অবেলায় তুমি বাংলা উপন্যাস | bangla uponnas part 3
অফিসের ম্যানেজার খালেক সাহেব তনুকে বাঁচাতে আসলো, কিন্তু তনু তাকেই উল্টো ঝাড়ি দিতে শুরু করেছে। খালেক সাহেবের মতন আকাশ ও থতমত খেয়ে যায় তনুর কথাবার্তা শুনে। কারণ সে তনুকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরে রেখেছিল। তনুর তাকে এখন বাটাম দেওয়ার কথা। কিন্তু তনু তা না করে উল্টো অফিসের ম্যানেজার খালেক সাহেবকেই বকছে। খালেক সাহেব আর আকাশ দু'জনেই হতভম্ব হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনুর কথাবার্তা সব কিছুই কেমন যেনো তাদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে খালেক সাহেবের। তনুকে বাঁচানোর কারণে তিনি যে উল্টো প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবেন সেটা খালেক সাহেব কখনো ভাবতেও পারেনি। তনুর প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে কি জওয়াব দিবেন খালেক সাহেব সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গিয়েছে খালেক সাহেব। সেই সঙ্গে মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেনো কেউ খালেক সাহেবের মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। বোবার মতন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে খালেক সাহেব। অপরদিকে খালেক সাহেবের কাছে কোনো উত্তর না পেয়ে তনু খালেক সাহেবকে আরো রাগান্বিত কন্ঠে বলেন,
--'কি হলো কোনো উত্তর দিচ্ছেন না কেন খালেক সাহেব? আপনি কোন সাহসে ওর কলারে হাত দিয়েছেন উত্তর দিন।'
খালেক সাহেব এবার মুখ খুলে উত্তর দেয়।
--'ম্যাডাম আমি কেবিনের দরজা খুলা মাত্রই দেখতে পেলাম এই বেয়াদবটা জোরপূর্বক আপনাকে জড়িয়ে ধরে অশ্লীলতা করার চেষ্টা করছিল। তাই আমি ওর শার্টের কলার চেপে ধরেছি।'
--'সে আমার সাথে অশ্লীলতা করলে তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?'
--'ম্যাডাম আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আপনি আমার অফিসের ম্যাডাম। আপনার বিপদ হলে এগিয়ে আসা আমার দায়িত্ব।'
--'আচ্ছা মানলমা আপনি আমাকে বাঁচাতে এসেছেন। কিন্তু আপনাকে কে বলেছে সে আমার সাথে জোরপূর্বক অশ্লীলতা করছিল? বা জোরপূর্বক আমার সাথে অসভ্যতা করার চেষ্টা করছিল?'
--'ম্যাডাম কেউ বলেনি। তবে আমি নিজেই তো দেখতে পেলাম সে আপনার সাথে অশ্লীলতা করতে চেষ্টা করছিল। তাই তো তার সাথে এমনটা করেছি।'
--'আপনার দেখার গুষ্টি মা'রি। সে আমার সাথে যাই করবে করুক, কিন্তু আপনার কোনো রাইট নেই ওর গায়ে হাত দেওয়ার।'
--'ম্যাডাম আপনার কথার মানে টা আমি বুঝে উঠতে পারছিনা! দোষ করলো সে। আর আমি আপনাকে বাঁচালাম। আপনি কথা শুনালে তো তাকে শুনানো উচিত। কিন্তু আপনি তা না করে উল্টো আমায় কেন কথা শুনাচ্ছেন? আমি তো কোনো দোষ করিনি ম্যাডাম। দোষ তো সে করেছে। আর আমি তো আপনার উপকার করেছি।'
--'খালেক সাহেব নিজের লিমিটে থাকেন। আপনাকে কেউ বলেনি আমার উপকার করার জন্য। আর না আমি চেঁচিয়ে কারোর কাছে কোনো সাহায্য চেয়েছি। সে আমার সাথে যা ইচ্ছে হয়েছে করেছে। আর ভবিষ্যতে যা ইচ্ছে হবে তাই করবে। তার ইচ্ছে হলে সে হাজার বার আমায় জড়িয়ে ধরবে। তার ইচ্ছে হলে সে হাজার বার আমার গায়ে হাত দিবে। তার ইচ্ছে হলে সে হাজার বার আমার সাথে জোড়াজুড়ি করবে। তার ইচ্ছে হলে সে হাজার বার আমার সাথে অসভ্যতা করবে। মোট কথা তার যা ইচ্ছে হবে সে আমার সাথে করবে। কিন্তু আপনার তো কোনো অধিকার নাই তার ইচ্ছার মাঝে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর। কারণ হি ইজ মাই হাজবেন্ড। তার পুরোপুরি অধিকার আছে আমার শরীরে স্পর্শ করার। কিন্তু আপনি কোন অধিকারে আকাশের শার্টের কলার চেপে ধরেছেন তাও আবার আমার চোখের সামনে?'
খালেক সাহেব তনুর কথা শুনে পুরো আবুল হয়ে যায়। তনুর কথা শুনে প্রথমে কি অবাক হয়েছে, তার চাইতে তিনগুণ বেশি অবাক হয়েছে বর্তমানে তনুর মুখে আকাশের সম্পর্কে জানতে পেরে। অফিসের একজন সাধারণ এ্যাসিস্ট্যান্ট বা নিম্নমানের কর্মচারী যে অফিসের ম্যাডামের স্বামী হতে পারে সেই বিষয়ে খালেক সাহেবের আগে কোনো ধারণাই ছিল না। খালেক সাহেব পুরোদমে অবাক। শ্বাসপ্রশ্বাস উল্টো-পাল্টা ভাবে চলতে শুরু করেছে খালেক সাহেবের। বীর বাহাদুর সাজতে গিয়ে যে নিজের পায়েই কুড়াল মে'রেছে সেটা খালেক সাহেবের এখন বুঝে এসেছে। চাকুরী বাঁচাতে করুন সুরে তনুকে বলে,
--'ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না আকাশ সাহেব আপনার হাজবেন্ড! ম্যাডাম আমার মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ ম্যাডাম এবারের মতন আমায় ক্ষমা করে দিন।'
--'ক্ষমা আমার কাছে নয়। ক্ষমা চাওয়ার হলে আকাশের কাছে চান।'
--'আকাশ সাহেব আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি সত্যিই জানতাম না আপনি ম্যাডামের হাজবেন্ড। আমি ভেবেছি আপনি ম্যাডামের সাছে দুনম্বরী কিছু করার চেষ্টা করছেন। তাই না বুঝে আপনার শার্টের কলার ধরে ফেলেছি৷ আকাশ সাহেব আমায় এবারের মতন ক্ষমা করে দিন।'
আকাশের মুখে কোনো কথাবার্তা নেই। খালেক সাহেবের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে সে। খালেক সাহেব আকাশকে কলার চেপে ধরে অপমান করায় তনু যা রিয়াকশন করেছে তা দেখে আকাশ হুঁশ- জ্ঞান হারিয়ে বসেছে। তনু আকাশের বিষয়টা বুঝতে পেরে খালেক সাহেবকে চলে যেতে বলে। খালেক সাহেব আর এক সেকেন্ড ও দেরি না করে তনুর কথা মতন কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। খালেক সাহেব কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তনু আকাশকে বলে,
--'আপনার আবার কি হলো? আপনি আমার দিকে এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন?'
তনুর কথায় আকাশের হুঁশ ফিরে আসে। এতো সময় আকাশ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। তনুর প্রশ্নে আকাশ স্বাভাবিক হয়। নরম গলায় উল্টো তনুকে প্রশ্ন করে,
--'আচ্ছা তুমি তো আমার উপরে প্রচন্ড রেগে ছিলা। একটু আগেই বললা আমাকে তোমার চাই না। আমাকে তোমার আর দরকার নাই। কিন্তু তুমি হুট করেই স্বামী ভক্ত হয়ে গেলা কি করে? যেই না খালেক সাহেব আমার কলার চেপে ধরেছে, তখনি তুমি রেগেমেগে ফায়ার হয়ে গেলা। কাহিনী কি তনু?'
--'কাহিনী কিছুই না। আর না আমি স্বামী ভক্ত।'
--'তাহলে একটু আগে আমার কারণে খালেক সাহেবের সাথে রেগে যাওয়া এবং খালেক সাহেবকে আমাদের বিষয়ে যেসব বললা সেসব কি ছিল?'
--'আকাশ সাহেব আপনাকে একটা কথা বলি। আমার বলা কথা গুলো সত্যি। আর আমি সেজন্যই কথা গুলো বলেছি। তবে রেগে যাওয়ার পিছনে অন্য একটা কারণ আছে।'
--'কি কারণ তনু?'
--'কারণ হচ্ছে আমাদের মাঝে যেই সমস্যাটা হয়েছে সেটা আমাদের দু'জনের ব্যক্তিগত। কিন্তু তাই বলে যে আমি আপনার মতন মানুষকে সবার সামনে অপমান করবো বা সকলের সামনে অপমানিত হতে দিব এটা তো হতে পারে না। ব্যক্তিগত সমস্যা সেটা ব্যক্তিগতোই। এটাকে কেন্দ্র করে আপনার সম্মানে আঘাত করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে আপনি দেখে হয়তো আমায় অপমান করতে পেরেছিলেন সকলের সামনে, কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না সেটা করা। তবে হ্যাঁ আমিও আগের বার অফিসের সকলের আপনাকে অপমান করেছি। যেটা আমার মস্ত বড় ভুল ছিল। তবে তাই বলে যে প্রতিবার একই ভুল করবো সেটা তো হতে পারে না। আমার ভিতরেও মনুষ্যত্ব বলতে কিছু আছে। আমি আগের বার নিজের মনুষ্যত্বকে কাজে না লাগালেও এবার কাজে লাগিয়েছি। আর আপনি আমার সাথে যেটা করেছেন সেটা আমার নিজের কর্মফলের কারণেই হয়েছে। কিন্তু জানেন আপনাকে আমি অফিসের সকলের সামনে অপমান করলেও আপনার সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার ক্যাপাসিটি হয়তো আমার আছে। আমি অফিসের সকল কর্মচারীকে এক জায়গায় করে যদি বলি আপনি আমার হাজবেন্ড, তাহলে আপনার দিকে হয়তো আর কেউ বাঁকা চোখে তাকানোর সাহস করবে না। আমি কোনো না কোনো ভাবে আপনার উপর থেকে দাগটা উঠাতে পারবো। কিন্তু আপনি আমায় যেই সকল মানুষের সামনে অপমান করেছেন, সেই অপমানের দাগ আমার গা থেকে কখনোই সরবে না। সব সময় আমার গায়ে সেটা লেগে থাকবে। সব সময় আমাকে তাদের সামনে লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকতে হবে। আমি আর কখনো তাদের সাথে আগের মতন করে সসম্মানে কথাবার্তা বলতে পারবো না। সেই সঙ্গে আমি তাদের সাথে কথা বলতে গেলেই আমার ভিতরে একটা লজ্জা বোধ কাজ করবে।'
তনুর কথা শুনে আকাশ আবারো রিয়েলাইজ করে সে যেটা করেছে সেটা অনেক বড় ভুল ছিল। তার ঐরকমটা করা কখনোই উচিত হয়নি। হ্যাঁ তনুও তার গায়ে দাগ লাগিয়েছে৷ তবে তনু চাইলে সেটা তার গা থেকে সত্যিই তুলেও ফেলতে পারে। কারণ এই অফিসের বস তনু। আর সবাই তনুর কর্মচারী। এছাড়া তনুর কথায় এই অফিসের অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আকাশ যেটা করেছে, সেটাতে করে তনুর গা থেকে কখনোই দাগ যাবে না। কারণ পার্টিতে যারা ছিল তারা তনুর কর্মচারী নয়। তারা ছিল তনুর বিজনেস পার্টনার। আকাশ বুঝতে পারছে না কি করবে৷ সেই সঙ্গে তনুর মন-খারাপ দেখে আকাশের আরো খারাপ লাগছে তনুর জন্য। তনুর মন-খারাপ আকাশ বিষয়টা কোনো ভাবেই মানতে পারছে না। আকাশ কি করবে ভেবে না পেয়ে আবারো তনুকে জড়িয়ে ধরার পরিকল্পনা করে। কারণ এতে করে হয়তো তনুর মন-খারাপটা ভালো হতে পারে। আসলে প্রিয়-মানুষটা যতোই অভিমান করুক না কেন, ভালোবেসে তাকে একবার বুকে টেনে নিলে অভিমানের মাত্রা অনেকটা কমে যায়। আকাশ নিজের পরিকল্পনা মতন তনুকে আবারো জড়িয়ে ধরার জন্য সামনে এগোয়, তখনি তনু আকাশকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। কারণ তনু আকাশের পরিকল্পনা আগেই বুঝে ফেলেছে। তনু আকাশকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেওয়ার পর আকাশকে বলে,
--'আকাশ সাহেব আমাকে আপনার খেলনার পুতুল বলে মনে হয় তাই না? যখন ইচ্ছে হবে আমার শরীরে কাঁদা ছুঁড়বেন। আবার যখন ইচ্ছে হবে আমার এই কাঁদা মাখা শরীর টাকে নিজের কাছে টেনে নিবেন? দেখুন এসব বন্ধ করুন। আমার এসব আর ভালো লাগছে না। আপনি প্লিজ নিজের কাজে গিয়ে মন দিন। তাতেই আমার কিছুটা স্বস্তি ফিল হবে। অতিরিক্ত কিছু করার কোনো প্রয়োজন নেই। প্লিজ এবার আপনি যান।'
আকাশ তনুর কথা শুনে সমস্ত পরিকল্পনা বাদ দিয়ে চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ডেস্কে চলে যায়। মনটা তারো ভিষণ খারাপ। চেহারা মলিন করে চেয়ারের উপরে বসে শান্ত মাথায় ভাবতে থাকে কি ভাবে সব কিছু আবার আগের মতো করা যায়। ভাবতে ভাবতে অনেকক্ষন পর আকাশের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। আকাশ ঠিক করে বুদ্ধিটা সে কাজে খাটাবে। তবে সেটা এখন নয় সঠিক সময়ে। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে যায়। অফিসে লাঞ্চ ব্রেক দেয়। আকাশ নিজের ডেস্কেই বসে আসে। আর তনুকে নিয়ে ভাবছে। কখন তনু তাকে ডাকবে। না হয় তনু খাওয়ার জন্য কেবিন থেকে বের হবে। আর সে তনুকে এক নজর দেখবে। কিন্তু লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তনু আকাশকে ডাকে না। এবং সে নিজেও কেবিন থেকে বের হয় না। আকাশ বুঝতে পারে তনুর হয়তো মন ভিষণ খারাপ। আকাশ ডেস্ক থেকে উঠে সোজা কেন্টিনে চলে যায়। এরপর কেন্টিন থেকে নিজের টাকায় তনুর জন্য এক প্যাকেট খাবার কিনে তনুর কেবিনে যায়। কেবিনে গিয়ে দেখে তনু ডেস্কের উপরে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আকাশ কেবিনে ঢুকে তনুকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে খাবারের প্যাকেট টা ডেস্কের এক পাশে রেখে তনুর মাথায় আলতো করে হাত দিয়ে তনুকে ডেকে বলে,
--'তনু লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। আমি তোমার জন্য খাবার এনেছি। তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার গুলো খেয়ে নাও।'
তনু ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে আকাশকে বলে,
--'আমি কি আপনাকে বলেছি আমার জন্য খাবার আনতে?'
--'নাহ বলোনি।'
--'তাহলে কেন এনেছেন?'
--'এমনিতেই।'
--'দেখুন আমি বাচ্চা নই। আমাকে এক্সট্রা কেয়ার দেখাতে আসবেন না। অনুগ্রহ করে খাবার গুলো নিয়ে গিয়ে নিজেই গিলে খান।'
তনুর কথায় আকাশের চরম মন খারাপ হয়। তবে আকাশ সেটা প্রকাশ করে না। তনুর কথায় চুপ করে খাবারের প্যাকেট টা ডেস্ক থেকে উঠিয়ে নিয়ে চলে আসতে ধরে। এমন সময় পিছন থেকে তনু আকাশকে ডেকে বলে,
--'আচ্ছা শুনেন খাবার গুলা যেহেতু কষ্ট করে এনেছেন তাহলে আর দ্বিতীয়বার কষ্ট করে নিয়ে যেতে হবে না। ডেস্কের উপরেই আবার রেখে যান। আমি খেয়ে নিব নে। আর এই যে নিন খাবারের টাকা।'
তনু ব্যাগ থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে ডেস্কের উপরে রাখে। আকাশ তনুর কথা অনুযায়ী ডেস্কের উপরে খাবারটা রাখে। তবে যখন টাকা নেওয়ার পালা আসে তখন সে তনুকে বলে,
--'তনু টাকা টা না নিলে হয় না?'
--'আকাশ সাহেব ফ্রি-তে খাওয়ার স্বভাব আমার খুব কম। তার উপরে আপনার পকেটের টাকা অপচয় করে খাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। টাকাটা নিন। আর আপনি দুপুরের খাবার খেয়েছেন?'
আকাশ তনুকে খেয়েছে বলে মিথ্যা জওয়াব দেয়। সত্যিকারত্বে আকাশ কিছুই খায়নি। আসলে আকাশের কেন জানি কিছু ইচ্ছে করছে না। তাই সে কোনো কিছুই খায়নি। কেন্টিন থেকে তনুর জন্য খাবার নিয়ে সোজা ফিরে এসেছে। তবে কোনো একটা অজানা কারণে আকাশ তনুকে মিথ্যা বলে ডেস্কের উপরে খাবারটা রেখে তনুর দেওয়া টাকাটা নিয়ে সে চলে আসে। দেখতে দেখতে বিকাল হয়৷ অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে। সবাই অফিস শেষ করে যে যার মতন বাড়ি চলে যাচ্ছে। আকাশ ও অফিস ছুটি হওয়ায় চলে যায়। পরেরদিন যথারীতি আকাশ অফিসে চলে আসে। অফিস শুরু হয়ে গেছে। তনুও অফিসে চলে এসেছে। অফিস শুরু হওয়ার ঘন্টা খানিক পর তনুর কাছে একটা ফোন আসে। তনু ফোনটা রিসিভ করে। অপরপাশের মানুষটা তনু ফোন রিসিভ করার পর যা বলে তা শুনে তনু পুরোদমে চমকে উঠে...
তনুর কাছে একটা ফোন আসে। তনু ফোনটা রিসিভ করে। অপরপাশের মানুষটা তনু ফোন রিসিভ করার পর যা বলে তা শুনে তনু পুরোদমে চমকে উঠে। তনু বুঝে উঠতে পারছে না ফোনের অপরপাশের মানুষ টাকে তার বিয়ের কথা কে বলেছে। এই বিয়ের বিষয়ে তো তেমন কেউ জানে না। সে এবং আকাশ আর ছাড়া বাহিরের একমাত্র খালি খালেক সাহেব জানেন। তনু আশ্চর্য হয়ে ফোনের অপরপাশের মানুষটাকে জিজ্ঞাস করে,
--'কে বলবে আর আপনার হাজবেন্ড আকাশ সাহেব বলেছেন। উনি গতকাল আমার কাছে এসেছিলেন। তিনিই আপনার আর তিনার কথা বলেছেন। এছাড়া পার্টির বিষয় নিয়ে নাকি আপনার মন ভিষণ খারাপ। দেখুন এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছুই নেই। তবে হ্যাঁ সেদিনের বিষয়টা নিয়ে আমরা অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ছিলাম। তবে গতকাল আকাশ সাহেব আমার কৌতূহল দূর করে দিয়েছেন। আপনি ঐ বিষয়টা নিয়ে একদম টেনশন করবেন না। আমরা সত্যিটা জেনে গেছি। আকাশ সাহেব আমাকে সত্যিটা জানিয়ে দিয়েছে।'
--'কি সত্যি জেনেছেন আসাদ সাহেব? আর আকাশ আপনাকে কি বলেছে?'
--'আরেহ ঐ আরকি। আপনাদের দু'জনের মধ্যে নাকি সেদিন একটু রাগারাগি হয়েছিল। তাই আকাশ সাহেব সেদিন নাকি রেগে গিয়ে উল্টো-পাল্টা বলেছিল।'
--'হুম।'
--'আচ্ছা শুনুন এবার আর মন খারাপ করে থাকবেন না। সেদিনের বিষয়টা নিয়ে আপনার অসম্মান হয়েছে ভেবে আকাশ সাহেবের ও ভিষণ মন খারাপ। উনি গতকাল যখন আমার সাথে কথা বলছিল, তখন উনার চেহারা একদম মলিন হয়ে ছিল। তাই অনুরোধ করবো মন খারাপ করে থাকবেন না।'
--'আরেহ নাহ মন খারাপ করে নেই।'
--'যাক তাহলে তো ভালো। তবে আপনার উপর কিন্তু একটা অভিযোগ আছে তনু ম্যাডাম, সরি মিসেস হবেন। কারণ এখন তো আকাশ সাহেবের বউ আপনি। তাই মিসেস বলেই ডাকবো এখন থেকে।'
--'আমি আবার কি করেছি আসাদ সাহেব!'
--'কি করেন নি সেটা বলেন। আপনি আর আকাশ সাহেব বিয়ে করে নিয়েছেন, অথচ আমরা সেই বিষয়ে কিছুই জানি না!'
--'আসলে আসাদ সাহেব আমরা বিয়ের বিষয়টা গোপন রাখবো বলে ঠিক করেছিলাম। তাই কাউকেই জানানো হয়নি। ভেবেছিলাম সঠিক সময় আসলে সবাইকে জানিয়ে আবারো জাঁকজমক ভাবে বিয়ে করবো। তাই আরকি।'
--'থাক হয়েছে। আপনারা যদিও বা চাননি কাউকে বিয়ের বিষয়ে জানাতে, কিন্তু তারপরেও আমরা এখন সকলেই জেনে গিয়েছি। এবার ভালো একটা দিনক্ষণ ঠিক করে বিয়ের অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলুন। বহুদিন হলো ভালো কোনো বিয়ে খাচ্ছি না। এবার আপনাদের উছিলায় ভালো একটা খাওয়া হবে।'
--'অবশ্যই আসাদ সাহেব। খুব জলদিই বিয়ের অনুষ্ঠানটা করবো।'
--'হুম দোয়া রইলো আপনাদের জন্য। আর এবার তাহলে ফোনটা রাখছি। অফিসের বাহিরে যেতে হবে আমাকে একটু।'
--'আচ্ছা।'
আসাদ সাহেব ফোন কেটে দেয়। আসাদ সাহেবের সাথে কথা শেষ করে তনু ফোন রেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে জলদি পা চালিয়ে সোজা আকাশের কাছে চলে যায়। আকাশ তনুকে কেবিন থেকে বেরিয়ে চালু পায়ে হেঁটে তার কাছে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। চুপ করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। অপরদিকে তনু আকাশের কাছে এসে আকাশকে প্রশ্ন করে,
--'আপনি গতকাল কোন সময় আসাদ সাহেবের কাছে গিয়ে আসাদ সাহেবের সাথে দেখা করেছেন?'
--'অফিস ছুটির পর।'
--'ওহ ভালো। তবে আপনি এই কথা কেন বলেছেন যে আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে?'
--'আসলে আমার জন্য তোমার সম্মান নষ্ট হয়েছে। তাই আসাদ সাহেবকে ঐ কথাটা বলেছি। যাতে করে উনারা তোমাকে ভুল না বুঝে।'
--'ওহ আচ্ছা। কিন্তু আপনি ঐ দিনের কথাটা নিয়ে মিথ্যা কেন বলেছেন, যে আপনার সাথে আমার রাগারাগি হওয়ায় আপনি ওসব বলেছিলেন?'
--'মিথ্যা বলি নাই। সেদিন তোমার সাথে আগে না হোক পরে ঠিকই রাগারাগি হয়েছে।'
--'হুম আচ্ছা মানলাম এটা সত্যি। কিন্তু আমি তো আপনাকে বলিনি আমার সম্মান যেটা নষ্ট করেছেন সেটা ফিরিয়ে দিন। তাহলে আপনি কেন এতসব কিছু করতে গেলেন?'
--'কারণ তোমার মুখে আমি সব সময় হাসি দেখতে চাই। তোমার মলিন চেহারা আমার একদম ভালো লাগে না। আমি গত পরশু দিনের ঘটনার পর থেকে দেখছি তোমার মনের অবস্থা ভালো নেই। আর সেটা একমাত্র হয়েছে খালি আমার কারণে। তাই আমি এতসব কিছু করেছি।'
--'আকাশ সাহেব আপনি আমার মন খারাপ হয় মতন কাজ ও করবেন। আপনার সেই কাজের কারণে আমার মন খারাপ হলে আবার আপনার নিজের ও খারাপ লাগে। বাহ বেশ ইন্টারেস্টিং তো ব্যাপার টা।'
আকাশ চুপ করে থাকে। তনুর কথা শুনে কেমন যেনো লজ্জা কাজ করছে আকাশের ভিতরে। আকাশ লজ্জায় নজর সরিয়ে নেয় তনুর দিক থেকে৷ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তনু আকাশের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,
--'হয়েছে জনাব আর লজ্জা পেতে হবে না। আমি আপনাকে লজ্জা দিতে কথাটা বলিনি। যাস্ট এমনিতেই বলেছি। তাই আর লজ্জা পেতে হবে না। এবার চলেন আমার সাথে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে।'
তনুর কথায় শুনে আকাশ তনুকে জিজ্ঞাস করে,
--'কোথায় যাবো? আর কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তনু?'
--'সেটা গেলেই দেখতে পাবেন। এবার চলেন।'
আকাশ এতো সময় চেয়ারে বসা ছিল। তনুর কথা মতন উঠে দাঁড়ায়। আকাশ উঠে দাঁড়াতেই তনু আকাশের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে অফিসের সকল কর্মচারীদের সামনে নিয়ে যায়। কর্মচারী সবাই তনু আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে তনুর সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ ও নাই। তনু আকাশকে সকলের সামনে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার দেখানোর দিন যেভাবে আকাশের হাত পেঁচিয়ে ধরেছিল সেভাবে আজকেও আকাশের হাত পেঁচিয়ে ধরে। সবাই তনুর কাজে রীতিমতো অবাক। তনু সবাইকে আরো অবাক করে দিয়ে বলে,
--'কয়েক মিনিটের জন্য কাজ বন্ধ রেখে সবাই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আমি সেদিন আকাশকে অহেতুক অপমান করেছিলাম। বেচারা এক দিনে সাতটা ফাইল কমপ্লিট করেছে। সেই সাতটা ফাইলের মধ্যে একটা ফাইল ছাড়া কোথাও কোনো ভুল হয়নি তার। আর যেই ফাইলে ভুল হয়েছে সেটাও একদম অতি সামান্য ছিল। কিন্তু সেদিন আমার মাথা কোনো একটা কারণে খারাপ ছিল। যার কারণে আমার সমস্ত রাগ আমি আকাশের উপরে ঝেড়েছি। তাই আপনারা আগামীতে আর কখনো কেউ আকাশের দিকে বাঁকা চোখে তাকাবেন না। তাহলে কিন্তু আমার চাইতে ভয়ানক কেউ হবে না বলে দিলাম। আর আরেকটা কথা। আপনারা আকাশের দিকে বাঁকা চোখে তো তাকাবেন এই না, সেই সঙ্গে আজ থেকে আকাশকে সবাই সম্মান দিয়ে কথা বলবেন। কারণ সে আমার অনেক,অনেক,অনেক কাছের একজন মানুষ। বলতে পারেন সে আমায় হৃদয়ে বসবাসকারী একজন লোক। তার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। তাই সকলকে যেটা বলেছি সেটা মাথায় রাখবেন। এবার সবাই কাজে মন দিন।'
তনু কর্মচারীদেরকে আকাশের বিষয়ে কিছু কথা বলে আকাশের হাত ধরে আকাশকে নিয়ে নিজের কেবিনের দিকে চলে যায়। আকাশ অনেকটা আশ্চর্য হয়। তবে সে কিছুই বলে না। এদিকে কর্মচারীরা তনু চলে যাওয়ার পর একে অপরের সাথে কানাঘুষা শুরু করে দেয় আকাশ তনুর কি হয়। কেন তনু আকাশকে এতো প্রায়োরিটি দিলো। কেন তনু জোর গলায় সবাইকে বললো আকাশকে সম্মান দিতে। আর কেনোই বা তনু আকাশের হাত ঐ ভাবে ধরে ছিল। একেক জন অন্য জনের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে শুরু করে৷ কর্মচারীদের কানাঘুষা গুলো ম্যানেজার খালেক সাহেব শুনতে পায়। তাই খালেক সাহেব সবাইকে সতর্ক করে বলে,
--'প্রতিটা নারীর জীবনে একজন খুব মূল্যবান মানুষ থাকে৷ ম্যাডামের জীবনের মূল্যবান মানুষটা হচ্ছে আকাশ মাহমুদ সাহেব। তাই ম্যাডাম উনাকে নিয়ে এতোকিছু বলেছে। আপনারা এবার কানাঘুষা বন্ধ করে যে যার কাজে মন দিন। না হয় আপনাদের নামে গিয়ে ম্যাডামের কাছে নালিশ করে আসবো।'
খালেক সাহেবের কথা শুনে সবাই কানাঘুষা বন্ধ করে কাজে মন দেয়। অপরদিকে তনু আকাশকে সঙ্গে করে নিয়ে নিজের কেবিনের ভিতর এসে থেকে দরজা আঁটকে দেয়। তারপর আকাশকে তনুর চেয়ারের সামনে নিয়ে গিয়ে বলে,
--'আমার চেয়ার টাতে বসো।'
আকাশ পুরো থতমত খেয়ে যায় তনুর কথা শুনে। কারণ প্রথমত তনু তাকে ভিতরে নিয়ে এসে দজরা বন্ধ করে দিয়েছে। তার উপরে এখন আবার তুমি করে বলছে। আকাশ তনুর মতিগতি কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কি করতে চাইতে তনু। বেকুবের মতন চেহারা করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। পাশ থেকে তনু আকাশকে তার দিকে বেকুবের মতন তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেই আকাশকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। তারপর আকাশকে প্রশ্ন করে,
--'কি হলো অবাক হচ্ছো যে?'
--'অবাক করছো তাই অবাক হচ্ছি। শুরুতে কর্মচারীদের সামনে নিয়ে গিয়ে আমার নামে গুণগান করলে। সাথে আরো সকলকে বললে আমাকে সম্মান দিতে। এরপর এখন সঙ্গে করে কেবিনে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করার পাশাপাশি তুমি করে বলছো। এতোকিছু দেখে অবাক তো হবোই।'
--'হুম অবাক তো হবাই। আচ্ছা আরেকটু অবাক করি তোমাকে?'
--'মানে!'
--'তুমি চোখ বন্ধ করো। তারপর মানেটা বুঝতে পারবে।'
--'আজব তোমার মানে বুঝার জন্য চোখ কেন বন্ধ করবো?'
--'আরেহ তোমাকে চোখ বন্ধ করতে বলেছি তুমি করো। আমি বললে তারপর চোখ খুলবে।'
আকাশ আর কথা না বাড়িয়ে তনুর কথা মেনে চোখ বন্ধ করে। আকাশ চোখ বন্ধ করতেই তনু ডেস্কের উপরে থাকা কলমদানির মধ্যে একটা ফল কাঁটার ছুরি ছিল যেটা হাতে তুলে নেয়। এরপর ছুরিটা আকাশের গলায় চেপে ধরে আকাশকে চোখ খুলতে বলে। আকাশ তনুর কথায় চোখ খুলে দেখে তনু তার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ধরে আছে। আকাশ চোখ বড় বড় করে আশ্চর্য হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকে। আর তনু আকাশের আশ্চর্য হয়ে তাকানো দেখে জোরে জোরে পৈচাশিক ভাবে হাসতে আরম্ভ করে। তনুর হাসি দেখে মনে হচ্ছে তনু এই দিনটার জন্য বহু সময় ধরে অপেক্ষা করে বসে ছিল...
তনু ডেস্কের উপরে থাকা কলমদানির মধ্যে থেকে ফল কাঁটার ছুরিটা নিয়ে আকাশের গলায় চেপে ধরে আকাশকে চোখ খুলতে বলে। আকাশ তনুর কথায় চোখ খুলে দেখে তনু তার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ধরে আছে। আকাশ চোখ বড় বড় করে আশ্চর্য হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকে। আর তনু আকাশের আশ্চর্য হয়ে তাকানো দেখে জোরে জোরে পৈচাশিক ভাবে হাসতে আরম্ভ করে। তনুর হাসি দেখে মনে হচ্ছে তনু এই দিনটার জন্য বহু সময় ধরে অপেক্ষা করে বসে ছিল। আকাশ পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে তনুর আচরণে। বুকের ভিতরে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতন উথাল-পাতাল করতে শুরু করেছে আকাশের। চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তেই তনু ছুরিটা চালিয়ে দিয়ে আকাশের নিশ্বাস বন্ধ করে দিতে পারে। আকাশের কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। আকাশ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার তাড়নায় নড়াচড়া করতে থাকে। আকাশকে নড়াচড়া করতে দেখে পাশ থেকে তনু আকাশকে বলে,
--'নড়াচড়া করিস না। তাহলে আরো কিছুটা সময় বেশি বাঁচতে পারবি। না হয় নড়াচড়া করলে রাগের মাথায় তোর উপরে এখুনি চালিয়ে দিব।'
আকাশ নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় তনুর কথায়। এরপর করুণ সুরে তনু জিজ্ঞাস করে,
--'তনু আমার সাথে কেন তুমি এমনটা করছো? আমি তো অনেক বড় কোনো অন্যায় করিনি তোমার সাথে। আর যেটা করেছি সেটার জন্য তো তুমি আমাকে শাস্তি দিয়েছো। তাহলে কেন আবারো এমন করছো তুমি আমার সাথে?'
--'কারণ তোকে না মা'রা অব্দি আমার শান্তি হবে না। আর তুই আমার সাথে যেই অন্যায়টা করেছিস সেটা তোর কাছে সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে নয়। তাই তোকে এবার সাজা পেতে হবে। আমি তোকে দুনিয়ায় কোলাহল থেকে মুক্ত করে দিব। তোর মতন মানুষ দুনিয়ায় বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই।'
--'তনু প্লিজ এমনটা করো না। আমার বাসায় মা আর ছোট বোন আছে। আমার কিছু হলে ওরা না খেয়ে ম'রবে।'
--'ক্ষমাআমায় কর তুই। তোর অনুরোধ টা আমি রাখতে পারবো না। আর তোর মা-বোন না খেয়ে ম'রলে তাতে আমার কি? আমি তো প্রতিশোধ নিব'ই।'
আকাশের বুকের ভিতরটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। চোখের কোণে পানি এসে জমা হয়েছে। অবশ্য আকাশের ভয়টা নিজেকে নিয়ে নয়। ভয়টা হচ্ছে ছোট বোন আফিয়া এবং তার মা'কে নিয়ে। তার কিছু হলে তার মা-বোনের দেখাশোনা করার মতন কেউ নেই। আকাশ চোখের কোণে পানি নিয়ে আবারো তনু অনুরোধ করে বলে,
--'তনু আমায় না মা'রলে কি হয় না? আমি এতো জলদি ম'রতে চাই না। আমি অন্তত দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করার আগে মা আর বিশেষ করে আফিয়ার জন্য কিছু করে যেতে চাই। প্লিজ আমায় এবারের মতন ক্ষমা করে দাও।'
আকাশ তনুর কাছে অনুরোধ করার সময় এবার আকাশের চোখের কোণে জমে থাকা পানি গুলো নিজের অবস্থান ত্যাগ করে আকাশের গাল বেয়ে পড়তে থাকে। সাথে দাঁড়িয়ে থাকা তনু আকাশের চোখ বেয়ে পানি পড়তে দেখে হাতে থাকা ছুরিটা ফিক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দেয়। এরপর বানরের মতন টুকুস করে লাফিয়ে আকাশের কোলের মধ্যে বসে আকাশের গালে দু'হাত রেখে বলে,
--'এই পাগল তুমি কান্না করছো কেন? আমি তো তোমার সাথে এতো সময় ধরে মজা করছিলাম। আর দেখো তুমি কাঁদছে শুরু করেছো। আরে পাগল আমি তোমায় মা'রতে যাবো কেন বলো তো? তুমি কি আমার পাকা ধানে মই দিয়েছো নাকি? তাহলে কেন আমি তোমায় মা'রতে যাবো। আমি তো তোমার সাথে এতোটা সময় মজা করছিলাম। আর কাউকে মে'রে ফেলা কি এতো সহজ? অফিস ভর্তি মানুষ। আমার ভিতরে যদি ঐরকম কোনো কিছু থেকেই থাকতো, তাহলে আমি তোমায় অন্য কোথাও নিয়ে যেতাম। এই অফিসের মাঝে এসব করতাম না। আকাশ আমি সত্যিই মজা করেছি। আর তোমার উপরে গত পাঁচ বছর আগেরকার বিষয় নিয়ে এখন আমার আর কোনো অভিযান নেই। হ্যাঁ একটা সময় ছিল। তবে সেটা এখন শেষ হয়ে গিয়েছে। কারণ মানুষ বলতেই ভুল। তাছাড়া মাও বলেছে অতীতের বিষয় নিয়ে বর্তমানে রেষ মেটানোটা বোকামো। যা হয়েছে সেসব গত পাঁচ বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি তোমার উপরে আর রেগে নেই। আর একটু আগের সব কিছু ফাজলামো ছিল। এবার দেখি শান্ত হও।'
তনু আকাশের সাথে এতোটা সময় ফাজলামি করেছে কথাটা শুনে আকাশের স্বস্তি ফিরে আসে। আকাশের দুশ্চিন্তা কমে যায়। তবে সে চুপ করে থাকে। কোনো প্রকার কথাবার্তা বলেনা তনুর সাথে। ভিতরে প্রচন্ড অভিমান জন্মায় তনুর উপরে আকাশের। তনু আকাশকে চুপ করে থাকতে দেখে বুঝে ফেলে আকাশের ভিতরে অভিমান জন্মেছে। আকাশের অভিমান কমাতে তনু নিজেই দু'হাত দিয়ে আকাশের চোখের পানি মুছে দেয়। কিন্তু আকাশের তাও কোনো রেসপন্স নেই। আগের ন্যায় চুপ করে আছে সে। মনে হচ্ছে যেনো আকাশের শরীরে জংকার ধরেছে।
একদম শান্তশিষ্ট হয়ে আছে আকাশ। পুতুল যেমন চুপ করে থাকে। আকাশ ও ঠিক একই পাবে পুতুলের বৈশিষ্ট্যকে বহন করে চুপ করে আছে। আকাশের এমন চুপসে থাকার কারণ ফাজলামোর একটা লিমিটেশন থাকা উচিৎ। ফাজলামো বা দুষ্টামি মানুষ মুখের মার্জিত ভাষায় করে। না হয় অন্য ভাবে করলে সেটার লাজ লেহাজ থাকতে হয়। কিন্তু তনু যেটা করেছে সেটা ফাজলামো বা দুষ্টামির কাতারে পড়ে না। এই রকম দুষ্টামির কারণে মানুষ ভয় পেয়ে এমনিতেই স্ট্রোক করে মা'রা যেতে পারে। আর এজন্যই তনুর উপরে প্রচন্ড অভিমান টা জন্মেছে আকাশের। অপরদিকে তনু নিজের হাত দিয়ে আকাশের চোখের পানি মুছে দেওয়ার পরেও যখন দেখে আকাশের অভিমান কমেনি, তাই সে আর কোনো কিছু না ভেবে আকাশের শার্ট খামচে ধরে উন্মাদের মতন শুরুতে আকাশের গলায় কয়েকটা চুমু বসায়। এরপর কিছুক্ষণ যেতেই আকাশের গলা ছেড়ে আকাশের ঠোঁট টাকে রপ্ত করে নেয়। তনুর মাত্রা ছাড়া পাগলামি দেখে আকাশ জোরপূর্বক তনুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
--'তনু এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।'
--'কি ঠিক হচ্ছে না?'
--'এই যে তুমি আমার শরীরে স্পর্শ করছো।'
--'তাহলে কাকে শরীরে স্পর্শ করবো? অন্য কোনো পরপুরুষ কে?'
--'না মানে আসলে তা নয়...
--'আরে আজব তা নয়তো কি? আমি আমার স্বামীর সাথে রোমান্স করছি এতে বেঠিকের কি আছে? আমি তো অন্য কোনো পরপুরুষের সাথে রংতামাশা করছি না। যা করছি নিজের স্বামী বা হাজবেন্ডের সাথেই করছি। তাহলে কি ঠিক হচ্ছে না শুনি?'
আকাশ চুপ হয়ে যায়। কারণ তনুর কথা যুক্তিসঙ্গত। তনুর অধিকার আছে আকাশের সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার। অবশ্য আকাশের ও রয়েছে। তবে বেচারার পরিস্থিতি খারাপ দেখে হয়তো সে তনুর কাছাকাছি যাওয়ার সাহস করেনি কখনো। এখানে অনেকেই মনে করবে পুরুষ নির্যাতন হচ্ছে। আর আকাশ হয়তো ভীতু প্রকৃতির ছেলে। আসলে বিষয়টা কিন্তু এমন না। পরিস্থিতি বুঝে সব করতে হয়। আকাশ নিজেকে সংযত করে রেখেছে ভদ্রতার খাতিরে। না হয়তো সে চাইলেও জোর খাটাতে পারে তনুর উপরে। তবে ভদ্রতার পাশাপাশি আকাশের চাকরি হারানোর ও একটা ভয় আছে। তাই আকাশ নিজেকে সামলে রাখে সর্বদা। আকাশ তনুর যুক্তির কাছে হেরে গিয়ে চুপ হয়ে যায়। অন্যদিকে তনু আকাশকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে,
--'দেখো আমি যা করছি সেসব আমার অধিকার থেকে করছি। অযথা আমাকে বাঁধা দিতে আসবা না একদম।'
তনু আবারো আকাশের ঠোঁটে নিজের অধিকার খাটায়। এবার আকাশের ভিতরেও একটা অ্যাট্রাকশন বা আকর্ষণ তৈরী হয় ঠিক কারেন্টের মতন।
যেমন- বৈদ্যুতিক তারের মাইনাস এবং প্লাস দু'টো যখন একসঙ্গে মেলানো হয়, তখন তাঁদের মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। এখানেও ঠিক তাই হয়েছে। তনুর কারণে আকাশের ভিতরেও এক রকমের একটা প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে। আকাশ নিজেও এবার তনুকে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। দু'জনের ভিতরে ভালোবাসার এক নতুন সিক্ততা জন্ম নিয়েছে। দুজনের মতামতে এই প্রথম স্পর্শ। সারা শরীরে যেনো প্রজাপতির সাত রঙ ছড়িয়েছে। তনু মৌমাছির ন্যায় বারংবার আকাশের ঠোঁটে হুল ফুটাচ্ছে। তনুর স্পর্শে আকাশের নিজেকে কেমন বেসামাল লাগছে। অবশ্য আকাশ নিজের নিয়ন্ত্রনে আছেই বা কোথায়! একজন পুরুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তার প্রেয়সী। আর সে প্রেয়সীকে যদি এতো কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখা যায় তবে কি নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব! আকাশ ও তনুর আচরণে সাড়া দেয়। সামান্য কিছু সময়ে দু'জন এতো গভীর ভাবে মিশে গেছে, যে তাঁদের দেখে মনে হচ্ছে যেনো এই দু'টো মানুষ বহু জন্মের পরিচিত। তাঁদের সংসার জীবনের একযুগ পূর্ণ হয়েছে। বেশ কিছু সময় আকাশ আর তনু ব্যক্তিগত সময় কাটায়। কিছুক্ষণ পর তনু নিজেই আকাশকে ছেড়ে দেয়। আর বলে,
--'হয়েছে এবার গিয়ে কাজ মন দাও। সারাদিন দু'জন মিলে এভাবে রোমান্স করে সময় কাটালে অফিসের বারোটা বাজবে। যাও গিয়ে কাজ করো। আর না হয় যা ইচ্ছে হয় করো। তবে আমাকে এখন কাজ করতে হবে।'
--'এই আজব! আমি তোমাকে বলেছি নাকি রোমান্স করতে? শুরু এবং শেষ সবটাই তো তোমার ইচ্ছেতে হলো। তাহলে এখন আমায় কেন দোষ দিচ্ছো?'
--'এই যে মহাশয় আপানকে কোনো দোষ দেইনি। আমি শুধু বলেছি কাজের বারোটা বাজবে সারাদিন দু'জনে এসবে মেতে থাকলে।'
--'ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।'
--'হুম যাও।'
--'যেতে তো দাও।'
--'আজব আমি আবার তোমায় কোথায় আটকালাম?'
--'কোল থেকে না নামলে যাবো কি করে শুনি?'
--'ওহ আচ্ছা ভুলে গিয়েছিলাম।'
তনু আকাশের কোল থেকে নেমে যায়।
আর আকাশ ও তনুর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। এমন সময় তনু আকাশকে বলে,
--'যাও এবার। আর শুনো দুপুর হলে কেবিনে চলে এসো। দু'জনে একসাথে দুপুরের লাঞ্চ করবো।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে।'
আকাশ কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হাঁটা দিয়ে কয়েক কদম সামনে যেতেই তনু আবারো পিছন থেকে আকাশকে ডাক দেয়।
--'এই আকাশ শুনো।'
--'আবার কি হলো?'
--'দেখো আজ থেকে তোমাকে আর অফিসের কেউ কিছু বলার সাহস পাবে না। আর তোমার যা ইচ্ছে হয় তুমি করতে পারবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা। অফিসে অসংখ্য মেয়ে কর্মচারী আছে। তাঁদের দিকে তুমি ভুলেও তাকাবা না। এমনকি তারা তাকালেও তুমি তাকাবা না। এখন কিন্তু তোমার সাথে অনেকেই ভাব জমানোর চেষ্টা করবে। কারণ ইতিমধ্যেই সবাই জেনে গেছে তুমি আমার খুব কাছের লোক। তাই সবার থেকে সাবধানে থাকবা। বিশেষ করে মেয়েদের থেকে। না হয় কিন্তু তোমার অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিব বলে দিলাম।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে থাকবো। এবার গেলাম।'
আকাশ কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ডেস্কে চলে যায়। তনুও নিজের কেবিনে বসে কাজ করতে আরম্ভ করে। দু'জনের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হয়ে গেছে। এভাবে সাপ্তাহ খানিক কাটে। কেটে যাওয়া এই এক সাপ্তাহে দু'জনের সম্পর্ক আগের চেয়েও আরো অনেক গুণ মজবুত হয়েছে। দু'জনে দুপুর টাইমে একসাথে লাঞ্চ করে। তনু আকাশকে অফিস ছুটি হলে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দেয়। এমনকি তারা দু'জনে এক সঙ্গে একদিন ঘুরতেও বেরিয়েছিল। সাপ্তাহ খানিক পর সোহান একদিন হুট করে তনুর অফিসে আসে। আকাশ নিজের ডেস্কে বসে ছিল। কিন্তু সে সোহানকে দেখতে পেয়ে নিজের ডেস্ক ছেড়ে উঠে সোহানের কাছে যায়। এরপর হেঁসে হেঁসে
সোহানকে বলে,
--'সোহান ভাই আপনি কিন্তু কাজটা ঠিক করেন নি।'
--'কি ঠিক করি নি?'
--'এই যে তনু আর আপনি মিলে প্রেমের নাটক সাজিয়ে আমাকে বোকা বানাতে চেয়েছেন। আমি কিন্তু জেনে গেছি, যে আপনি আর তনু মিলে আমাকে প্ল্যান করে বোকা বানাতে চিয়েছিলেন।'
--'আকাশ সাহেব আপনার মাথায় কোনো সমস্যা টমস্যা আছে কি?'
--'না কোনো সমস্যা নাই। আর সমস্যা কেন থাকবে?'
--'তাহলে কি সব উল্টো-পাল্টা বলছেন? আমি আর তনু মিলে আপনাকে বোকা বানাবো এমন কোনো প্ল্যান এই তো আমরা করিনি। তাহলে আপনি এইসব আজগুবি প্ল্যান সম্পর্কে জানলেন কোথা থেকে শুনি?'
সোহানের কথা শুনে আকাশের মাথার টনক নড়ে উঠে। কারণ তনু বলেছে সব কিছু নাটক ছিল। কিন্তু এখন সোহান বলছে এমন কোনো প্ল্যান এই তারা করেনি। তনুর সাথে সোহানের কথার কোনো মিল এই নেই। তার মানে তনু তাকে যা বলেছে সব কিছুই মিথ্যা। তনুর সাথে হয়তো সত্যিই সোহানের কোনো সম্পর্ক ছিল বা এখনো আছে। এবং সেই সঙ্গে তনু তাকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে.....
সোহান আর তনুর সম্পর্কের বিষয় নিয়ে তনু বলেছে সব কিছুই তাঁদের সাজানো নাটক ছিল। কিন্তু এখন সোহান বলছে এমন কোনো প্ল্যান এই তারা করেনি। তনুর সাথে সোহানের কথার কোনো মিল এই নেই। তার মানে তনু তাকে যা বলেছে সব কিছুই মিথ্যা। তনুর সাথে হয়তো সত্যিই সোহানের কোনো সম্পর্ক ছিল বা এখনো আছে। এবং সেই সঙ্গে তনু তাকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে। তনুকে নিয়ে খটকা লাগতে শুরু করে আকাশের। মনের ভিতরে কৌতূহল জাগে বিষয়টা নিয়ে। তনু কি সত্যিই তাঁকে ঠকাচ্ছে। কৌতূহল মেটাতে সোহানকে প্রশ্ন করে,
--'আচ্ছা তার মানে আপনারা আমাকে বোকা বানাবেন এমন কোনো প্ল্যান করেন নি?'
--'না এমন কোনো প্ল্যান আমরা করিনি। আর এমন প্ল্যান করবোই বা কেন? তনু আর আমি সত্যিকারত্বে বয়ফ্রেন্ড- গার্লফ্রেন্ড। তাহলে আমরা আপনাকে বোকা বানানোর জন্য প্ল্যান করতে যাবোই বা কেন? কি লাভ এতে আমাদের?'
সোহানের কথা শুনে আকাশের সন্দেহ সত্যি হয়। তনু তাকে যা বলছে তাহলে সব কিছুই মিথ্যা ছিল।
দু'জনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে৷ কিন্তু আকাশের এবার আরেকটা ব্যাপার নিয়ে খটকা লাগে। সোহান বলছে সে আর তনু সত্যিকারত্বে প্রেমিক-প্রেমিকা। তাহলে সেদিন যখন তনু তাকে ফোন করেছিল তখন সোহান তনুকে দোস্ত বলে কেন সম্মোধন করছিল। নাহ এখানে হয়তো কোনো গন্ডগোল আছে। আর এই গন্ডগোলের সমাধান পাওয়া যাবে তনু আর সোহান মুখোমুখি হলে। কারণ দুই পক্ষ যেহেতু দু'রকমের কথাবার্তা বলছে তাহলে অবশ্যই যে কোনো একজন কথার গড়মিল করছে। হয় সেটা সোহান না হয় তনু। ব্যক্তিগত ভাবে আর প্রশ্ন না করে আকাশ চালাকি করে সোহানের সামনে থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ায়। আকাশ সরে যাওয়ায় সোহান কেবিনের দরজা খুলে অনুমতি নিয়ে তনুর কেবিনে প্রবেশ করে। সোহান তনুর কেবিনে প্রবেশ করার কয়েক সেকেন্ড পর বিনা অনুমতিতে আকাশ সোজা তনুর কেবিনের ভিতরে ঢুকে পড়ে। সোহান আর তনু দু'জনেই চমকে উঠে আকাশকে হুট করে কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে। আকাশের চোখে-মুখে রাগ। আকাশের ইচ্ছে করছে পুরো কেবিন টাকে মাথায় তুলে নিতে। কিন্তু কোনো ভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করে তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশের হাবভাব বুঝতে না পেরে তনু আকাশকে প্রশ্ন করে,
--'এই তুমি হুট করে কোনো কথাবার্তা ছাড়া এভাবে কেবিনে ঢুকে পড়লে যে?'
--'ইচ্ছে হয়েছে তাই ঢুকেছি। কেন অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করে ভুল করে ফেলেছি নাকি?'
--'না ভুল করো নি৷ তোমার অধিকার আছে কেবিনে ঢুকার। কিন্তু হুট করে আসলে তো তাই জিজ্ঞাস করলাম।'
--'ভুল না করলেই হলো। এবার আমার কথার উত্তর দাও। তুমি সেদিন আমায় বলেছো তুমি আর সোহান ভাই মিলে যা করেছো সব কিছুই তোমাদের সাজানো নাটক ছিল। কিন্তু একটু আগে আমি সোহান ভাইকে ঐ বিষয়ে জিজ্ঞাস করায় সোহান ভাই সোজা অস্বীকার করলো। তোমাদের মধ্যে নাকি এমন কোনো কথাবার্তাই হয়নি। আর সোহান ভাই নাকি তোমার সত্যিকারত্বে বয়ফ্রেন্ড। কাহিনী কি তনু আমায় সত্যি করে বলো। আমার কিন্তু মাথায় রক্ত চোটে যাচ্ছে। কখন কেবিনের পরিবেশ পাল্টে যায় তার কিন্তু কোনো ঠিক নাই বলে দিলাম।'
--'আরে আকাশ তুমি অযথা রাগ করছো। তুমি আগে চেয়ারে বসো। তারপর আমি তোমায় বলছি।'
--'আমি এখানে বসতে আসিনি। যা বলার এখুনি বলো। আমার উত্তর চাই।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে বলছি। আকাশ যা বলেছি সব কিছুই সত্যি। আমি তোমায় কোনো মিথ্যা বলিনি। সব কিছুই আমাদের প্ল্যান ছিল।'
--'তাহলে সোহান ভাই কেন আমায় বললো তোমরা এমন কোনো প্ল্যান করোনি? আর উনি তোমার সত্যিকারত্বে বয়ফ্রেন্ড। কাহিনী কি? যদি তোমার কথা আসলেই সত্যি হয়, তাহলে কেন আমায় সোহান ভাই ঐরকমটা বলছে?'
--'আকাশ কাহিনী কিছুই না। আর সোহান সত্যিই আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড না। এই সোহান তুই প্লিজ ওকে সত্যিটা বলে দে। না হয় আমার উপরে ঘূর্ণিঝড় আসবে। আমি আকাশকে সত্যিটা বহু আগেই বলে দিয়েছি।'
--'ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। তুই তাহলে নিজেই আকাশ সাহেবকে সব সত্যি বলে দিয়েছিস। আমিও তো বলি উনি এই ব্যাপারে জানলো কোথা থেকে! আকাশ সাহেব শুনুন তনু যা বলেছে সব কিছুই সত্যি। আমরা প্ল্যান করেই আপনার সাথে ঐরকমটা করেছি। আর একটু আগে আমি আপনাকে মিথ্যা বলেছি। কারণ আমি জানতাম না তনু আগেই আপনাকে সব সত্যি বলে দিয়েছে। যার কারণে একটু আগে আমি সত্যিটা স্বীকার করিনি।'
সোহানের কথা শুনে আকাশের স্বস্তি ফিরে আসে। তবে রাগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। কারণ আকাশ এই সম্পর্কের মধ্যে কোনো প্রকার ঝামেলা চায়না। সে চায় সম্পর্কে লয়্যাল থাকার পাশাপাশি পরিপাটি ভাবে সম্পর্কটা নিজেও নিভাবে। এবং তনুর থেকেও সে একই জিনিস আশা করে। কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে নতুন করে কান্ড ঘটায় আকাশের রাগের মাত্রা বেড়ে গেছে। চোখ বড় বড় করে তনুর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ। অপরদিকে তনু আকাশকে তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
--'এই তুমি এখনো কেন রেগে আছো? সোহান তো তোমাকে সমস্ত সত্যি বলেই দিয়েছে। তাও অযথা কেন রাগ করে আছো বলো তো?'
--'রাগ করে আছি কেন সেটা তোর জানতে হবে না। তুই উনাকে এখন এখান থেকে চলে যেতে বল। আমার সত্যিই বেশ রাগ উঠছে। আর কিছু সময় গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করা আমার জন্য কিন্তু দুষ্কর হয়ে যাবে।'
আকাশের হাবভাব দেখে এবং আকাশের কথা শুনে তনু নিজেও বুঝতে পারে আকাশের সত্যিই প্রচন্ডভাবে রাগ উঠে আছে। সোহানের এখন এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো। না হয় কখন কি হয় তার কোনো ঠিক নেই। পরিস্থিতি যে কোনো সময় ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। পরিস্থিতিকে অনুকূলে রাখার জন্য তনু সোহানকে বলে,
--'সোহান তুই এখন চলে যা। আমি কোনো সমস্যা হোক সেটা চাচ্ছি না। এমনিতেই আকাশ রেগে আছে। তার উপরে ওর কথা না শুনলে আমার উপরে যে কোনো সময় বিপদ আসতে পারে। তুই প্লিজ এখন চলে যা।'
--'ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।'
সোহান চলে যায়। আকাশের ভিতরে এখনো রাগ কাজ করছে। সোহান চলে গেছে কিন্তু আকাশ নিজের রাগ এখনো কমাতে পারেনি। সেই আগের ন্যায় রাগ রয়ে গেছে আকাশের মধ্যে। সোহান চলে যাওয়ার পরেও তনু আকাশকে রেগে থাকতে দেখে চেয়ার থেকে উঠে এসে আকাশের গালে হাত রেখে বলে,
--'সোহান চলে গেছে। এবার তো রাগটা কমাও। আর কতো রাগ করে থাকবে?'
আকাশ কোনো উত্তর দেয় না। তনু আকাশকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করাতে উল্টো আরো বিস্ফোরণ ঘটে আকাশের ভিতরে। আকাশের ইচ্ছে করছে তনুকে কঠিন একটা শিক্ষা দিতে। কিন্তু সেটা করা উচিত হবে কিনা আকাশ ভাবছে। তখনি আকাশের মনে হয় নিজের মনকে কিছু সময় প্রাধান্য দেওয়া উচিত। না হয় সব সময় মনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলে মনের সাথেই নিজের একটা দ্বন্দ্ব শুরু হবে। আকাশ নিজের মনকে প্রশ্রয় দিয়ে সোজা তনুর গলা চে'পে ধরে তনুকে পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে বলে,
--'মোবাইল ফোন ছুঁড়ে মে'রে কপাল ফাটিয়েছিস, কিন্তু আমি কিছু বলিনি। গরম চা ছুঁড়ে মে'রে পেটে ফোস্কা ফেলেছিস, কিন্তু আমি কিছু বলিনি। অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে সামান্য একটা ভুলের কারণে আমায় যেভাবে ইচ্ছে হয়েছে লজ্জিত করেছিস, কিন্তু আমি তাও কিছু বলিনি। তবে আগামীতে যদি তোকে আমি সোহানের সাথে বিনা প্রয়োজনে মিশতে দেখি, তাহলে তখন কিন্তু আর চুপ করে থাকবো না। আজকের পর সোহানের সাথে তোর সমস্ত বন্ধু পিরীতি বন্ধ। অযথা কোনো কারণে না ফোনে কথাবার্তা বলবি না সামনা-সামনি। এক কথায় ওর সাথে কোনো কারণ ছাড়া কথাবার্তা বলবি না। মনে থাকবে আমার কথা?'
তনু কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। আকাশ সব কিছু ফেলে সোহানের পিছনে কেন পড়েছে সেটা তনু বুঝে উঠতে পারছে না। চুপ করে আকশের দিকে তাকিয়ে আছে তনু। কথার উত্তর না পেয়ে আকাশ তনুকে প্রশ্ন করে,
--'কি হয়েছে কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? আমার কথা কি তোর কানে যায়নি?'
--'হ্যাঁ গিয়েছে।'
--'তাহলে উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছিস কেন? উত্তর দে।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর সোহানের সাথে কোনো দরকার ছাড়া কথাবার্তা বলবো না।'
--'মনে থাকে যেনো।'
--'হুম থাকবে।'
আকাশ তনুর জবানবন্দি পেয়ে তনুর গলা ছেড়ে দিয়ে বলে,
--'নে এবার ছেড়ে দিলাম। আগামীতে বিনা প্রয়োজন সোহানের সাথে কোনো কথাবার্তা বলতে দেখলে তোর শ্বাসনালী সজোড়ে চে'পে ধরবো। এবারের মতন বেঁচে গেছিস। পরেরবার গলা চে'পে ধরলে কিন্তু সোজা উপরে চলে যাবি বলে দিলাম।'
--'না আমি আর কোনো কারণ ছাড়া সোহানের সাথে কথাবার্তা বলবো না। কারণ আমি চাই না ওর কারণে আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হোক।'
--'হুম আমিও এই কারণে বিনা প্রয়োজনে কথা বলতে না করেছি।'
--'হুম।'
--'সরি তনু।'
--'ওমাহ সরি কেন?'
--'তুইতোকারি করার জন্য এবং রেগে গিয়ে গলা চে'পে ধরার জন্য।'
--'আরেহ সমস্যা নেই। আমি বুঝতেই পেরেছিলাম তোমার অনেক রাগ উঠেছে।'
--'ধন্যবাদ বুঝার জন্য। আচ্ছা এবার আমি গেলাম।'
--'না এখন আর যেতে হবে না। আর অল্প সময় বাকি আছে লাঞ্চ টাইম হওয়ার৷ একেবারে লাঞ্চ করে তারপর যেও।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে লাঞ্চ করে যাবো। তবে এখন গিয়ে খাবার নিয়ে আসি।'
--'আজব! তুমি খাবার আনবে মানে?'
--'ওমাহ কেন কি হয়েছে? আমি তোমার এ্যাসিস্ট্যান্ট। আমি খাবার আনলে সমস্যা কোথায়?'
--'অনেক সমস্যা আছে। তুমি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেটা ঠিক আছে। তবে তুমি আমার হাজবেন্ড ও। আগে না হয় বুঝিনি দেখে তাই তোমাই ফরমাইশ করেছি এটা ওটা করতে। তবে বর্তমানে বুঝার পর একই ভুল আবার করবো সেটা হতে পারে না। আমি নিজে বসে থেকে তোমাকে খাবার আনতে পাঠাবো সেটা তুমি ভাবলে কি করে? তুমি বসো। আমি কেন্টিনে ফোন দিলেই তারা খাবার পাঠিয়ে দিব। তোমার অযথা কষ্ট করে যেতে হবে না।'
--'আচ্ছা।'
তনু কেন্টিনে ফোন দিয়ে দু'টো খাবার পার্সেল করতে বলে। তনুর কথা মতন কিছু সময় পর কেন্টিন থেকে একটা ছেলে দুইটা খাবারের পার্সেল তনুর কেবিনে দিয়ে যায়। হাত ধুয়ে আকাশ আর তনু খেতে আরম্ভ করে। খাওয়ার এক পর্যায়ে তনু মোহাব্বত করে এক লোকমা খাবার নিজের হাতে আকাশকে খাইয়ে দেয়। আকাশ ও তনুর দেখাদেখি একই কাজ করে। এক লোকমা খাবার নিয়ে সেও তনুকে খাইয়ে দেয়। দু'জন দু'জনকে মোহাব্বত দেখানোতে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের কোনো আইডিয়াই নেই তাঁদের সামনে যে একটা বাঁধা আসতে চলেছে। আকাশের কথায় তনু সোহানকে চলে যেতে বলায় সোহান তাঁদের সামনে কোনো রিয়াকশন না করলেও ভিতরে ভিতরে বেশ অপমানবোধ করে বিষয়টা নিয়ে। সোহানের অনেকটা গায়ে লেগেছে দু'জনের আচরণ। বেশি গায়ে লেগেছে আকাশের টা। কারণ তনু নিজ থেকে এমনটা করেনি। আকাশের কথাতেই সে এমনটা করেছে। সোহান প্রতিশোধ নিবে বলে একটা ফন্দি করতে করতে বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে খেতে বসে। খাওয়ার মাঝামাঝি অবস্থায় সোহানের মা রোকেয়া বেগম সোহানকে বিয়ের বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাস করে সে বিয়ের বিষয় নিয়ে কিছু ভেবেছে কিনা। সোহান নিজের মা'কে জানায় সে বিয়ে করতে রাজি। এবং সেই সঙ্গে ফোন থেকে তনুর ছবি বের করে নিজের মা'কে দেখিয়ে বলে তনুকে সে বিয়ে করতে চায়....
সোহান ফোন থেকে তনুর একটা ছবি বের করে নিজের মা'কে দেখিয়ে বলে একেই সে বিয়ে করবে। সোহানের মা রোকেয়া বেগম ছেলের কথায় বেশ খুশি হয়। তবে সোহানের দেখানো ছবিটা দেখে রোকেয়া বেগম নিজের ছেলেকে বলে,
--'হ্যাঁ মা সে আমার বান্ধবী তনু৷ আর কেন আমি তাকে বিয়ে করতে চাইছি সেটা অজানাই থাক।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে সেটা না হয় অজানাই থাকলো। কিন্তু সে কি তোকে বিয়ে করবে?'
--'সঠিক করে বলতে পারছি না। তবে তুমি ওর মা'য়ের সাথে কথা বলো।'
--'ঠিক আছে আমি আগামী কালকেই তনুর মা'য়ের সাথে কথা বলবো ওর বাসায় গিয়ে। দেখি কতদূর কি হয়। এবার তুই খেয়ে নে।'
--'আচ্ছা।'
সোহানের মা রোকেয়া বেগম পরেরদিন তনুর বাসায় যায় বিয়ের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলতে। তনু বাসায় নেই। সে সকালে উঠে নাশতা করে অফিসে চলে গিয়েছে। তনুর মা বাসায় একা। আর একজন কাজের মহিলা আছে তনুর মা'য়ের রান্নাবান্নার কাজে সাহায্য করার জন্য। রোকেয়া বেগম তনুর বাসায় যাওয়ায় তনুর মা কাজের মেয়েকে রান্না সামলাতে বলে রোকেয়া বেগমের সাথে কথা বলার জন্য গেস্ট রুমে আসে৷ রোকেয়া বেগমকে তনুর মা আগ থেকেই চেনের তনুর মাধ্যমে। দু'জনে একসাথে বসে প্রথমে কুশল বিনিময় করে। পরবর্তীতে রোকেয়া বেগম তনুর মা'কে বলে,
--'আপা আসলে আমি আপনার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছি।'
--'হ্যাঁ আপা বলেন কি আবদার।'
--'আপা আমার ছেলে সোহানকে বিয়ের জন্য বহু আগ থেকে বলে আসছি, কিন্তু সে রাজি না। তবে শেষমেষ গতকাল সে রাজি হয়েছে। কিন্তু সে তনুকে বিয়ে করতে চায়।'
--'যাক শেষমেষ রাজি হয়েছে এতে শুকরিয়া। তবে সোহান আর তনু তো ভালো বন্ধু। কিন্তু সোহান হুট করে তনুকে কেন বিয়ে করতে চাইছে?'
--'আপা সেটা আমি নিজেও জানি না! সোহান গতকাল বিয়ের জন্য রাজি হওয়ার পর তনুর ছবি দেখিয়ে বললো তাকে বিয়ে করবে। তাই আপনার কাছে আবদার নিয়ে এসেছি। আপা আপনি যদি আপনার মেয়ে টাকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতেন, তাহলে অনেক বেশি খুশি হতাম।'
--'সোহান কেন তনুকে বিয়ে করতে চাইছে সেটা সে ভালো জানে। তবে আমার এতে কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ মেয়ের হাত চাইতে যে কেউ বাসায় আসতে পারে। কিন্তু আপা আপনার কথাটা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না।'
--'কেন সম্ভব নয় আপা? আমার ছেলে কি তনুর যোগ্য না? বা আমার ছেলেকে কি আপনার মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ হয় না?'
--'না আপা আসলে এমনটা নয়।'
--'তাহলে সমস্যাটা কোথায় আপা?'
--'আসলে আপা তনুর তো বিয়ে হয়ে গেছে।'
--'কিহহ! তনুর বিয়ে হয়ে গেছে মানে? কই আমরা তো কিছুই শুনলাম না। কখন বিয়ে হলো তনুর? আর কি ভাবে হলো?'
--'আপনি শুনেন নি সেটা তো বহু পরে আসছে। বিয়ের বিষয় নিয়ে তো আমি নিজেও আগে জানতাম না!'
--'তাহলে কি ভাবে কি হয়েছে?'
--'তনু নিজেই আমার স্বামীর বিজনেস পার্টনারের ছেলে আকাশকে কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে।'
--'বলেন কি!'
--'হ্যাঁ এটাই সত্য। তনু আকাশকে বিয়ে করার পর এসে আমাকে তাদের বিষয়ে জানিয়েছে। দুঃখিত আপা আপনার আবদারটা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হলো না।'
--'আরেহ আপা দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার মেয়ে যেহেতু বিয়ে করেই নিয়েছে, তাহলে এতে আপনি আর আমার আবদার রাখবেন কি করে।'
--'হুম।'
--'আচ্ছা আপা তাহলে আর কি করার। আমি তাহলে এবার চলি।'
--'আরেহ কোথায় যাচ্ছেন চা খেয়ে যান।'
--'আপা আজকে নয় অন্য আরেকদিন খাবো। আমি বাসায় কাজ ফেলে তাড়াহুড়ো করে এসেছি।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।'
রোকেয়া বেগম তনুর বাসা থেকে ফিরে এসে সোহানকে ফোন করে সমস্ত কিছু জানায়। সোহান ও বাসায় নেই। নিজের বাবার অফিস দেখাশোনা করে সে। রোকেয়া বেগমের মুখে সমস্ত কিছু শুনে সোহানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। কারণ প্রথমত তনুর মা না করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত তনু যে আকাশকে বিয়ে করেছে, সেই বিষয়ে সোহান কিছুই জানে না। রাগে পিত্তি ফেটে যাচ্ছে সোহানের। প্রতিশোধ নেওয়ার তাড়নাটা আরো বেড়ে গিয়েছে সোহানের। কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়ার মতন সমস্ত রাস্তাই বন্ধ। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে অফিসে বসেই সিগারেট জ্বালিয়ে দিয়ে টানতে থাকে সোহান। অপরদিকে তনু একটা ফাইল নিয়ে আঁটকে গেছে। পরিপূর্ণ এক্সপেরিয়েন্স থাকা সত্বেও তনুর দক্ষতা আজকে কাজে দিচ্ছে না। গুলিয়ে যাচ্ছে সব কিছু। কাজ করতে গিয়ে একের পর এক গন্ডগোল করছে ফাইলটার মধ্যে। খুব দরকারি ফাইল। কি ভাবে ফাইলটা কমপ্লিট করবে তনুর মাথায় কাজ করছে না। এমতাবস্থায় আকাশের কথা মাথায় আসে তনুর। সাহায্যের জন্য কেবিন থেকে বেরিয়ে আকাশের কাছে গিয়ে বলে,
--'আকাশ একটা সমস্যায় পড়েছি।'
--'কি সমস্যা তনু?'
--'খুব দরকারি একটা ফাইল নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু সেটা কেন জানি আমার দ্বারা কমপ্লিট হচ্ছে না! যতোই চেষ্টা করছি ততোই আরো ঝামেলা পাকছে। তুমি কি একটু পারবে ফাইলটা ঠিকঠাক ভাবে কমপ্লিট করতে?'
--'হুম পারবো। আর না পাড়ার কি আছে। আমার হয়তো বর্তমানে অফিস-আদালত নেই। কিন্তু কাজ আমি ভুলিনি। হাত ঠিক আগের মতোই চলে। তবে একটা কথা। তোমার অফিসে তো দক্ষ অনেক কর্মচারী আছে। তুমি চাইলে তো তাদেরকে দিয়েও করাতে পারো।'
--'হ্যাঁ অফিসে দক্ষ অনেক কর্মচারী ঠিকই আছে। তবে সবাইকে দিয়ে সব কাজ করানো যায় না। তাই নিজেই বসেছিলাম ফাইলটা নিয়ে। কিন্তু সম্পূর্ণ করতে না পাড়ায় তোমার কাছে এসেছি।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি। তুমি আমাকে ফাইলটা এনে দাও।'
--'এখানে নয় তুমি নিজেই আমার কেবিনে চলো। কেবিনে গিয়ে বসে বসে শান্ত মাথায় কাজ করবে।'
--'আচ্ছা।'
আকাশ তনুর কেবিনে গিয়ে ফাইলটা নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। ফাইলটা হচ্ছে অফিসে এযাবৎ কালে যে কয়টা ডিল হয়েছে বা যে কয়টা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে সেসবের হিস্ট্রি নিয়ে। আকাশ ফাইল টাতে হাত দেওয়া মাত্রই বুঝে ফেলে তনু কেন অন্য কোনো কর্মচারী দিয়ে এই কাজটা করায়নি। আসলে তনু অন্য কাউকে দিয়ে এই কাজটা করালে তারা অফিসের অনেক তথ্য সম্পর্কে জেনে যাবে। তাই তনু কাজটা আকাশকে করতে দিয়েছে। তনু হয়তো আকাশকে অনেক বেশি বিশ্বাস করে। আকাশ কাজ করতে শুরু করে। তনুর নিজের চেয়ার রেখে আকাশের পাশের চেয়ারে চুপ করে বসে আকাশের কাজ দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পর আকাশের পাশ উঠে তনু আকাশকে বলে,
--'আকাশ তুমি কাজ করো। আমি একটু কেবিন থেকে হেঁট হুঁটে আসি। আর সঙ্গে দেখেও আসি কে কিভাবে কাজ করছে।'
--'আচ্ছা।'
--'আর হ্যাঁ ফাইলটা দুপুরের আগে কমপ্লিট করে ফেলো। কারণ আজ দুপুরে দু'জন মিলে বাহিরে খাবার খাবো এবং সেই সঙ্গে দু'জনে মিলে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করবো। অনেক কয়দিন হয়ে গেছে দু'জনে পার্সোনাল সময় কাটাই না।'
--'আচ্ছা ঠিক আছে।'
তনু আকাশকে কাজ করতে দিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে যায়। আর আকাশ খুশি মনে কাজ করতে থাকে। তনু কেবিনের বাহিরে গিয়ে অফিসের ভিতরেই হাঁটাহাটি করার পাশাপাশি কর্মচারী কে কিভাবে কাজ করছে সেটা দেখছে। কিছু সময় পর তনুর কাছে সোহানের ফোন আসে। কিন্তু তনু ফোন রিসিভ করে না। সোহান তনুকে লাগাতার ফোন দিতেই থাকে। তনু এক পর্যায়ে গিয়ে অফিসের এক সাইডে গিয়ে সোহানের ফোন রিসিভ করে। সোহান তো রেগেমেগে আগুন। উত্তেজিত কন্ঠে তনুকে বলে,
--'কি হলো এতো সময় ধরে ফোন রিসিভ করছিলি না কেন?'
--'কাজ করছিলাম তাই ফোন দেখতে পাইনি। আচ্ছা বল কি হয়েছে?'
--'তনু তোর আর আকাশের নাকি বিয়ে হয়েছে এটা কি সত্যি?'
--'সত্যি মিথ্যা পরে আসছে, কিন্তু তুই এটা বল যে আমার আর আকাশের বিষয়ে তুই জানলি কি করে?'
--'তনু সত্যি বেশিদিন লুকিয়ে থাকে না। এক সময় না এক সময় সত্যিটা মানুষের সামনে চলেই আসে। আর আমি সত্যিটা জেনেছি তোর মা'য়ের মাধ্যমে। কিন্তু এবার বল যে তুই আমাকে এই বিষয়ে কেন জানস নি?'
--'সোহান কেন জানাইনি সেটা আমার মধ্যেই থাক।'
--'না আমাকে কারণ বলতে হবে তোর।'
--'সোহান আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে আপাতত ইন্টারেস্টেড না। আমি ফোন রাখলাম। আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।'
তনু ঠুস করে ফোন কেটে দেয়। সোহানে রাগ চুড়ায় পৌঁছে যায় তনু ফোন কেটে দেওয়ায়। হাতে থাকা ফোনটা সজোড়ে দেয়ালে ছুঁ'ড়ে মে'রে ফোনের নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলে। রাগ চরম সীমায় পৌঁছে গেছে সোহানের। রাগে ফসফস করতে থাকে সে। অপরদিকে তনু ফোন কেটে দিয়ে কর্মচারীদের কাজ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে দুপুর হয়। তনু কেবিনে চলে যায়। আকাশের কাজ ও শেষ। নিখুঁত ভাবে ফাইলটা কমপ্লিট করেছে আকাশ। তনু খুশি হয়ে আকাশের কপালে একটা চুমু একে দেয়। পরবর্তীতে ফাইলটা সামলে রেখে আকাশকে সঙ্গে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে। গাড়ি ড্রাইভ করে প্রথমে দু'জনে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে। খাওয়া দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ভরা দুপুরে কঠোর রোদের মধ্যে দু'জনে একটা পার্কে যায়। পার্ক পুরো খালি। আর এই দুপুর বেলায় কে বা পার্কে ঘুরতে আসে। আকাশ আর তনু ছাড়া পার্কে আর তেমন কেউ নেই। পার্কের একপাশে ছায়ার মধ্যে দুজনে একটা বেঞ্চের উপরে বসে। তনু বেঞ্চে বসে আকাশের কাঁধে মাথা রেখে পিছন থেকে হাত দিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে৷ আকাশের ভিতরে খুশির জোয়ার বইছে তনু আকাশের কাঁধে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরায়। আকাশ মুহুর্ত টাকে উপভোগ করতে থাকে। সে সঙ্গে সারাজীবন তনুর সাথে এভাবে হাসিখুশি থাকার পরিকল্পনা করতে থাকে। এমন সময় হুট করেই আকাশের মনে একটা প্রশ্ন জাগে। তনু তার সাথে আজীবন এভাবে থাকবে তো। কারণ তনু তো তাকে শুধু তিন বছরের জন্য বিয়ে করেছে৷ এই বিয়েটা শুধু তিন বছরের জন্য কথাটা মনে পড়তেই চেহারায় মলিন হয়ে যায় আকাশের। চোখ মুখ কালো করে তনুকে প্রশ্ন করে,
--'আচ্ছা তনু তুমি কি আমায় তিন বছর পর ছেড়ে চলে যাবে?'
--'আজব! ছেড়ে কেন যাবো?'
--'তাহলে এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে শুধু তিন বছরের জন্য কেন বিয়ে করেছো?'
--'আসলে সেটা করেছি তোমার উপরে বদলা নেওয়ার জন্য। আর আমি ভেবেছিলাম তুমি আমায় ভালোবাসো না। তাই তোমায় আঁটকে রেখে প্রতিশোধ নিয়ে ছেড়ে দিব ভেবেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে দেখি তুমিও আমায় ভালোবাসো। তাই ঠিক করে নিয়েছি তোমার সাথে আজীবন থাকবো। আর এগ্রিমেন্ট বাতিল করে দু'জনে সারাজীবনের জন্য আবারো বিয়ে করবো।'
--'সত্যিই?'
--'হুম।'
--'কিন্তু তনু আমার যে কিছু নেই বর্তমানে। আমায় বিয়ে করলে তো তোমার তেমন কোনো ফায়দা হবে না।'
--'আকাশ ফায়দার জন্য সবাই বিয়ে করে না। আর আমার ফায়দার কোনো প্রয়োজন নেই। নিজের যেটুকু আছে সেটা দিয়েই চলবে আমার। এছাড়া তোমার কিছু নেই তো কি হয়েছে? আমার তো আছে। আমি নতুন একটা কোম্পানি খুলবো। যেটার দায়িত্ব আমি তোমায় দিব। তারপর তুমি একটা অফিস সামলাবে। আর আমি একটা সামলাবো।'
আকাশ তনুর কথার উত্তরে মুচকি একটা হাসি দেয়। আকাশের কাছে সব কিছু কেমন যেনো স্বপ্নের মতন লাগছে। যেই মেয়েটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিন বছরের এগ্রিমেন্ট করেছে, সেই মেয়েটাই আজ তাকে নিয়ে সারাজীবন কাটানোর পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। কল্পনায় বিভোর আকাশ। পাশ থেকে তনু আকাশকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে,
--'এই আকাশ চুপ করে আছো কেন? কথা বলো। আকাশ তুমি জানো আমি আরেকটা প্ল্যান করেছি?'
--'কি প্ল্যান?'
--'আমাদের যখন আবার বিয়ে হবে, তখন তোমার মা আর ছোট বোনকে আমাদের উপরের ফ্ল্যাটটা দিয়ে দিব। তাহলে আমাদের আর বেশি সময় নষ্ট হবে না শ্বশুর বাড়িতে যাতায়াত করতে। এছাড়া দুই বেয়াইন মিলে একসাথে সব সময় গল্প গুজব করতে পারবে।'
তনুর কথা শুনে আকাশ খুশিতে আত্মহারা হয়ে তনুকে একহাত দিয়ে নিজের কিছুটা কাছে টেনে নেয়। এরপর সেও তনুর দিকে এগোতে থাকে। তনু আকাশের এগোনো দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কারণ সে বুঝতে পেরে যায় আকাশ এখন কি করবে। তাই সে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আকাশ তনুর দিকে এগিয়ে গিয়ে তনুর উষ্ণ ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। তনুও আকাশকে রেসপন্স করছে। দু'জনে কিছুটা সময় ঠোঁটের ব্যায়াম করে। এরপর একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে কথাবার্তা বলে অনেকটা আনন্দের মুহূর্ত কাটায়। বিকাল হয়ে এসেছে। দু'জন পার্ক থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে এসে বসে। তনু গাড়ি ড্রাইভ করে আকাশকে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়ে নিজ থেকেই আকাশের সঙ্গে গিয়ে আকাশের মা রহিমা বেগমের সাথে দেখা করে। এরপর দেখাসাক্ষাৎ শেষ করে নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে আসার পর তনুর মা তনুকে সোহানের মা'য়ের বিষয়ে বলে। তনু বেশ অবাক হয় সোহানের মা সোহানের জন্য বিয়ের কথা বলতে এসেছিল এই কথা শুনে। তবে তনু অবাক হলেও বিষয়টা নিয়ে বেশি একটা মাথা ঘামায় না।
নিজের মতন স্বাভাবিক থাকে। দিন কাটতে থাকে। যতো দিন কাটছে ততোই তনু আর আকাশের সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে। একে অপরকে রেখে অল্প সময়ের জন্যেও তারা থাকতে পারে না। অফিসে থাকলে আকাশের সারাটা সময় তনুর কেবিনেই কাটে। আর বাড়িতে গেলে সর্বক্ষণ ফোনে লেগে থাকে একে অপরের সাথে। এছাড়া তনু প্রায় সময় আকাশকে সঙ্গে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। তনুও প্রায় সময় আকাশের বাড়িতে আসে। দুই পরিবারও অনেক খুশি আকাশ আর তনুর সম্পর্কে। কিন্তু কথায় আছে না সুখ বেশিক্ষণ মানুষের কপালে দীর্ঘায়ু হয় না। একদিন অফিস টাইম শেষ করে তনু গাড়িতে করে আকাশকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সময় সোহান অনেক কয়জন ভাড়াটে ছেলেপেলে নিয়ে তনু আর আকাশের পথ আটকায়। এরপর শুধু আকাশকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে সকলে মিলে মা'রার জন্য ঘিরে ধরে। তনু জলদি করে গাড়ি থেকে নেমে আকাশকে বাঁচানোর জন্য যায়। কিন্তু সোহান তনুকে আঁটকে দেয়। আর নিজের ভাড়া করা ছেলে গুলোকে বলে,
--'আমি একে দেখছি। তোরা ওর ব্যবস্থা কর।'
সোহান ভাড়া করা ছেলে গুলোকে আকাশের ব্যবস্থা করতে বলে। আই মিন আকাশকে মা'রতে বলে। ছেলে গুলা সোহানের কথা মতন আকাশকে মা'রতে আরম্ভ করে। কিন্তু কিছু সময় পর বিকট একটা আওয়াজ হয়। আর সেই সঙ্গে সোহানের ভাড়া করা লোকজন আকাশকে মা'রা বাদ দিয়ে পিছাতে শুরু করে....
KEYWORD |
---|
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা উপন্যাস |
বাংলা উপন্যাস পিডিএফ |
জনপ্রিয় বাংলা উপন্যাস |
নতুন বাংলা উপন্যাস |
বাংলা কালজয়ী উপন্যাস |
আধুনিক বাংলা উপন্যাস |
Tags
উপন্যাস