মেঘের আড়ালে বাংলা উপন্যাস ||বাংলা উপন্যাস pdf

 মেঘের আড়ালে বাংলা উপন্যাস ||বাংলা উপন্যাস pdf

মেঘের আড়ালে বাংলা উপন্যাস ||বাংলা উপন্যাস pdf

জন্মের সময় যদি আমারে গলাটা টিপ দিয়া মাইরা ফালাইতা রে মা তাইলে বাইচা যাইতাম। মাইয়া হইয়া জন্মাইয়া দুনিয়ার সব আগুন আপন করে নিসি। এই আগুন নিভাইতে পারতাছি না আর জ্বলতেও পারতাছি না। আমিও তো মানুষ রে মা। আমারও তো কষ্ট হয়। মাইয়া হইসি দেইখা কি সব কষ্ট মুখ বুইজা সহ্য করতে হইবো?
মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে কাদতে কাদতে কথাগুলো বলছিল উম্মে হাবিবা।
একটি রেস্টুরেন্টের একটি টেবিলে বসে আছে আজমাইন আহমেদ। ঘড়িতে সময় সকাল ১১টা। এত সকালে রেস্টুরেন্টে তেমন কেউ আসে না। একজন ওয়েটার এসে আজমাইন এর কাছে অর্ডার চাইলে আজমাইন তাকে উত্তর দেয় "আমার গেস্ট আসছে তারপর অর্ডার দিব"
কে আসছে?
১৫-২০ মিনিট পর আজমাইন লক্ষ্য করে একটি মেয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেছে। মেয়েটি শ্যাম বর্নের,চোখে হালকা করে কাজল মেখেছে,হাইট মুটামুটি আর গালে টোল পড়া একটা অমায়িক চেহারা। মেয়েটি রেস্টুরেন্টে ঢুকেই তার কাজল কালো চোখ দিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে আজমাইন কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে মেয়েটির সেই ঘার্মাক্ত চেহারা আর সরলতা দেখছিল তারপর তার ডান হাতটা ওপরে তুলে। মেয়েটির নজরে পড়ে আজমাইন এর হাত তোলাটা আর মেয়েটি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে আজমাইন এর দিকে..
আজমাইন অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটির মুখের দিকে চেয়ে আছে "একটা মেয়ের চোখ এতটা মায়াবী হয় কিভাবে? শ্যাম বর্নের হয়েও সে যেন অপরুপ "
মেয়েটি টেবিলের সামনে এসে দাড়াতেই আজমাইন উঠে দাঁড়ায় এবং বলে " প্লিজ বসুন "
মেয়েটি নিচু স্বরে বলে " আজমাইন? "
আজমাইন মুচকি হেসে বলে " রেস্টুরেন্টে আমরা দুজন ছাড়া আর কোন কাস্টমার নেই। আমি যেমন না জিজ্ঞাসা করেই বুঝেছি আপনি হাবিবা ঠিক তেমনি আপনারও বুঝা উচিত আমি আজমাইন "
হাবিবা চেয়ারে বসে নিচু স্বরেই বলে " আজমাইন হাবিবার ছবি দেখেছে কিন্তু হাবিবা আজমাইনকে দেখে নি তাই চিনতে না পারাটাই স্বাভাবিক "
আজমাইন আর উত্তর না পেয়ে বলে উঠে " কি অর্ডার দিব বলুন? "
হাবিবা বলে " নিজের হাতে নাস্তা বানিয়ে খেয়েই বের হয়েছি। আমি কিছুই খাবো না "
আজমাইন মুচকি হেসে বলে " অপরিচিত কেউ চকলেট দিলে খাবা না। মায়ের এই কথাটা খুব মানেন তাই না? "
হাবিবা বলে " সে যাই হোক। আমি কিছু খাবো না ধন্যবাদ "
আজমাইন বলে " ঠিক আছে অন্তত কোমল পানীয় এর অর্ডার দেই "
হাবিবা কোন উত্তর দেয় নি।
একজন ওয়েটার আসে এবং আজমাইন দুইটি ড্রিংকস এর অর্ডার দেয়।
আজমাইন হঠাৎ বলে উঠে " আমি একটু আমার পরিচয়টা দেই। আমার নাম আজমাইন আহমেদ। একজন ছোট খাটো ব্যবসায়ী। প্রচুর অগোছালো একজন মানুষ। ভালো থাকতে পছন্দ করি এবং ভালো রাখতে পছন্দ করি "
হাবিবা কপাল কুচকে প্রশ্ন করে " বাহিরের বাইকটা কি আপনার? "
আজমাইন উত্তর দেয় " জি কেন? "
হাবিবা বলে " আমার বাইক পছন্দ না। এক্সিডেন্টের বেশিরভাগই বাইক এক্সিডেন্ট তাই বাইক দেখলে বিরক্ত লাগে "
আজমাইন তখন উত্তর দেয় " একটা মেয়ের মুখ থেকে এই ধরনের উত্তর কোন ছেলে কল্পনাই করতে পারে না "
হাবিবা ঘড়ির দিকে নজর দিয়ে বলে " আমি উঠি। আমার অফিসের টাইম হয়ে যাচ্ছে। অলরেডি ১১ঃ৩৩ বেজে গেছে। ১২টায় আমার শিফট "
আজমাইন উত্তর দেয় " এখনো তো কোন কথাই হলো না "
হাবিবা উত্তর দেয় " কথা বলার মতো কিছু নেই। আমি শুধু একটা পাগল দেখতে এসেছিলাম। যে কি না নিজে অবিবাহিত হয়ে আমার মতো একজন বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে "
আজমাইন তখন উত্তর দেয় " তাহলে কি আপনি আমাকে রিজেক্ট করছেন? "
হাবিবা উত্তর দেয় " দেখুন মেয়েরা একবার যাকে ভালোবাসে তাকে আর কখনো ভুলতে পারে না। আমার মা আর ভাই আমাকে খুব করে রিকুয়েষ্ট করেছে বলেই আমি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। শুধুমাত্র একটা বোকা মানুষ দেখতে "
কথাটা বলেই হাবিবা উঠে চলে যাচ্ছে হঠাৎ আজমাইন বলে উঠে " আমার মা বাইক চালানো পছন্দ করতো না। আমাকে শুধু বলতো "বাবা বাইক চালাস না। এটাতে অনেক এক্সিডেন্ট হয়" তারপর মা চলে গেলো। আজ বহুদিন পর কেউ বাইক চালাতে নিষেধ করলো "
আজমাইন এর কথা শুনে হাবিবা ফিরে তাকায় এবং বলে " আপনি কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত "
আজমাইন বলে " একটা কথা বলি? "
হাবিবা উত্তর দেয় " জি বলুন? "
আজমাইন বলে " আর মাত্র ২০ মিনিট সময় আছে আপনার অফিসের। রিক্সায় গেলে লেইট করবেন। আমি আমার বাইক দিয়ে আপনাকে অফিসে পৌছে দিয়ে আসি আর এটাই হবে আমার শেষ বাইক ড্রাইভ। প্লিজ না করবেন না "
হাবিবা প্রথম প্রথম না করলেও আজমাইন তাকে মানিয়ে নেয় এবং দুজন রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। আজমাইন চোখে সানগ্লাস দিয়ে বাইকে উঠে বসে তারপর হাবিবাও বাইকে উঠে বসে কিন্তু নিরাপদ দুরত্বে। কিন্তু বাইক স্টার্ট দেয়ার পর হাবিবার বাধ্য হয়েই আজমাইনের কাধে হাত রেখে চেপে ধরতে হয়।
ব্যস্ত শহরটার ভ্যাপসা গরমের মধ্য দিয়ে চলছিল আজমাইনের বাইক। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাবিবার অফিসের সামনে চলে আসে আজমাইনের বাইক। হাবিবা বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায় তখনি আজমাইন বলে উঠে " বাসায় গিয়ে কি বলবেন? ছেলে পছন্দ হয় নি "
হাবিবা পিছন ফিরে বলে " আপনি হয়তো খুব ভালো ছেলে কিন্তু আমিই অপদার্থ। স্পষ্টভাবেই বলে দিচ্ছি আমি কখনোই ২য় কোন পুরুষকে ভালোবাসতে পারবো না এবং ভালো রাখতে পারবো না তাই শুধু শুধু কারো কষ্টের কারন হতে চাই না। আমার ছেলেকে নিয়ে নিজের জীবন যুদ্ধটা নিজেই পাড়ি দিতে চাই। আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছা জেগেছিল তাই মিট করেছি। প্লিজ কিছু মনে করবেন না "
কথাগুলো বলেই হাবিবা হাটা শুরু করে হঠাৎ আজমাইন বলে উঠে " ২১টা মেয়ের ছবি দিয়েছিল ঘটক আমাকে। তাদের মধ্যে ২০ জন অবিবাহিত কিন্তু আমি ২১ নাম্বার বিবাহিত মেয়েটিকে দেখেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সারারাত শুধু ভেবেছি একটা মানুষের চোখ এতটা মায়াবী কি করে হয়। মেয়েটি তখন তার কাজল কালো চোখ নিয়ে আমার সামনে এসে বসে তখন আমি দুনিয়ার সবচাইতে মায়াবী দুটি চোখের সাক্ষাৎ পাই। পাগল দেখতে এসেছিলেন পাগল দেখে গেলেন কিন্তু পাগল ভালোবাসার জন্য কি করতে পারে সেটা এখনো আপনার দেখা বাকি "
কথাগুলো শুনে হাবিবা পিছন ফিরে তাকাতে বাধ্য হয় এবং হাবিবা পিছন ফিরে দেখে....
আজমাইন বাইক থেকে নেমেই পাশে দাড়িয়ে আছে।তারপর পকেট থেকে ম্যাচবক্স বের করে তার থেকে একটি কাঠি বের করে আগুন জ্বালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় বাইকে...
হাবিবার চোখের সামনে আজমাইন এর বাইক আগুনে পুড়ছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনের ওইপাশে হাবিবা আর এপাশে আজমাইন দাঁড়িয়ে হাবিবার দিকে চেয়ে হাসছে....
