মুনা বুঝে ফেলে নভেরা ম্যাডাম এর রুমে খারাপ কিছু বসে আছে তার পাশে। মুনা উঠে দৌড় দেয়। ফাকা রাস্তা এবং রাস্তার দুইপাশে বিশাল বড় বড় গাছ। হঠাৎ মুনা দেখতে পায় একটা ছোট বাচ্চা বাচ্চাটির পুরো শরীর কালো কুচকুচে এবং বাচ্চাটির চেহারায় কোন চোখ নেই। বাচ্চাটির বুকের মধ্যে একটা সাদা চোখ। বাচ্চাটির বিশাল বড় দাত। বাচ্চাটি হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে মুনার দিকে আসছে।
মুনা মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়তে পড়তে এগিয়ে যায় এবং বাচ্চাটি উধাও হয়ে যায়।
নভেরা ম্যাডাম এর বাড়িতে মুনা চলে আসে। মুনা জানালা দিয়ে দেখতে পায় রুমের ভিতরে পুলিশ অফিসার এবং তার বান্ধবী নিরা বসে সিসি ক্যামেরার একটা ভিডিও দেখছে। মুনা নিজেও ভিডিওটা খেয়াল করে এবং দেখতে পায় " নভেরা ম্যাডামকে চেয়ারের সাথে বেধে মুনা নিজে ধারালো কিছু দিয়ে নভেরা ম্যাডামকে জবাই করে বডি থেকে মাথা আলাদা করে,মাথাটা ফুটবলের গোলকিপারদের মতো জড়িয়ে ধরে মাথা থেকে বের হওয়া রক্ত চেটে চেটে খেতে খেতে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে "
মুনা বিশ্বাস করতে পারছিল না। নভেরা ম্যাডামকে সে কখন কিভাবে হ*ত্যা করলো? তখনি মুনা শুনতে পায় পুলিশ অফিসার নিরাকে বলছে " দেখেছেন? স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আপনার বান্ধবী মুনা নভেরা ম্যাডামকে জ*বাই করে মাথা নিয়ে চলে যাচ্ছে "
নিরা তখন বলে উঠে " স্যার ও বলেছে ও আসতেছে। এইযে মুনার নাম্বার। আপনি ওকে ট্রেস করে এরেস্ট করুন "
কথপোকথন শুনে মুনা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে এবং নিজের মোবাইলটা ভেঙে ফেলে তারপর কাদতে কাদতে দৌড়ে পালাতে থাকে এবং ভাবতে থাকে " এইটা আমি ছিলাম না। কিন্তু স্পষ্ট আমাকে দেখা যাচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই সেই সুপারন্যাচারাল স্প্রিটের কাজ কিন্তু সিসি ক্যামেরাতে তো সুপারন্যাচারাল কিছুর অস্তিত্ব রেকর্ড হওয়ার কথা না। তাহলে কি সত্যিই ওইটা আমি ছিলাম? "
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, মুনা যেহেতু একজন খু*নের আসামি তাই সে একটু লোকালয় ছেড়ে দূরে চলে যায়। মুনা একটি নির্মানাধীন বিল্ডিং এর ভিতরে গিয়ে চুপ্টি করে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ কিছু একটা ওপর থেকে তার ঠিক নাকের ওপর পড়ে। কি ছিল সেটা দেখার আগেই মুহুর্তের মধ্যে সেটা নাকের ফুটো দিয়ে ভিতরে চলে যায়। নাক দিয়ে সেটা গলায় প্রবেশ করে। মুনা স্পষ্ট বুঝতে পাতছিল সেটা একটা কেচো ছিল। পিলপিল করে সেটা গলা দিয়ে পেটে চলে যায়। এদিকে মুনা বমি করছিল,হাত পা ছুটাছুটি করছিল কিন্তু কিছুতেই সেটা বের হচ্ছিল না। তখন হঠাৎ মুনার পেট ছিদ্র করে সেটা পেট থেকে বেরিয়ে আসে। মুনার রক্তে লাল টকটকে হয়ে ছিল সেটা। পেট থেকে বের হতেই মুহুর্তের মধ্যে সেটা উধাও হয়ে যায়।
মুনা পেটে নিজের কাপড় বেধে রক্ত পড়া বন্ধ করে এবং কাদতে থাকে। হঠাৎ কেউ পিছন থেকে মুনার কাধে হাত রাখে। মুনা কাপতে কাপতে পিছনে তাকাতেই দেখে কেউ নেই। মুনা ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে ৬টা মাথা তার ঠিক মুখের কাছে এক আঙুল দুরত্বে ভয়ানক ভাবে বড় বড় চোখ করে তার দিকে চেয়ে আছে। মুনা প্রচন্ড ভয়ে চিতকার করে পিছিয়ে আসতে থাকে। তখনি পিছন থেকে মুনার চুল ধরে কেউ টানতে টানতে কিছুটা পিছনে নিয়ে আসে। হঠাৎ সবকিছু চুপচাপ উধাও হয়ে যায়। মুনা হাপাতে হাপাতে চারিপাশে তাকিয়ে খুজছিল কিন্তু সেই মাথা গুলো নেই। তখনি মুনার পিছন থেকে দুটি কালো কুচকুচে হাত মুনার পেট চেপে ধরে আর মুনা দেখতে পায় তার ঠিক সামনে একটা বিড়ালের মতো অবয়ব কিন্তু মাথাটা মানুষের মতো এবং মাথার পুরোটা জুড়েই চোখ আর চোখ এবং চোখ গুলো লাল টকটকে তার চার পা দিয়ে মুনার দিকে এগিয়ে আসছে। মুনা অজ্ঞান হয়ে যায়।
