আপনি কি করলা ভাজি রান্না করতে পারেন? আচ্ছা আপনার করলা ভাজি খেতে কেমন লাগে?
বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে এসে পাত্রীর মুখে এমন অদ্ভুত কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে পাত্র পক্ষ। তাদের কোনো উত্তর না পেয়ে আফরা আবারো প্রশ্ন করলো,
- কি হলো কিছু বলছেন না কেন? আপনি কি বোবা? কথা বলতে পারেন না?
- আপনি উল্টো আমাকে কেন প্রশ্ন করছেন নিজের ছেলের ব্যাপারে তো আপনিই ভালো জানবেন তাই না।
আফরার মা আফরাকে ধমক দিয়ে বললেন,
- তুই একটু চুপ করবি।
- চুপ করবো কেন আম্মু এটা সারাজীবনের ব্যাপার তাই সবকিছু জেনে শুনে এগোতে হবে।
পাত্রের মা বিচলিত হয়ে বললেন,
- আমার ছেলে কেন রান্না জানবে এগুলো মেয়েদের কাজ এছাড়া করলা ভাজি আমরা খাই না তাই আমাদের বাড়িতে করলা আনা হয় না।
আফরা সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো নিজের বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে রেগে বলল,
- এসব উগান্ডার লোক এখানে এনেছো কেন? যারা করলা ভাজি খায় না এবং রান্না জানে না তাদের বাড়িতে বউ হয়ে যাওয়া ইম্পসিবল।
পাত্র পক্ষ উঠে দাঁড়ালো পাত্রের বাবা ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,
- এসব কি হচ্ছে আমাদেরকে বাড়িতে ডেকে অপমান, মেয়েকে কোনো শিক্ষা দেননি?
আফরা কোমরে হাত রেখে জবাব দিল,
- চুপ থাকেন আপনারা আপনাদের কে বাড়িতে ডেকেছে? বের হন এখান থেকে আপনাদের আমার পছন্দ হয়নি।
কথাগুলো বলে আফরা নিজের ঘরে চলে গেল। পাত্র পক্ষ আফরার বাবা-মাকে অনেক কথা শুনিয়ে চলে গেলেন। আফরা ঘরে বসে বসে মোবাইলে করলা ভাজির নতুন রেসিপি দেখছিল তখনি তার ঘরে তার বাবা-মায়ের আগমন ঘটে। আফরার মায়ের গাল দুটো লাল হয়ে গেছে রাগে, আফরার মা তার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,
- তুই তাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করলি কেন? তোর জন্য বাইরের মানুষের কাছে কতগুলো কথা শুনতে হয়েছে।
- তোমরা জানতে না করলা ভাজিকে আমি কতটা ভালোবাসি তারপরও কেন করলা ভাজির শত্রু আই মিন করলা ভাজি যারা পছন্দ করে না তাদের বাড়িতে এনেছো আমার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য?
আফরার বাবা মিনমিনিয়ে বললেন,
- বিয়ে কি সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায় নাকি উনারা তো শুধু তোকে দেখতে এসেছিল।
- শুনো বাবা ভালো করে বলে দিচ্ছি করলা ভাজির শত্রু আই মিন করলা ভাজি যারা পছন্দ করে না তাদেরকে আমার আশেপাশেও আনবে না নইলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।
আফরাকে আর কিছু বলে বা বুঝিয়ে লাভ হবে না বুঝতে পেরে আফরার বাবা-মা হাল ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু পেছন থেকে আবারো আফরা ডাক দিয়ে বলল,
- শুনো আম্মু আমার খিদে পেয়েছে তাড়াতাড়ি করলা ভাজি দিয়ে ভাত দেও।
আফরার মা রেগে বললেন,
- বাড়িতে করলা নেই মুরগির গোশত রান্না করেছি ওইটা দিয়ে খেয়ে নে।
- কি বললে বাড়িতে করলা নেই মানে! আমি কিছু জানি না আমার খিদে পেয়েছে আমি করলা ভাজি দিয়ে ভাত খাবো।
- আমিও কিছু জানি না যা আছে তা দিয়ে খেলে খা না খেলে নেই।
- তাহলে তুমি করলা ভাজি রান্না করবে না ঠিক আছে আমিও পাশের ফ্লাটের মুটকি আন্টির কাছে যাচ্ছি তার বাড়ির সব করলা এবং করলা ভাজি নিয়ে আসবো আর তারপর খাবো।
আফরার বাবা আতিক ইসলাম চেঁচিয়ে বললেন,
- না মা তুই একটু অপেক্ষা কর আমি গিয়ে এখনি বাজার থেকে করলা কিনে আনছি তারপর তোর মা তোকে করলা ভাজি করে দিবে।
বলেই তারা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাইরে আসতেই আফরার মা দুঃখ ভরা কন্ঠে বললেন,
- মানুষ করলা খেতেই চায় না আর আমাদের মেয়েটা সব ছেড়ে শেষ পর্যন্ত করলার পেছনে পড়লো!
- কি আর করার তাড়াতাড়ি বাজারে যাই করলা ভাজি না পেলে তো পাশের বাড়ির মহিলার বাড়িতে হামলা করবে ওই মহিলা যেই ঝগড়ুটে।
- হ্যা যাও তুমি।
বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আতিক ইসলাম বেরিয়ে গেলেন। আফরা খিদের চোটে বিছানায় পরে ঘুমিয়ে আছে। তার ঘুমটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না কেউ তার মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই সে লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় রাগ নিয়ে সামনে ঘুরতেই নিজের মাকে দেখতে পায়।
- পানি দিয়ে ঘুম ভাঙ্গালে কেন ডাকলেই তো হতো।
- তোর জন্য ছোট চিংড়ি মাছ দিয়ে করলা ভাজি রান্না করেছি খাবি না?
- আহা আমার জান্টু মান্টু করলা ভাজি.....
বলেই আফরা এক দৌড়ে ছুটে গেল খাবার টেবিলে। একটা চেয়ার টেনে বসেই খাওয়া শুরু করে দিল এমন ভাবে খাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন পর সে খেতে বসেছে। তৃপ্তি করে সম্পূর্ণ খাবার শেষ করে বাকি করলা ভাজিটুকু ফ্রিজে রেখে দিল।
আফরার মা এগিয়ে এসে বললেন,
- কিরে ফ্রিজে রাখলি কেন?
- রাতে খেতে হবে না তাই রেখে দিলাম।
- মাত্র রান্না করলাম এখনো গরম আছে।
- থাকুক গরম আমি আমার করলা ভাজি নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।
এক তৃপ্তির ঢেকুর তুলে চলে গেল, আফরার মা মাথায় হাত রেখে বলতে লাগলেন,
- হায় খোদা আমার মেয়ের মাথা থেকে কবে এই করলা ভাজির ভূত নামবে।
___________________
রাত ১০ টা বাজে আফরার মোবাইলটা টিং টিং করে বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রিনে পরিচিত নাম্বার দেখে রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলো,
- কিরে বান্ধবী এতো রাতে কল মারলি কেন?
অপরপাশ থেকে,
- একটা বিপদে পড়ে তোকে বিরক্ত করলাম।
- আফরার কাছে সব বিপদ আপদ সমস্যার সমাধান আছে তুই শুধু বলে ফেল।
- কাল আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে শুনেছি ছেলে নাকি অনেক ভালো চাকরি করে।
- এটা তো ভালো কথা কিন্তু তুই বিপদ দেখলি কোথায়?
- কিন্তু আমার মুখে বড় বড় দুইটা ব্রণ উঠেছে এখন আমি কি করবো কিছু বল।
- ওহ এই ব্যাপার এটা কোনো সমস্যা হলো?
- তোর কাছে ব্রণ দ্রুত দূর করার কোনো টিপস আছে?
- হ্যা আছে তো।
- কি টিপস বল না?
- তুই বেশি বেশি করে করলা ভাজি খা দেখবি তোর ব্রণ উধাও হয়ে গেছে।
- আমি কি তোকে মজা করার জন্য ফোন করেছি সারাক্ষণ করলা ভাজি করতে থাকিস।
- আমি মজা করতে যাবো কেন? সত্যি করলা ভাজি অনেক উপকারী এটা খেলে ব্রণ, এলার্জি, যক্ষ্মা, পেট খারাপ, এমনকি ক্যান্সারও নিরাময় হয়ে যায়।
- তোর মাথা সত্যি খারাপ হয়ে গেছে করলা দিয়েই যদি এতো কাজ হতো তাহলে বিজ্ঞানীরা কষ্ট করে রিসার্চ করে এতো ওষুধ আবিষ্কার করতো না।
- তারা তোর মতোই বোকা তাই তো সামনে এতো কার্যকরী জিনিস রেখে অর্থ আর শ্রম নষ্ট করে।
- কিন্তু কাল দেখতে আসবে করলা ভাজি খেলে কি দ্রুত কাজ করবে আফরা?
- তাও ঠিক তুই এক কাজ কর করলা বেটে মুখে লাগা ঠিক হয়ে যাবে।
- কিহহহ!! মুখে শেষ পর্যন্ত করলা বাটা লাগাবো?
- ব্রণ ঠিক করতে হলে এটা তো করতেই হবে।
আফরার বান্ধবী নাদিয়া ফোনটা কেটে দিলো আফরা এবার ঘরের লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে করলাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।
__________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রিয় করলা ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে গেল আফরা। ভার্সিটি যেতেই একটা ছেলেকে দেখে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে বলল,
- আরে আমার রসুনের মতো সুন্দর ক্রাস এখানে কি করছো?
ছেলেটি আফরার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- আমার নাম ফারহাম রসুন বলছো কেন?
- এমনি বললাম তো কি করছো?
- কিছু না এমনি বসে আছি।
- কেন বসে আছো তোমার মতো এতো সুন্দর ছেলে কেন একা বসে থাকবে উওর দাও।
- আমার বন্ধুরা আজ আসেনি তাই একা বসে আছি।
- সারাক্ষণ বন্ধু বন্ধু করো কেন আমাকে কি চোখে দেখো না? আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি জানো?
- জানি না।
- জানবে কি করে আমি তোমাকে করলা ভাজির মতো ভালোবাসি। করলা ভাজি ছাড়া যেমন আমার চলে না তেমনি তোমাকে ছাড়াও আমার চলে না থুক্কু তোমাকে না দেখলেও চলে না।
- করলা ভাজি!!
- হ্যা আচ্ছা ক্রাস তোমার করলা ভাজি খেতে কেমন লাগে? জানো আমার কিন্তু করলা ভাজি অনেক ভালো লাগে করলা ভাজি ছাড়া আমার চলেই না।
ফারহামও মনে মনে আফরাকে পছন্দ করে তাই সেও সুযোগটা হাতছাড়া না করে মুচকি হেসে তাল মিলিয়ে বলল,
- আমারও তো করলা ভাজি অনেক ভালো লাগে আমাদের পছন্দের মিল আছে দেখছি।
আফরা খুশিতে গদগদ হয়ে ফারহামের গাল দুটো টেনে দিয়ে বলল,
- আহা ক্রাস আমি সঠিক মানুষকেই ভালোবেসেছি আমাদের দু'জনের পছন্দ করলা ভাজি আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
ফারহাম আফরার দিকে তাকিয়ে শুধু তার কথাগুলো শ্রবণ করলো। আফরা আবারো বলতে লাগলো,
- বুঝলে ক্রাস আমি আজকেই গিয়ে বাবাকে তোমার কথা বলবো তারপর আমরা বিয়ে করবো জানো আমার আম্মুর হাতের করলা ভাজি খেতে কি মজা উফ আমার খিদে পেয়ে গেছে।
- কি বলছো তোমার খিদে পেয়েছে কিছু খাবে নিয়ে আসবো আজকে আমার তেমন ক্লাস নেই চলো আজ রেস্টুরেন্টে যাই কেমন হবে?
- যাওয়াই যায় তুমি কতো ভালো চলো তাহলে আমার ভালোবাসার করলা ভাজি।
ফারহাম ব্রু কুঁচকে বলল,
- আমায় করলা ভাজি বললে কেন?
- উফ তোমাকে তো বললাম আমি করলা ভাজি অনেক ভালোবাসি তাই তো তোমাকেও করলা ভাজি বলে ডাকলাম।
Tags
ছোট গল্প