আশেপাশের মানুষ ছুটে আসে। হাবিবা হতবাক হয়ে এক দৃষ্টিতে আজমাইনের দিকে চেয়ে আছে। আজমাইন মুচকি হাসতে হাসতেই একটা রিকশায় উঠে চলে যায় আর হাবিবা হতবাক দৃষ্টিতে শুধু রিকশাটির চলে যাওয়া দেখছিল তার দুনিয়াটা তখন ৪ সেকেন্ডের জন্য সেই রিকশা আর বাইকের আগুনের মধ্যে আটকে গিয়েছিল।
অফিস শেষ করে রাত ৮টায় বাড়িতে পা রাখতেই হাবিবার ছোট্ট ছেলে রাইয়ান "আম্মু" বলে দৌড়ে এসে হাবিবাকে জড়িয়ে ধরে। হাবিবাও তার রাইয়ানকে কোলে তুলে আদর করতে করতে জিজ্ঞাসা করে " আব্বু তুমি খেয়েছ তো? "
তখনি সামনে এসে দাঁড়ায় হাবিবার মা এবং রাইয়ানের নানু হাসিনা খাতুন। হাসিনা খাতুন বলে উঠে " রাইয়ান নানুভাই তুমি গিয়ে হোম ওয়ার্কটা শেষ কর। আম্মু আসছে "
হাবিবাও রাইয়ানকে কোলে থেকে নামিয়ে বলে " হ্যা বাবা গিয়ে হোম ওয়ার্কটা শেষ কর। তারপর আম্মু নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দিব "
রাইয়ান খুশি হয়ে চলে যায়।
হাসিনা খাতুন কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলে " আল্লাহ তোকে যেই কপালটা দিয়েছে সেরকম কপাল পাওয়ার জন্য এখনকার মেয়েরা কাদে কিন্তু পায় না আর তুই পেয়েও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিস "
মায়ের কথা শুনে হাবিবা ঘাড় ঘুরিয়ে উত্তর দেয় " হ্যা মা। আল্লাহ আমাকে যেই সুখে রাখছে এইটা আমি নিতেই পারছি না। "
হাসিনা উত্তর দেয় " আজমাইন বাড়িতে এসেছিল "
হাবিবা চমকে উঠে উত্তর দেয় " এ কেমন ছেচড়া ছেলে রে বাবা। যা বলার আমি তো বলেই দিয়েছি। বাড়িতে কেন এসেছে? "
হাসিনা বলে " হাবিবা আমার দিকে তাকা..আমার চোখের দিকে তাকা। কি চলছে তোর মাথায়? তোর বয়স কত? মাত্র ২৬। সারাটা জীবন পড়ে আছে তোর। যে যাওয়ার সে চলে গেছে। তুই তার স্মৃতি মনে রেখে কেন নিজের জীবনটা নষ্ট করবি? আজমাইনের মতো এত ভালো একটা ছেলে যে তোকে পছন্দ করেছে এটা তোর ভাগ্য "
হাবিবা বলে " আমাকে আর আমার ছেলেকে রাখতে সমস্যা হলে বলো মা। আমি ভাড়া বাড়িতে চলে যাবো। আমি এ জীবনে আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আমাকে আর রিকুয়েষ্ট কইরো না "
হাবিবা চলে যাচ্ছে তখনি হাসিনা বলে উঠে " আজমাইন তার বাবাকে নিয়ে এসেছিল এবং আমাকে অনুরোধ করে গেছে আমি যেন তোকে কোথাও বিয়ে না দেই। ও ই তোকে বিয়ে করবে "
হাবিবা বাকা ঠোটে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে " ছাগলের ছাগলামি যত্তসব "
হাবিবা ভিতরের রুমে চলে যায়।
পরেরদিন দুপুরবেলা হাবিবা অফিসের জন্য বের হয়েছে। রাস্তায় বের হয়ে রিক্সার জন্য এদিক সেদিক তাকাতেই হঠাৎ হাবিবার চোখ যায় কিছুটা দুরেই কেউ একজন সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে চেয়ে আছে। হাবিবা খুব স্পষ্টই বুঝতে পারে সেটা আজমাইন ছিল। হাবিবা একটা রিকশা ডাক দিয়ে উঠে চলে যায় এবং হাবিবা লক্ষ্য করে আজমাইন পুরো রাস্তা সাইকেল দিয়ে তার পিছু পিছু এসেছে। অফিসের সামনে এসে হাবিবা রিকশা থেকে নামতেই সাইকেলটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। হাবিবা হাত দিয়ে ইশারা করে আজমাইনকে ডাকে। আজমাইন বেশ খুশি হয়ে সাইকেলটা নিয়ে এগিয়ে আসে।
হাবিবা বলে উঠে " কি ভেবেছেন? একটা বাইক পুড়িয়ে পটিয়ে ফেলবেন? "
আজমাইন হাবিবের চোখের দিকে অবাক ভাবে চেয়ে শুধু মিটি মিটি হাসছে।
হাবিবা আবার বলে উঠে " গতকাল অফিসের সামনে বাইক পুড়িয়েছেন। এটা নিয়েই অফিসের মধ্যে আমাকে নিয়ে কানাঘুষা হচ্ছে। এখন এভাবে পিছু পিছু অফিস পর্যন্ত আসলে আমার আরও সমস্যা হবে। আপনি ভদ্র ঘরের সন্তান আশাকরি আপনি বুঝবেন আর আমার সিদ্ধান্ত আগে যেটা ছিল এখনো সেটাই থাকবে "
কথাটা বলেই হাবিবা পিছন ফিরে চলে যাচ্ছিল হঠাৎ আজমাইন নিচু স্বরে বলে " আড়াল থেকে তোমায় দেখার মধ্যে একটা মিষ্টতা আছে বুঝলে হাবিবা "
কথাটা শুনেই হাবিবা ফিরে তাকায় এবং আজমাইন মুচকি হাসি দিয়ে সাইকেলে প্যাডেল মেরে চলে যায়।
আজমাইনের এই রহস্যে আবৃত মুচকি হাসিটাই বলে দিত সে হাবিবার প্রতি কতটা মুগ্ধ।
আজমাইন চলে যাওয়ার পর হাবিবাও অফিসে প্রবেশ করে।
বিকাল ঠিক ৪টা হঠাৎ একজন ব্যাক্তি এসে হাবিবাকে বলে " ফাহিম বস আপনাকে ডাকছে ম্যাডাম "
হাবিবা উঠে বসের রুমে যায় এবং মিস্টার ফাহিম হাবিবাকে বলে " হাবিবা কি অবস্থা তোমার? কাজ ভালো চলছে? "
হাবিবা বলে " জি স্যার আলহামদুলিল্লাহ ভালো চলছে "
ফাহিম তখন বলে " ওকে হাবিবা আজ তুমি বাড়ি চলে যাও "
হাবিবা চমকে উঠে বলে " স্যার এখন তো ৪টা বাজে। আমার শিফট শেষ হবে ৮টায় "
ফাহিম তখন বলে " আজ তোমার হাফ শিফট ছুটি দিলাম আমি। যাও বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নাও"
হাবিবা বেশ খুশি হয়ে বলে " আর ইউ সিউর স্যার? "
ফাহিম বলে " ইয়েস "
হাবিবা বেশ খুশি হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে অফিস থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনি তার মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। বাহিরে ঝড়ো বৃষ্টি। নড়াচড়া করার মতো অবস্থা ও নেই। হাবিবা অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি কমার জন্য অপেক্ষা করছিল আর বৃষ্টি দেখছিল। হঠাৎ হাবিবার চোখ যায় দূরে আজমাইন সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং বৃষ্টিতে ভিজছে। এই বৃষ্টিতে পুরো এলাকা ফাকা পুরো রাস্তা ফাকা শুধুমাত্র আজমাইন সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে আর হাবিবার দিকে চেয়ে আছে।
এবার হাবিবার প্রচন্ড রাগ হয় এবং সে আবার ইশারা করে আজমাইনকে ডাকে। আজমাইন সাইকেল নিয়ে হাবিবার কাছে এসে দাঁড়ায়,
হাবিবা উচ্চস্বরে বলে " আপনার সমস্যা কি? আপনি কি ভেবেছেন এই বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার মন গলে যাবে? আমি কি ক্লাস নাইনে পড়ি যে এসব বৃষ্টিতে ভিজা দেখে প্রেমে পড়ে যাবো "
আজমাইন বলে " আমি কি প্রেমে পড়তে বলেছি? আমার দেখতে ভাল্লাগে তাই দেখি। আমি বৃষ্টিতে ভিজছি বলে আপনার কেন রাগ হচ্ছে? "
হাবিবা বিরক্ত হয়ে বলে " দেখুন এসব করে লাভ নেই। কখনোই দৃশ্যপট পাল্টাবে না "
আজমাইন বলে " আমার কিছু মেহমান আপনার সাথে দেখা করতে চায়। তারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি প্লিজ যাবেন তাদের সাথে দেখা করতে? "
হাবিবা উত্তর দেয় " কোথায়? কারা? "
আজমাইন বলে " সেটা সারপ্রাইজ। প্লিজ অনুরোধ করছি শুধু একবার তাদের সাথে দেখা করুন। তারপর আপনি যা বলবেন তাই করবো "
হাবিবা তখন বলে " ঠিক আছে যদি আজকের পর আপনি আর আমার পিছু পিছু না আসেন তাহলে যাবো "
আজমাইন উত্তর দেয় " ঠিক আছে "
আজমাইন তখন সাইকেলটা রেখে একটু রাস্তার ওইপাশে গিয়ে কাউকে ইশারা করে। তখনি দুইটি প্রাইভেট কার এসে আজমাইন এবং হাবিবার সামনে এসে দাঁড়ায়।একটি গাড়ি থেকে নামে হাবিবার ছোট ভাই ১৯ বছর বয়সী নাবিল। হাবিবা অবাক হয়ে নাবিলকে জিজ্ঞাসা করে " নাবিল তুই এখানে? আর এই গাড়ি গুলো কার? "
আজমাইন উত্তর দেয় " দুইটাই আমার গাড়ি। আমিই নাবিলকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছি। আপনার ব্যাগ এবং ফাইল গুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য "
নাবিল উত্তর দেয় " হ্যা আপু "
হাবিবা নাবিলকে তার ব্যাগ এবং ফাইল গুলো দেয়। নাবিল সেগুলো নিয়ে একটা গাড়িতে করে বাড়িতে চলে যায় এবং অন্য গাড়ির দরজা খুলে আজমাইন বলে " প্লিজ ম্যাডাম উঠুন "
হাবিবা প্রচন্ড পরিমানে অবাক হয়ে গুটি গুটি পায়ে গাড়িতে উঠে বসে। তারপর আজমাইন ড্রাইভারকে বলে " এই ড্রাইভার আমার টিশার্ট আর হাফ প্যান্টটা দাও "
গাড়ির ড্রাইভার একটা ব্যাগ দেয়। আজমাইন সেটা নিয়ে হাবিবাকে বলে " ম্যাডাম আমার কাপড় গুলো তো ভেজা। ৩ মিনিট বসুন। আমি চেঞ্জ করে আসছি "
আজমাইন চলে যায়। হাবিবা ড্রাইভারকে বলে " আচ্ছা উনার গাড়ি কয়টা? "
ড্রাইভার বলে " ম্যাডাম ৩টা "
হাবিবা বলে " তাহলে উনি সাইকেলে চলাফেরা করেন কেন? "
ড্রাইভার বলে " গাড়ি দিয়ে তো আপনার রিকশার পিছু পিছু আসা যাবে না তাই উনি সাইকেলে থাকেন আর আমি গাড়ি নিয়ে সাইকেলের পিছনে থাকি "
হাবিবা স্তব্ধ হয়ে যায় কথাগুলো শুনে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আজমাইন চলে আসে এবং ড্রাইভারের সাথে সামনের সিটে উঠে বসে এবং বলে " ড্রাইভার চলো "
হাবিবা এটাও লক্ষ্য করলো আজমাইন তার পাশে পিছনে বসলো না।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝে গাড়ি চলছিল। হাবিবা গাড়ির জানালা দিয়ে বৃষ্টির খেলা দেখছিল। হঠাৎ হাবিবার মাথায় একটা প্রশ্ন আসে এবং সে আজমাইনকে বলে " আচ্ছা আমার অফিস তো রাতে শেষ হওয়ার কথা। বিকাল ৪টা হঠাৎ ছুটি হয়েছে। তাহলে আপনি নাবিল এবং গাড়ি কিভাবে সময়মত রেডি করে রেখেছেন? আপনার তো জানার কথা না "
আজমাইন তখন মুচকি হেসে বলে " মিথ্যা বলবো না। আসলে আপনার অফিসের বস ফাহিম আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমিই ওকে বলেছিলাম আপনাকে ৪টায় ছুটি দিয়ে দিতে "
হাবিবা তখন কি রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছিল না শুধু চুপ করে বসে ছিল।
অনেকটা পথ একসাথে পাড়ি দেয়ার পর এক যায়গায় এসে গাড়ি থামে। বৃষ্টি পড়ছেই...
আজমাইন হাবিবাকে বলে " মোবাইলটা গাড়ির ভিতরে রেখে নামুন "
হাবিবা বলে " বাহিরে তো বৃষ্টি "
আজমাইন বলে " বৃষ্টিই তো পড়ছে। আগুন তো পড়ছে না "
হাবিবা মোবাইলটা গাড়ির ভিতরে রেখে গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পায় সামনেই নদী,মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে কি যে সুন্দর একটা প্রকৃতি। যে কোন শিল্পীর আকা ছবি। একদম শান্ত একটা পরিবেশ।
হাবিবা গাড়ি থেকে নেমে দাড়াতেই একটি ছেলে তার মাথার ওপর ছাতা ধরে বলে " এগিয়ে চলুন ম্যাডাম "
হাবিবা গুটি গুটি পায়ে নদীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। চারিপাশের হালকা ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে বৃষ্টি আর নদী তাকে বিমহিত করছিল।
হঠাৎ একটা ৭-৮ বছরের ছোট ছেলে যে কি না পাঞ্জাবী পড়া এবং মাথায় টুপি পড়া। ছেলেটি এসে হাবিবার দিকে একটি লাল গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলে " প্লিজ এটা নাও "
হাবিবা অবাক হয়ে বাচ্চাটার থেকে ফুলটা নেয় এবং বলে " Thank u "
হাবিবা আবার নদীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। হাবিবার মাথার ওপর ছাতা ধরে রেখেছে সেই ছেলেটি। হঠাৎ হাবিবা দেখতে পায় লাইন ধরে প্রায় ৮-১০ জন পাঞ্জাবী এবং টুপি পড়া বাচ্চা হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে এগিয়ে আসছে এবং তারপর ফুল গুলো হাবিবার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলছে " প্লিজ এটা নাও "
হাবিবা অবাক হয়ে সবগুলো বাচ্চার থেকে ফুল নেয় এবং নদীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। হাবিবা যতই সামনে যাচ্ছিল ততই নদীর স্রোত তার চোখে পড়ছিল আর সে বিমহিত হচ্ছিল। এদিকে বাচ্চাগুলো ফুল দিয়ে পিছনে গিয়ে আজমাইনের গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হাবিবা ১০টা গোলাপ ফুল নিয়ে এগিয়ে একদম নদীর সামনে এসে দাঁড়ায়। তখনি হাবিবা দেখতে পায় একটা ছোট কুড়েঘর। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে নদীর পাশে একটি কুড়েঘর হাবিবার চোখকে প্রশান্তি দিচ্ছিল।
হঠাৎ হাবিবার মাথায় ছাতা ধরে রাখা ছেলেটি বলে উঠে " ম্যাডাম আপনি কুড়েঘরের ভিতরে যান,স্যার সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে "
কথাটা বলেই ছেলেটি ছাতাটা বন্ধ করে চলে যায়।
হাবিবা ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কুড়েঘরে প্রবেশ করে এবং দেখতে পায় কুড়েঘরের ভিতরে একটি টেবিল এবং দুটি চেয়ার। টেবিলে কিছু খাবার ঢেকে রাখা এবং একটি চেয়ারে আজমাইন বসে আছে। হাবিবা কুড়েঘরে প্রবেশ করতেই আজমাইন বলে " প্লিজ ম্যাডাম আপনি বসুন "
হাবিবা শুধু হা করে আজমাইনের দিকে তাকিয়ে আছে এবং বসে পড়ে। কুড়েঘরের জানালা দিয়ে নদী আর নদীর বুকে বৃষ্টির টিপ টিপ ফোটা দেখা যাচ্ছিল।
প্রথমের আজমাইন হাবিবার পায়ের সামনে একটি "ময়লা বক্স" এবং একটি " খালি শপিং ব্যাগ " রাখে।
আজমাইন একটি গোলাপ ফুল হাবিবার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিচু স্বরে বলে " আপনি যখন খুব রাগান্বিত হয়ে আমার দিকে তাকান তখন প্রতি সেকেন্ডে আমি আপনার প্রেমে পড়ি। আহারে কি মায়ারে...। আপনার চুল গুলো এই হালকা বাতাসে উড়ছে আর আমার মনে হচ্ছে যেন আমার প্রেমের পাখিটা উড়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার অনুভূতি কখনোই কোন মানুষ প্রকাশ করতে পারে না। তেমনটা আমিও পারছি না তবে এতটুকু বলতে পারি "আপনি ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করতে পারছি না। আমার মেহমানদের দেয়া উপহার এবং আমার দেয়া উপহারটি আপনি এই দুইটি বক্সের যেকোনো একটিতে রাখবেন। ময়লার বক্সে রাখলে সেগুলো ডাস্টবিনে চলে যাবে আর শপিং ব্যাগে রাখলে সেগুলো আপনার বাড়িতে যাবে "
আজমাইন এর হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে হাবিবা কোন কিছু না ভেবেই সবগুলো গোলাপ শপিং ব্যাগে রেখে বলে " ফুল ডাস্টবিনে থাকার জিনিস না"
আজমাইনের ঠোটের কোনে সেই মধুর মুচকি হাসি। তারপর আজমাইন টেবিলে থাকা খাবার গুলোর ঢাকনা তুলে এবং হাবিবা দেখতে পায়। গরম গরম সাদা ভাত এবং ইলিশ ভাজা।
আজমাইন হাবিবাকে বলে " প্লিজ শুরু করুন। আমি জানি ইলিশ ভাজা আপনার প্রিয় খাবার "
আজমাইন এবং হাবিবা কুড়েঘরের জানালা দিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর নদীর স্রোত দেখতে দেখতে গরম গরম সাদা ভাত দিয়ে ইলিশ খাচ্ছিল। ব্যাপারটা হাবিবার মনে প্রশান্তি দিচ্ছিল।
হঠাৎ হাবিবা বাহিরে দেখতে পায় ১০-১২ জন পাঞ্জাবী পড়া বাচ্চা যারা তাকে গোলাপ ফুল দিয়েছিল তারাও বাহিরে আজমাইনের গাড়িতে ভিতরে কেউ কেউ গাড়ির ওপর বসে বসে গরম ভাত আর ইলিশ খাচ্ছে। হাবিবা প্রশ্ন করে " ওরা কারা? আপনার কি হয়? "
keyword:মেঘের আড়ালে বাংলা উপন্যাস,বাংলা উপন্যাস, উপন্যাস,বাংলা উপন্যাস pdf,বাংলা উপন্যাস pdf download,
আজমাইন উত্তর দেয় " আমার কিছুই হয় না। ওরা পথশিশু। পথশিশুর মধ্যে সবচাইতে নিচুস্তর ওরা। ওদের বাবা মা কেউ নেই। আমিই ওদের তুলে নিয়ে এসেছি। আমাদের মাদ্রাসায় ওরা পড়াশুনা করে। আমার বেস্টফ্রেন্ড বলতে পারেন। মা মারা যাওয়ার পর বেশ একা হয়ে গিয়েছিলাম তাই ওদের সাথেই সময় কাটাই। ওদের যখন আপনার কথা শেয়ার করি তখন ওরা আপনাকে দেখতে চায় তাই আপনাকে নিয়ে আসা "
হাবিবা অবাক দৃষ্টিতে আজমাইনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর আজমাইনের মুখের সেই মধুর মুচকি হাসি দেখছিল আর ভাবছিল " একটা মানুষ এতটা ভালো কিভাবে হয় এই যুগে? "
আজমাইন আবার বলে " একটা কথা শেয়ার করি। ওদের যখন প্রথম মাদ্রাসায় নিয়ে আসি তখন ওদেরকে যখন গরুর মাংস দিয়ে ভাত দেয়া হয়। তখন ওরা আমাকে বলে " ভাইয়া জীবনে প্রথমবার গরুর মাংস খাইতাসি। কোরবানির সময় গরুর মাংস টোকাইয়া ওইটা বিক্রি কইরা ভাত খাইতাম" ওদের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ে গিয়েছিল। ওদের গরুর মাংস রান্না করে দেয়ার মতো কেউ ছিল না। "
হাবিবার চোখের কোনেও পানি চলে আসে। হঠাৎ হাবিবা ফিল করতে থাকে সে আজমাইনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং আজমাইনের জন্য তারা মায়া জন্মে যাচ্ছে তাই হাবিবা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় এবং বলে " সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে আমার বাড়ি যেতে হবে "
আজমাইন দাঁড়িয়ে হাবিবাকে বলে " আমার শুন্য জীবনের মেঘের আড়ালের সূর্যের হাসিটা হবেন? "
হাবিবা কপাল কুচকে বিরক্তি নিয়ে বলে " আপনি কি বলদ? বাংলা কথা বুঝেন না? আপনি যতকিছুই করেন আমার সিদ্ধান্ত চেঞ্জ হবে না। আমি অনেক দিন আগে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম " ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে নদীর পাশে বসে ভাজা ইলিশ খেতে চাই " সেটা দেখেই আপনি আজকের এরেঞ্জমেন্টটা করেছেন। কি ভেবেছেন আমি গলে যাবো? আমি আপনাকে স্পষ্ট বলে দিচ্ছি আমি শুভকে ভালোবাসি আর সারাজীবন শুভকেই ভালোবাসবো। আজকের পর আমি আর আপনার চেহারা দেখতে চাই না "
হাবিবা কথাটা বলেই কুড়েঘর থেকে বের হয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গাড়ির দিকে যাচ্ছিল আর আজমাইন কাদতে কাদতে হাটু গেড়ে মাটিতে বসে চিতকার করে বলে " কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে আপনি আর আমার চেহারা দেখবেন না "
আজমাইন এর কথাটা হাবিবার কানে পৌছালেও হাহাকারটা হাবিবার অন্তরে নাড়া দেয় নি তাই হাবিবা পিছন ফিরে তাকায় নি। আজমাইনের গাড়ি হাবিবাকে বাড়ি পৌছে দেয় আর আজমাইন বৃষ্টির মধ্যে ভিজে নদীর পাড়ে বসে বসে নীরবে কাদছিল আর দূরে দাঁড়িয়ে আজমাইনের মেহমানরাও কাদছিল।
গভীর রাত হঠাৎ হাবিবার দরজায় কেউ নক করছে। হাবিবা ঘুমু ঘুমু চোখে উঠে দরজা খুলতেই দেখে তার মা হাসিনা খাতুন। হাবিবা ঢুলু ঢুলু চোখে বলে " কি হয়েছে মা? এত রাতে ডাকতেছ কেন? "
হাবিবার মা কাদতে কাদতে বলে " আজমাইন সুই*সাইড করেছে। জলদি রেডি হয়ে নে ওদের বাসায় যাবো "
মুহুর্তের মধ্যে হাবিবা থমকে গেলো,চোখের ঘুম উড়ে গেলো আর পায়ের নিচের মাটি সড়ে গেলো।
অন্ধকার রুমটাতে প্রবেশ করতেই হাবিবা দেখতে পায় আধো আলোতে ফ্যানের সাথে একটা বডি ঝুলছে। হাবিবার চোখ দিয়ে টল টল করে পানি পড়ছে।
"লোকটা কি আমাকে এতটাই ভালোবেসেছিল যে সুই*সাইডই করে ফেললো"
বাহিরের রুমে আজমাইন এর বাবা কাদছে আর তারপাশেই বসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে হাবিবার মা হাসিনা খাতুন। আজমাইন তার রুমেই ফা*সি দিয়েছে তাই হাবিবা আজমাইনের রুমে এসেছে। পুলিশ রাস্তায় আসছে তাই লা*শটা এখনো ফ্যানের সাথে ঝুলছে। রুমটা অন্ধকার। হাবিবা লা*শটার দিকে চেয়ে আছে আর টল টল করে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
হঠাৎ হাবিবার পিছন থেকে কেউ হাবিবার কাধে হাত রেখে বলে " খুব কষ্ট হচ্ছে?"
