-দাড়িয়ে আছি মানুষ ভর্তি বিয়ে বাড়ির গেটের সামনে। আর আমার কোলে ৬ মাস বয়সের একটি টুকটুকে বাচ্চা মেয়ে ক্ষিদার যন্ত্রণায় কাঁদছে।
কাঁদছে তার মাকে পাশে না পাওয়ার যন্ত্রণায়। বাবা হয়ে মায়ের অভাব পূরণ করতে হিমসীম খাচ্ছি। মেয়ের কান্না দেখে আমারো কান্না পাচ্ছে।
কান্না পাবার'ই কথা, কারন আমার চোখের সামনেই যে আমার বউ রিতুর বিয়ে হচ্ছে।
মা হারা হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা সন্তান আমার ছোট্টো অবুঝ মেয়েটি।
- গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছি। দাড়োয়ানকে অনেক বলা সত্যেও কিছুতেই ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেনা।
ফোনেও ট্রাই করেছি অনেকবার কিন্তু প্রতিবারি ব্যাস্ত বলছে। হয়তো আমার নাম্বারটাও রিতুর ফোনের ব্লাকলিষ্টে জায়গা দখল করে নিয়েছে।
- আমার এভাবে দাড়িয়ে থাকা দেখে দাড়োয়ান বিরক্ত হয়ে নিজেই রিতুকে ডাকতে গেল।
কিছুক্ষণ পর রিতুকে দেখতে পেলাম আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আজ রিতু লাল শাড়ি পড়েছে।
লাল চুড়ি লাল টিপ চোখে কাজল পায়ে আলতা সাথে নুপুর। আজ রিতুকে অনেক সুন্দর'ই লাগছে। আমার কলিজার টুকরা মেয়েটি এখন আর কান্না করছেনা তার মায়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
রিতু আমার কাছে এসেই আমার গালে কষে একটা চড় মেরে বলল,
- তোকে বলেছি না আমার সামনে কোনোদিন আসবিনা। আমার জীবনটা নষ্ট করে তোর এখনো শান্তি হয়নি। বল তোর আর কি চাই।
চুপ করে দাড়িয়ে আছি। রিতুর এভাবে হাটাৎ করেই পরিবর্তন যেন নিজেকে তিলেতিলে শেষ করছে।
চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। জানিনা কতোটা কষ্ট পেলে একটা ছেলে কান্না করে।
রিতু চলে যাওয়ার একটু পরেই রিতুর বান্ধবী তিন্নি এলো। তিন্নি নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
- আপনি এখনো এখান থেকে যাননি কেনো? আপনার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই। থাপ্পড় খাওয়ার পরেও এখানে দাড়িয়ে আছেন। রিতু আপনাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করতে বলেছে। তাই বলছি ভালোই ভালোই এখান থেকে চলে যান।
তিন্নির দিকে তাকিয়ে দেখি তিন্নির চোখ দুটি পানিতে টলমল করছে। আমি মুচকি হেসে বললাম,
- ঘার ধাক্কা দিতে হবেনা। আমি নিজে থেকেই চলে যাচ্ছি। ভালো থেকে তোমরা, তাকেও বলে দিও ভালো থাকতে।
.
রাস্তা দিয়ে হাটছি,, রাত ১২ টার মতন বাজবে। আমার কলিজার টুকরা মেয়েটা আমার বুকেই ঘুমিয়ে গেছে।
দুর থেকে কুকুরের আওয়াজ ভেষে আসছে তাই তারাতারি হাটা ধরলাম। কারন কলিজার টুকরাটার ঘুম ভাংলে তার কান্না থামানোর মতো সাধ্য আমার নেই।
(পরের পর্ব পড়তে চাইলে সাথে সাথে আমার আইডিতে রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখুন।কারন পরের পর্ব আমার আইডিতে পুস্ট করবো।আপনারা রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখলে সাথে সাথে নটিফিকেশন পেয়ে যাবেন)"
-বাস কাউন্টারে এসে একটা টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়লাম। কাপড় আর কিছু প্রয়োজনীয় জনিষ পত্রের ব্যাগটা সাথেই রাখলাম।
জানালার সাথের সিটেই বসেছি। পাশের সিটে ১৯-২০ বছর বয়সের একটি মেয়ে বসল।
জানালা দিয়ে বাইরে অন্ধকারে তাকিয়ে আছি। চারদিকে ল্যাম্পোষ্টের আলো জলছে। চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। পানির ফোটা গুলো আমার মেয়েটির মুখের দিকে পড়েছে।
তাই ঘুম ভেংগে গেলো ছোট্ট মেয়েটির। সাথে সাথেই কান্না শুরু করেছে।
ব্যাগ থেকে দুধের বোতলটা বের করে তার মুখে ধরলাম। কান্নার শব্দ আরো বেড় গেল। কিছুতেই আমার মেয়ের কান্না থামাতেই পারছিনা।
পাশে বাসা মেয়েটি কড়া গলায় আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- একি আপনি বাচ্চাটাকে চুরি করে আনেননিতো।
আশেপাশের সিটে বসা সব লোকজন আমার দিকে কেমেন ভাবে তাকিয়ে আছে।