মুনার জ্ঞান ফিরে মুনা ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখতে পায় তার ঠিক এক আঙুল ওপরে একটা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো লা*শ ভেসে আছে। লা*শটির জিব্বা টেনে নিয়ে কপালে তারকাটা মেরে রাখা হয়েছে। লা*শটির চোখ নেই। এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে মুনা কাদতে কাদতে চিতকার করে উঠে দৌড় দিতে যাবে এমন সময় হঠাৎ মুনা দেখতে পায় তার চারপাশে ঘিরে দাড়িয়েছে কিছু শকুন। শকুন গুলোর একটার ও মাথা নেই। মুনা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিল।
মুনা পিছন দিকে পিছিয়ে আসছিল হঠাৎ কিছু একটার সাথে মুনা ধাক্কা খায়। মুনা পিছন ফিরে দেখে একটি কাফনে মোড়ানো লাশ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লাশটির চেহারাটা দেখা যাচ্ছিল কিন্তু চেহারাতে মাংস ছিলই না। কাফনে মোড়ানো লাশটি বলে উঠে " কেন আমায় অপবিত্র করলি? আমার পবিত্রতা আমায় ফিরিয়ে দে "
এটা বলার সাথে সাথেই দুইটা কালো কুচকুচে হাত পিছন থেকে মুনার গলা চেপে ধরে। মুনা বাচার জন্য আকুতি করছিল। তখনি সেখানে মোমবাতি নিয়ে কালো বোরকা পরিহিত একজন মহিলা উপস্থিত হয়। মহিলাটি আসার সাথে সাথে সবকিছু উধাও হয়ে যায়। সেই মহিলাটি মুনার হাত ধরেই বলে " চলো এখান থেকে "
মুনাকে নিয়ে মহিলাটি রাস্তায় চলে আসে। রাস্তায় আসার পর মহিলাটি যখন তার বোরকা খুলে ফেলে তখন মুনা আরেকটি ধাক্কা খায়। মুনা দেখতে পায় সে নিজেই তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একদম তার মতো দেখতে একজন মানুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুনা ভয়ে কাপতে কাপতে দূরে যেতে নেয় এমন সময় মহিলাটি বলে উঠে " আমি জানি তুমি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো। কিন্তু ভয় পেও না। আমি তুমিই কিন্তু অন্য একটা গ্রহের তুমি। প্যারালাল ইউনিভার্সে আমি এক অন্য মুনা। তোমাকে বাচাতেই আমার আগমন "
কফিন তোমাকে খুজে নিয়েছে কারণ ওই কফিনেই তোমার মৃত্যু লিখা আছে। প্রতিটি প্যারালাল লাইফে মুনারা এই কফিনের জন্য মারা গিয়েছে। এই কফিনে যেই সুপারন্যাচারাল স্প্রিট আছে তাকে কোন এক মুনা অপবিত্র করেছিল আর সেই কলংক বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা অন্য প্যারালাল মুনারা। আমিও একজন ভুক্তভোগী। ওই কফিনের কালো আত্মার থেকে তুমি কখনোই বাচতে পারবে না। যেমনটা আমিও পারি নি। তুমি দুনিয়ার যেই প্রান্তেই যাও না কেন ওই কফিন তোমাকে খুজে নিবে।
কথাগুলো মুনার প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে আসা অন্য এক মুনা বললো। কথাগুলো বলেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো সেই মুনা। এদিকে মুনা অবাক হয়ে শুধু কথাগুলো শুনে চুপচাপ বসে পড়লো। মুনা বসে বসে ভাবছে " এই জাল থেকে বের হওয়ার কি কোন উপায় নেই? "