কন্ঠটা শুনে হাবিবার বুকটা আতকে উঠে। কন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগছিল। হাবিবা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই আধো অন্ধকারে একটা ভয়ানক রক্তমাখা চেহারা দেখা চোখ বন্ধ করে চিতকার করে আর তখনি বাড়ির সব লাইট গুলো জ্বলে উঠে এবং অনেক মানুষ একসাথে বলতে থাকে "Happy Birthday To u Habiba "
হাবিবা চোখ খুলে দেখে তার মা হাসিনা খাতুন ভাই নাবিল সহ আজমাইনের বাবা সহ আরও অনেক মানুষ তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে হাবিবার বেস্টফ্রেন্ড ৪-৫ জন এবং হাবিবার স্কুলের পছন্দের টিচার সহ হাবিবার ছোট থেকে যাদের খুব পছন্দ সেই সব মানুষ গুলো তার চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বলছে "Happy Birthday To u Habiba "
হাবিবা প্রচন্ড খুশি হয়। তার সব পছন্দের মানুষ গুলোকে একসাথে কখনো দেখতে পারবে সেটা সে কখনো ভাবেই নি। হাবিবা চেয়ে দেখে এতক্ষণ যেই লা*শটা সে ঝুলতে দেখেছে সেটা আসলে একটা পুতুল। তাহলে কি আজমাইন সুই*সাইড করে নি?
তখনি হাবিবা দেখতে পায় তার ঠিক পাশেই কেউ একজন মুখে একটা মাস্ক পড়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ সে বলে উঠে " সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য একটু ভয় দেখিয়েছি তার জন্য কান ধরেছি। প্রয়োজন হলে উঠবস করবো তবুও রেগে যাবেন না "
হাবিবার কেন যেন তখন প্রচুর হাসি আসছিল এসব কান্ড দেখে কিন্তু সে কোনরকম হাসিটা চেপে রেখে অভিমানের অভিনয়ে বলে " আজমাইন আপনি এরকম মাস্ক পড়ে আছেন কেন? "
আজমাইনঃ আপনি তো আমার চেহারা দেখবেন না বলেছেন তাই এই বুদ্ধি বের করেছি। কিন্তু মাস্ক দেখে তো আপনি ভয়ই পেয়ে গেলেন।
হাবিবা এবার মুচকি হেসেই দিল।
তখনি কেক চলে আসলো এবং হাবিবা তার লাইফের সবচাইতে পছন্দের মানুষ গুলোকে সাথে নিয়ে কেক কাটে। হাবিবা ভেবেছিল তার লাইফে বোধ হয় আর কখনো ভালো দিন ফিরে আসবে না। যেই হাবিবার লাস্ট ৫টা জন্মদিন তার আড়ালেই স্বাভাবিক দিনের মতো কেটে গেছে। আজ সেই হাবিবার জন্মদিন কেক কেটে যাচ্ছে এবং সাথে তার সবচাইতে আপন এবং পছন্দের মানুষ গুলোকে নিয়ে।
এই খুশিটার একমাত্র কারিগর আজমাইন।
লোকটার মধ্যে স্পেশাল কিছু তো আছে।
এ যুগে এতটা ভালো কেউ কাউকে বাসতে পারে?
হঠাৎ আজমাইন উচ্চস্বরে বলে উঠে " Hello Everybody "
উপস্থিত সবাই আজমাইনের দিকে নজর দেয়। আজমাইন তখন হাবিবার সামনে হাটু গেড়ে বসে এবং বলে " খুব ছোট একটা জীবন নিয়ে আমরা এই দুনিয়াতে আসি। এই ছোট জীবনে কিছু অপূর্নতা রয়েই যায়। সেই অপূর্নতাকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের পথ চলতে হয়। কথা দিচ্ছি তোমার বাকিটা জীবন পূর্ণতায় পরিপূর্ণ করে রাখবো। Will You Marry Me? "
এতগুলো মানুষের সামনে আজমাইন হাবিবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। উপস্থিত সবাই উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিল হাবিবার উত্তরের জন্য আবার কেউ কেউ বলছিল " হাবিবা হ্যা বলে দাও "
হাবিবা ৫ সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলে " রাইয়ান যা চাইবে তাই হবে "
তখনি আজমাইন পাশ থেকে রাইয়ানকে ডাকে এবং বলে " বন্ধু তুমি চাও না? আমি সারাজীবন তোমার বন্ধু হয়ে পাশে থাকি "
রাইয়ান তখন বলে " হ্যা চাই "
আজমাইন বলে " তাহলে আম্মুকে বলো আমাকে তোমার কাছে নিতে "
রাইয়ান তখন হাবিবাকে বলে " আম্মু আমার বন্ধু অনেক ভালো। ওকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চলো "
হাবিবা তখন মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায় এবং ছাদে চলে যায়। আজমাইন উঠে দাঁড়ায় এবং মুখের মাস্কটা খুলে সবার উদ্দেশ্যে বলে " আপনাদের সবার তো কপাল খুলে গেলো। বিয়েতে মুরগীর রোস্ট এর বন্দবস্ত হয়ে গেলো। যাইহোক বিয়েতে সবাই ১ কেজি করে সয়াবিন তেল গিফট করবেন প্লিজ "
কথাটা বলতেই সেখানের সবাই হেসে দেয় এবং আজমাইন ও হাসতে হাসতে ছাদে চলে যায়। আজমাইন ছাদে যেতেই দেখে হাবিবা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আজমাইন পাশে গিয়ে দাড়াতেই হাবিবা বলে উঠে " রাইয়ানের যখন ৩ বছর বয়স তখন শুভ বিদেশ যাওয়ার জন্য বের হয়। সমুদ্র পথে ২ নাম্বার ভাবে যাবে। যখন যায় তখনি আমার মনটা কেমন যেন করছিল। কিন্তু শুভর ওপর আমি কোন কথা বলতাম না। হঠাৎ কিছুদিন পর জানতে পারলাম ৫৪ জন তারা একটি নৌকা করে সাগর পাড়ি দিচ্ছিল। ঘাটে পৌছানোর কিছু দূরে হঠাৎ নৌকাটা উলটে যায় আর সবাই সমুদ্রে পড়ে যায়। ১২ জন সাতরে ঘাটে এসে বেচে যায় আর বাকিরা ডুবে যায়। শুভ ও সেই ডুবে যাওয়াদের মধ্যে ছিল। অল্প বয়সে স্বামী হারানো যে কতটা পাপের সেটা পরিবার বুঝিয়ে দিল। ছেলেটাকে নিয়ে চলে আসলাম নিজের পায়ে দাড়ালাম। কখনো ভাবি নি নতুন করে আবার লাইফটা কেউ রাঙাবে! "
আজমাইন হাবিবার হাতের ওপর হাত রেখে বলে " শুভ ডুবে গিয়ে তোমাকেও সমুদ্রে ফেলে রেখে গেছে। আমি তোমায় সেই সমুদ্র থেকে তুলে একটা স্বপ্নের ঘর বাধতে চাইছি। আসবে আমার স্বপ্নের ঘরে? "
হাবিবা কেদে ফেলে এবং কাদতে কাদতে আজমাইনকে জড়িয়ে ধরে।
আজমাইন আর হাবিবার বিয়েতে আপনারা সবাই আমন্ত্রিত "
অবশেষে হাবিবার মন জয় করে হাবিবাকে বিয়ে করে আজমাইন। হাবিবা একজন অল্প বয়সে বিধবা হওয়া মেয়ে। হাবিবার শশুরবাড়ির মানুষজন এবং এই সমাজ তাকে নিয়ে বহু কটু কথা বলেছে।
" এই মেয়ে কপালপোড়া " " এই মেয়ে স্বামীকে খেয়ে ফেলসে " " এই মেয়ে জীবনে সুখী হতে পারবে না " এই ধরনের অনেক বাজে কথা হাবিবাকে শুনতে হয়েছে। সেই হাবিবার বিয়ে আজকে ধুমধাম করে সবার সামনে দিয়ে হচ্ছে আর এই সমাজ সেটা হা করে দেখছে।
আজমাইন রাইয়ানকেও মেনে নিয়েছিল। হাবিবা নিজের সংসারটা সাজিয়ে নিয়েছিল। খুব সুন্দর সংসার চলছিল আজমাইন এবং হাবিবার।
একদিন গভীর রাতে হঠাৎ আজমাইন লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে। পাশে শুয়ে থাকা হাবিবা উঠে লাইট অন করে আজমাইনকে বলে,
হাবিবাঃ কি হয়েছে? কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছ?
আজমাইন টলটল চোখে হাবিবার চোখের দিকে চেয়ে বলে " হাবিবা তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাবা না তো? "
হাবিবা আজমাইনের দুই গালে দুই হাত রেখে মুচকি হেসে বলে " তোমার বউ আমি আর তোমাকে ছেড়ে যাবোটা কোথায়? পাগল "
আজমাইন করুণ স্বরে বলে " স্বপ্নে দেখলাম শুভ ফিরে এসেছে এবং তুমি শুভর হাত ধরে চলে যাচ্ছো "
হাবিবা আজমানকে জড়িয়ে ধরে বলে " সেটা কখনোই সম্ভব না। তুমি সারাদিন এসবই ভাবো তাই না। আমি আমার এই পাগল জামাইটাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। এখন তুমি শুয়ে পড় আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি "
আজমাইন শুয়ে পড়ে আর হাবিবার আজমাইনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর ভাবছিল " মানুষটা আমাকে কতটা ভালোবাসে যে আমাকে হারানোর কথা ভাবছে। এত ভালোবাসাই ছিল আমার কপালে? এই ভালোবাসাটুকু আর সুখের সংসারটাই যে এখন আমার সবকিছু "
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই খুশিতে হাবিবার চোখের কোনে পানি চলে আসে। হাবিবা চোখটা মুছে আজমাইনের কপালে একটা চুমু দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে।
কিছুদিন পর একদিন দুপুরে হঠাৎ হাবিবা এসে আজমাইনকে বলে,
হাবিবাঃ কি প্রয়োজন আছে এত টাকা খরচ করার শুধু শুধু?
আজমাইনঃ শুধু শুধু মানে? আমার ছেলেটার জন্মদিন আর চুপচাপ বসে থাকবো।
হাবিবাঃ জন্মদিন বলেই এত টাকা খরচ করে এত কিছু আয়োজন করতে হবে।
আজমাইনঃ আমার একমাত্র ছেলের জন্মদিন হাবিবা। এখানে টাকাটা কোন ফ্যাক্ট না এখানে আমার ছেলের আনন্দটাই ফ্যাক্ট। তুমি যাও তো দেখো এরেঞ্জমেন্ট গুলো ঠিকঠাক হচ্ছে কি না।
আজ রাইয়ানের জন্মদিন। সেই জন্মদিন নিয়েই আজমাইন আর হাবিবার মধ্যে কথা হচ্ছিল। রাইয়ানের জন্মদিনে আজমাইন বিশাল আয়োজন করেছে। জন্মদিনে অনেক রিলেটিভ আর ফ্রেন্ডরাও এসেছে।
ধুমধাম করে কেক কেটে জন্মদিন পালন হলো রাইয়ানের। রাইয়ানের এটাই প্রথম জন্মদিন ছিল যেটা এত বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছিল। রাইয়ান বেশ খুশি আর এদিকে হাবিবা আরও বেশি খুশি। বাড়িতে রিলেটিভ ফ্রেন্ডরা যে যার মতো আড্ডা দিচ্ছিল। হাবিবা হঠাৎ হেটে যাওয়ার সময় পাশ থেকে শুনতে পায় আজমাইনের কিছু বন্ধুবান্ধব কথা বলছে।
ছেলে বন্ধুঃ আজমাইন তো বিয়ের পর থেকে বউ পাগলা হয়ে গেছে। আড্ডা দিতে আসে না। শুধু বউ বউ আর বউ।
মেয়ে বন্ধুঃ দেখ বন্ধু। তোরা যাই বলিস। আজমাইনের এই ব্যাপারটা তোরা নেগেটিভ ভাবে নিলেও আমি পজিটিভ ভাবে নিচ্ছি। বর্তমান যুগে যেখানে টাকা হলেই মেয়ে পটে যায়। টাকা থাকলেই সুন্দরী মেয়েদের রুমে আনা যায় কিংবা ডেট করা যায়। সেই যুগে এত টাকা থাকার পরেও আজমাইন শুধু এক নারীতেই আসক্ত। ব্যাপারটা কতটা ভালো চিন্তা কর। আজমাইনের মতো ছেলেই হয় না। আজমাইন আসলে বউ পাগলা না। আজমাইন সত্যিকারের আদর্শ স্বামী।
কথাগুলো আড়াল থেকে শুনে হাবিবার চোখ বেয়ে পানি পড়ে যায়। কতটা ভাগ্যবতী সে। এরকম একজন মানুষকে সে স্বামী হিসেবে পেয়েছে।
এভাবেই খুব সুখে শান্তিতে স্বপ্নের মতো সংসার চলছিল হাবিবার। হাবিবা চাকুরীটা ছেড়েই দিয়েছিল। নিজের স্বামী সংসার নিয়ে সময় চলছিল।
একদিন হাবিবার তার ছেলে রাইয়ানকে নিয়ে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরছিল। বাড়ির গেটের সামনে আসার পরই হঠাৎ কেউ হাবিবাকে পিছন থেকে ডেকে উঠে " হাবিবা রে "
কন্ঠটা শুনেই হাবিবার সারাশরীর কম্পিত হয়ে উঠে। হাবিবা ঘাড় ঘুরে ফিরে মানুষটার চেহারা দেখতেই তার অন্তরে একটা বিশাল ঝড় বয়ে যায়। সেই চিরচেনা মুখটা। সে চিরচেনা মানুষটা। হাবিবার চোখ টলমল করছিল কারন হাবিবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রথম স্বামী শুভ। শুভ প্রচন্ড ঘেমে আছে। চুল দাড়ি গুলো অনেক বড় হয়ে আছে। শুভর গায়ে ময়লা টিশার্ট আর খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ বলে উঠে " হাবিবা রে আমারে চিনতে পারছস? আমি তোর শুভ। তোর জামাই শুভ "
হাবিবা অবাক হয়ে শুভর চোখের দিকে চেয়ে বলে " আপনি বাইচা আছেন? এতদিন কই ছিলেন? "
শুভ হাবিবার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে " সে অনেক কথা। চল বাড়ি চল। আমি তোরে সব বলমু "
হাবিবা ঝাড়া দিয়ে হাতটা শুভর থেকে ছাড়িয়ে বলে " এইযে এটাই আমার বাড়ি। আমার স্বামীর বাড়ি "
শুভ অবাক হয়ে হাবিবাকে বলে " তুই বিয়ে করেছিস হাবিবা? তুই বিয়ে করে ফেললি। আমার জন্য একটু অপেক্ষা করতে পারলি না? "
হাবিবার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে তবুও হাবিবা মনকে শক্ত করে বললো " আমি আমার অতীতকে কবর দিয়েছি। সেই কবর থেকে আর কংকাল বের করতে চাই না। আমি ভালো আছি,আমাকে ভালো থাকতে দিলে খুব খুশি হবো। আমার স্বামীর আসার সময় হয়ে গেছে। আপনাকে আর এ বাড়ির সীমানায় না আসার অনুরোধ করছি। অফুরন্ত কষ্ট দিয়েছেন এখন সামান্য সুখটুকু কেড়ে নিয়েন না "
কথাটা বলেই হাবিবা কাদতে কাদতে রাইয়ানকে নিয়ে গেটের ভিতরে চলে গেলো আর এদিকে শুভ থ হয়ে নিজেই বলতে লাগলো " হাবিবা তুই এত সহজে সব ভুলে গেলি "
শুভ কাদতে কাদতে সেখান থেকে চলে যায়।
৩-৪ দিন চলে যায়। শুভ তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করে। এদিকে সে নিখোঁজ হওয়ার পর হাবিবা কিভাবে সময় কাটিয়েছে এসব শুনতে থাকে। শুভ ভয়ংকর একটা সময় কাটিয়েছে সেই ট্রমা থেকে একটু স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে।
হঠাৎ একদিন রাতে শুভ বিছানায় শুয়ে ছিল। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে তার হোয়াটসঅ্যাপে ২টা ম্যাসেজ আসে। শুভ ম্যাসেজ গুলো চেক করতে হোয়াটসঅ্যাপে যায়। শুভ দেখতে পায় একটা ভিডিও এবং একটা ভয়েস ম্যাসেজ। শুভ ভিডিওটা ওপেন করে এবং শুভ দেখতে পায় " হাবিবা এবং একজন ব্যাক্তি শারীরিক সম্পর্ক করছে এরকম একটা অশ্লীল ভিডিও পাঠানো হয়েছে "। নিজের বউকে অন্য একজনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে দেখে শুভ উন্মাদ হয়ে উঠে এবং কাদতে থাকে। এরপর শুভ ভয়েস ম্যাসেজটা চালু করে এবং ভয়েস ম্যাসেজে একটা ভরাট পুরুষ কন্ঠে শুনতে পায় কেউ বলছে...
ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে হাবিবার পথ আগলে দাঁড়ায় শুভ। হাবিবা খুবই বিরক্ত শুভর আচরনে। হঠাৎ শুভ বলে উঠে " হাবিবা একটু শোন। আমি তোর সুখের পথে কাটা হয়ে দাড়াবো না। আমি তোকে একটা জিনিস দেখাতে চাই "
হাবিবা চরম বিরক্তি নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বলে " দেখুন এলাকার সবাই আমাকে চিনে। আমার স্বামীকেও চিনে। আপনার মতো একটা পরপুরুষ এর সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বললে লোকে খারাপ বলবে। তাছাড়া আমার ছেলের স্কুলে দেরি হয়ে যাচ্ছে "
শুভ তখন কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বলে " আমি পরপুরুষ না রে হাবিবা আমি তোর সবচাইতে আপন পুরুষ আর ছেলেটা তোর একার না কিন্তু! যাইহোক তুই হয়তো আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য ওই ভিডিওটা পাঠিয়েছিস কিন্তু বিশ্বাস কর আমি একটুও কষ্ট পাই নি "
হাবিবা বলে উঠে " কিসের ভিডিও?"
শুভ বলে " তোর সাথে তোর স্বামীর ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ভিডিও "
হাবিবা কপাল কুচকে রাগান্বিত স্বরে বলে " আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? যা ইচ্ছা তা বলছেন। যত্তসব "
কথাটা বলেই হাবিবা চলে যেতে ঘুরে দাঁড়ায় আর তখনি শুভ তার মোবাইল এর ভিডিওটা হাবিবার চোখের সামনে ধরে এবং হাবিবা দেখতে পায় " হাবিবা এবং আজমাইন এর ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ভিডিও "
হাবিবার পুরো শরীর কাপতে শুরু করে গলা শুকিয়ে আসে আর করুন স্বরে হাবিবা বলে " এই ভিডিও আপনি কোথায় পেয়েছেন? "
keyword::মেঘের আড়ালে বাংলা উপন্যাস,বাংলা উপন্যাস, উপন্যাস,বাংলা উপন্যাস pdf,বাংলা উপন্যাস pdf download,
শুভ তখন বলে " তুই নিজেই পাঠিয়েছিস। যেই নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিস সেই নাম্বারটা তোর নামেই রেজিষ্ট্রেশন করা। হাবিবারে তুই ভেবেছিস এই ভিডিও পাঠিয়ে আমাকে কষ্ট দিবি "
হাবিবা নিচু স্বরে বলে " কোন নাম্বার? "
শুভ নাম্বারটা বলে মাথা নিচু করে চলে যায়। সেদিন আর রাইয়ানের স্কুলে যাওয়া হলো না। হাবিবা কাপতে কাপতে রাইয়ানকে নিয়ে বাড়িতে ফেরত চলে আসে আর এসেই দরজা বন্ধ করে কাদতে শুরু করে। কেউ কেন তাদের সাথে এরকম গেইম খেলছে?
সন্ধ্যায় আজমাইন বাড়িতে আসে। হাবিবা আজমাইনকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিল। আজমাইন খাচ্ছিল এবং সারাদিনের অফিসের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ব্যাপার শেয়ার করছিল। হাবিবা শুধু হু হা করছিল। হাবিবার মন খারাপ হলে আজমাইন খুব সহজেই বুঝে যায়। হঠাৎ আজমাইন বলে উঠে " হাবিবা তোমার কি মন খারাপ? কিছু হয়েছে? "
হাবিবা বলে উঠে " কই না তো কিছু হয় নি। হ্যা কি যেন বলছিলে তুমি "
আজমাইন বলে উঠে " আমার কাছে লুকাবে? তাহলে কার কাছে বলবে? কি হয়েছে হাবিবা? "
হাবিবা আবার বলে উঠে " আরে আমার কিছু হয় নি "
আজমাইন খেতে খেতে প্লেটের দিকে চোখ রেখে খুব সুন্দর করে বলে উঠে " অনেকদিন পর শুভকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছো? "
হাবিবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে এবং হাবিবা আমতা আমতা করে বলে উঠে " কে শুভ? কি বলছো তুমি এসব আজমাইন? "
আজমাইন বলে উঠে " তুমি হয়তো জানোই না। আমার চোখ ২টা না। আমি আমার বউ বাচ্চার সুরক্ষার জন্য অনেক গুলো চোখ অনেক দিকে সেট করে রেখেছি। কিন্তু সেই চোখে সুরক্ষার ব্যাপার ধরার যায়গায় পরকীয়া ধরা পড়ে গেলো "
হাবিবা কাপতে কাপতে বলে উঠে " আজমাইন আমি তোমাকে সবটা খুলে বলছি। প্লিজ আমাকে একটু সময় দাও "
আজমাইন চেয়ার থেকে উঠে বাম হাত দিয়ে হাবিবার বাপ গালে শরীরের সব শক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় দেয়। হাবিবা চেয়ার থেকে ফ্লোরে পড়ে যায়। তারপর আজমাইন রাগান্বিত স্বরে বলে উঠে " তোরা মেয়েরা কখনোই অল্পতে সন্তুষ্ট হতে পারিস না। তোদের সব প্রয়োজন। ভালোবাসার মানুষ ও প্রয়োজন আবার টাকা ওয়ালা সুগার ডেডিও প্রয়োজন "
কথাটা বলে আজমাইন হন হন করে হেটে নিজের রুমে চলে যায় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। আজমাইনকে প্রথমবার এই রুপে দেখে হাবিবা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। হাবিবার গালে আজমাইনের ৫ আঙুলের ছাপ পড়ে গিয়েছিল। সেই রাতে হাবিবা বাহিরে সোফাতেই ঘুমিয়েছিল আজমাইন হাবিবাকে রুমে প্রবেশ করতে দেয় নি। সারারাত হাবিবা শুধু কেদেছে আর ভেবেছে " জীবন যতটুকু সুখ দিবে ততটুকু গ্রহন করেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। নিজ থেকে সুখ খুজতে গেলেই অশান্তির পাহাড় আছড়ে পড়ে "
পরেরদিন সকালে আজমাইন নাস্তা না খেয়ে এবং হাবিবার সাথে কথা না বলেই বের হয়ে অফিসে চলে যায়। সকাল ১১টার দিকে হাবিবা তার পুরনো বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ করে শুভর নাম্বার কালেক্ট করে এবং শুভকে কল দেয়। শুভ কল রিসিভ করে বলে " হ্যালো কে? "
হাবিবা উত্তর দেয় " আমি হাবিবা "
শুভ বলে " হ্যা বল "
হাবিবা বলে উঠে " যেই নাম্বার থেকে আপনাকে ভিডিওটা পাঠানো হয়েছে সেই নাম্বারটা ভুলে গেছি। নাম্বারটা আবার দেন "
শুভ বলে উঠে " ঠিক আছে তোর এই নাম্বারে তো হোয়াটসঅ্যাপ আছে। হোয়াটসঅ্যাপে দিচ্ছি "
হাবিবা বলে " ঠিক আছে "
কিছুক্ষণ পর শুভ হাবিবার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে সেই নাম্বারটা পাঠায়। হাবিবা নাম্বারটা নিয়ে রুমের ড্রয়ারে যায় এবং দেখতে পায়। হাবিবার তার এন আই ডি দিয়ে ৫ টি সীম কিনেছিল। সেই ৫ টি সীমের মধ্যে ১টি সীম ড্রয়ারে নেই এবং যেটি নেই সেটিই এই নাম্বার। অর্থাৎ কেউ হাবিবার সীম চুরি করে সেই সীম দিয়ে শুভকে ভিডিও পাঠিয়েছে। হাবিবা কনফার্ম হয়ে আবার হোয়াটসঅ্যাপে যায় এবং দেখতে পায় শুভ ম্যাসেজ দিয়েছে। শুভ লিখেছে " হোয়াটসঅ্যাপে প্রোফাইল পিকচারে তোকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে এটা কে? "
হাবিবা উত্তর দেয় " এটা আমার স্বামী আজমাইন "
শুভ রিপ্লাই দেয় " আজমাইন তো আমার কলেজ লাইফের বেস্টফ্রেন্ড। আমরা একসাথে কলেজে পড়েছি "
হাবিবা রিপ্লাই দেয় " What! "
হাবিবার মাথায় তখন আরেকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় সেটা হচ্ছে " বিয়ের আগেও আজমাইন শুভর ছবি দেখেছে এবং বিয়ের পরেও শুভর ছবি দেখেছে। শুভর আর হাবিবার সম্পর্কে সবকিছু হাবিবা আজমাইনকে বলেছে কিন্তু আজমাইন একবারের জন্য ও বলে নি যে আজমাইন শুভর কলেজ লাইফের বেস্টফ্রেন্ড ছিল। কেন? "
আজমাইন রাগান্বিত স্বরে বলে " তোর সাহস কি হয় আমার রুমে ঢোকার? বের হ "
হাবিবার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। হাবিবা চোখ মুছে করুন স্বরে প্রশ্ন করলো " আজকে দুপুরে খাওয়ার সময় কল দাও নি। প্রতিদিন দাও তো তাই আজ ও অপেক্ষায় বসে ছিলাম "
আজমাইন ঘাড় ফিরিয়ে বলে " আমার খাওয়া নিয়ে তোর এই মিথ্যা অভিনয়টা আমাকে দেখাতে হবে না। তোর পুরনো ভাতার চলে এসেছে। এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না বুঝেছি "
আজমাইন এর কথা শুনে হাবিবার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ছে। এটা কি সেই আজমাইন যে হাবিবাকে হারাবার ভয়ে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে হাবিবাকে জড়িয়ে ধরতো। এটা কি সেই আজমাইন যে একটু ভালোবাসার জন্য হাবিবার পিছনে ফুল নিয়ে ঘুরেছে। এই ভাবনা গুলো হাবিবার চোখ থেকে অশ্রু বের করছিল। হাবিবা চোখ মুছে প্রশ্ন করে " আচ্ছা যাইহোক। আমার এন আই ডি দিয়ে ৫টা সীম কিনেছিলে তুমি। সেই ৫টা সীমের মধ্যে ১টা পাচ্ছি না "
আজমাইন রাগান্বিত ভাবেই বলে " সেটা আমি কি জানি "
হাবিবা বলে উঠে " আজমাইন ওই ড্রয়ারের চাবি ২টা। ১টা আমার কাছে থাকে এবং অন্যটা তোমার কাছে। বাড়িতে তুমি আর আমি ছাড়া সীম নেয়ার মতো আর কেউ নেই। রাইয়ান ছোট আর বাবা (শশুর) চোখে কম দেখেন "
আজমাইন উত্তর দেয় " তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমি তোর সীম চুরি করেছি? "
হাবিবা উত্তর দেয় " সেটার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে। ওই নাম্বার থেকে তোমার আমার প্রাইভেট মুহুর্তের ভিডিও মানুষকে পাঠানো হচ্ছে। তোমার আমার প্রাইভেট মুহুর্তের ভিডিও কিভাবে কেউ করলো আজমাইন? আমরা কোথাও হানিমুনে যাই নি। আমাদের বাড়িতে আমাদের ভিডিও কেউ কিভাবে ধারন করতে পারে? আজমাইন আমার উত্তর চাই "
আজমাইন তখন বলে " আমি এসব কিছু জানি না। আমি খুব ক্লান্ত। আমি এখন ঘুমাবো "
হাবিবা তখন ছলছল চোখে বলে " মানুষ হচ্ছে দুনিয়ার সবচাইতে রহস্যময় প্রাণী। ১০০ বছর পাশে থেকেও মানুষকে চেনা অসম্ভব "
আজমাইন বিছানায় শুয়ে পড়ে আর হাবিবা তখন নিচু স্বরে বলে উঠে " শুভ তোমার বেস্টফ্রেন্ড ছিল সেটা তুমি আমাকে জানাও নি কেন আজমাইন? "
আজমাইন উঠে বসে এবং একটা মুচকি হেসে বলে " ওকে অকে অকে সত্যিটা তাহলে জেনেই ফেলেছিস "
আজমাইনের চেহারার এই পরিবর্তন দেখে হাবিবা অবাক হয়ে যায়। এ যেন এক অন্য আজমাইন। আজমাইন বিছানা থেকে উঠে এসে গুটি গুটি পায়ে হাবিবার দিকে এগিয়ে আসে। হাবিবা এক দৃষ্টিতে আজমাইনের দিকে চেয়ে আছে। একটা মানুষ এতটা পরিবর্তন কিভাবে হতে পারে? আজমাইন হাবিবার সামনে এসে হাবিবার কানে কানে বলে " এই গল্পটা সেদিন শুরু হয় নি। এই গল্প বহু আগেই শুরু হয়েছিল আর আমিই সেই মাস্টারমাইন্ড "
কথাটা বলেই আজমাইন হাবিবার মাথায় একটা ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে এবং হাবিবা অজ্ঞান হয়ে যায়।
হাবিবার যখন জ্ঞান ফিরে তখন হাবিবা দেখতে পায় সে একটি অন্ধকার রুমে আছে। হাবিবার হাত পা মুখ বাধা। পাশেই আজমাইন একটি চেয়ার নিয়ে বসে আছে। হাবিবার জ্ঞান ফেরার পর আজমাইন বলে উঠে " গুড মর্নিং হাবিবা "
হাবিবা শুধু অবাক হয়ে আজমাইন এর চোখের দিকে চেয়ে আছে। এ যেন এক অচেনা আজমাইন।
আজমাইন বলতে শুরু করে " দেখো হাবিবা আমি একটা ব্যাপার বিশ্বাস করি। মানুষ যদি কোন প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে মারা যায় তাহলে সে সেই উত্তরের জন্য ভূত হয়ে দুনিয়াতে ফিরে আসে। আমি ভাই ভূত ভয় পাই। তাই আমি তোমাকে কিছু উত্তর দিতে চাই।
হ্যা তোমার সীম আমিই নিয়েছিলাম এবং ভিডিও ধারন ও গোপনে আমিই করেছিলাম এবং শুভকে ভিডিও আমিই পাঠিয়েছিলাম। এখন নিশ্চয়ই তুমি প্রশ্ন করবে " কেন? "