শতচেষ্টা করার পরেও যেন কান্না থামাতে পারছিনা। কান্না করেই যাচ্ছে।
- কি বলছেন আপু। আমার মেয়েকে আমি কেনো চুরি করতে যাব।
-- এটা যদি আপনার মেয়ে হয় তাহলে আপনার বউ কোথায়? আর এতোরাতে এই ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? তাও আবার একা সাথে বউ নেই।
এখন কি উত্তর দিবো আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। পাশ থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলা বলে উঠল,
- নিশ্চই বাচ্চাটাকে চুড়ি করে এনেছে। চেহারাটা দেখতে তো একদম চোরের মতোই, তাও আবার গালে পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ বসে আছে। হয়তো বাচ্চা চুরি করতে গিয়ে চড় খেয়েছে।
সাথে সাথেই একজন ভদ্রলোক আমার পাশের সিটে বসা মেয়েটিকে বলল,
- মামুনি তুমি বাচ্চাটাকে কোলে নাওতো। আমি দেখছি কি করা যায়।
পাশ থেকে আরেকজন ১৮ বছর বয়সি একটি ছেলে বলে উঠল,
- এই ব্যাটাকে পুলিশে দেওয়া দরকার।
পাশে বসা মেয়েটি আমার কলিজার টুকারাটাকে জোর করে নিয়ে নিল। তার কোলে গিয়ে কলিজাটা আরো বেশি কাঁদছে।
বিশ্বাস করুন আপু আমি চোর নয়। এই বলে কলিজাটাকে আমার কোলে নিয়ে কয়েকটা চুমু দিতেই চুপ হয়ে গেল।
- আপনারা বিশ্বাস করুন আমার মেয়েকে আমি চুরি করবো কেনো?
-- এটা আপনার মেয়ে হলে আপনার বউ কোথায়। এতো ছোট বাচ্চাকে তো কোনো মা'ই কখনো একা ছাড়বেনা?
আমি কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছিনা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
- শুনবেন তাহলে শুনুন,,
আমি মোঃ রাকিব, আপনজন বলতে তেমন কেউ নেই। খুব ছোট থাকতেই বাবা মা মারা গেছেন।
কয়েকটা টিউশনি করিয়ে মেস এবং পড়ালেখার খরচ চালাই।
সেদিন বিকেলে রুমে বসেছিলাম। হটাৎ আমার প্রেমিকা রিতু এসে বলল,
- রাকিব বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে প্লীজ তুমি কিছু একটা করো।
আমি সেদিন অনেক কষ্ট বুকে চেপে রেখে বলছিলাম,
-- তোমার বাবা যেখানে বিয়ে ঠিক করেছে সেখানেই বিয়ে করো। তাহলে অনেক সুখে থাকবে।
- কিন্তু রাকিব আমিতো বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। তুমি এখন আমায় বিয়ে না করলে আমার লাশ বাসায় যাবে। আমি কাজি অফিস যাচ্ছি আমার বান্ধবিরা আছে তুমি রেডি হয়ে চলে আসো।
যাওয়ার সময় চুরি আর টিপ নিয়ে যেতে বলেছিলো টাকার অভাবে সেটাও নিয়ে যেতে পারিনি।
বিয়ের কয়েক মাস পরেই রিতু অসুস্থ হয়ে পড়ে, ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে জানতে পারি রিতু মা হতে যাচ্ছে। ভালোবাসার ছোট্ট উঠানে আরেকজন আসতে চলেছে।
বিয়ের পরে একটা চাকরি নিয়েছিলাম। একদিন রাতে বাসায় এসি দেখি রিতু নেই। টেবিলে ডিভোর্স পেপার রাখা।
তার পাশে একটা চিরকুটে লেখা ছিল, "যদি আমায় একটুও ভালোবেসে থাকো তাহলে প্লীজ আমার সামনে আসিওনা।"
পরে জানতে পারি রিতুর বাবা এসেছিলো। উনার সাথেই রিতু চলে গেছে। আমার সাথে থাকতে নাকি রিতুর কষ্ট হয়।
রিতুর পেটে বেড়ে ওঠা বাচ্চা টাকেও ওর বাবা মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি নার্সকে বলে বাচ্চাটাকে চুরি করে এনেছি।
-আমার বউ রিতু আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল,
সংসারে যখন অভাব এসে দাড়ায়, আবেগ ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়...
চোখে পানি আটকে রাখতে পারলাম না। টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আশেপাশে বসা সবার চোখ পানিতে টলমল করছে।
আমার সাথের সিটে বসা মেয়েটাও কাদছে। সবাই চুপচাপ নীরব পরিবেশ। বাস থামলো, আর কিছু না বলেই বাস থেকে নেমে পড়লাম। আমার কলিজাটা ঘুমিয়ে আছে।
- এই মধ্যরাতে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি, কোলে একটি ছোট্ট অবুঝ মেয়ে। কোথায় যাবো কোনদিক যাবো কি করবো কিছুই মাথায় ঢুকছেনা।
|
চলবে..??
পর্ব- ০১
গল্প- মায়ার শিকল
Tags
ছোট গল্প