হঠাৎ মুনার নাকের ওপর একটা কিছু পড়লো। মুনা নাকে হাত দিয়ে দেখে সেটা একটা চুল কিন্তু খুব বেশি বড় না। চুলটা ওপর থেকে পড়েছে তাই মুনা ওপরে তাকায় এবং ওপরে তাকিয়ে মুনা যা দেখতে পায় তা দেখে তার কলিজা কেপে উঠে। মুনা দেখতে পায় " একটা বডি ছাড়া মাথা শুন্যে ভাসছে। মাথাটা পুরোটা চুল আর দাড়ি দিয়ে ডুবে আছে শুধু দুটি চোখ বন্ধ হয়ে আছে। হঠাৎই চোখ দুটি খুলে গেলো আর লাল টকটকে চোখ দুটো দিয়ে মুনার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে "
মুনা দৌড় শুরু করে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা অন্ধকার সাথে ফাকা রাস্তা। মুনা দৌড়াচ্ছে। মুনা শুনতে পাচ্ছে পিছন থেকে তাকে অদ্ভুত কন্ঠে কেউ বলছে " আমার পবিত্রতা ফিরিয়ে দে "
মুনা দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ মুনার সামনে একজন অদ্ভুত ব্যাক্তি এসে দাঁড়ায়। মুনা থেমে যায়। সেই অদ্ভুত ব্যাক্তিটি একটা লুঙ্গি আর খালি গায়ে হাতে একটা লাঠি আর এলোমেলো চুল দাঁড়িয়ে আছে এবং বলে উঠে " ও চলে গেছে "।
কথাটা বলেই লোকটি লাঠি ভর করে চলে যাচ্ছে। মুনা ভাবলো লোকটি হয়তো তাকে সাহায্য করতে পারে। মুনা পিছন থেকে বলে উঠে " আপনি জানেন ও কে ছিল? আমাকে সাহায্য করবেন? "
মুনার কথা শুনে লোকটি থেমে যায় এবং পিছন ফিরে মুনার দিকে চেয়ে গম্ভীর মুখে বয়স্ক লোকটি বলে " ইহুদি জ্বীন! শয়তানের উপাসনাকারী। তোকে সাহায্য করলে ওরা আমার কথা করবে "
মুনা লোকটির পায়ে পড়ে কাদতে কাদতে বলে " দুনিয়ার চোখে আমি খু*নি। এদিকে এই জ্বীন। আমায় বাচান প্লিজ "
মুনা আকুতি মিনতির পর বয়স্ক লোকটি মুনাকে নিয়ে নদীর ধারে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেই লোকটির বাড়ি সেটা। বাড়িতে যাওয়ার পর মুনা দেখতে পায় লোকটির স্ত্রী ও রয়েছেন সেই ছোট ঘরে। খুবই গরীব তারা। মুনা যাওয়ার পর সেই বয়স্ক লোকের স্ত্রী মুনাকে ফ্রেশ হওয়ার পর কিছু মিষ্টি খেতে দেয়। মিষ্টি খাওয়ার পর মুনার সামনে দুজন বসে আছে। হঠাৎ সেই বয়স্ক লোকটি বলে উঠে " তোমার পিছনে যারা পড়েছে তারা হচ্ছে খারাপ জ্বীন। ইহুদি জ্বীন বলা হয় এদের। এরা শয়তানের উপাসনাকারী। আমার ধারণা তুমি হয়তো এদের কোন গোপন মিটিং কিংবা কোন কিছু নষ্ট করেছ তাই তারা তোমার পিছু নিয়েছে "
মুনা বলে উঠে " আমার কি বাচার কোন উপায় নেই? "
লোকটি বলে উঠে " একটা উপায় আছে। তবে সেটার জন্য তোমাকে ভয়ংকর কিছু কাজ করতে হবে "
মুনা বলে " কি কাজ বলুন! "
লোকটি বলতে শুরু করে " সদ্য জন্মানো একটা বাচ্চা যে কি না জন্মানোর পরই মারা গিয়েছে। এরকম একটা বাচ্চা কবর থেকে চুরি করতে হবে তারপর.............. "
মুনা কথাগুলো শুনে চলে আসলো সেই মোতাবেক কাজ করার জন্য। হঠাৎ কিছুদূর আসার পর মুনার খেয়াল হলো " আমার পবিত্রতা আমায় ফিরিয়ে দে " এই কথাটার মানে জিজ্ঞাসা করা হয় নি। সেজন্য আবার মুনা ব্যাক করে সেই বয়স্ক লোকের বাড়িতে যায় এবং বাড়িতে প্রবেশ করেই মুনা যেন একটা ধাক্কা খায়। মুনা দেখতে পায় রুমের মধ্যে যাদের সাথে মাত্র ৫০ সেকেন্ড আগে মুনা কথা বললো তাদের লা*শ ফ্যানের সাথে ঝুলছে। দুজনই গলায় ফা*সি দিয়ে ঝুলছে এবং চোখ গুলো খোলা মুনার দিকে চেয়ে আছে। মুনা নিজেকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছিল না। মাত্র ৫০ সেকেন্ডে এসব কিভাবে সম্ভব। হঠাৎ মুনার চোখ যায় রুমের সামনের ছোট একটা বারান্দার মতো রুমের দিকে যেটা নদীর তীর ঘেসে তৈরি করা। সেখানে মুনা দেখতে পায় দুটি কাফনে মোড়ানো লা*শ বসে আছে এবং মুনার দিকে চেয়ে আছে। কাফনে মোড়ানো লাশ গুলো চেহারায় আগুন জ্বলছিল।