আজমাইন আবার বলতে শুরু করে " সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে কি জানো? তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো থেকে শুরু করে। তোমার মন জয় করা তারপর বিয়ে সবকিছুই ছিল আমার প্লানিং এর অংশ। সবকিছুই আসলে আমাকে অভিনয় করে করতে হয়েছে। আমি কখনোই মন থেকে তোমাকে ভালোবাসি নি "
হাবিবা কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল। আজমাইন হাবিবার মুখের বাধনটা খুলে দেয় এবং হাবিবা কাদতে কাদতে বলে উঠে " আজমাইন আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্লিজ এই প্র্যাংকটা বন্ধ কর "
আজমাইন মুচকি হেসে বলে " হ্যা সে তুমি আমাকে ভালোবাসতেই পারো। তোমাদের মেয়েদের মন হচ্ছে গুলিস্তানের মোড়ের মতো। এক রাস্তায় জ্যাম থাকলে আরেক রাস্তা খালি থাকলেই সেটাতে চলে যাও। শুভর অবর্তমানে আমি তোমার সাথে একটু পুতুপুতু করেছি আর তুমি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছ। আমার অবর্তমানে অন্য কেউ পুতুপুতু করলে তাকেও ভালোবেসে ফেলবা "
কথাটা বলেই আজমাইন অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে আর হাবিবা কাদতে কাদতে বলে উঠে " আজমাইন আমি সবকিছু ছেড়ে তোমাকে ভালোবেসেছি "
আজমাইন বলে উঠে " হ্যা আমার অভিনয়টা খুব রিয়ালেস্টিক ছিল তাই তুমিও প্রেমে পড়ে গেছ। আসলেই আমি যদি সিনেমায় অভিনয় করতাম তাহলে ওসব সিনেমার নায়করা বেল পেত না "
কথাটা বলেই আজমাইন আবার অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে। হঠাৎ আজমাইন হাবিবার একদম মুখের কাছাকাছি এসে রাগান্বিত স্বরে বলে " একটা কথা জেনে রাখো হাবিবা। এই খেলায় তুমি হচ্ছো সেই প্রজা। যে কি না রাজার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে বিনা দোষে প্রান হারায় "
আজমাইন হাবিবাকে একটা মোবাইল দেয় এবং বলে " এই নাও। শুভর সাথে কথা বল এবং শুভকে এখানে আসতে বলো "
হাবিবা মোবাইলটা কানে নিয়েই বলে " শুভ তুমি প্লিজ চলে আসো। আজমাইন আমাকে আটকে রেখেছে "
ওপাশ থেকে শুভ বলে " আমি আসছি "
কলটা কেটে আজমাইন বলে " ভালোবাসো আমাকে অথচ সাহায্য চাচ্ছো শুভর কাছে। তোমাদের মেয়েদের যে কয়টা চেহারা সেটা তোমরা নিজেরাও জানো না "
কথাটা বলেই আজমাইন চোখের কোনে থেকে এক ফোটা অশ্রু মুছে চলে যায়।
হাত পা মুখ বাধা অবস্থায় হাবিবাকে একটা শক্ত রডের সাথে বেধে রাখা হয়েছে। শুভ অন্ধকার রুমটাতে ঢুকেই প্রথমে হাবিবাকে দেখেছে। হাবিবা হয়তো অজ্ঞান হয়েই পড়ে আছে। শুভ গুটি গুটি পায়ে হাবিবার সামনে গিয়ে বসে পড়ে তারপর হাবিবার গালে হাত রেখে বলতে থাকে " হাবিবা! এই হাবিবা! দেখ আমি এসে গেছি। আর ভয় নেই "
হাবিবা ধীরে ধীরে চোখ মেলে শুভকে দেখে কাদতে থাকে হঠাৎই হাবিবার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায় এবং শুভর পিছন থেকে কেউ খুব ভারী কিছু দিয়ে শুভকে আঘাত করে। শুভ অজ্ঞান হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর শুভর জ্ঞান ফিরে এবং শুভ দেখতে পায় হাবিবার মতো সেও হাত পা মুখ বাধা অবস্থায় আছে আর তাদের দু'জনে সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আজমাইন। হাবিবা ওদিকে কাদছে আর শুভ ও বন্দী হয়ে গেলো। আজমাইন তাদের ২ জনের সামনেই দাঁড়িয়ে কাউকে একটা কল দেয় তারপর বলতে থাকে " হ্যালো ওসি স্যার আজমাইন বলছিলাম। হ্যা স্যার। স্যার ওইযে জ*ঙ্গী শুভকে আপনারা খুজছিলেন না? ওই শুভর হদিস পেয়েছি স্যার। আমি ওকে বেধে রেখেছি। আপনি প্লিজ চলে আসুন। আমি লোকেশন হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাচ্ছি। জি স্যার। আরে স্যার কি যে বলেন এটা তো একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্ব। দেশের শত্রুকে ধরতে আপনাদের সাহায্য করছি ব্যাস এইটুকুই। জি স্যার আপনি টিম নিয়ে চলে আসুন "
কলটা কেটে যায়। আজমাইন মোবাইলটা পকেটে রেখে হাবিবা এবং শুভর দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হঠাৎ আজমাইন বলে উঠে " Welcome Back শুভ সকাল বন্ধু। কলেজ লাইফের বেস্টফ্রেন্ডকে এভাবে দেখে অবশ্যই চমকে গেছিস তাই না। এত চমকাস না এখনি। প্রচুর প্রচুর সাসপেন্স এবং টুইস্ট এখনো বাকি আছে "
কথাটা বলেই আজমাইন সামনের প্রযেক্টরে কিছু ছবি এবং ভিডিও চালু করে। যেগুলো গত ২ বছর আগে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে জ*ঙ্গী হামলায় জ*ঙ্গীদের টিমের সবার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। (ব্যাপারটা কাল্পনিক) সেই জ*ঙ্গীদের টিমের মধ্যে শুভকেও দেখা যাচ্ছে। ছবি গুলো দেখে আজমাইন মুচকি মুচকি হাসছে আর শুভ কিছু বলার জন্য হাত পা ছুড়াছুড়ি করছে। আজমাইন তখন বলে উঠে " আমি জানি এখন তুই বলতে চাচ্ছিস। এটা আসলে তুই না। এই এট্যা*কে তুই সামিল ছিলি না। এইতো? "

keyword:মেঘের আড়ালে বাংলা উপন্যাস,বাংলা উপন্যাস, উপন্যাস,বাংলা উপন্যাস pdf,বাংলা উপন্যাস pdf download,
আজমাইন তখন পায়েচারি করতে করতে মুচকি হেসে বলে " ঘটনা সত্য এটা তুই না কিন্তু আমি আমার হাতের যাদু দিয়ে তোকেই বানিয়ে দিয়েছি। এডিটিংটা ভালো হয়েছে না বন্ধু? কলেজে তো আমার সফলতায় হিংসায় পুড়ে যেতি। এখন অন্তত এপ্রিশিয়েট কর "
হাবিবা অঝোরে কাদছে আর শুভ ও বুঝতে পারছিল আজমাইন তাকে অনেক বড় একটা ট্রেপে ফাসিয়ে দিয়েছে। আজমাইন বলে উঠে " আমার নিজেকে নিজের হিংসা হয়। পিক তো এডিট করেছিই। ভিডিও ও একদম পারফেক্ট ভাবে এডিট করেছি। পুলিশ তো পাগলা কুত্তার মতো তোকে খুজছে রে বন্ধু "
হঠাৎ আজমাইন ঘুরেই আবার বলতে শুরু করে " কিন্তু আমার তো তোকে শুধু জেলে থাকার যন্ত্রণা দিলে শান্তি হবে না রে বন্ধু। আমার তো তোকে আরও কষ্ট দিতে হবে "
একটু মুচকি হেসে আজমাইন বলে " না শুভ না। এটা ভাবিস না তোকে আমি মারবো না। মে*রে ফেললে তো সেই কবেই মে*রে ফেলতে পারতাম। কিন্তু আল্লাহ তোকে যতদিন হায়াত দিয়েছে ততদিন আমি তোকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে চাই। প্রয়োজন হলে আমার হায়াতের থেকে ৩০ বছর তোর হায়াতে যোগ করতে পারলেও আমি তোর হায়াত বাড়িয়ে তোকে প্রতিটি দিন তিল তিল করে কষ্ট যন্ত্রণা দিয়ে আবার সুস্থ করে আবার যন্ত্রণা দিতে চাই "
আজমাইন একটা মোটা ছুরি হাতে নেয় তারপর নিচু স্বরে বলে " আমি জানি তুই হাবিবাকে প্রচন্ড ভালোবাসিস। তাই হাবিবাকে যদি তোর সামনে জবা*ই করি তাহলে তুই ঠিক কতটা কষ্ট পাবি বল তো বন্ধু " কথাটা বলেই একটা মুচকি হাসি।
আজমাইন গুটি গুটি পায়ে হাবিবার সামনে যায়। হাবিবার মুখের বাধনটা খুলে দেয়। হাবিবা চিতকার করে কাদছে। অন্যদিকে শুভ পাগলের মতো শরীরের সব শক্তি দিয়ে ছুটার ট্রাই করছে এবং চিতকার করছে। আজমাইন নিচু স্বরে মুচকি হেসে বলে " দুঃখিত হাবিবা। আসলে এই গল্পের লেখকটা একটু সাইকো টাইপ অর্থাৎ আমি। তুমি আসলে কি জন্য মারা যাচ্ছো সেটা তোমাকে জানাতে পারছি না বলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত "
হাবিবা কাদতে কাদতে বলে উঠে " আজমাইন আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্লিজ এসব বন্ধ কর। তোমার সাথে কি হয়েছে সেটা আমি জানি না কিন্তু এখন আমি তোমার সাথে আছি। সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো "
আজমাইন একটা অট্টহাসি দিয়ে বলে " হ্যা আমার পাশে আছো তাই তো আমি অফিসে গেলে শুভর পাশে গিয়ে দাড়াও। যাইহোক সেসব কথা বাদ। এই দুনিয়ায় এখন যেই পুরুষ মেয়েদের বার্গার,শপিং,অলংকার দিতে পারবে সে ই প্রিয় মানুষ হয়ে যায়। যাইহোক তুমি মরার জন্য প্রস্তুত হাবিবা? " কথাটা বলেই মুচকি হাসি।
শুভ ওদিকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে ছুটার ট্রাই করছিল আর এদিকে হঠাৎ হাবিবা বলে উঠে " আমি তোমার প্রতি সত্যিই খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম আজমাইন " কথাটা বলার সাথে সাথে আজমাইন ছুরি দিয়ে গরু জবা*ই এর মতো করে হাবিবার গলায় ছুরি চালায়। হাবিবার গলা থেকে কলের মতো রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। রক্ত ছিটিয়ে আজমাইন এর চেহারায় গিয়ে লাগছে এবং শুভর গায়ে গিয়ে পড়ছে। হাবিবা কাতরাতে কাতরাতে ছটফট করতে করতে শুভর চোখের সামনে মারা যায় আর আজমাইন পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। হাবিবাকে জ*বাই করাটা শুভ নিজের চোখে দেখে পাগলের মতো কাদছিল। হাবিবার চোখ গুলো খোলা আর সেই চোখ গুলো আজমাইনের দিকে চেয়ে ছিল। হাবিবার ডে*ড বডিটা পড়ে আছে। আজমাইন পাশ থেকে নিচু স্বরে বলে উঠে " তোর চোখের সামনে তোর ভালোবাসার মানুষকে পিস পিস করে কাটতাম কিন্তু কেইসটা আমাকে অন্য ভাবে দেখাতে হবে তাই সেটা করলাম না "
হঠাৎ বাহিরে পুলিশের বাশির শব্দ শুনতে পায় আজমাইন এবং আজমাইন শুভর হাত পায়ের বাধন খুলে দিয়ে হাবিবার লাশ ধরে কাদতে থাকে। তখনি ওসি আবিদ তার পুরো টিম নিয়ে প্রবেশ করে এবং শুভর দিকে পিস্ত*ল তাক করে পজিশন নেয়।
আজমাইন হাবিবার লাশ ধরে কাদতে কাদতে বলে " স্যার আমি আপনাকে ওর (শুভ) ব্যাপারে ইনফরমেশন দিয়েছি বলে ও আমার বউকে জবা*ই করে হ*ত্যা করেছে। আরে শুভ ও তো একসময় তোর বউ ছিল। তোর কি একটুও মায়া হলো না? মেয়েটা আমার সাথে সুখের সংসার করছিল সেটা তোর সহ্য হলো না। তুই ওকে খু*ন করে দিলি "
আজমাইন এর অভিনয় দেখে শুভ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওসি আবিদ তখন বলে " এমনিতেই সন্ত্রা*সী মাম*লা আবার এখন খু*নের মাম*লা। এই ওকে এরেস্ট কর "
শুভর হাতে হাতকড়া পরানো হয়। হঠাৎ শুভ মুচকি হেসে আজমাইনকে বলে " আজমাইন তুই ভেবেছিস দুনিয়াতে তুই একাই ট্যালেন্ট্যাড। ওসি স্যার আপনি আমার প্যান্ট এর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করুন। ওটা রেকর্ড মুডে ছিল। এতক্ষণ আজমাইন যা যা বলেছে সব রেকর্ড হয়েছে। ওটা শুনলেই বুঝে যাবেন কে খু*ন করেছে এবং কে আসলে সন্ত্রা*সী "
ওসি আবিদ শুভর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে এবং উপস্থিত সব কনস্টেবলকে বাহিরে চলে যেতে বলে। তারপর ওসি আবিদ রেকর্ডটা চালু করে। আজমাইন,শুভ এবং আবিদ ৩ জনেই রেকর্ডটা পুরোটা শুনে যেখানে স্পষ্ট যে আজমাইন হাবিবাকে খু*ন করেছে এবং শুভ নির্দোষ। আবিদ রেকর্ডটা শোনা শেষ করেই ডিলিট অপশনে ক্লিক করে রেকর্ডটা ডিলিট করে দেয় এবং বাহিরের কনস্টেবলদের ভিতরে ডেকে বলে " শুভকে থানায় নিয়ে যাও "
রেকর্ড শোনার পরেও ওসির এমন ব্যাবহারে শুভ অবাক হয়ে গেলো। শুভকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় আজমাইন মুচকি হেসে শুভর কানের সামনে এসে ফিস ফিস করে বলে " এই শহরে টাকা থাকলে বাঘের চোখ ও পাওয়া যায়। গল্প এখনো শেষ হয় নি,কিছু টুইস্ট এখনো বাকি অপেক্ষা কর বন্ধু "
শুভকে টেনে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর আজমাইন এর ঠোটে এক ভয়ানক সাইকো টাইপ মুচকি হাসি।
কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে শুভ। তার ওপর খু*ন সহ বিশাল বড় বড় মামলা। রায়টা সম্ভবত ফা*সিই হবে। ৫-৬ দিন পর হঠাৎ শুভর কাছে খবর আসে তার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে। শুভ দেখা করার রুমটাতে গেলে দেখতে পারে আজমাইন বসে আছে। আজমাইনের মুখোমুখি শুভ বসে পড়ে। আজমাইন আর শুভ ছাড়া এই রুমটাতে আর কেউ নেই। আজমাইন মুচকি মুচকি হাসছে শুভর দিকে চেয়ে। হঠাৎ শুভ গম্ভীর মুখে বলে উঠে " তুই কেন এসেছিস? আরও কিছু চাস তুই? "
আজমাইন মুচকি হেসে বলে " তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। তোর একটু উপকার করতে এসেছিলাম। তাই ভাবলাম তোর সাথে একটু দেখাও করে যাই "
শুভ চুপ করে রাগান্বিত দৃষ্টিতে আজমাইন এর চোখের দিকে চেয়ে আছে। আজমাইন বলে উঠে " তোর যাতে ফাসি না হয় সেই ব্যবস্থা করলাম। চার্জশীটটা ওইভাবেই তৈরি করতে বললাম। কারন ফাসি হয়ে গেলে তো সবকিছু শেষ। আমি তোকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারতে চাই "
কথাটা বলেই আজমাইন মুচকি হাসা শুরু করে।
শুভ বলে উঠে " এত সবকিছু তুই শুধুমাত্র একটা রাতের জন্য করছিস? "
মুহুর্তের মধ্যে আজমাইনের মুখটা রাগান্বিত চেহারায় পরিনত হলো এবং বলতে শুরু করলো " আমার জীবনের সবচাইতে বাজে রাত ছিল সেটা। আমার যায়গায় অন্য কেউ হলে সেদিন সুই*সাইড করতো কিন্তু আমি করি নি কারন আমি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বেচে আছি। নিজের অপমানের প্রতিশোধ এবং আমার প্রিয় মানুষটাকে হ*ত্যা করার প্রতিশোধ "
শুভ বলে উঠে " আমি কাউকে হ*ত্যা করি নি। ও সুই*সাইড করেছিল। এটা তুই খুব ভালো করেই জানিস "
আজমাইন বলে উঠে " হ্যা সুই*সাইড করেছিল কিন্তু ওর সুই*সাইডের পিছনের পুরো কারনটা হচ্ছিস তুই। যাইহোক এসব কথা বাদ দে। তোকে কিছু শকিং নিউজ দেই "
শুভ চুপ করে বসে আছে। আজমাইন বলতে থাকে " তোর পুরো পরিবার এবং হাবিবার পরিবার... "
শুভ উতলা হয়ে প্রশ্ন করে " কি করেছিস তাদের? "
আজমাইন মুচকি হেসে বলে " নাহ তাদের কিছু করি নি। আমার রিভেঞ্জ তোর সাথে,তাদের সাথে না। যাইহোক ওই দুই পরিবারই জানতো তুই বিদেশে যাওয়ার পথে ডুবে মারা গিয়েছিস কিন্তু ওরা আসল সত্যটাই জানতো না যে তুই বিদেশে যাওয়ার পথেই কিড*ন্যাপ হয়েছিলি এবং তোকে কিড*ন্যাপ আমিই করেছিলাম "
শুভর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে এবং শুভ ছলছল চোখে বলে উঠে " তুই! "
আজমাইন বলে উঠে " হ্যা আমি। আমার প্লানিং বহু আগে থেকেই ঠিক করা ছিল বন্ধু। বলতে পারিস তোর বিয়ের আগে থেকে। তোকে কিড*ন্যাপ করে বন্দী রেখে তোর বউকে পটানো। তারপর বিয়ে করা। তার শরীর ভোগ করা। তোকে সেটা দেখানো। ৫ বছর বন্দী রেখে কষ্ট দেয়া এবং তোকে এই ৫ বছর জ*ঙ্গীদের সাথে থাকা প্রমাণ করা এবং তোর চোখের সামনে তোর বউকে জ*বাই করা এবং বাকিটা জীবন ও তোকে চরম কষ্টে রাখা "
কথাটা বলেই আজমাইন মুচকি হেসে চেয়ার থেকে উঠে চলে যাচ্ছে হঠাৎ শুভ পিছন থেকে বলে উঠে " আজমাইন তুই হয়তো ভাবছিস তুই জিতে গেছিস কিন্তু তুই নিজেও জানিস না তুই এই নোংরা খেলায় জিতে গেলেও ভালোবাসার কাছে হেরে গেছিস। হাবিবা শুধু তোকেই ভালোবাসতো। হাবিবা এবং আমার এরেঞ্জ ম্যারেজ। হাবিবার হয়তো অতীতে কোন সম্পর্ক ছিল। যার কারনে আমি কখনোই হাবিবার মনে স্থান পাই নি। হ্যা হয়তো শরীর ভোগ করে বাচ্চা জন্ম দিতে পেরেছি কিন্তু হাবিবার মনে কখনো স্থান পাই নি। কারন আমি হাবিবা স্তন দেখেছি কিন্তু সেটার নিচের কোমল মনটা কখনো জয় করার ট্রাই করি নি। সেই হাবিবার মন তুই জয় করেছিলি। হাবিবা মন থেকে তোকে ভালোবেসেছিল। আমি ওর স্বামী হতে পারি কিন্তু ভালো সে তোকেই বেসেছিল। তুই হচ্ছিস সেই হতভাগা যে এই যুগে এরকম সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েও নিজ হাতে সেটা খু*ন করেছিস। আর একটা কথা শুনে নে, আমি ফিরে আসার পর ও হাবিবা আমাকে ইগনর করেছে কারণ ও তোকেই মন থেকে ভালোবেসেছিল। তুই হেরেছিস এবং ভালোবাসা হারিয়েছিস "
কথাগুলো শুনে আজমাইন এর বুকের ভিতরটা কেপে উঠে। চোখ বেয়ে বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিল। আজমাইন হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছিল সে কতটা ভুল করেছে। শুভ আবার বলে উঠে " আমি তোর ক্ষতি করেছি তুই আমাকে কষ্ট দিতি কিন্তু তবুও ওই নিস্পাপ মেয়েটাকে এমন মর্মা*ন্তিক ভাবে না মারলেও পারতি। আর একটা কথা আমি তোর কোন ক্ষতি করি নি। আমি সেদিন রাতে যা করেছিলাম সেটা তোর ভালোর জন্য করেছিলাম। তুই আর নাফিজ দুজন ছেলে হয়ে সেই রাতে দুজন শারিরীক সম্পর্ক করছিলি যেটা পুরোটাই ভুল ছিল। হয়তো তরুণ বয়স ছিল তাই দুজন ভুল করে করছিলি। নাফিজ ছিল সমকামী ও তোকে ব্যবহার করছিল। আমি সেটা হোস্টেলের স্যারকে জানানোতে স্যার তোদের ২ জনকে উলঙ্গ করে পুরো মাঠ ৫০ বার রাউন্ড দিয়িয়েছিল। পুরো হোস্টেল এবং মেয়েদের হোস্টেলের সবাই ব্যাপারটা জেনে গিয়েছিল। নাফিজ এই অপমানে সুই*সাইড করলো আর তুই সেই শহর ছেড়ে দিলি। আমি সেদিন ভুল দেখে শুধু প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি ভাবতে পারি নি এটা এত বড় রুপ ধারন করবে "
শুভ কাদতে কাদতে কারাগারে ফেরত চলে যায় এবং আজমাইন কাদতে কাদতে বাড়ি চলে আসে। আজমাইন বুঝতে পেরেছিল সে হাবিবার সাথে কত বড় অন্যায় করেছিল। রাইয়ানকে বুঝানো হয়েছিল তার মা বিদেশে চাকুরীর জন্য গিয়েছে। রাইয়ান একটু বড় হলে তাকে সত্যিটা বলা হবে। আজমাইন নিজের ছেলের মতো রাইয়ানকে লালন পালন করছিল। রাইয়ানের কথা ভেবে আজমাইন আর কখনো বিয়ে করে নি। রাইয়ানের বাবা হয়েই বেচে ছিল আজমাইন।
সমাপ্ত
Keywordমেঘের আড়ালে বাংলা উপন্যাস,বাংলা উপন্যাস, উপন্যাস,বাংলা উপন্যাস pdf,বাংলা উপন্যাস pdf download,

Post a Comment

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال