অবেলায় তুমি বাংলা উপন্যাস | bangla uponnas part 4
সোহানের ভাড়া করা ছেলে গুলো সোহানের কথা মতন আকাশকে মা'রতে আরম্ভ করে। কিন্তু কিছু সময় পর বিকট একটা আওয়াজ হয়। আর সেই সঙ্গে সোহানের ভাড়া করা লোকজন আকাশকে মা'রা বাদ দিয়ে পিছাতে শুরু করে। সবাই ভূত দেখার মতন চমকে আছে। কারোর সাহসে আর কুলাচ্ছে না আকাশের গায়ে হাত দেওয়ার। সবার সাহস মুহূর্তের মধ্যেই রাস্তা বদল করে পালিয়েছে। আকাশ মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়। ছেলে গুলো আকাশকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল মা'রার সময়। আকাশের হাতে মানুষ টপকে দেওয়ার যন্ত্র। মানে হলো আকাশের হাতে পিস্তল। আর একটু আগে যেই আওয়াজটা হয়েছে সেটা আকাশের পিস্তলের আওয়াজ ছিল। আকাশের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আকাশ পিস্তলটা কোমর থেকে বের করে হাওয়ায় চালিয়েছে। আর সেটা দেখেই সোহানের ভাড়া করা লোকজন আকাশকে মা'রা বাদ দিয়ে দূরে সরে গিয়েছে। সবাই হতবাক আকাশের হাতে পিস্তল দেখে। বিশেষ করে সোহান আর তনু। আকাশ পিস্তলটা হাতে নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে সোহানের ভাড়া করা ছেলে গুলোর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
--'দম ফুরিয়ে গেছে তোদের? মা'রবি না আমায় আর? আয় মা'র এখন আমাকে। তোরা আট থেকে দশজন। আর আমি একা। তোরা সকলে মিলে একসাথে দলবদ্ধ হয়ে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লে আমার অস্তিত্ব সহ খুঁজে পাওয়া যাবে না। নে শুরু হয়ে যা এবার।'
সবাই চুপ করে থাকে। আকাশের কথার প্রত্যুত্তরে কেউ কোনো কথা বলবে সেই সাহস টা পাচ্ছে না। আকাশের হাতের পিস্তলটা যেনো সকলের মুখের বুলি বন্ধ করে দিয়েছে। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে সকলেই বুঝে গেছে তারা ভুল মানুষের খপ্পরে পড়েছে। সকলে মিলে একসাথে আকাশের যেই ক্ষতি টা করবে, আকাশ সেকেন্ডের মধ্যেই চাইলে উল্টো তাঁদের আরো বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। সকলেই নিশ্চুপ। সাড়া শব্দ নেই কারোর। আকাশ বুঝে যায় সোহানের ভাড়া করা লোকজনের সাহস কতোটা। অযথা আর সময় নষ্ট না করে সোহানের কাছে চলে যায় আকাশ। কারণ ভাড়া করা লোকজনের সাথে কথা বলে আর কোনো ফায়দা নেই। সব কিছুর ভূমিকায় যে আছে তার সাথেই কথা বলা উচিত। সময় নষ্ট না করে বুদ্ধিমানের মতন সোহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আকাশ। সোহানের চোখ কপালে উঠে আছে। শায়েস্তা করতে এসে উল্টো সোহান নিজেই যেনো শায়েস্তা হয়ে গেলো। চেহারার ধরণ পাল্টে গেছে সোহানের। শুরুতে যেমন তেজ নিয়ে কথাবার্তা বলছিল বর্তমানে তার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই সোহানের মধ্যে। সোহানের পরিবর্তন দেখে আকাশের প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। তাও কোনো মতে হাসি থামিয়ে সোহানকে বলে,
--'আমার বারোটা বাজাতে এসে উল্টো তোর নিজের উল্টো বারোটা বেজে যাচ্ছে। জানিস কোমরে পিস্তল গুঁজে রাখা শৌখিন মানুষ আমি। তুই আমাকে সাধারণ ভাবে নিয়ে অনেক বড় ভুল করেছিস। না হয়তো আজ তোর এতোটা অবাক হতে হতো না আমায় দেখে। অবশ্য তুই শুধু একা নয়। আমি নিজেও অবাক। কারণ কেন জানিস? গত পাঁচ বছর আগে যখন আমার বাবার অঢেল সম্পত্তি ছিল, তখন আমি আমার বাবার টাকা নষ্ট করে শখের বসে এই জিনিসটা কিনেছিলাম। কিন্তু কখনোই আমি এই জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিয়ে বের হই নি। আর না এই জিনিসটা আমার কখনো কাজে লেগেছে। তবে আজ অফিসে আসার সময় কেন জানি ইচ্ছে হলো জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিতে। তাই অফিসের আসার পূর্বে জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিয়েছি। কিন্তু এখন দ্যাখ আজ জিনিসটা সঙ্গে নিয়ে বের হওয়ায় আমার ফায়দা হয়েছে। তার জন্য নিজের ও অবাক লাগছে। এবার বল জিনিসটা কি সত্যিই কাজে লাগাবো?'
আকাশের কথা শুনে সোহান তনুকে সামনে এগিয়ে ধরে বাঁচার জন্য। আর সোহান তনুর পিছনে লুকিয়ে পড়ে। সোহানের কান্ড দেখে আকাশ আর নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে পারে না। শব্দ করো হেঁসে দিয়ে সোহানকে বলে,
--'তনুকে সামনে এগিয়ে দিলে কোনো কাজ হবে না। তাই নিজের ভালো চাস তো তনুকে ছেড়ে দে। না হয় যতোই তাল-বাহানা করিস না কেন, নিশানা কিন্তু ঠিকই আমি তোর কপালে লাগাবো।'
সোহান ভয় পেয়ে তনুকে ছেড়ে দেয়। সোহানের থেকে ছাড়া পেয়ে তনু দৌড়ে এসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। আকাশ তনুকে শান্ত করতে তনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
--'তনু একদম কান্না করো না। আমার হাতে যেই যন্ত্রটা আছে সেটার কারণে আমাদের সমস্ত বিপদ কেটে গেছে। তনু আমি বাকি আট-দশটা মানুষের মতন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তোমার জন্য সাধারণ থেকে গুন্ডা-মাস্তানে পরিণত হতে আমি এক সেকেন্ড ও ভাববো না।'
--'আকাশ আমি ভাবতেই পারিনি সোহান এমন। আমি তাঁকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবেছিলাম। কিন্তু সে আমার জীবনের সুখ-শান্তি কেঁড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। আকাশ তুমি সোহানকে একটা চরম শিক্ষা দাও। যাতে করে আগামীতে সে তোমার আর মাঝে কখনো ঝামেলা করার সাহস না পায়।'
--'তনু এমনিতেও সে আর আগামীতে আমাদের মাঝে ঝামেলা করার দুঃসাহস করবে না। কারণ এমনিতেই তার শিক্ষা হয়ে গেছে। আগামীতে মনে হয় না আর সে কিছু করার সাহস করবে। তবে যদি সাহস করেও থাকে, তাহলে সে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা'রবে। আর সোহান ভাই আমার শোন। আমাদের দু'জনের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা দু'জন স্বামী-স্ত্রী। তাই তুই অযথা কাবাব মে হাড্ডি হতে আসিস না। মানুষ জীবনে বড় ধরনের বিপদ থেকে ভাগ্যক্রমে একবার বেঁচে যায়। তবে প্রতিবার যে বেঁচে যাবে তার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরেরবার তুই কিছু করতে আসলে তোর জন্য আমাকে সাধারণ মানুষ থেকে দাগী আসামি হতে হবে। যেটা তোর জন্য কখনোই মঙ্গলকর হবে না। তাই এবার একটা সুযোগ দিলাম সেটা কাজে লাগিয়ে ভালো হ। আর আমার সমস্ত কথা মাথায় ভিতরে ঢুকিয়ে নে। এবার চললাম আমরা। এই তনু চলো।'
পিস্তলটা কোমরে রেখে আকাশ তনুকে নিয়ে গাড়িতে এসে বসে। তনুর চোখ দিয়ে এখনো পানি পড়ছে। আকাশ গাড়িতে উঠে তনুর চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে তনুকে বুকে আগলে নিয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে। তনুও আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশের বুকে মাথা রাখার খানিক পরেই তনু পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়। স্বাভাবিক হওয়ার পর আকাশের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তনু আকাশের ঠোঁটে নিজের দখল বসায়। আকাশ ও কম কিসে। সেও তনুর আচরণ সাড়া দিতে ব্যস্ত। দু'জনের মধ্যে আবারো কিছুটা রোমান্টিক কাজ কারবার ঘটে। দু'জনে আবারো কিছু সময়ের জন্য ঘনিষ্ট হয়। মিনিট পাঁচেক একে অপরের সাথে মিশে থাকে। এরপর একজন আরেকজনকে ছেড়ে দিয়ে দু'জন দুই সিটে বসে। তনু গাড়ি স্টার্ট করে ড্রাইভ করতে শুরু করে। আর আকাশ চুপ করে তনুর পাশে বসে আছে। তনু গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আকাশকে বলে,
--'আকাশ আজকে সোহান চরম বড় শিক্ষা পেয়েছে। আমি তো ভাবতেও পারিনি তুমি নিজের রূপ মুহূর্তের মধ্যে এভাবে পাল্টে ফেলবে। জানো আমি না আজকে বেশ অবাক হয়েছি তোমার নতুন রূপ দেখে।'
--'কি করবো বলো? সোহান যে এমনটা করবে সেটাও তো আমরা জানতাম না! আজ কেন জানি পিস্তলটা নিয়ে আসতে ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে এটার যে আজ প্রয়োজন পড়বে সেটা আমারো জানা ছিল না।'
--'যাক ভালোই হয়েছে। তবে আকাশ জানো সোহান যে এমনটা করবে সেটা আমি কখনো কল্পনা করিনি। এছাড়া গতকাল সোহানের মা আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল সোহানের জন্য। আমি বিষয়টা নিয়ে অবাক হলেও সেটা নিয়ে বেশি একটা মাথা ঘামাইনি। কারণ মা সোহানের মা'কে আমাদের বিয়ের বিষয়ে বলেছে। আমি ভেবেছিলাম সোহান আমাদের বিয়ের বিষয়ে শুনলে সে আর আমাকে বিয়ে করার চিন্তা করবে না। কিন্তু ওমা আজ দেখি সে ছেলে-পেলে নিয়ে হাজির আমাদের ক্ষতি করার জন্য।'
--'আমারো সেদিন সন্দেহ হয়েছিল সোহানের কথাবার্তায়। যার কারণে আমি তোমাকে বলেছিলাম সোহানকে চলে যেতে বলতে। আর আজকে সোহান আমার সন্দেহ টাকে বাস্তবে প্রমাণ করেছে।'
--'আচ্ছা থাক বাদ দাও। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
আমাদের দু'জনের ভালোবাসা এতোটা সস্তা না যে, যে কেউ এসে সেটা ভেঙ্গে ফেলবে। আকাশ তুমি আমায় কতোটুকু ভালোবাসো সেটা সঠিক করে বলতে পারছি না। তবে আমি তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি। আর তোমাকে আমি সারাজীবনের জন্য চাই।'
--'তনু আমিও তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি।
তুমি হয়তো এখনো পুরোপুরি ভাবে অনুমান করতে পারোনি আমার ভালোবাসার পরিমাণ কতটুকু। তবে সত্যি বলতে তোমায় আমি এতোটা ভালোবাসি, যে তোমায় না পেলে জীবনটা মরা লাশের মতন হয়ে যাবে। তোমায় না পেলে আমি বেঁচে থেকেও ম'রে যাবো। এক কথায় জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো। আমার মধ্যে কোনো শোক তাপ থাকবে না। ভিতরটা পাথরে পরিণত হয়ে যাবে। অনুভূতি শূন্য হয়ে যাবো আমি।'
--'এই পাগল কি সব বাজে কথা বলছো? আমায় পাবে না কেন তুমি? আর আমি কোথায় যাবো তোমায় রেখে? আমি তোমার আছি তোমার এই থাকবো। একদম স্বার্থপরের মতন কথা বলবে না বলে দিলাম। তোমাকে না পেলে আমিও কি ভালো থাকবো নাকি? তুমিই আমার সমস্ত ভালো থাকার কারণ। সেখানে তোমার কাছ থেকে আমি হারাবো কোন দুঃখে?'
--'তা আমি জানি না! আমি শুধু নিজের কি পরিণতি হবে সেটাই তোমাকে জানালাম।'
--'জানো না কেন? জানতে হবে। আর না জেনে উল্টো-পাল্টা কথা কেন বলো? তোমার পিস্তল দিয়েই তোমার খুলি একদম ফুটো করে দিব আর একবার বাজে কথা বললে।'
--'আচ্ছা আর বলবো না।'
--'মনে থাকে যেনো।'
--'হুম থাকবে।'
--'আচ্ছা শুনো আমরা একটা কাজ করি চলো। তাহলে তোমার মুখ দিয়ে আর উল্টো-পাল্টা কথা বের হবে না।'
--"কি কাজ?'
--'আসছে বৃহস্পতিবারে অফিসে একটা ছোটখাটো খাবারের আয়োজন করে সবাইকে দু'জনের বিষয়ে জানিয়ে দিব আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর তার পরেরদিন শুক্রবারে দু'জন দুজনের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে আবারো বিয়ে করবো সারাজীবনেটর জন্য। কারণ আমার এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। সাধারণ ভাবেই আমরা দুই পরিবারকে নিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যাসেজ করবো। আর অফিসের মানুষদেরকে যেহেতু জানাতে হবে, তাই আগের দিন ওদেরকে একটা খাবারের আয়োজন করে জানিয়ে দিব। না হয়তো এটা সেটা বলবে যে আমি কৃপণ। আমার এতো টাকা পয়সা থাকা সত্বেও বিয়ের অনুষ্ঠান করিনি। আর তাঁদেরকে খাওয়াইনি।'
--'কিহহহ! তুমি সত্যিই আগামী শুক্রবারে আমাকে সারাজীবনের জন্য বিয়ে করবে?'
--'হুম করবো। কেন তোমার কি কোনো ডাউট আছে?'
--'নাহ সব কিছু কেমন যেনো কল্পনা লাগছে আমার কাছে।'
--'কল্পনা নাকি বাস্তব সেটা বৃহস্পতিবার আসলেই বুঝতে পারবে যখন আমি তোমাকে সকলের সামনে নিজের স্বামী বলে পরিচয় করিয়ে দিব। এবার গাড়ি থেকে নেমে বাসায় যাও। তোমার বাসার সামনে চলে এসেছি।'
আকাশ তনুর কথা শুনে খুশি মনে গাড়ি থেকে নেমে ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে যায়। আসছে শুক্রবারে তনু সারাজীবনের জন্য আকাশের হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা সকলের সামনে সৃকৃতি পাবে। কিন্তু আকাশ পুরোপুরি ভাবে বেখবর সোহান শুধরে যাওয়ার বদলে আরো বড় ধরনের কিছু প্ল্যান করছে....
আসছে শুক্রবারে তনু সারাজীবনের জন্য আকাশের হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা সকলের সামনে স্বীকৃত পাবে। কিন্তু আকাশ পুরোপুরি ভাবে বেখবর সোহান শুধরে যাওয়ার বদলে আরো বড় ধরনের কিছু প্ল্যান করছে। আকাশ খুশি মনে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আকাশের মা রহিমা বেগম ছেলের খুশমেজাজ দেখে ছেলেকে জিজ্ঞাস করে,
--'মা একটা সুসংবাদ আছে।'
--'কি সুসংবাদ?'
--'আগে আমি নিজের রুমে গিয়ে ব্যাগ ট্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে আসি। আর তুমি চা বসাও চুলোয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে চা খেতে খেতে সুসংবাদ বা গুড নিউজটা দিব।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চুলোতে চা বসাচ্ছি। তুই জলদি করে ফ্রেশ হয়ে আয়।'
আকাশ নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বেরিয়ে মা'য়ের কাছে আসে। আকাশের মা রহিমা বেগম ছেলের জন্য চা করে এনে সবে কেবল টেবিলের উপর রেখেছে। আর আকাশ ও ইতিমধ্যে হাজির। ছেলের আগমনে রহিমা বেগম বলে,
--'এই যেনতোর চা। আর এবার বল কি গুড নিউজ আছে।'
আকাশ টেবিলের উপর থেকে চায়ের কাপ উঠিয়ে নিয়ে দুইটা চেয়ার টেনে একটাতে নিজে বসে। আরেক টাতে নিজের মা'কে বসতে বলে। রহিমা বেগম চেয়ারে বসে পূনরায় ছেলেকে আবার বলে,
--'এবার বল কি গুড নিউজ আছে।'
--'মা আসছে বৃহস্পতিবার অফিসে ছোট খাটো একটা আয়োজন করে আমাদের বিয়ের বিষয়ে সবাইকে জানাবো। আর শুক্রবার আমাদের দুই পরিবারকে কোর্টে নিয়ে গিয়ে আমরা সারাজীবনের জন্য আবারো বিয়ে করবো।'
--'কিহহহ! সত্যি বলছিস তুই?'
--'হ্যাঁ মা সত্যি বলছি। আজ তনুই আমাকে এসব বললো।'
--'যাক খুশি হলাম কথাটা শুনে। কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে আমার।'
--'কি প্রশ্ন মা?'
--'তনুর তো টাকা পয়সার অভাব নেই। সে চাইলে একটা অনুষ্ঠান করে বিয়েটা করতে পারে। কিন্তু সে তা না করে কোর্ট ম্যারেজ কেন করবে? আর লোকে কি বলবে তার এই জিনিসটা নিয়ে?'
--'মা তনুর নাকি ধুমধাম করে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। তাই সে কোর্ট ম্যারেজ করবে। আর লোকজন বলতে অফিসের লোকজন এই আছে। তাঁদের জন্য তো সে বৃহস্পতিবার একটা আয়োজন করছেই।'
--'তাও বিষয়টা কেমন যেনো লাগছে আমার কাছে! কারণ তোর না হয় সেভাবে কোনো পরিচিত লোকজন নেই। কিন্তু তনুর তো অফিস ব্যতীত পরিচিত আরো লোকজন আছে। তারা পরবর্তীতে কি না কি বলবে। আর সে যেহেতু অফিসে অনুষ্ঠান করবেই, তাহলে সেই অনুষ্ঠানে অফিসের লোকজনের পাশাপশি তার পরিচিত লোকজন গুলোকে ইনভাইট করলে বিষয়টা আর জটিল হয় না। আর সে চাইলে কোর্টে বিয়ে না করে অফিসের অনুষ্ঠানের মধ্যেই কাজি ডেকে সবার সামনে তোকে বিয়ে করতে পারে। তাহলে একেবারেই সব হয়ে যায়। আলাদা করে বৃহস্পতিবারে অফিসে আয়োজন করবে। আবার শুক্রবারে কোর্ট ম্যারেজ করবে। এতো ঝামেলা করার তো আর দরকার পড়ে না।'
--'মা তনুর ধুমধাম করে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই সেটা সে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। তাই হয়তো সে কোর্ট ম্যারেজ করবে। এছাড়া কেন সে শুধু অফিসের মানুষজনকে আয়োজন করে খাওয়াবে বাকি আরো মানুষজনকে রেখে, সেটা তনুই একমাত্র ভালো জানে! তবে আমার যতদূর মনে হয় তনু আমার কারণেই বাহিরের কাউকে দাওয়াত করবে না বা বাহিরের কারোর জন্য কোনো আয়োজন করবে না। কারণ আমার কোনো কিছু নেই এই জিনিসটা নিয়ে মানুষ এটা সেটা বলতে পারে, তাই হয়তো তনু এই বিষয়টা খেয়াল রেখে অফিসের লোকজন বাদে কারোর জন্য কোনো আয়োজন করছে না।'
--'হ্যাঁ এমনটাও হতে পারে। তনু হয়তো তোর এই দিকটা খেয়াল করে নিজের মতন সব চিন্তা-ভাবনা করেছে। তবে যাই হোক আমি খুশি তুই আর তনুর মিলন হওয়ায়। কারণ মেয়েটাকে তুই কতোটা ভালোবাসিস সেটা আমার অজানা নয়। আমি শুকরিয়া আদায় করছি তোদের মিলন হওয়ায়।'
--'মা দোয়া করো। আর আমি আগামীকাল গিয়ে খালার বাড়ি থেকে আফিয়াকে নিয়ে আসবো। তারপর তুমি আর আফিয়া দু'জনে শুক্রবারে রেডি হয়ে থাকবা কোর্টে ম্যারেজ করার জন্য আমার সাথে যেতে।'
--'আচ্ছা বাবা।'
আকাশ চা খাওয়া শেষ করার পাশাপাশি মা'য়ের সাথে কথা বলে আবার নিজের রুমে চলে যায়। পরেরদিন যথারীতি অফিসে চলে যায়। ডেস্কে বসে বসে তনুর অপেক্ষা করছে সে। তনু এখনো অফিসে আসিনি। কিছুক্ষণ পর তনু অফিসে চলে আসে। তনু আসার পর আকাশ তনুর সঙ্গে তনুর কেবিনে গিয়ে তনুকে বলে,
--'তনু আজ আমার ছুটি লাগবে। আমার একটা জায়গায় যেতে হবে।'
--'কোথায় যাবে তুমি? আমি যে আজ আরো তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাওয়ার প্ল্যান করলাম।'
--'দুপুরে পর ছোট বোন আফিয়াকে খালার বাড়ি থেকে আনতে যাবো। তাই ছুটির দরকার ছিল।'
--'আরেহ ছুটি নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে আমি ভেবেছি আজ দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর তিনটা বা সাড়ে তিনটার নাগাদ অফিস ছুটির কিছু সময় আগে তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো। কিন্তু তুমি তো আফিয়াকে আনতে গেলে আর অফিসে আসবে না। সোজা বাড়ি চলে যাবে। আচ্ছা একটা কাজ করলে হয় না? তুমি এখুনি চলে যাও আফিয়াকে খালার বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য। দুপুরে না হয় অফিসে চলে এসো৷ তারপর রোদের উত্তাপ কমলে দু'জনে তিনটা সাড়ে তিনটা নাগাদ শপিং করতে যাবো।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে।'
তনুর কথা মতন দুপুরে না গিয়ে এখুনি খালার বাড়ি থেকে আফিয়াকে আনতে চলে যায় আকাশ।
খালার বাড়ি গিয়ে খালাকেও বিয়ের কথা জানায়৷ আকাশের খালা নাজিয়া বেগম আকাশের বিয়ের কথা শুনে খুশি হয়ে আকাশের হাতে হাজার দশেক টাকা দিয়ে বলে,
--'আকাশ এই টাকা গুলো নিজের বিয়ের প্রয়োজনে খরচ করিস৷ আমরা শুক্রবার বিকাল করে তোর বাড়ি যাবো। আর তোরা যেহেতু কোর্ট ম্যারেজ করবি, তাহলে আমাদের আগে গিয়ে কোনো কাজ নেই। ধীরেসুস্থে বিকাল করে সপরিবারে তোর বউকে দেখতে যাবো।'
--'ঠিক আছে খালা। তবে খালা একটা আবদার ছিল।'
--'কি আবদার আকাশ?'