মুনা এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে বেরিয়ে আসে এবং দৌড়াতে দৌড়াতে মেইন রোডে চলে আসে। মেইন রোডে এসে এক পথচারীকে মুনা সেই বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করে এবং বয়স্ক লোকটির বর্ননা দেয়। তখন পথচারী বলে " বয়স্ক লোকটি হচ্ছে এনায়েত মিয়া এবং তার স্ত্রী। কিছু বছর আগে তারা গলায় ফা*সি দিয়ে সুই*সাইড করেছে। এখন লোকে বলে ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে জ্বীন থাকে "
মুনা তখন নিজে নিজেই ভাবে " হয়তো সেই দুটি ভালো জ্বীন ছিল। যারা এনায়েত মিয়ার রুপে তাকে পথ দেখিয়েছে এবং খাবারে ভাতের যায়গায় মিষ্টি দেয়ার রহস্যটাও তখন মুনা খুব ভালো করে বুঝতে পারে "।
মুনা সেই জ্বীনের কথামতো বিভিন্ন হসপিটালে ঘুরাঘুরি শুরু করে। কোন বাচ্চা মারা যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল মুনা। একসময় এরকম একটি ঘটনা ঘটে যায়। এক মহিলার যমজ বাচ্চা হয় কিন্তু একটি মৃত জন্ম নেয়। মুনা সেই পরিবারের ওপর আড়াল থেকে নজর রাখে এবং বাচ্চাটিত কবর কোথায় দেয়া হয় সেটাও আড়াল থেকে মার্ক করে রাখে।
গভীর রাত শহরটা নিস্তব্ধতায় মুড়ে আছে। মুনা উপস্থিত কবরস্থানে। কবরস্থানে বিভিন্ন ধরনের শব্দ হচ্ছে। মুনা প্রচন্ড ভয়ে ভয়ে কবর খুড়ছিল। কিছুটা কবর খুড়তেই মুনা বাচ্চাটির পা দেখতে পায়। আরও খুড়তে থাকে। খুড়তে খুড়তে মুনা বাচ্চাটির পুরো লা*শটি বের করে ফেলে। বাচ্চাটির লা*শটি তুলতে মুনা হাত বাড়াতেই হঠাৎ মুনার চোখ পড়ে কিছুটা দূরে এবং মুনা দেখতে পায় একটা সাদা জুব্বা পরিহিত কিছু দাঁড়িয়ে মাথা নেড়ে মুনাকে ইশারায় না করছে এটা করতে। তখনি মুনার মনে পড়ে যায় " সেই এনায়েত মিয়ার বাড়ির জ্বীনটিও বলেছিল এটা করার সময় অনেক কিছু তোমাকে বাধা দিতে চাইবে কিন্তু নিজের ভালোর জন্য এটা তোমাকে করতে হবে "
মুনা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বাচ্চাটির লাশটি কোলে তুলে নেয় তারপর হাটা শুরু করে। মুনা শুনতে পারছিল তার পিছনে হয়তো অনেক কিছু তাকে ফলো করছিল এবং বিভিন্ন শব্দ করছিল কিন্তু জ্বীন বলে দিয়েছিল পিছনে ফিরে না তাকাতে। মুনা হাটছে হঠাৎই মুনার শরীরটা কাপা দিয়ে উঠে কারণ তার কোলে থাকা মৃত বাচ্চাটি হঠাৎ করে নড়ে উঠেছে। মুনা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিল। মুনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাচ্চাটির মুখ থেকে কাফনের কাপড়টি উঠায় এবং মুনা দেখতে পায় বাচ্চাটির চোখ দুটি কেউ তুলে নিয়েছে। মুনা প্রচন্ড ভয় পায় এবং কাফনের কাপড় দিয়ে মুখটি ঢেকে জোরে জোরে হাটা শুরু করে।
একসময় মুনা নদীর তীরে চলে আসে এবং একটা ছোট ডিঙি নৌকা নেয় এবং বাচ্চাটিকে নিয়ে ভেসে যায় নদীর বুকে। জ্বীনের কথা মতো বাচ্চাটির লা*শটি নৌকার একপাশে রেখে সেদিকে পিছন ফিরে অন্যদিকে মুখ করে মুনা বৈঠা বাইছিল এবং সূরা পড়ছিল। জ্বীন বলেছিল " কিছু একটা তার নৌকাতে আসবে এবং বাচ্চাটিকে খাবে। তখন মুনা তার কাছে কিছু চাইলে সে দিবে "
মুনা নৌকা নিয়ে ঘুরছিল এদিক থেকে সেদিক। অন্ধকার চারিদিকে। নদীতে স্রোত প্রচুর। হঠাৎ মুনা শুনতে পায় তার পিছনে কড়মড় করে কেউ কিছু খাচ্ছে। মুনা বুঝতে পারে সে যার অপেক্ষা করছিল। সে এসেছে এবং বাচ্চাটিকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।