--'খালা আমি তো তনুকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। আর আমারো কিছু দায়দায়িত্ব আছে তনুর উপর। কিন্তু আমার হাতে তোমার দেওয়া হাজার দশেক টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা নেই। আর আজকে তনু আমাকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে চাচ্ছে। আমার মনে হয় না শপিংয়ে গেলে অল্প টাকায় হবে। হ্যাঁ আমি জানি তনু নিজেই খরচ করবে টাকা পয়সা। কিন্তু তার পরেও আমারো তো কিছু কর্তব্য তার জন্য খরচ করা। খালা তোমার কাছে কি আর হাজার দশেক টাকা হবে? আমি মাসের শেষে বেতন পেলেই টাকাটা তোমায় দিয়ে দিব।'
--'না রে বাবা আমার কাছে তো আর কোনো টাকা নেই রে। যা ছিল সব তোকে একমুঠ করে দিয়ে দিয়েছি। আর তুই তো জানিস তোর আঙ্কেল ঘরে বসা। কামাই রোজকার করতে পারে না। যা করি আমি নিজেই করি। তবে তুই চাইলে একটা কাজ করতে পারিস। আমার এক জোড়া স্বর্ণের দুল আছে, যেটা বর্তমানে আমার কোনো কাজে লাগছে না। তুই সেটা দোকানে দিলে হাজার দশেক টাকা নিতে পারবি। তুই সেটা দোকানে জমা দিয়ে হাজার দশেক টাকা নে। তারপর মাস শেষে বেতন পেলে না হয় সেটা তুই দোকান থেকে ফিরিয়ে এনে দিস পরে আমাকে।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে।'
লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে খালার কানের দুল জোড়া নিতে সম্মতি জানায় আকাশ। আকাশের খালার অবস্থাও বেশি একটা ভালো না। একটা সময় সব কিছু মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু আকাশের আঙ্কেল অসুস্থতার কারণে কাজকাম করতে না পাড়ায় সংসারে অভাব লেগেছে তাঁদের। সবার একই দশা। আকাশের খালা আর তার নিজের পরিবারের কেউ সুখে-শান্তিতে নেই। সবার জীবনেই টানা পোড়া লেগেছে। অবশ্য আকাশের মা রহিমা বেগমের ভাগ্য কিছুটা ভালো ছিল। তাই তিনার আকাশের বাবার সাথে বিয়ে হয়েছে। আর বিয়েটা আকাশের বাবা নিজেই আকাশের মা রহিমা বেগমকে করেছে। আকাশের বাবা সেলিম সাহেব একদিন রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে যাওয়ার সময় আকাশের মা রহিমা বেগমকে দেখে তিনার প্রেমে পড়ে যায়। সেই এক দেখাতেই সেলিম সাহেব প্রেমে পড়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আকাশের মা রহিমা বেগমকে নিজের ঘরের বউ বানিয়ে নেয়। সংসার জীবন সুন্দর চলছিল দু'জনের। কিন্তু কপালের দূর্গতি থাকলে সেটাকে আর কে খন্ডন করতে পারে। যাক গে প্রসঙ্গটা এখানেই সমাপ্তি করি। নাজিয়া বেগম কিছু সময়ের মধ্যেই আলমারি থেকে কানের দুল জোড়া এনে আকাশের কাছে দেয়। আকাশ কানের দুল জোড়া নাজিয়া বেগমের থেকে নিয়ে সাবধানে পকেটে রাখে। এরপর আফিয়াকে সঙ্গে নিয়ে খালার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় আসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়ে। দুপুরের আজানের কিছু সময় পর আকাশ আফিয়াকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছায়। বাড়িতে পৌঁছে আফিয়াকে রেখে সময় নষ্ট না করে আবারো সে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। তবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অফিসে যাওয়ার আগে খালার থেকে আনা স্বর্ণের দুল জোড়া একটা স্বর্ণকারের দোকানে দিয়ে দশ হাজার টাকা এবং রিসিট নিয়ে অফিসে রওয়ানা হয়। দুইটার কিছু সময় পর আকাশ অফিসে এসে পৌঁছায়। তনু না খেয়ে বসে আছে। আকাশ অফিসে পৌঁছাতেই তনু আকাশকে জিজ্ঞাস করে,
--'নিয়ে এসেছো তোমার বোনকে?'
--'হুম নিয়ে এসেছি।'
--'খাবার খেয়েছো?'
--'না খাইনি। তুমি খেয়েছো?'
--'না আমিও খাইনি। এতো সময় তুমি আসার অপেক্ষায় বসে ছিলাম।'
--'ওহহ।'
--'আচ্ছা যাও এবার ওয়াশরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এসো। আমি ফোন করে খাবারের দু'টো পার্সেল আনতে বলছি। তারপর দু'জনে মিলে একসাথে খেয়ে নিব।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে।'
আকাশ কেবিনের ভিতরে তনুর পার্সোনাল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আর তনু ফোন করে দু'জনের জন্য দু'টো খাবারের পার্সেল অর্ডার করে। কিছু সময় পর আকাশ ফ্রেশ হয়ে আসে। আর তার অল্প পরেই কেন্টিন থেকে খাবারের পার্সেল চলে আসে। দু'জনে মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। এরপর সাড়ে তিনটা নাগাদ দু'জনে মিলে বিয়ের শপিংয়ের জন্য বেরিয়ে পড়ে....
আকাশ আর তনু সাড়ে তিনটা নাগাদ দু'জনে মিলে বিয়ের শপিংয়ের জন্য বেরিয়ে পড়ে। তনুর গাড়ি করেই দু'জনে শপিংয়ের জন্য যাচ্ছে। আকাশ তনুর পাশের সিটে বসে আছে। আর তনু গাড়ি ড্রাইভ করছে৷ কিছুক্ষণ পর তনু একটা নামি-দামি শপিংমলের সামনে গিয়ে গাড়ি থামায়। আকাশের ভিতরে খচমচ করছে শপিংমল দেখা মাত্রই। কারণ শপিং নিয়ে আকাশের ও কিছু পরিকল্পনা আছে। যদি কোনো কারণ বশত জিনিসপত্রের দাম বেশি হয়, তাহলে আকাশ কুলিয়ে উঠতে পারবে না। এছাড়া সচারাচর শপিংমল গুলোতে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশিই হয়। ভয় হচ্ছে আকাশের। তবে সেটা তনুর সামনে প্রকাশ না করে তনুর সাথে শপিংমলের ভিতরে চলে যায়। তনু আকাশের হাত ধরে আকাশকে শপিংমলের ভিতরে নিয়ে যায়। আকাশ ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড নার্ভাস। তবে তনুকে সেটা কোনো ভাবেই বুঝতে দিচ্ছে না সে। তনু শপিংমলে ঢোকার পর একটা দোকানে গিয়ে আকাশের জন্য বেশ নামি-দামি ব্রান্ডের একটা খয়েরী রঙের শার্ট পছন্দ করে। আকাশ কিছুই বলছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ তনু শার্টটা নিয়ে আকাশের শরীরের সাথে মাপ দিয়ে আকাশকে বলে,
--'সাইজ তো একদম ঠিক ঠাক লাগছে। তবুও আকাশ তুমি একটু ট্রায়াল রুমে গিয়ে শার্ট টা গায়ে দিয়ে দেখে আসো তো সব কিছু বরাবর আছে কিনা।'
--'আচ্ছা।'
আকাশ শার্টটা নিয়ে ট্রায়াল রুমে চলে যায় শার্টের ট্রায়াল দিতে। কিছুক্ষণ পর ট্রায়াল রুম থেকে ফিরে এসে তনুকে বলে,
--'হ্যাঁ তনু সব ঠিক ঠাক আছে।'
--'যাক তাহলে আমার মেজারমেন্ট একদম ঠিক ঠাক ছিল। আচ্ছা এবার তুমি নিজে আরো কিছু শার্ট আর প্যান্ট পছন্দ করো।'
--'কেনো এতো গুলো শার্ট আর প্যান্ট দিয়ে কি করবো? আমি আর একটা প্যান্ট নিলেই আমার হয়ে যাবে।'
--'এই যে কথা কম বলে আমি যেটা বলি সেটা শুনো। কারণ আগামীতে জামাকাপড় গুলো লাগবে। এক সুট জামাকাপড় দিয়ে আর কয়দিন চলবে। যাও গিয়ে আরো কয়েকটা শার্ট দেখো। সেই সঙ্গে প্যান্ট ও।'
--'আচ্ছা।'
বেচারা আকাশ আর কোনো কথা বলে না। তনুর কথা মতন বাধ্য হয়ে আরো দুইটা শার্ট আর দুইটা প্যান্ট পছন্দ করে নেয়। আকাশ বাকি জিনিস গুলো পছন্দ করতে করতে তনু আকাশের জন্য পছন্দ করে একটা পাঞ্জাবি কিনে ফেলে। আকাশের কেনাকাটা কমপ্লিট। এবার তনুর কেনার পালা। তনু আর আকাশ যেই দোকানে কেনা কাটার জন্য ঢুকেছে তাঁদের দু'টো দোকান। একটা লেডিস আরেক জেন্টস। দু'টো দোকান এই সামনা-সামনি। এক দোকান থেকে আরেক দোকানের সব কিছু দেখা যায়। তনু দোকানদারকে আকাশের জিনিসপত্র গুলো প্যাকিং করতে বলে আকাশকে নিয়ে সামনের দোকান টাতে চলে যায় নিজের জন্য কেনাকাটা করতে। সামনের দোকানে গিয়ে বহু ঘাটাঘাটি করে তনু নিজের জন্য শুধু একটা ড্রেস পছন্দ করে। দোকানদার ড্রেসটা তনুকে প্যাক করে দেয়। আর সঙ্গে একটা রিসিট দিয়ে বলে,
--'ম্যাডাম বড় ভাইয়ার দোকান থেকে কিছু কেনা কাটা করেছেন দেখলাম। আপনি এই ড্রেসটার টাকা এক সাথে বড় ভাইয়ার কাছেই দিয়ে দিয়েন।'
--'জ্বি ঠিক আছে। এই আকাশ চলো।'
তনু শুধু একটা ড্রেস কেনায় আকাশের জিনিসটা ভালো লাগে না। তনুকে আপত্তি জানিয়ে বলে,
--'এই তনু এটা কি হলো? তুমি আমাকে এক গাদা কিনে দিয়ে নিজের জন্য শুধু একটা ড্রেস কিনলে মাত্র?'
--'আরে সমস্যা নেই। আমার বাসায় অনেক জামাকাপড় রয়েছে নতুন নতুন। তাই একটা ড্রেস কিনেছি।'
--'না এটা তো হতে পারে না। এই যে দোকানদার ভাইয়া আপনি ঐ শাড়িটা দেখান তো।'
--'আরে আকাশ লাগবে না।'
--'একদম চুপ থাকো। আমার বেশ পছন্দ হয়েছে ঐ শাড়িটা। আমি কিছুক্ষণ ধরেই ভাবছিলাম শাড়িটা তোমাকে নিতে বলবো। দোকানদার ভাইয়া আপনি শাড়িটা দেখান।'
--'জ্বি ভাইয়া দেখাচ্ছি।'
দোকানদার আকাশের কথা মতন শাড়িটা নামিয়ে দেখায়। আকাশ শাড়িটা নিয়ে তনুর গায়ে কেমন মানাবে সেটা চেক করে। শাড়িটা বেশ মানিয়েছে তনুকে। আকাশ কোনো কিছু না ভেবে শাড়িটা নিয়ে নেয়। বাজেটের কথা আপাতত আকাশ মাথা থেকে সরিয়ে ফেলে৷ আগের নেওয়ার আছে নিয়েছে। পরে যা হবে সেটা না হয় পরেই দেখা যাবে। আকাশের পছন্দ করা শাড়িটা দোকানদার আলাদা ভাবে প্যাক করে দিয়ে আবারো একটা রিসিট দেয়। শাড়ি আর জামাটা নিয়ে তনু আর আকাশ আগের দোকানে চলে আসে। আগের দোকানদার সমস্ত কাপড়-চোপড়ের হিসাব করে তনু আর আকাশকে জানায় ইনটোটাল সব মিলে বাইশ হাজার তিনশ টাকা এসেছে। দোকানদারের কথা শুনে আকাশের চোখ মুখ কালো হয়ে যায়। কারণ তার বাজেট ছিল বিশ হাজার টাকা। কিন্তু সেটা ছাড়িয়ে গেছে। কোনো কিছু না ভেবেই দোকানদারকে বলে,
--'ভাইয়া আমার এতো গুলো শার্ট প্যান্টের দরকার নেই। বাসায় এমনিতেও আমার কয়েক জোড়া নতুন শার্ট আর প্যান্ট রয়েছে। আমার সেগুলাই এখনো পড়া হয়নি। আপনি আমার একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট কমিয়ে রাখুন। তারপর দেখুন কতো আসছে বিল।'
--'আরে ভাইয়া পছন্দ করে যেহেতু নিয়েছেন কমিয়ে না রাখাটাই ভালো। আর আমি ডিসকাউন্ট ছাড়া আপনাকে বলেছি। তবে ডিসকাউন্ট সহ আপনার বিল হচ্ছে উনিশ হাজার পাঁচশ টাকা।'
আকাশের মন খুশি হয়ে যায় দোকানাদের কথা শুনে। চোখে-মুখে খুশি নিয়ে দোকানদারকে বলে,
--'ঠিক আছে ভাইয়া তাহলে সব গুলোই দিন।'
দোকানদার আকাশের কথা মতন সব গুলো জিনিস আকাশদেরকে দিয়ে সব কিছুর একটা ক্যাশ মেমো দেয়। আকাশ ক্যাশ মেমো আর সব কিছু বুঝে নিয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে তার মধ্যে থাকা বিশ হাজার টাকা বের করে এগিয়ে দেয়। তনু পুরো আশ্চর্য হয়ে যায় আকাশের আচরণে। শপিংয়ের টাকা আকাশ দিচ্ছে সেটা তনু বিশ্বাস এই করতে পারছে না। সব কিছু কেমন যেনো লাগছে তনুর। আকাশ দেকানদারকে টাকাটা দেওয়ার আগেই তনু আকাশকে থামিয়ে দিয়ে আশ্চর্য হয়ে বলে,
--'এই তুমি এটা কি করছো? আর এতো টাকা কোথায় পেয়েছো তুমি?'
--'আরেহ কিছুই না। প্রিয় মানুষের জন্য নিজের সাধ্য মতন কিছু করার চেষ্টা করছি। আর টাকাটা কোথায় পেয়েছি সেটা না হয় পরে এক সময় বলবো। এখন আগে বিলটা দিয়ে নেই।
--'না তুমি বিল দিবে না। টাকাটা তুমহ নিজের কাছে রাখো। আমি বিল দিচ্ছি।'
--'তনু এভাবে আমাকে আঁটকেও না। আমারো কিছু দায়দায়িত্ব আছে। যেই মানুষ টাকে আমি ভালোবাসি, তার জন্য অল্প সংখ্যক টাকা খরচ করতে না পারলে কি ভাবে কি। তুমি পরে কখনো দিও। এবার টাকাটা আমি দিচ্ছি।'
আকাশের জোড়াজুড়ির কাছে তনু হার মানে। আকাশ সমস্ত বিল পরিশোধ করে তনুকে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। তনুও কম নয়। দোকানটা থেকে বের হওয়ার পর আকাশকে একটা জুতার দোকানে নিয়ে গিয়ে ভালো মানের এক জোড়া জুতা কিনে দেয়। আর জুতার টাকাটা তনু নিজেই দেয়। অবশ্য আকাশ এখানে কোনো জোড়াজুড়ি করে না। কারণ আকাশের পকেটে আর বেশি টাকা নেই। সে চাইলেও জোড়াজুড়ি করে বিল দিতে পারবে না। সেজন্য নিরব হয়েই থাকে। জুতা কেনার পর তনু আকাশকে নিয়ে শপিংমলের ভিতরে থাকা একটু রেস্টুরেন্টে যায়। এরপর দু'জনে কিছু খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি ফিরে আসে। দেখতে দেখতে বৃহস্পতিবার চলে আসে। বৃহস্পতিবার দিন সকাল বেলায় আকাশ তনুর পছন্দ করে দেওয়া খয়েরী রঙের শার্ট আর প্যান্ট পড়ে ভালো ভাবে রেডি হয়ে নেয় অফিসে যাওয়ার জন্য। আজ সকল মানুষ জানতে পাবে তনু আকাশের স্ত্রীর। খুশিতে আত্মহারা আকাশ। রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে তনুকে ফোন করে আকাশ। তনুও রেডি হচ্ছিল। আকাশের ফোন পেয়ে রেডি হওয়া থামিয়ে ফোন রিসিভ করে। তনু ফোন রিসিভ করার পর আকাশ তনুকে বলে,
--'তনু আমার পছন্দ করে কিনে দেওয়া শাড়িটা পড়ে এসো কিন্তু।'
--'আরে আমি ওটাই পড়ছিলাম।'
--'হুম ঠিক আছে তাহলে। আর শুনো জলদি চলে এসো। আমি কিছু সময়ের মধ্যেই রওয়ানা হচ্ছি।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে। এবার ফোন রাখলাম। আমিও রেডি হয়ে জলদি চলে আসবো।'
--'আচ্ছা।'
আকাশ ফোন রেখে দিয়ে প্রথমে মা'য়ের কাছে গিয়ে মা'য়ের পা ধরে সালাম করে। এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে অফিসে চলে যায়। অফিসে বেশ জোরদার আয়োজন চলছে। অফিসের ছাদে রান্নাবান্না হচ্ছে। নিচে সবাই ডেকোরেশন করছে। তবে কেউ জানে না আয়োজন টা কি উপলক্ষে। তনু সবার জন্য বিষয়টা সারপ্রাইজ রেখেছে। আজ দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর তনু সবাইকে সারপ্রাইজটা দিবে। আই মিন আয়োজনের উদ্দেশ্যটা বলবে। আর সেই সঙ্গে আকাশকেও নতুন ভাবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। তবে ম্যানেজার খালেক সাহেব কিছুটা আন্দাজ করতে পারে কি কারণে এই আয়োজন৷ কিন্তু ম্যানেজার এবারো বিষয়টা কারোর সাথে শেয়ার করে না। কারণ দুপুরের পর তো সবাই এমনিতেই আয়োজনের আসল উদ্দেশ্যটা জানতে পারবে। তাই চুপচাপ সবার সাথে মিলে কাজকর্ম করতে থাকে। অফিসটা সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করছে সবাই মিলে। আকাশ অফিসে পৌঁছানোর পর সে নিজেও সবার সাথে কাজে যোগদান করে। তবে ম্যানেজার আকাশকে বারণ করে না করার জন্য। আর বলে সবটা উনারাই সামলে নিবে। আকাশ বুঝে যায় ম্যানেজার কেন বারণ করেছে। মুখের কোণে হাসি টেনে বলে,
--'খালেক সাহেব সমস্যা নেই। কাজ করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আর তাছাড়া আমি কাজ করলে কোনো জাত পাত নষ্ট হবে না।'
ম্যানেজার খালেক সাহেব আকাশকে আর কিছু বলে না। আকাশ সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তনু সেজেগুজে আকাশের পছন্দ করা শাড়িটা পড়ে অফিসে আসে। সবাই তনুকে দেখে অবাক। কারণ এই প্রথমবার তনু শাড়ি পড়ে অফিসে এসেছে। সবার মনে একই প্রশ্ন জাগে তনু শাড়ি পড়ায়।
কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না। কারণ যতোই হোক তনু সবার বস। আর তারা তাঁদের কর্মচারী। তাই সবাই চুপচাপ করে থাকে। তনু অফিসে এসে নিজের কেবিনে চলে যায়। দেখতে দেখতে একটার আজান হয়। বাবুর্চিদের রান্নার কাজ শেষ। তনুও কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। খাওয়া-দাওয়ার পালা শুরু হয়। এমন সময় সোহান অফিসে আসে। সোহানকে দেখা মাত্রই আকাশের রাগ উঠে যায়। আকাশ তনুর কাছে গিয়ে বলে,
--'ঐ বদ'মাইশ টা এখানে কি করছে?'
--'আকাশ আমিই ওকে দাওয়াত করেছি।'
--'মানে কি! সে এতোকিছু করলো। আর তুমিই তাঁকে দাওয়াত করেছো ঘটনাটা বুঝলাম না!'
--'আকাশ চাপ নিও না। আমি ওকে দাওয়াত করেছি শুধুমাত্র দেখানোর জন্য। আমি আজকে সকলের সামনে তোমাকে নিজের স্বামী বলে পরিচয় দিব। আর সোহান সেটা দেখে দেখে জ্বলবে।'
--'তনু এমনটা করা কি বেশি প্রয়োজন ছিল?'
--'হুম ছিল। কারণ সে শয়তানি করতে চেয়েছিল তোমার আর আমার সাথে। তাই তাকে ইনভাইট করেছি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। যাতে করে আমাদের সমস্ত কিছু দেখে তার ভিতরে হিংসায় জ্বলতে থাকে।'
--'যাক যা ইচ্ছে করেছো। তবে দেখো কোনো ঝামেলা যেনো সে না করে।'
--'আরেহ আজকে আর কোনো ঝামেলা করতে পারবে না। কারণ অফিসের এতোগুলো কর্মচারী রয়েছে। তার উপরে তুমি তো রয়েছোই। আশা করি তার আর সাহস হবে না কিছু করার।'
আকাশ আর কিছু বলে না। তবে মনে মনে সোহানকে নিয়ে সে একটু দোটানায় ভুগছে। কারণ শয়তান বলতেই সুযোগ পেলে সে মানুষের ঘাড়ে চে'পে বসবে। কখন কোন দিকে কি করে তার কোনো ঠিক নেই।একদিকে সোহানকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। অপরদিকে আর কিছুক্ষণ পর সবার সামনে তনু তাঁকে নিজের স্বামী বলে পরিচয় করিয়ে দিবে সেই খুশি। সকলের খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়। তনু সকলের খাওয়া-দাওয়া শেষ হওয়ার পর আজকের আয়োজনের উদ্দেশ্য কি সেটা বলার জন্য সবাইকে একসঙ্গে করে বলে,
--'কি কারণে আজকের এই আয়োজন সেটা একটু পরেই বলছি। আগে ছোট্ট একটা কাজ সেরে নেই।
তনু সবাইকে অপেক্ষায় রেখে আকাশের কাছে যায়। আকাশ এক সাইডে করে তনুর থেকে দুই-তিন হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল। তনু আকাশের কাছে গিয়ে হুট করে তার পছন্দ করে দেওয়া আকাশের শার্টের কলারে সে নিজেই খপ করে চে'পে ধরে। এরপর আকাশের শার্ট ধরে তাঁকে সবার সামনে টেনে এনে লাগাতার কোষে কয়েকটা থা'প্পড় মা'রে। আকাশ তনুর আচরণে পুরো আশ্চর্য হয়ে যায়। হুট করেই পরিস্থিতির এমন পরিবর্তন দেখে আকাশ হতভম্ব হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে.....
তনু আকাশকে পছন্দ করে নিয়ে দেওয়া শার্টের কলারে সে নিজেই খপ করে চে'পে ধরে। এরপর আকাশের শার্ট ধরে তাঁকে সবার সামনে টেনে এনে লাগাতার কোষে কয়েকটা থা'প্পড় মা'রে। আকাশ তনুর আচরণে পুরো আশ্চর্য হয়ে যায়। হুট করেই পরিস্থিতির এমন পরিবর্তন দেখে আকাশ হতভম্ব হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশের সাথে সাথে অফিসের সকল কর্মচারীও অবাক। কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। বিশেষ করে আকাশ। তনু আকাশকে সকলের সামনে টেনে এনে লাগাতার কোষে কয়েকটা থা'প্পড় মা'রার পর সকলকে বলে,
তনু আকাশকে আরো কয়েকটা থা'প্পড় মা'রে।
তনুর আচরণে রীতিমতো সবার আশ্চর্যের সীমা ইতিমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে সবাই তনুর দিকে। আর তনু পরবর্তীতে আকাশকে আবারো থা'প্পড় মে'রে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। আকাশ গালে হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় মাথা কা'টা যাবে মতন অবস্থা। তনু রেষ মিটিয়ে নিয়ে সবাইকে বলে,
--'এবার সকলেই শুনুন কারণটা বলছি। এই ব'দ'মাইশটা আমার অফিসে এসেছে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে। শুরুতে আমি এই বেয়াদবের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারি এই ছেলের মতলব খারাপ। আমি একজনের সাথে সিরিয়াস একটা রিলেশনে রেয়েছি। কিন্তু তার পরেও এই ব'দমাইশ ছেলে আমাকে একটা ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছে। অবশ্য সেই বিয়ের কোনো ভ্যালু নেই। কারণ কোর্টের একটা কাগজে সে আমার থেকে চালাকি করে সিগনেচার নিয়েছে। আর তাছাড়া সেই কাগজটা আমি কৌশলে জব্দ করে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছি। কিন্তু এই ছেলের উদ্দেশ্য ছিল সে আমাকে কৌশল করে বিয়ে করবে, যাতে করে সে আমার সমস্ত সম্পত্তি ভোগ করতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে আমি তার উদ্দেশ্য জানতে পেরে চালাকি করে আমার সিগনেচার করা কাগজটা নিজের আয়ত্তে করে নিয়ে নষ্ট করে ফেলেছি। যাতে সে আমার কোনো ক্ষতি করতে না পারে। আর আজকের আয়োজনের আসল উদ্দেশ্য হলো এই ছেলের ইতিহাস সম্পর্কে সবাইকে জানানো। এছাড়া আরেকটা উদ্দেশ্য আছে। সেটা হলো আগামীকাল আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। যেটার অগ্রীম দাওয়াত আপাদের খাইয়ে দিলাম। আমার ধুমধাম করে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই। কিন্তু আপনাদের একটা হক আছে। তাই আজকে অগ্রীম আয়োজন করলাম। আর আমি যাকে বিয়ে করবো তার সাথে সকলের একবার পরিচয় করিয়ে দেই। এই সোহান এদিকে আসো।
আকাশ লজ্জায় কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।
সোহান তনুর কথা মতন কর্মচারীরের মধ্যে থেকে গিয়ে তনুর পাশে দাঁড়ায়। আর তনু সকলের সামনে সোহনকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এবং আগামীকাল তনু আর সোহান বিয়ে করতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে ঘোষণা করে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। ভিতরটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে আকাশের তনুর সমস্ত কথা শুনে। একটু আগে একগাদা মিথ্যা দোষ তনু আকাশের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। যেটার একটাও সে করেনি। উল্টো তনু নিজেই সব করেছিল। আকাশ যেদিন জয়েনিংয়ের জন্য আসে, সেদিন তনুই তাঁকে ফোর্স করে বিয়ে করছে। আর আজ তনু তাঁকেই উল্টো অপবাদ দিয়ে সবার চোখে আসামি বানিয়ে দিয়েছে। আকাশ কখনোই এমনটা আশা করেনি তনুর থেকে। মন থেকে সত্যিই সে তনুকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু তনু শেষমেশ তার সাথেই চোখ উল্টে নিলো। আকাশের কেমন যেনো কোনো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে যেনো কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। তনু আর সোহানের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে আকাশ। ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড আফসোস হচ্ছে। হওয়ার কথা ছিল কি। আর হলো কি। ভালোবাসার পরিণাম যে কতোটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা আকাশ আজ বাস্তবে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে দেখেছে। পুরো অফিসের সবাই আকাশের দিকে ঘৃণার নজরে তাকিয়ে আছে। দু-চারটে খুন করে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামীর মতন দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। সে আজ কিছু না করেও আসামি। তনু সোহানকে ডেকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সোহানের চোখে-মুখে হাসি। আর আকাশ কষ্টের ঠিকাদারি নিয়েছে। তনু সোহানকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আকাশের কাছে যায়। গলার আওয়াজ ছোট করে আকাশ আর সে ছাড়া কেউ শুনতে না পায় মতন করে বলে,
--'কিরে কেমন ফিলিংস হচ্ছে তোর? আজকের দিনটার জন্য বহুদিন ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। কি ভেবেছিস তুই আমাকে বারবার অপমান করবি আর আমি তোকে ছেড়ে দিব? না রে আমি এতোটা দয়ালু নই। আমি সেই তনু, যে কারোর দেওয়া কষ্টের কথা ভুলি না। কেউ আমায় একবার কষ্ট দিলে আমি তাঁকে সেটা সুদে-আসলে দশবার ফিরিয়ে দেই। তবে তোর ভাগ্যটা ভালো ছিল। তুই আমায় পাঁচ বছর আগে অপমান করেছিস। তোদের জন্য আমার বাবা মা'রা গিয়েছে। কিন্তু আমি তোর বেলায় সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। তবে তুই পরেরবার আবারো একই কাজটা করলি আমায় পার্টিতে অপমান করে। আর সেদিন এই আমি ঠিক করে নিয়েছি তোর উপরে অতীত এবং বর্তমানের সমস্ত প্রতিশোধ নিব। সেই কারণে আমি তোর সাথে অতিরিক্ত ভালোবাসার নাটক শুরু করেছিলাম। অবশ্য আমিও তোকে ভালোবাসতাম। কিন্তু তোর কারণে অপমানিত হওয়ার পর সমস্ত ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়ে গিয়েছে। এছাড়া যদিও তুই আসাদ সাহেবের সাথে কথা বলে সব ঠিক করেছিস। কিন্তু আমি তনু যেটা একবার করবো ভাবি, সেটা করেই ছাড়ি। আর তোর কারণেই আমি বাধ্য হয়ে সোহানের সাথে সম্পর্কে করেছি। না হয়তো আজ আমি তোর থাকতাম। যে নারী অসম্ভব ভালোবাসতে জানে। সে ঘৃণাও করতে জানে। তুই সেদিন ঐ রকমটা না করলে আজ তোর এই দুঃসময় দেখতে হতো না। একে একে বেশ কয়েকবার তুই আমাকে আ'ঘাত করেছিস। আজ সেসব তোকে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। আমার বাবা মা'রা গিয়েছে কিন্তু তোরা কেউ সাহায্য করিস নি। তোরা যদি আমার বাবার সাহায্য করতি তাহলে আজও আমার বাবা জীবিত থাকতো। বাবার দুঃসময় আসায় তোরা সব কয়টা সাইড কেটে পড়েছিস। তার উপরে টাকার কারণে আমায় তুই অপমান করেছিস। কি যেনো বলেছিলি তখন? আমি তোর যোগ্য না? আমার মতন অনেক মেয়ে দৈনিক তোর পিছনে ঘুরে? আজ দেখ তো কে কার যোগ্য না। তুই আমাকে গত পাঁচ বছর আগে তুচ্ছ, অকিঁচিৎ, নিষ্ফলা ভেবেছিস।
আজ দ্যাখ আমার আশেপাশে আসার ও যোগ্যতা তোর নেই। তার উপরে আবার আমাকেই পার্টিতে অপমান করা হ্যাঁ। দ্যাখ এখন কেমন লাগে। সেদিন যখন সোহান অফিসে এসেছিল, তার একদিন পর আমি সোহানের সাথে মিলে সব প্ল্যান করি। তোকে সোহান রাস্তার মাঝে আঁটকেছিল এটাও আমাদের একটা প্ল্যানের অংশ ছিল। আমাদের ইচ্ছে ছিল তোকে কষিয়ে একটা মা'ইর দেওয়া। কিন্তু তুই সেদিন বেঁচে গেছিস পিস্তলের কারণে। আর আমাদের প্ল্যান বৃথা যায়। তারপর আবার নতুন করে প্ল্যান সাজাই আজকের জন্য। এতো টাকা পয়সা নষ্ট করেছি শুধু তোকে অপমান-অপদস্ত করার জন্য। তুই আমাকে ভরা মজলিসের সামনে অপমান করেছিস। তাই আমি ঠিক করেছিলাম তোকেও একটা আয়োজন করে সেখানে ইচ্ছে মতন অপমান করবো। যেটা তোকে আজ করলাম।'
আকাশের চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে শুরু করে তনুর কথায়। যাকে সে সব টুকু দিয়ে ভালোবেসেছে সেই তনু তার উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভালোবাসা নামক জঘন্য একটা নাটক করেছে। দুই গাল লাল হয়ে গিয়েছে আকাশের তনুর থা'প্পড়ের কারণে৷ ভিষণ কষ্ট হচ্ছে আকাশের। টলমল করে চোখের পানি পড়ছে। কি পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে আকাশের ভিতরে তা কারোর পক্ষে অনুমান করা অসম্ভব। তনুর দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে আকাশ ভাবে,
--'আমি বরাবরের মতোই হতোভাগা। আমি
আমার দুঃখ গুলো একটা গ্লাসে রাখি, গ্লাস গলে যায়। একটা কাঠের পাত্রে রাখি তাতে আগুন ধরে যায়। একজন ঘৃণিত লোকের চুল্লিতে রাখি তৎক্ষণাৎ সে মা'রা যায়। একটা উন্মুক্ত আগ্নেয়গিরির মুখের মধ্যে পুরে দেই, কিন্তু ওরা শূন্যপথে উত্তপ্ত লাভা হয়ে উড়ে যায়। আমার দুঃখ গুলো কারোর সাথে ভাগাভাগি করার চেষ্টা করি, সে আমার মজা উড়িয়ে চলে যায়। আমি আমার দুঃখ গুলো কোনো আলোকিত সমাজে রাখি, সেই সমাজে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়। আমার দুঃখ গুলো আমি পূনরায় আবার নিজের ভিতরে ফিরিয়ে আনি, সেই দুঃখ আমায় কাঁদিয়ে ছারখার করে দেয়। আমি তাঁকে স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসলাম। আর পরিশেষে সে আমার সাথে নৃশংসতা দেখালো। হায়রে দুনিয়া।'
তনুর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে মনে মনে আফসোস করছে আকাশ। তনুর বিন্দু পরিমাণ মায়া হচ্ছে না আকাশের চোখের পানি দেখে। উল্টো আরো প্রতিহিংসা দেখিয়ে বলে,
--'আরেহ বাহ তোর তো দেখছি বেশ লজ্জা। অল্পতেই তোর চোখের পানি বেরিয়ে গেছে। আমি তো ভেবেছিলাম তোর মধ্যে লজ্জাবোধ বলতে কিছুই নেই। কিন্তু এখন দেখছি তোর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তার মানে একটু হলেও তোর ভিতরে লজ্জা আছে। তবে তোর লজ্জা থাকা আর না থাকা দিয়ে আমার কোনো লাভ নেই। আর তোর চোখের পানি দেখে আমি আর গলছি না। তাই তোর জন্য ভালো হবে বৃথা চোখের পানি গুলো নষ্ট করিস না। কারণ এখন মাত্র একটা ধাপ গিয়েছে। আরেকটা ধাপ এখনো বাকি আছে। সেজন্য বলছি চোখের পানি গুলো আপাতত বাঁচিয়ে রাখ একটু পর কাজে আসবে।'
আকাশ তনুর কথা শুনে বুঝে উঠতে পারে না তনু কিসের ধাপের কথা বলছে। ইতিমধ্যেই তনু আকাশকে সজোড়ে এক ধাক্কা দিয়ে উল্টে মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর সে সরে যায়। সোহান এগিয়ে আসে আকাশের কাছে। আকাশ নিজেকে সামলে মাটি থেকে উঠার আগেই আকাশের কলার চে'পে সোহান। আকাশ পুরোপুরি নিশ্চুপ। সোহান আকাশের কানের দিকে৷ নিজের মুখ কিছুটা এগিয়ে তনুর ন্যায় দু'জন ব্যতীত কেউ না শুনে মতন করে বলে,
--'খুব দেমাগ বেড়েছিলি তোর তাই না? খুব অহঙ্কার হচ্ছিলো তোর তনুকে পেয়ে? দ্যাখ তনু এখন আমার। আগামীকাল আমরা দু'জনে বিয়ে করে সংসার শুরু করবো। আগামীকাল সারাজীবনের জন্য তনু আমার হয়ে যাবে। আগামীকাল থেকে তোর তনুর শরীরে আমি স্পর্শ করবো। ওর উপরে আগামীকাল থেকে একান্তই শুধু আমার অধিকার থাকবে।'
আকাশ সোহানের কথা শুনে সোহানের দিকে কিছুটা আক্রোশ নিয়ে তাকায়। সোহান আকাশের তাকানো দেখে আকাশকে বলে,
--'সেদিন পিস্তল নিয়ে বহু বাহাদুরি দেখিয়েছিস। কিন্তু আজ তোর বাহাদুরি আমি ছুটিয়ে দিব।'
সোহান আকাশের উপরে বসে নৃশংস ভাবে আকাশকে মা'রতে আরম্ভ করে। কিন্তু আকাশ একটা টু শব্দ'ও করে না। চুপচাপ পড়ে পড়ে মা'র খাচ্ছে। অফিসের সবাই দৃশ্যটা তাকিয়ে তাকিয়ে উপভোগ করছে। কেউ আকাশকে বাঁচাতে আসছে না। কারণ সবার নজরে আকাশ ঘৃণিত। সোহান আকাশকে মা'রতে মা'রতে আকাশের নাক-মুখ ফাটিয়ে রক্ত বের করে ফেলে। নাক-মুখ থেকে অনর্গল রক্ত পড়ছে আকাশের। কেউ কোনো মনুষ্যত্ব দেখাচ্ছেনা আকাশের জন্য। সোহানের ভিতরেও কোনো মায়া-দয়া কাজ করছে না। সে প্র'হার করেই চলেছে আকাশকে। এমন সময় অফিসের ম্যানেজার খালেক সাহেব দৌড়ে আসে আকাশকে বাঁচানোর জন্য। এতো সময় বেচারা চাকরি হারানোর ভয়ে চুপচাপ করে থাকলেও এখন আর চুপচাপ করে থাকতে পারে না। সাহস করে আকাশকে বাঁচাতে চলে আসে। কারণ কেউ না জানলেও খালেক সাহেব জানে আকাশ নির্দোষ। কয়েকদিন আগে তনু নিজেই তিনাকে বলেছে আকাশ তার হাজবেন্ড। কিন্তু যদি আকাশ সত্যিই তাঁকে ফন্দি করে বিয়ে করতো, তাহলে তনু তিনাকে কখনোই ঐ ভাবে বলতো না। মানুষ আপন মানুষকে নিয়েই জোর গলায় বলে। কারোর প্রেশারে পড়ে তনুর মতন ঐরকম নিখুঁত ভাবে কথা বলা কারোর পক্ষে অসম্ভব। খালেক সাহেব জোরপূর্বক সোহানকে আকাশের কাছ থেকে টেনে ছাড়িয়ে আকাশকে ধরে মাটি থেকে তোলে। কিন্তু সোহান আবারো তেড়ে যায় আকাশকে মা'রার জন্য। খালেক সাহেব আকাশকে ছেড়ে সোহানকে আটকানোর চেষ্টা করে। এই সুযোগে পিছন থেকে আকাশ সামনে এগিয়ে গিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সোহানকে কোষে একটা লাগিয়ে দেয়। যার ফলে সোহান সাথে সাথে ঢুলে ধ্রামম করে মাটিতে পড়ে যায়...
সোহান আবারো তেড়ে যায় আকাশকে মা'রার জন্য। খালেক সাহেব আকাশকে ছেড়ে সোহানকে আটকানোর চেষ্টা করে। এই সুযোগে পিছন থেকে আকাশ সামনে এগিয়ে গিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সোহানকে কোষে একটা লাগিয়ে দেয়। যার ফলে সোহান সাথে সাথে ঢুলে ধ্রামম করে মাটিতে পড়ে যায়। আকাশের এক ঘু'ষিতে সোহানের দুনিয়াদারী উলট-পালট হয়ে গিয়েছে। নাক ফেটে অনবরত রক্ত পড়ছে। রক্তের কারণে চেহারার নকশা বদলে গিয়েছে সোহানের। সারা মুখ রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। মাটির মধ্যে শুয়ে নাক চেপে ধরে আছে সোহান। তনু সোহানের অবস্থা দেখে সোহানের কাছে দৌড়ে আসে। আকাশ সোহানের অবস্থা সত্যিই বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এতো সময়ের প্রতিশোধ আকাশ একবারেই উঠিয়ে নিয়েছে। হিসেব বরাবর। তবে আকাশের ভিতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তনুর আচরণে। রক্ত দু'জনের শরীর থেকেই পড়ছে। কিন্তু তনু তাঁকে নয় সোহানকে সামলাচ্ছে। রক্তের সাথে চোখের জল ঝর্ণার পানির ন্যায় টলমল করে পড়ছে আকাশের চোখ থেকে৷ হতভাগার মতন তাকিয়ে আছে তনুর দিকে আকাশ। আর তনু সোহানকে সামলে মাটি থেকে ধরে উঠে বসায়। আকাশের উপরে প্রচন্ড রাগ উঠছে তনুর। ইচ্ছে করছে আকাশকে এখুনি খু'ন করে ফেলতে৷ তবে এমনটা করা সম্ভব নয়। কারণ অনেক মানুষজন রয়েছে উপস্থিত। তার উপরে একটা মানুষকে খু'ন করা দু'চারটে কথা নয়। সোহানকে কোনো মতে সামলে রাগান্বিত কন্ঠে আকাশকে বলে,
--'আকাশ এই মুহূর্তে তুই আমার অফিস থেকে বের হ। না হয় কিন্তু আমার হাতে তোর কোনো অঘটন ঘটবে। তোর কতো বড় সাহস তুই আমার সোহানের শরীরে আ'ঘাত করিস? তুই তো এর জন্য কখনোই ক্ষমা পাবি না আকাশ। একদম জানে মে'রে ফেলবো তোকে। আমার সোহানের গায়ে হাত উঠানোর ফল তোকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে। অবশ্য আমার সমস্ত প্রতিশোধ নেওয়া শেষ তোর উপরে। কিন্তু একটু আগে যেটা করলি সেটার কারণে আমি নয় সোহান তোর উপরে নিজেই প্রতিশোধ নিবে। আর সেই সময় আমি সোহানকে সঙ্গ দিব। তুই নিজের জীবনে আরো একটা মুসিবত ডেকে এনেছিস সোহানের উপরে হাত তুলে। আমার প্রতিশোধের পালা শেষ। কিন্তু সোহানের নতুন করে পালা শুরু হয়েছে। তুই পাতালে গিয়ে লুকিয়ে থাকলেও সোহান তোকে খুঁজে বের করবে। এবার আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ। আগামীতে যেনো আর কখনো তোর সাথে আমার দেখা না হয়। আর যদি হয়েও থাকে, তাহলেও যেনো তোর লাশের সাথে আমার দেখা হয়। এখন বের হ তুই আমার অফিস থেকে। তোর মতন ছোট লোক আমার অফিসে থাকার কোনো যোগ্যতাই রাখে না।'
তনুর কথা শুনে আকাশের প্রচন্ড হাসি পায়। তনুর কথার কোনো প্রত্যুত্তর না করে সজোড়ে হাসতে হাসতে তনুর অফিস থেকে বেরিয়ে চলে যায়। আপদ বিদায় হয়েছে অফিস থেকে। আকাশ চলে যাওয়ার পর তনু কয়েক জনের সাহায্যে নিয়ে সোহানকে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডক্টর জানায় সোহানের নাকের ভিতরে হালকা করে চোট লেগেছে। তেমন বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয় নি। তনুর শান্তিতে নিশ্বাস ফেলে ডক্টরের কথা শুনে। ভিতরে ভিতরে বেশ আনন্দ লাগছে তনুর। একে তো সোহানের তেমন বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। দ্বিতীয়ত আকাশের উপরে আজ সে সমস্ত কিছুর প্রতিশোধ নিয়েছে। সোহানকে ডক্টর দেখিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে তনু। আনন্দের কোনো সীমা নাই তনুর। এর আগে কখনো তার কোনো কিছু নিয়ে এতোটা আনন্দ হয়নি। আজ যেই আনন্দটা হচ্ছে আকাশের উপরে প্ল্যান মোতাবেক সমস্ত প্র'তিশোধ নিতে পেরে। খুশি মনে বাসায় এসে নিজের মা'কে বলে,
--'মা আজ আমি বেশ খুশি। জানো আজ আমি ঐ আকাশের উপরে সমস্ত প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছি। আমার বাবার প্রতিশোধ এবং আমাকে করা অপমানের শোধ আজ আমি আকাশের উপরে তুলেছি। অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে তাঁকে অপমান করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছি। আর সেই সঙ্গে তাঁকে সোহানের হাতেও মা'ইর খাইয়েছি। আমার কি যে আনন্দ হচ্ছে মা জানো? আমার এই জীবনের সব চাইতে বড় পূর্ণতাটা যেনো আজ আমি পেয়েছি আকাশের উপরে প্রতিশোধ নিতে পেরে। একেবারে নাক-মুখ ফা'টিয়ে দিয়েছে সোহান আকাশের। আমায় অপমান করার সমস্ত ফল আজ আকাশ পেয়েছে। কত্তো বড় সাহস তার সে আমায় অপমান করেছিল প্রেমের প্রপোজাল দেওয়ায়। আজ তার স্টাটাস তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছি৷ রাস্তার টোকাই হয়ে আমার সাথে বাহাদুরি দেখায়। আজ একদম পরিপূর্ণ ক্ষোভ মিটিয়েছি আকাশের উপর।'
তনুর সমস্ত কথাবার্তা শুনে রাগে তনুর মা'য়ের চোখে পানি চলে আসে। মেয়ের কথাবার্তা শুনে নিজেকে দমানো মুশকিল হয়ে উঠেছে তনুর মা'য়ের। কোষে তনুর দুই গালে দু'টো থা'প্পড় লাগিয়ে দেয় তনুর মা। তনু আশ্চর্য হয় তার মা'য়ের এমন আচরণে। গালে হাত দিয়ে আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে,
--'মা তুমি আমায় মা'রলে কেন? তোমার তো আমার খুশিতে খুশি হওয়া উচিত মা। সেই জায়গায় তুমি আমায় থা'প্পড় মা'রলে?'
--'হ্যাঁ মে'রেছি। কারণ তুই যেই বড় অন্যায় টা করেছিস আকাশের উপরে, সেটা এর আগে দুনিয়ার বুকে কেউ কারোর সাথে করেনি।'
--'মা আমি কিসের অন্যায় করেছি আকাশের উপরে? অন্যায় তো সে আমার সাথে করেছে৷ তাঁকে প্রেমের প্রপোজাল দেওয়ায় আমাকে অপমান করেছে। আমার বাবার দুঃসময়ে তারা সাহায্য না করে আমার বাবাকে ম'রার জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। আজ তাঁদের কারণে আমার বাবা বেঁচে নেই। তার উপরে সে আমায় পার্টিতেও অপমান করেছে। আর তুমি বলছো আমি তার উপরে সমস্ত কিছুর প্রতিশোধ নিয়ে অন্যায় করেছি?'
--'হ্যাঁ তুই অন্যায় করেছিস। আর তোর অন্যায়টা এতো বড় যার কারণে হয়তো সৃষ্টিকর্তার আরশ সহ কেঁপে উঠেছে। তনু তুই একটা নির্দোষ ছেলের উপরে প্রতিশোধ নিয়েছিস। যেটার কারণে তুই এই জীবনে হয়তো কোনোদিন ও ক্ষমা পাবি না।'
--'মা আকাশকে তোমার কোন দিকে নির্দোষ মনে হচ্ছে? সে যে আমার সাথে এতো কিছু করেছে সেসব কি তোমার কাছে কিছুই মনে হচ্ছে না?'
--'না মনে হচ্ছে না। কারণ তুই এখনো সত্যিটা জানিস না।'
--'কিসের সত্যি আমি জানি না মা?'
--'শুনতে চাস কোন কি তুই জানিস না?'
--'হ্যাঁ শুনতে চাই।'
--'ঠিক আছে বলছি। তবে আমি কখনোই চাইনি তোকে এই সত্যি গুলো বলতে। কিন্তু শেষমেশ বাধ্য হচ্ছি বলতে। শুরুতে তোর বাবার কথা দিয়েই শুরু করি। তোর বাবা আর সেলিম সাহেব এক সাথে বিজনেস করতো। কিন্তু মাঝ পথে তোর বাবাই সেলিম সাহেব থেকে আলাদা হয়ে অন্য একটা কোম্পানির সাথে হাত মিলিয়ে অধিক অর্থের লোভে বিজনেস করেছে। আর সেটাই তোর বাবার কাল হয়েছে। তোর বাবা সেলিম সাহেবকে রেখে যেই কোম্পানির সাথে শেয়ারে বিজনের করেছে সেই কোম্পানি তো ডুবেছেই, সাথে তোর বাবাকেও ডুবিয়েছে। তোর বাবার সমস্ত টাকা-পয়সা নিজের কারণে হারিয়েছে। সেলিম সাহেব অনেক বার তোর বাবাকে বুঝিয়েছিল এমনটা না করতে, কিন্তু তোর বাবা সেলিম সাহেবর একটা কথাও শোনে নি। উল্টো আরো ব্যাংক থেকেও অনেক লোন নিয়েছিল তোর বাবা নতুন করে বিজনেস করার জন্য। সেলিম সাহেব তোর বাবার কারণে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু তার পরেও তোর বাবার বিপদে সেলিম সাহেব এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু তোর বাবা নিজেই সাহায্য নেয়নি। কারণ এমনিতেই সেলিম সাহেবের কথা না শোনায় তোর বাবার প্রচন্ড লজ্জাবোধ কাজ করছিল। তাই তোর বাবা সেলিম সাহেবের সাহায্য নেয়নি।
আর এই বিষয়টা থেকে তুই নিজেও বেখবর। অবশ্য তোকে ইচ্ছা করেই জানানো হয়নি। কারণ তোর বাবা অতিরিক্ত অর্থের লোভ করতে গিয়ে সব হারিয়েছি সেটা তুই জানতে পেলে তোর নজরে তোর বাবা নিচে নেমে যাবে। তাই তোর বাবা সেটা তোকে জানাতে বারণ করেছে। এরপর যখন তোর বাবা মা'রা যায়, তখন তোর বাবার লোনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকের লোকজন আমাদের বাড়িটা নিয়ে নেয়। কিন্তু তার পরেও লোন পুরোপুরি পরিশোধ হয় না। তখন আকাশের বাবা নিজে বাকি টাকা পরিশোধ করেছে। এবার আসি আকাশের কথায়। তুই আকাশকে কখন থেকে ভালোবাসিস সেটা আমি জানি না! তবে তুই যখন ক্লাস সেভেন-এইটে পড়িস তখন থেকেই আকাশ তোকে পছন্দ করে৷ তোর আর সোহানের বিষয়টা সে সহ্য করতে না পাড়ায় পার্টিতে সে তোকে অপমান করেছে। আর গত পাঁচ বছর আগে সে তোকে যেই অপমানটা করেছে সেটা ইচ্ছা করেই করেছে। কারণ যাতে করে আমাদের যেই নাম-ডাকটা খারাপ হয়েছে সেটা তুই আবার ফিরিয়ে আনতে পারিস। তখন সে তোর আচরণে সাড়া দিলে তুই আজ কখনোই এই জায়গায় পৌঁছাতে পারতি না। তোকে অপমান করে সে তোর মধ্যে একটা জেদ ঢুকিয়ে দিয়েছে। যাতে করে তুই তোর বাবার চাইতেও অনেক বেশি নাম-ডাক অর্জন করতে পারিস। আকাশ তোকে এবং আমাদের পরিবারকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। তাই আমাদের ভালোর জন্য সে এমনটা করেছে। এমনকি তুই যেই টাকা দিয়ে বিজনেস করছিস সেটা আকাশের এই দেওয়া টাকা। কিন্তু আকাশ তোকে এসব বিষয়ে কখনো না বলতে বলেছে। কারণ সে চায় না তুই তার কাছে কখনো ছোট হয়ে থাক। এমনকি সে তোর বিপদে উপকার করেছে সেই কারণে তুই তাঁকে ভালোবাস। সে সবসময় চাইতো তোদের ভালোবাসাটা যেনো পিওর হয়। কখনো যেনো তোদের ভালোবাসার মধ্যে তার উপকারের প্রসঙ্গটা না আসে। তার জন্যই সে সব সময় ওইসব কথা লুকিয়ে গেছে। এমনকি আমাকেও বারণ করেছে কখনো তোকে এসব বিষয় না বলতে। তাই আমি তার দেওয়া টাকা তোকে দিয়ে বলেছিলাম এসব আমার নিজের জায়গা বিক্রির টাকা। কিন্তু সত্যিকারত্বে টাকাটা আমায় আকাশ দিয়েছিল তোকে দেওয়ার জন্য। আমার কোনো জায়গা জমিন ছিল না।
কিন্তু তুই কি করলি? তার দেওয়া টাকায় রাজপ্রাসাদ বানিয়ে সেই রাজপ্রাসাদে দাঁড়িয়ে তাকেই অপমান করলি? হায়রে তনু তোর কিছুই থাকবে না রে। সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি তোর মা হয়ে বলছি৷ তুই কোনো কুল-কিনারা খুঁজে পাবি না। সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যাবে তোর। অন্যায় ভাবে কখনো মানুষের উপরে প্রতিশোধ নিলে সৃষ্টিকর্তার আরশ সহ কেঁপে উঠে। তার মনের আঘাতে তুই যেই রাজপ্রাসাদ বানিয়েছিস, সেই রাজপ্রাসাদের একটা ইঁটের টুকরো ও খুঁজে পাবি না। আমার কথাটা মিলিয়ে নিস তুই।'
তনুর মা'য়ের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। আর তনু তার মা'য়ের মুখ থেকে সমস্ত সত্যি কথা শুনার পর যেনো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে তনুর। মনের ভিতরে বিশাল এক ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নিজের মা'য়ের মুখ থেকে অপ্রিয় সত্যি গুলো শুনার পর নিজের অনিচ্ছাতেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে। কলিজাটা বেধড়ক ভাবে মোচড় দিচ্ছে তনুর। মনে হচ্ছে যেনো কেউ নিজের হাতে ধরে কলিজা টাকে কচলাচ্ছে। ধাপাস করে মাটিতে বসে ফুফিয়ে কাঁদতে শুরু করে তনু। নিজের হাতে দিয়েই সে সব কিছু শেষ করে ফেলেছে। কতো বড় ভুল করেছে সেটা সে এখন উপলব্ধি করতে পারছে৷ কিন্তু এখন উপলব্ধি করে আর কি হবে। যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে।
মেয়ের কান্নাতে মা'য়ের কলিজায় একফোঁটাও ফারাক পড়ছে না। যেখানে সন্তানের কান্নায় মা'য়ের ভিতরে ভূমিকম্প শুরু হয়, সেখানে তনুর কান্না তনুর মা'য়ের ভিতর পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না এতো বড় পাপ করেছে তনু। উল্টো আরো রাগান্বিত কন্ঠে মেয়েকে বলে,
--'এখন কাঁদছিস কেন? তোর তো আনন্দে থাকার কথা প্রতিশোধ নিতে পেরে। আমি বারবার বলেছিলাম এমনটা করিস না। যা হয়েছে গত পাঁচ বছর আগে চলে গিয়েছে। কিন্তু না আমার কথার অমান্য করে তুই ঠিকই প্রতিশোধ নিয়েছিস। আসলে তোর মতন মেয়ে আমি গর্ভে ধরে নিজের গর্ভকে কলঙ্কিত করেছি এছাড়া আর কিছুই নয়। একদম কাঁদবি না। কাঁদলে গলা টি'পে মে'রে ফেলবো। মায়া কান্না থামা।'
--'ও মা প্লিজ এই ভাবে বলো না। সত্যিই আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি না বুঝে! মা প্লিজ আমাকে একটা বার শোধরানোর সুযোগ দাও।'
--'আমার কাছে সুযোগ চেয়ে কোনো লাভ নেই। সুযোগ যার কাছে চাইলে কাজ হবে তার কাছে গিয়ে চা।'
তনু মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়। তার মা ঠিক কথাই বলেছে। ক্ষমা তার আকাশের কাছে চাওয়া উচিত। এক সেকেন্ড ও আর দেরি না করে গাড়ি নিয়ে আকাশের বাসায় চলে যায়। কিন্তু আকাশের বাসায় গিয়ে জানতে পারে আকাশ বাসায় যায়নি। বাসায় না পেয়ে গাড়ি নিয়ে এদিক-সেদিক পাগলের মতন খুঁজতে থাকে আকাশকে। কিন্তু কোথাও আকাশের দেখা মিলে না। অসংখ্য বার ফোন করে। কিন্তু ফোন প্রতিবারই বন্ধ আসে৷ তনু না খেয়ে না দেয়ে সেই বিকাল চারটা থেকে আকাশকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। রাতের বাজে এগারোটা। এখনো আকাশের দেখা মিলেনি। রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে আকাশের মা'য়ের কাছে ফোন করে জিজ্ঞাস করে আকাশ বাড়ি গিয়েছে কিনা। কিন্তু আকাশের মা ভয়ার্ত কন্ঠে জানায় আকাশ এখনো বাড়ি ফিরেনি। আকাশের মা'য়ের ও প্রচন্ড ভয় হচ্ছে আকাশকে নিয়ে৷ এতো রাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আকাশ বাড়ি ফিরেনি। হতাশাগ্রস্ত হয়ে ছেলে বাড়ি ফিরে আসার প্রত্যাশায় বসে আছে রহিমা বেগম। ঐ দিকে তনুর ভিতরে প্রচন্ড ভয় হচ্ছে আকাশকে নিয়ে। আবারো গাড়ি করে খুঁজতে শুরু করে আকাশকে। রাত বাজে বারোটা। এখনো অব্দি আকাশের খোঁজ মিলেনি। এতো খোঁজার পরেও না পেয়ে হতাশ হয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বাড়ি ফিরে আসে তনু। শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত। চোখের পানি গাল বেয়ে এখনো পড়ছে সেই বিকাল থেকে। বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করে। এমন সময় হুট করে তনু দেখে আকাশ তার রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। তনু আকাশকে দেখতে পেয়ে কোনো কথাবার্তা ছাড়া এক দৌড়ে আকাশের কাছে গিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশ কোনো কথাবার্তা বলছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তনু উপলব্ধি করতে পারে আকাশের মনে প্রচন্ড অভিমান জন্মেছে। অভিমান ভাঙ্গাতে আকাশের চোখে-মুখে অসংখ্য চুমু এঁকে দেয় তনু। কিন্তু তাও আকাশ কোনো কথাবার্তা বলে না। তনু বুঝতে পারে আকাশের রাগ এভাবে কমবে নিয়ে। আকাশের রাগ ভাঙ্গাতে হলে অন্য কিছু করতে হবে। হাত চে'পে ধরে আকাশকে নিয়ে সোজা ছাদে চলে যায়। এরপর ছাদের এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে পাশাপাশি বসে একেক বার একেকটা করে আকাশের রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে। কখনো আকাশের গালে চুমু খাচ্ছে। কখনো আকাশকে এটা সেটা বলে হাসানোর চেষ্টা করছে। এভাবে দুই ঘন্টা কেটে যায়। অবশেষে দুই ঘন্টার প্রচেষ্টার পর আকাশের রাগ ভাঙ্গে৷ তনুর কাছে পারস্য বিজয় করার মতন লেগেছে আকাশের রাগ ভাঙ্গানোটা। তনুর পাগলামি দেখে মুচকি হেঁসে দেয় আকাশ। তনুর মুখেও হাসি ফুটে উঠে আকাশের রাগ ভাঙ্গাতে পেরে। এমন সময় তনুর কাছে একটা ফোন আসে। কাঁধের মধ্যে ঝুলে থাকা ছোট সাইড ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে তনু। তখনি অপরপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠে,
--'দুই ঘন্টা আগে রোড এক্সিডেন্টে একজন লোক মা'রা গিয়েছেন। যিনার শরীর এক্সিডেন্টে একদম ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। আমরা কোনো ভাবেই সনাক্ত করতে পারছি না উনি কে। লাশের কাটা আলাদা একটা হাত আর থেঁতলে যাও দেহটা শুধু পড়ে রেয়েছে। মাথার কোনো অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাইনি। তাই লাশের বিষয়ে কাউকে ইনফর্ম করতে পারছিলাম না। তবে আমরা উনাকে সার্চ করে শুরুত উনার একটা মানিব্যাগ পেয়েছি। যেখানে স্বর্ণকারের দোকানের একটা রিসিট ছিল। এছাড়া আর কোনো আইডেন্টিটি ছিল না। তাই আমরা রিসিটের দেওয়া নাম্বারে ফোন করেছিলাম। তখন উনি বললো উনাকে চিনে না। তবে কয়েকদিন আগে উনি কানের এক জোড়া দুল বন্ধক দিয়ে হাজার দশেক টাকা নিয়েছিল। এছাড়া উনার বিষয়ে আর কিছুই জানে না। কিন্তু একটু আগে ঘটনাস্থলে আমরা একটা ফোন খুঁজে পেয়েছি যেটা বন্ধ ছিল। তবে আমরা ফোনটা চালু করার পর দেখি আপনার নাম পার্টনার দিয়ে সেভ করা এবং আপনার নাম্বার অনেক গুলো মিসডকল। তাই আমরা আপনাকে ফোন করেছি। আপনি কি উনার কিছু হন?'
তনু লোকটার কথা শুনে পাশে তাকাতেই দেখে আকাশ নাই। তনু বুঝে ফেলে এতো সময় তার সাথে কেউ ছিল না। আকাশ দুই ঘন্টা আগেই রোড এক্সিডেন্টে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে। আর সে নিজে নিজেই এতো সময় একা একা বকবক করেছে। তনুর হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে যায়। সেই সঙ্গে তনু বিকট আওয়াজে এক চিৎকার মা'রে। মনে হচ্ছে যেনো কেউ তনুর বুকে ছু'রি ঢু'কিয়ে দিয়ে তার কলিজাটা জোরজবরদস্তি বের করে নিচ্ছে। পাগলের মতন জোরে জোরে চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করে। আর সেই সঙ্গে চিৎকার করে বলতে থাকে,
--'আকাশ প্লিজ ফিরে এসো। আমি তোমার সত্যিকারত্বে ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনি। তুমি আমায় উচ্চ আসনে বসিয়েছো। আর আমি তোমায় মৃত্যু উপহার দিয়েছি। আজ আমি জেনে গেছি তুমি সেদিন টাকা গুলো কোথা থেকে পেয়েছিল। আমায় অনেক বড় সারপ্রাইজ দিয়েছিলে তুমি সেদিন। আর পরিশেষে আমিও তোমায় সারপ্রাইজ দিলাম অপমান আর লাঞ্ছনা করে। আকাশ প্লিজ ফিরে এসো। আমি তোমার পা ধরে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেতে চাই। আমি তোমার সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই। প্লিজ ফিরে এসো আকাশ..
তনু চিৎকার করে কান্না করছে আর পাগলের মতন প্রলাপ করছে। তনু হয়তো ভুলে গেছে যে একবার সৃষ্টি কর্তার ডাকে সাড়া দেয় সে আর কখনোই ফিরে আসে না। সঠিক বেলা ফুরিয়ে গেছে। অবেলায় হাজারবার চাইলেও সেটা আর কাজে দিবে না। আর একটা প্রবাদ আছে। সব কিছুর সাথে আপোষ চললেও নিজের আত্মসম্মানের সাথে কখনো আপোষ চলে না। কিন্তু তনু আকাশের সেই আত্নসম্মান টাকেই সকলের সামনে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। সেজন্য আকাশ অভিমান করে মৃত্যুর সাথে আপোষ করেছে। আর কখনো সে ফিরবে না। হারিয়ে গেছে সে। আর অবেলায় মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে তনু।
Tags
উপন্যাস