মুনা সেই জ্বীনের লিখে দেয়া কিছু আরবি কথা পড়া শুরু করে এবং বার বার পড়া শুরু করে। কিছুক্ষণ পর মুনা পিছন থেকে কোন শব্দ পাচ্ছিল না। মুনার মনে কৌতূহল জাগে জিনিসটা কিরকম সেটা দেখার জন্য এবং মুনা নিজেকে আর সামলাতে না পেরে ঘুরে তাকায় এবং চাঁদের আলোতে মুনা দেখতে পায় একটা অদ্ভুত পাখির মতো দেহ কিন্তু মাথাটা মানুষের মতো আর বিশাল বড় বড় চুল আর চেহারায় অজস্র চোখ সেগুলো খুলছে আর বন্ধ করছে এবং একটা বিশাল বড় দাত। মুনা ঘুরে তাকাতেই সেটা উড়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় এবং মুনা দেখতে পায় বাচ্চাটির শরীরের হাড় গুলো আর রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
অন্ধকার রাত দুপাশে জঙ্গল লোকালয় বহুদূরে। জঙ্গলের মাঝখানের খাল দিয়ে ডিঙি নৌকা নিয়ে বাইতে বাইতে যাচ্ছে মুনা। চাঁদের আলোতে জনমানবহীন এই খাল দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মুনা। নিস্তব্ধতা যেন তাকে ঘিরে ধরেছে। হঠাৎ নৌকাটা আটকে গেছে। কিছুতেই আগাচ্ছে না। মুনা বুঝতে পারছে না কিসে আটকে গেলো। মুনা বৌঠা দিয়ে পানির নিচে চাপ দিতেই হঠাৎ একটা বাচ্চার কান্না শুরু হয়। মুনার কলিজাটা কেপে উঠে এই জনমানবহীন খাল আর জঙ্গলের মাঝে বাচ্চার কান্না কোন যায়গা থেকে আসছে?
এসব ভাবতে ভাবতেই মুনা পিছন ফিরতেই দেখে নৌকাতে একটা অদ্ভুত প্রাণী বসে আছে। প্রাণীটার সারা শরীরে রক্ত টুপটাপ আর বুকের মধ্যে একটি লাল টকটকে চোখ। প্রাণীটি মুনাকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠে " আমার পবিত্রতা আমায় ফিরিয়ে দে "
কথাটা বলেই সেটা পানিতে পড়ে যায়। মুনা এই অন্ধকার জনমানবহীন খাল দিয়ে নৌকা বাইতে বাইতে এগিয়ে যাচ্ছে আর ভাবছে " একদিকে এই ইহুদী জ্বীন তার পিছনে পড়েছে অন্যদিকে নভেরা ম্যাডামের খু*নি হিসেবে সে চিহ্নিত। এসবের থেকে বাচার উপায় কি? "
এসব ভাবতে ভাবতেই মুনা নৌকা তীরে রেখে জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে হাটছিল। হঠাৎ মুনার কাধের ওপর কিছু একটা ওপর থেকে পড়ে। মুনা ওপরে তাকাতেই দেখে গাছের ওপর সাদা কাপড় পরিহিত কিছু একটা পা ঝুলিয়ে বসে আছে। মুনা ওপরে তাকাতেই সাদা কাপড় পরিহিত মহিলাটি এক লাফে নিচে নেমে আসে। মুনা দেখতে পায় এটা আর কেউ নয় এটা নভেরা ম্যাডাম। তার শরীর থেকে মাথা আলাদা এবং পুরো মাথা রক্তে মাখা। নভেরা ম্যাডাম বলে উঠে " চল আমার সাথে "। মুনা বুঝে গিয়েছিল এখানে ভয়ানক কিছু ঘটতে চলেছে। মুনা উল্টো দৌড় দেয়। মুনা দৌড়াচ্ছে কিন্তু তার পিছনে কিছু একটা দৌড়ে আসছে সে সেটা বুঝতে পারছিল।
হঠাৎ মুনা দেখতে পায় তার ঠিক সামনে একটা কফিন রাখা। মুনা থেমে যায়। থমথমে পরিবেশ। হালকা বাতাসে গাছের পাতা গুলো মাঝেমধ্যে নড়ে উঠছে। মুনা গুটি গুটি পায়ে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে কফিনটির সামনে যায়। মুনা কফিনের সামনে যেতেই কফিনের মুখটা খুলে যায় এবং একটা কাফনে মোড়ানো লা*শ ভিতর থেকে উঠে বসে। মুনা ভয়ে ৩ পা পিছিয়ে আসে। কাফনে মোড়ানো লা*শটা এবার উঠে দাঁড়ায় এবং হালকা করে কাপছিল। মুনা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিল। হঠাৎ লা*শটা এক পা দু পা করে মুনার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। মুনা প্রচন্ড ভয়ে ঘামতে ঘামতে পিছন দিকে যেতে থাকে। কাফনে মোড়ানো লা*শটা মুনার দিকে আসছিল। মুনা পিছনে যেতে যেতে হঠাৎ মুনার ডান পা একটা গর্তের ভিতর পড়ে যায়। মুনা পা টা বের করার হাজার ট্রাই করেও বের করতে পারছিল না। এদিকে কাফনে মোড়ানো লা*শটি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল। হঠাৎ মুনা অনুভব করলো গর্তের ভিতর তার পা টা একটা হাত চেপে ধরেছে। তখনি মুনা দেখতে পায় তার ঠিক ডানপাশ থেকে একটা সাপের মতো কিছু একটা এগিয়ে আসছে। সাপের মতো প্রাণীটার মাথাটা ছিল মানুষের মতো কিন্তু মাথাটা খুব ছোট ছিল। সাপটা তার ভয়ানক আঁকাবাঁকা পথ চলতে চলতে এসে মুনার আটকে যাওয়া গর্তের ভিতর ঢুকে পড়ে। মুনা এবার প্রচন্ড ভয় এবং চিতকার করা শুরু করে। একদিকে কাফনে মোড়ানো লা*শ এগিয়ে আসছে অন্যদিকে একটা সাপ গর্তে ঢুকে পড়েছে আবার একটা হাত তার পা চেপে ধরে রেখেছে।
তখনি মুনা দেখতে পায় একটা ছায়া তার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ায় এবং সেই কাফনে মোড়ানো লা*শটি উধাও হয়ে যায় এবং মুনার পা ও সেই অদৃশ্য হাত ছেড়ে দেয় তখনি সেই ছায়াটাও উধাও হয়ে যায়। মুনা গর্ত থেকে উঠে দৌড়ানো শুরু করে। দৌড়াতে দৌড়াতে মুনা মেইন রোডে চলে আসে। অন্ধকার রাত মেইন রোডে একটি গাড়িও নেই। মুনা রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে শুরু করে। মুনা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিল তবুও হাটছিল এবং একটু সাহায্যের জন্য লোকালয় খুজছিল।
মুনা হাটতে হাটতে হঠাৎ দেখতে পায় দূরে একটা টর্চ এর আলো। মুনা ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে যেতেই দেখতে পায় একজন ব্যাক্তি যিনি খালি পায়ে,কাধে একটা পুটলির মতো ব্যাগ,লুঙ্গি আর সাধারণ গেঞ্জি পড়া এবং হাতে একটা বড় লাঠি যেটা ভর করে সে হাটছিল। কাছাকাছি যেতেই সেই লোকটি মুনাকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠে " তুই বের হয়েছিস কেন? "
মুনা অবাক হয়ে লোকটিকে বলে " আপনি আমাকে চিনেন? প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন "
মুনার কথা শুনে লোকটি অবাক হয়ে মুনার দিকে চেয়ে আছে। লোকটি তখন বলে উঠে " কি হয়েছে তোর? "
মুনা তখন পুরো ঘটনা সেই লোকটি খুলে বলে। সব শুনে লোকটি মুনার মাথায় হাত রেখে বলে " যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন আর কিছুই করার নেই। তবে একটা কথা বলি, তোর ওই ম্যাডামকে তুইই খু*ন করেছিস। এই দুনিয়ায় প্রতিটি মানুষের ঠিকানা হচ্ছে কবর আর তোকে তো ওই কফিন প্রতিনিয়ত কাছে টানছে। তোর কপালে যা ছিল তা ঘটে গেছে "
কথাটা বলেই লোকটি আবার লাঠি ভর করে হাটতে শুরু করে। মুনা লোকটির কোন কথার মানেই বুঝতে পারে নি। মুনাও আবার হাটতে শুরু করে। কিছুদূর যাওয়ার পর মুনা রাস্তার পাশে একটা ছোট হোটেলে আলো দেখতে পায়। মুনা হোটেলের দিকে এগিয়ে যায় এবং হোটেলে দুজন ব্যাক্তি দেখতে পায়। তারা দুজন কথা বলছিল আর কাজ করছিল। মুনা হোটেলে প্রবেশ করেই চিতকার করে বলে উঠে " আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ "। দুজন ব্যাক্তি স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছিল আর কাজ করছিল। তারা যেন মুনার কথা শুনতেই পায় নি। মুনা আরও ২-৩ বার চিতকার করে কিন্তু তারা দুজন যেন মুনার কথা শুনতেই পাচ্ছে না এবং মুনাকে দেখতেও পাচ্ছে না। মুনা লোক দুটির কাছে গিয়ে ডাকলেও তারা রেসপন্স করে না। যেন তারা মুনার কথা শুনতে পাচ্ছে না এবং মুনার ডাক শুনছে না।
তখন মুনার চোখ যায় হোটেলের একটা আয়নাতে। মুনা দেখতে পায় আয়নাতে তাকে দেখা যাচ্ছে না। সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সে যায়গাটা ফাকা। মুনা নিজের চোখকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছিল না। এটা কিভাবে সম্ভব? তার নিজের অস্তিত্ব নেই কেন?
তখনি মুনার কানের সামনে অদৃশ্য একটা কন্ঠ ফিস ফিস করে বলে " আমি তোকে প্রশ্ন করেছিলাম " তুই বের হয়েছিস কেন? " এই প্রশ্নটা করেছিলাম কারন আমি তোকে দেখেই বুঝেছিলাম তুই একজন মৃত ব্যাক্তি। তাই জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুই কবর থেকে বেরিয়েছিস কেন? অতপর তোর ঘটনা শুনে বুঝলাম এখানে প্রচুর রহস্য রয়েছে। তুই নিজেই নিজের কাছে রহস্য। তুই নিজেই কখন মরে গেছিস সেটা তুই নিজেই জানিস না। এ রহস্য তোকেই সমাধান করতে হবে "
মুনা তখনি পিছন দিকে দৌড়ে যায় কারন মুনা বুঝে গিয়েছিল সেই রহস্যময় লোকটির কাছেই রয়েছে সব রহস্যের উত্তর। মুনা দৌড়ে গিয়ে দেখে মুহুর্তের মধ্যে রাস্তা ফাকা। লোকটি আর নেই। মুনা মাথা নিচু করে হাটছিল। হঠাৎ মুনার পেটের মধ্যে কি যেন একটা অন্যরকম লাগছিল। মুনা পেট থেকে জামাতে উঠাতেই দেখে তার নাভী দিয়ে পেটের ভিতর থেকে একটি সাপের বাচ্চা মাথা বের করেছে। মুনা প্রচন্ড ভয় এবং চিতকার শুরু করে। মুনা সাপটির মাথা চেপে ধরে এবং টানতে টানতে পেট থেকে বের করে ছুড়ে রাস্তার একপাশে ফেলে দৌড়াতে শুরু করে। মুনা খেয়াল করে সাপটিও তার পিছু পিছু আসছিল এবং সাপটি ক্রমেই আরও বড় হচ্ছিল।
অন্ধকার রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ মুনা দেখতে পায় রাস্তার পাশে জঙ্গলের ভিতরে একটি ছোট বাড়ি এবং সেখানে আলো জ্বলছে। মুনা পিছনে চেয়ে দেখে সাপটি তার ভয়ংকর রুপ নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে। মুনা সাপটির থেকে বাচতেই সেই বাড়িতে গিয়ে উঠে। বাড়িটিতে প্রবেশ করতেই মুনা দরজা বন্ধ করে দেয়। মুনা দেখতে পায় বিছানার ওপর একজন বয়স্ক মহিলা কাথা সেলাই করছে। মুনা ভিতরে প্রবেশ করেই কেদে কেদে বলে উঠে " একটা সাপ আমাকে তাড়া করছে। প্লিজ আমাকে বাচান "
বয়স্ক মহিলাটি মুচকি হেসে বলে " তোমার ভয় নেই। ও এখানে আসবে না। তুমি বিশ্রাম নাও। আমি তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি "
মুনা কিছুটা স্বস্তি পায়। বয়স্ক মহিলাটি ভিতরে চলে যায়। মুনা বিছানায় বসে বসে রুমের চারিপাশটা দেখছিল। হঠাৎ মুনার খেয়াল আসে " আমি তো মৃত। আমাকে তো কোন জীবিত মানুষের দেখতে পাওয়ার কথা না। তাহলে এই বয়স্ক মহিলা আমায় কিভাবে দেখছে? (মুনার গা শিউরে উঠে) মুনা আবার ভাবতে শুরু করে " ওই বয়স্ক লোক কি মিথ্যা বললো? আমি বেচেই আছি "
মুনা কনফিউজড ছিল। তখনি সেই বয়স্ক মহিলা একটা বাটি নিয়ে এগিয়ে এসে মুনার সামনে দাঁড়ায়। বাটিটা ঢাকা ছিল। মুনা নিজের কনফিউশান দূর করতে ভয়ে ভয়ে কাপতে কাপতে নিচে মহিলাটির পায়ের দিকে তাকায় এবং দেখতে পায় " মহিলাটির পা দুটোই উল্টো "
মুনা বুঝে যায় এই মহিলা সাধারণ কিছু না। তখনি মহিলাটি অট্ট হাসি দিতে দিতে বাটির ঢাকনা খুলে এবং মুনা দেখে বাটিতে নভেরা ম্যাডামের কা*টা মাথা রক্ততে ডুবন্ত অবস্থায় রাখা।
মুনা উঠে দরজার দিকে দৌড় দেয় কিন্তু দরজাটা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। তখনি মহিলাটি মুনার দিকে ফিরে। মুনা দেখতে পায় মহিলাটির পুরো শরীর কালো কুচকুচে এবং গলাকা*টা আর মাথা নেই। পুরো শরীরে ছোট ছোট চোখ খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। গলা থেকে একটা লাল জিব্বা বের হয় এবং জিব্বা দিয়ে বাটির রক্ত চুষে খেতে খেতে বলতে থাকে " আমার পবিত্রতা আমায় ফিরিয়ে দে "
ভয়ানক মহিলাটি মুনার একদম মুখের কাছে চলে আসে। মুনা ভয়ে কাতর অবস্থা। তখনি হঠাৎ সেই সাপটা তাদের দুজনের মাঝখানে চলে আসে এবং সাপটিকে দেখেই সেই ভয়ানক মহিলাটি উধাও হয়ে যায়।
মুনা কিছুই বুঝতে পারছিল না। হঠাৎ মুনার সামনেই সেই সাপটি ধীরে ধীরে একটা ফকির বাবাতে রুপান্তর হয়। চুল দাড়ি সাদা এবং বড় বড়,খালি গায়ে আর একটা লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায়। কাধে একটা ছোট পুটলি আর হাতে একটা লাঠি। সাপ থেকে মানুষ হয়েই লোকটি ধ্যানে বসে যান।
মুনা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিল কিন্তু তবুও দেখতে চাচ্ছিল এখানে কি ঘটছে। মুনাকে যেন কিছু একটা বেধে রেখেছে। মুনা চাইলেই বন্ধ দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে কিন্তু পারছে না।
হঠাৎ সেই ধ্যানরত লোকটি বলতে শুরু করে " তোর মনে হয়তো অনেক প্রশ্ন। নভেরা ম্যাডামকে তুই মারিস নি কিন্তু সিসি ক্যামেরাতে দেখাচ্ছে তুই মেরেছিস। নভেরা ম্যাডামকে তুই ই মেরেছিস কিন্তু তখন তোর মধ্যে তুই ছিলি না। এই কফিনের আত্মা তোর ভিতরে ছিল। এই কফিনের আত্মার থেকে তোরা কখনোই বাচতে পারবি না। যেমনটা তুই ও পারিস নি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিস। মুনার প্যারালাল লাইফে যত মুনা আসবে সব মুনাই কোন না কোন ভাবে এই কফিনের ফাদে পা দিবে এবং লড়াই করেও হেরে যাবে। এই প্যারালাল লাইফের শেষ কোথায় সেটা কেউ জানে না। তুই হয়তো ভাবছিস মৃত্যুর পরেও কেন তুই ঘুরে বেড়াচ্ছিস। কেন তুই কবরে যাচ্ছিস না। কবর তোকে গ্রহণ করবে না। কারন তুই এবং তোরা ওই কফিনকে অপবিত্র করেছিস। তাই তোরা ঘুরে বেড়াচ্ছিস "
মুনা তখন কাদতে কাদতে বলে " আমাদের মুক্তির কি কোন পথ খোলা নেই? "
লোকটি তখন বলে " তোর মতো এমন অনেক মুনাই মৃত্যুর পর ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ওই কফিন খুজে বেড়াচ্ছে পরবর্তী প্যারালাল মুনাকে। যদি কখনো কোন এক মুনা এই কফিনকে হারিয়ে বেচে ফিরতে পারে তাহলে পূর্ববর্তী মুনারা মুক্তি পাবে এবং কবরে যাবে আর পরবর্তী মুনাদের আর কোন ক্ষতি হবে না। এখন তোর একটাই কাজ নেক্সট মুনাকে সাহায্য করা "
মুনা তখন বলে " কোথায় পাবো আমি সেই মুনাকে? "
লোকটি তখন বলে " সেটা তোকেই খুজে বের করতে হবে। অন্য মুনারাও তাকে খুজছে। তোর বেলায় ও হয়তো তোকে কেউ খুজে পেয়েছিল কিন্তু সবাই খুজে পায় না। যেদিন সবাই মিলে একজন মুনাকে খুজে বের করতে পারবি সেদিন এই কফিন হেরে যাবে তোদের কাছে "
মুনা তখন বলে " এই কফিন কেন আমাদের পিছনে পড়েছে? "
লোকটি তখন বলে " অনেক বছর আগে তোদের প্যারালাল লাইফের কোন এক মুনা মারা গিয়েছিল। সেই মুনাকে গ্রামে নেয়ার জন্য কফিন আনা হয়। কিন্তু সেই মুনার হাতে এবং পায়ে নেইলপালিশ ছিল। সেই মুনা যেখানে মারা গিয়েছিল সেখানে তার কোন আপন কেউ ছিল না বলে এই নেইলপালিশ না উঠিয়েই কফিনে করে লা*শ পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারা ভেবেছিল পরিবার হয়তো নেইলপালিশ উঠিয়ে কবর দিবে। এই কফিনে সেই আত্মা এত বছর যাবত বসবাস করতো। এই নেইলপালিশের কারনে এই কফিন এবং সেই আত্মা অপবিত্র হয়ে যায়। শুনেছি সেই মুনাকে কবর দিতেও অনেক কষ্ট হয়েছে। এই নেইলপালিশ কোন ভাবেই উঠাতে পারছিল না। অবশেষে হাত এবং পায়ের আঙুল কেটে লা*শ কবর দেয়া হয় এবং আঙুল গুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। তখন এই কফিনকে অপবিত্র করাতেই এই কফিন তোদের পিছনে পড়েছে। এই খেলা একমাত্র তোরাই শেষ করতে পারিস "
কথাটা বলেই লোকটি উধাও হয়ে যায় এবং মুনা বেরিয়ে পড়ে পরবর্তী প্যারালাল মুনাকে খুজতে।
সমাপ্ত।


কফিন উপন্যাস
বাংলা উপন্যাস
bangla golpo
bangla uponnas
new golpo
new bangla golpo

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال